Popular Posts

Saturday, 16 June 2018

সম্প্রীতির ঈদ- ‘‘তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে…’’


-----সম্প্রীতির ঈদ- ‘‘তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে…’’ -----
শ্রী রূপেশ সামন্ত/ ১৫.০৬.২০১৮

-----তিনটি ঘটনা এবং -----
১। নাজির হাসান মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র রোযা ভেঙ্গে এক মুমূর্ষু হিন্দু মহিলাকে রক্ত দান করলেন ঐ মুসলিম ছাত্র বুলু সিং জ্বর নিয়ে মেদিনীপুর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বুলুদেবীর রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যেতে থাকায় তাঁর রক্তের প্রয়োজন হয় বুলু দেবীর বি নেগেটিভ রক্ত বি নেগেটিভ রক্ত খুব কম পাওয়া যায় তখনই এক মুহূর্ত না ভেবে রোযা ভেঙ্গে নিজের ‘বি’ নেগেটিভ রক্ত দিতে রাজি হয়ে যান নাজির

২। সাম্প্রতিক কালে, মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজে ইউসুফ সেখ নামে এক মুসলিম শিশু ভর্তি হয়। তার বয়স ছিল ৬ মাস। শিশুটি থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত। হঠাৎ রক্তের প্রয়োজন হওয়ায় শিশুটিকে রক্ত দান করলেন বহরমপুরের সুরজিৎ নামের এক হিন্দু যুবক।

৩।  এক হিন্দু মহিলা এবং এক মুশলিম মহিলা পরস্পরের স্বামীর জীবন বাঁচালেন পরস্পর কিডনি দান করে। 
নয়ডার জেপি হাসপাতালে ছিলেন কিডনির অসুখে আক্রান্ত গ্রেটার নয়ডার বাসিন্দা একরাম এবং বাঘপতের বাসিন্দা রাহুল বরিষ্ঠ। রক্তের গ্রুপ না মেলায় দুই পরিবার নিজের পরিবার থেকে কোনও কিডনি দাতা পাচ্ছিলেন না। তখনই দুই মহিলা পরস্পরের স্বামীকে তাঁদের কিডনি দান করতে এগিয়ে আসেন।

-----প্রতিকী-----
          উপরের তিনটি ঘটনা প্রতিকী মাত্র। মানবতার প্রতিচ্ছবি। মানুষের ‘জীবন’ সৃষ্টিকর্তার অপরূপ ‘সৃষ্টি’। আর সেই সুন্দর জীবন আরও সুন্দর হতে পারে মানবতার স্নেহ-ছায়ায়। সেই মানবতার বার্তাটি উৎসারিত হোক উৎসবের আলো থেকেই অবশ্যই, ঈদ উৎসবের মধ্যেই নিহিত আছে সম্প্রীতির, মানবতার বার্তাটি। 
-----ঈদ-উল-ফিতর-----
ঈদ-উল-ফিতর ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব গুলির একটি এই উৎসব শুরু হয় হিজরি ২য় সাল অর্থাৎ প্রায় ১৪০০ বছর আগে দীর্ঘ এক মাস রোযা রাখার পর মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষজন এই দিনটিতে ধর্মীয় কর্তব্য সমূহ খুব আনন্দর সাথে পালন করে থাকে। ঈদ উৎসবের মূলে নিহিত রয়েছে এক গভীর শিক্ষা। নিজের সম্পদ নিজে ভোগ করলেই হবে না, সেই সম্পদ অন্যকে দানও করতে হয়। ঈদ উৎসবের মূল বাণী হচ্ছে মানুষে মানুষে ভালোবাসা, সম্প্রীতি। সকলের মাঝে একতা ও শান্তি। এই উৎসব সম্প্রিতীর উৎসব। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এর সার্বজনীন তাৎপর্য অনস্বীকার্য।
----ঈদের দিনক্ষণ-----
হিজরি বর্ষপঞ্জী অণুসারে রমজান মাসের শেষে শাওয়াল মাসের ১ তারিখে ঈদুল ফিতর উৎসব পালন করা হয়। ঈদের আগের রাতটিকে চলতি ভাষায় "চাঁদ রাত" বলা হয়। সূর্যাস্তের পর নতুন চাঁদ দেখা গেলে পরদিন ঈদ হয় বর্তমানে বহু দেশে গাণিতিক হিসাবে ঈদের দিন নির্ধারিত হয়।
-----ফিৎরা-----
ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা ঈদের দিন অভাবী বা দুঃস্থদের কাছে অর্থ প্রদান করেন, যেটিকে ফিৎরা বলা হয়ে থাকে। ঈদের নামাজের পূর্বেই ফিৎরা আদায় করার নিয়ম রয়েছে। তবে নামাজ পড়া হয়ে গেলেও ফিৎরা আদায় করার নির্দেশ রয়েছে। সাধারণত ফিৎরা নির্র্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্য শস্যের মূল্যের ভিত্তিতে হিসাব করা হয়। 
-----রীতিনীতি-----
নিয়ম অণুযায়ী ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়ার আগে একটি খেজুর অথবা মিষ্টান্ন খেয়ে রওনা হতে হয় স্নান করা, নতুন পোষাক পরা, আতর-সুরমা লাগানো, এক রাস্তা দিয়ে ঈদের মাঠে গমন এবং নামাজ-শেষে ভিন্ন পথে গৃহে প্রত্যাবর্তন এগুলি এক একটি রীতি নতুন পোশাক পরিধান করার বাধ্যবাধকতা না থাকলেও তা বর্তমানে একটি রীতিতে পরিনত হয়েছে।
-----উৎসব-----
ঈদের দিনে সকালে মুসলিম ধর্মালম্বীরা নতুন জামা-কাপড় পরে ঈদের নামাজ পড়তে যায় ঈদের নামাজের পর সবাই একসাথে মিলিত হয়, সালামি গ্রহণ করে। একে অন্যের সাথে কোলাকুলি করে ঈদের সম্ভাষণ বিনিময় করে থাকে। ঈদের শুভেচ্ছাসূচক সম্ভাষণটি হলো, "ঈদ মুবারাক" ঈদের সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার সিমাই নামাজের পরে একে অপরের বাড়িতে বেড়াতে যায় অধিকাংশ পরিবারে ঈদের সময়ে নতুন পোশাক কেনা হয়। ঈদের ছুটিতে প্রচুর লোক পছন্দসই স্থানে বেড়াতেও যায়।
-----উপসংহারে নজরুল -----
ঈদের আলোয় আরো আলোকিত হোক মানবতা। উৎসারিত হোক সম্প্রিতীর ক্ষেত্র। চলুন, আশ্রয় নিই নজরুলে-
 ‘‘অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানেনা সন্তরণ,
কান্ডারী! আজ দেখিব তোমার মাতৃমুক্তিপণ!
হিন্দু না ওরা মুসলিম?” ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?
কান্ডারী! বল ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মা’র!’’
‘‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ ।
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানি তাগিদ ।
’'
রূপেশ সামন্ত/ ১৫.০৬.২০১৮

[ধন্যবাদ, আপনার অমূল্য সময় খরচ করে পাঠ করার জন্য। ভূল ত্রুটি থাকলে সংশোধনের জন্য পরামর্শ দেবেন। অন্যান্য লেখা পড়তে হলে আমার নিজস্ব ব্লগ www.rupeshsamanta.blogspot.in ভিজিট করুন। অবশ্যই মন্তব্য লিখবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।]

No comments:

Post a Comment