---
--জামাই ষষ্ঠী
আসলে জামাইদের
হাইজ্যাক করা
অনুষ্ঠান [পর্ব-১]--
---
@লেখক- শ্রী রূপেশ সামন্ত/
জামাই ষষ্ঠী এলো কিভাবে? কত
ভ্যারাইটির জামাই রয়েছে? ভুরিভোজ কেমন চলে? বৌমা ষষ্ঠী হয়না কেন? জামাই ষষ্ঠী নিয়ে
কি লোকগল্প আছে? কিভাবেই বা পালিত হয়?
নানান কৌতুহল! জামাই ষষ্ঠীর দিন সকলে মিলেমিশে ভুরিভোজ আর মহা সমারোহে উৎসব পালন!
-----জামাই ষষ্ঠী কেন জামাইদের দ্বারা হাইজ্যাক হল-----
প্রাচীন
কালে সমাজে একটা রীতি ছিল যে, কন্যার বিবাহের পর কন্যা যতদিন না সন্তানবতী হয়
ততদিন পিতা-মাতা কন্যাগৃহে যেতে পারবেন না। কিন্তু শিশু মৃত্যু জনিত বা অন্যান্য
কারনে কন্যা দীর্ঘদিন সন্তানবতী না হলে পিতা-মাতা কন্যার মুখদর্শনে বঞ্চিত হত। এই
সমস্যার সমাধানে তৎকালীন সমাজ পরিচালকরা ঠিক করলেন যে, জৈষ্ঠ মাসের শুক্লা ষষ্ঠীর
দিনে মেয়ে-জামাই নিমন্ত্রিত হয়ে বাবার বাড়ি যাবে ও সেই সঙ্গে সন্তান কামনায় ষষ্ঠী পূজা হবে। এর দুটি উদ্যেশ ছিল- প্রথমত, এর মধ্য দিয়ে জামাই-কন্যা নিমন্ত্রিত হয়ে বাবার বাড়িতে আসবে। ফলে কন্যার মুখদর্শন হবে। দ্বিতীয়ত, মা ষষ্ঠীর পুজো করে তাঁকে খুশি করা যাতে কন্যা শীঘ্রই সন্তানবতী হয়। এই কারনে
জামাই-কন্যা বাবার বাড়িতে নিমন্ত্রিত হয়ে এলে মেয়ের চেয়ে নতুন জামাই প্রচুর সমাদর পেল। অনুষ্ঠানের সব আলো জামাই এর উপর গিয়েই পড়ল। অন্যদিকে একই সাথে ষষ্ঠী পূজাও হোত। এই দু’য়ে মিলে হয়ে গেল জামাই ষষ্ঠী। মেয়ের মুখদর্শন প্রকৃত উদ্দেশ্য হলেও অনুষ্ঠানটি ‘জামাই ষষ্ঠী’ নামে জামাইদের হেফাজতে চলে গেল।
-----সংস্কারের বিবর্তন----
বর্তমানে এই সংস্কার অনেক
বিবর্তিত হয়েছে। এখন আর বিবাহিত কন্যা সন্তানবতী না হওয়া পর্যন্ত পিতা-মাতার মুখদর্শন করার বিষয়টি কঠোর নিয়মে আবদ্ধ
নেই। এখন যে
ব্যক্তি কন্যা সম্প্রদান করবেন, তিনি কেবল এক বৎসর কন্যার বাড়ি যাবেন না বা গেলেও কন্যার বাড়ির
অন্নগ্রহণ করবেন না।
যদিও আধুনিকতায় এই সংস্কারও বিলুপ্তপ্রায়।
-----লোক কথা- জামাই ষষ্ঠীর সাথে ষষ্ঠী পূজার
সম্পর্ক----
লোককথায় আছে, এক পরিবারে দুটি বউ এর মধ্যে
ছোট বউ খুব লোভী ছিল। সে ভাল খাবার লুকিয়ে খেয়ে নিত, আর শাশুড়ির কাছে বেড়ালে খেয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ করত। বেড়াল যেহেতু মা ষষ্ঠীর বাহন,
তাই বেড়াল মা ষষ্ঠীর কাছে অভিযোগ জানাল। মা ষষ্ঠী রেগে গিয়ে অভিষাপ দিলেন। ছোট বউয়ের এক এক করে সাত পুত্র ও
এক কন্যা মারা যায়। ফলে পরিবারের লোকেরা তাকে ‘অলক্ষণা’ বলে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। ছোট বউ
মনের দুঃখে বনে চলে যায়। সেখানে
কাঁদতে থাকে।
শেষে মা ষষ্ঠী বৃদ্ধার ছদ্মবেশে তার কাছে এসে কান্নার কারণ জানতে চাইল। ছোট বৌ তার দুঃখের কথা বলল এবং মাফ চাইল। তখন মা ষষ্ঠী তাকে ভক্তিভরে তার (ষষ্ঠীর) পুজো করতে বললেন। তখন ছোট বউ সংসারে ফিরে এসে ঘটা করে
মা ষষ্ঠীর পুজো করে ও এক এক করে তার পুত্র কন্যাদের ফিরে
পায়।
এর পর থেকেই চতুর্দিকে সন্তান মঙ্গল কামনায় ষষ্ঠী পুজোর
মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়ে।
তাই মেয়ের মুখদর্শনের নিমিত্ত এবং মেয়ে
সন্তানবতী হোক ও সন্তানরা সুখে থাকুক- এই মঙ্গল কামনায় জামাই ষষ্ঠীর দিন শাশুড়িরা ষষ্ঠীব্রত করেন। এটাই জামাই ষষ্ঠী কেন্দ্রিক ষষ্ঠী ব্রতের লোককথা।
-----জামাই ষষ্ঠী কিভাবে
পালিত হয়-----
এদিন শাশুড়িরা
ঘটা করে ষষ্ঠীর পূজা করেন। শাশুড়ি সকাল থেকে উপোস থেকে নতুন পাখার ওপর আম্রপল্লব,
আমসহ পাঁচটি ফল এবং ১০৮টি দুর্বাবাঁধা আঁটি আর ধান দিয়ে পূজার উপকরণ সাজান। করমচাসহ পাঁচ-সাত বা নয় রকমের ফল কেটে কাঁঠাল পাতার ওপর সাজিয়ে
পুজোর উপকরণ প্রস্তুত করা হয়। ধান বহু সন্তানের প্রতীক এবং দুর্বা চিরসতেজতার প্রতীক
হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এরপর জামাইকে
আসনে বসিয়ে প্রথমে কপালে দইয়ের ফোঁটা দিয়ে আশীর্বাদ করেন। জামাই-কে আশীর্বাদ করে ষাট-ষাট
বলেন। এরপর মা ষষ্ঠীর আশীর্বাদপূত তেল-হলুদে মাখানো সুতো জামাই
এর হাতে বেঁধে দেন। এরপর শাশুড়ি জামাই এর হাতে নতুন বস্ত্র তুলে দেন। আর খেতে দেন মিষ্টান্ন ও ফল।
জামাইও প্রণামী হিসেবে শাশুড়িকে বস্ত্রাদি দিয়ে থাকে।
-----জামাই ষষ্ঠী একটি সংস্কার
না উদ্দেশ্যপূর্ণ-----
আসলে জামাই ষষ্ঠীর পিছনে রয়েছে গভীর উদ্দেশ্য। আর এই উদ্দেশ্যটা হল জামাইকে তোষামোদ। কারণ, এতে মেয়ে ভাল থাকবে। তাই এতো লোকাচার। আসলে মেয়ের
মঙ্গলচিন্তায় এবং তাঁর সংসার সুখী রাখার জন্যই এত আয়োজন হয়। কন্যার বিবাহের পর একটি পরিবারের সঙ্গে আর একটি পরিবারের সম্পর্ক
সুদৃঢ় করাও এই জামাই ষষ্ঠীর উদ্দেশ্য।
-----জামাই ষষ্ঠীর ভুরিভোজ পর্ব----
এর পরের
পর্বটি জামাইদের জন্য খুবই লোভনীয়। সকাল থেকে শ্বাশুড়ি
মায়েরা নানারকম রান্না করেন। নিজেরা উপবাস করে থাকেন। যাক, এখানে
ভুরিভোজের একটি উদাহরণ তুলে ধরা হল।
জল খাবার- লুচি, আলুভাজা,
পটলভাজা, বেগুনভাজা, ছোলার
ডালনা, উপযোগী তরকারি, সিমাই পায়েস,
সন্দেশ মিষ্টি।
দুপুরের আহার- গন্ধরাজ
লেবু, আলুভাজা, বেগুনভাজা, বাসমতি চালের ভাত, ফুলকপির তরকারি, পটলের দোরমা, চিংড়া মাছের মালাইকারি, ইলিশের পাতুরি, খাসির মাংস, আমসত্ত্বের
চাটনি, পাঁপড়, দই, মিষ্টি ও আইসক্রীম।
[চলবে… পর্ব-২/
বাকী অংশ জামাই ষষ্ঠীর প্রকাশিত হবে। আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।]
@লেখক- রূপেশ সামন্ত/ ১৭.০৬.২০১৮
No comments:
Post a Comment