--------- --------ভ্যারাইটি জামাই [পর্ব-
২]-------- ----------
@ লেখক- রূপেশ সামন্ত/
“জামাই ষষ্ঠী উপলক্ষ্যে এখানে
ভ্যারাইটি জামাই ভাড়ায় পাওয়া যায়।” কলেজ পাড়ার মেসের ছেলেগুলো রাস্থার ধারে এই রকম
একটি নোটিশ ঝুলিয়ে রেখেছে। ভাবলাম,
‘ভ্যারাইটি স্টোর’ আছে, কিন্তু ‘ভ্যারাইটি জামাই’ আবার কি! মনস্তাত্ত্বিক আর
আর্থ-সামাজিক দ্বন্দের ভুলভুলাইয়াতে ভাবতে ভাবতে একটা ভাবনা দাঁড়
করানো গেল। এখন দেখা যাক ‘ভ্যারাইটি জামাই’এর ভ্যারাইটি ব্যাপার-স্যাপার-
-----‘রাজপুত্র’ জামাই-----
এরা সাধারণত সুদর্শণ চেহারার। রূপ নিয়ে বেশ অহংকারও আছে। শরীর চর্চা ও
খাদ্য তালিকার ব্যাপারে বেশ খুঁতখুঁতে। বয়স বাড়লেও এদের
গ্ল্যামার কমে না। শাশুড়ির মুখে সবসময় এই ধরনের জামাই এর তারিফ শোনা যায়।
----‘সর্বভুক’ জামাই----
এরা বেশ গুছিয়ে-বাগিয়ে খেতে
পারেন। পারলে জামাই ষষ্ঠীর আগের দিন থেকে শ্বশুর বাড়িতে পৌঁছে যান। জলখাবার থেকেই
ভুরিভোজ শুরু হয়। সারাদিন অনবরত খানাপিনা চলে। রাত্রিতে ভুরিভোজের পর একগ্লাস গরম
দুধ খেয়ে তবেই ঘুমোতে যান। শ্বশুরের কষ্ট হলেও শাশুড়ি কিন্তু খাইয়ে বেশ তৃপ্তি
পান।
----‘অসামাজিক’ জামাই-----
এরা বেপরোয়া ধরনের। নিজের সম্পর্কে বিরাট ধারনা পোষন করেন।
শ্বশুরবাড়ি যান না। স্ত্রীকেও নানা বাহানায় বাড়িতে আটকে রাখেন। শ্বশুরবাড়ির চোখে
এরা অসামাজিক, মেয়ের জীবন নষ্টকারী।
----‘সংস্কৃতিবান’ জামাই-----
শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে
হারমোনিয়াম বা গীটার বাজাতে বসে। শিল্প-সংস্কৃতি নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে দীর্ঘ লেকচার
দেন। শ্বশুর বাড়িকে আর্ট মিউজ়িয়ামের স্টাইলে সাজাতে পরামর্শ দেন। টিভিতে ক্লাসিক্যাল চ্যানেল দেখেন।
----‘কিপটে’ জামাই-----
এরা প্রতি পদক্ষেপে হিসাব করে
চলে। শ্বশুর বাড়িতেও হিসেব করে মিষ্টি ও উপহার নিয়ে যায়। স্ত্রীর শাড়ি-গয়নার
দাবীকে বাজে খরচ ভাবে। শ্যালিকারা পকেট কাটবে- এই ভয়ে তাদের এড়িয়ে চলে।
-----‘শাশুড়িপ্রিয়’ জামাই-----
এরা শাশুড়ি মাতার প্রতি একটু
বেশিই ভক্ত হন। শাশুড়িমাতাই
এদের কাছে ধ্যান-জ্ঞান। স্ত্রীর কথা নয়, শাশুড়ি মাতার কথা এরা অক্ষরে অক্ষরে পালন
করেন।
-----‘এক্সপ্রেস’ জামাই-----
এরা জামাই ষষ্ঠীর সময়
স্ত্রীকে আগে থেকেই বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। কাজ না থাকলেও নিজে খুব অল্প সময়ের
জন্য শ্বশুর বাড়িতে আসেন। দ্রুত আসেন, খাওয়া-দাওয়া করে আবার দ্রুত শ্বশুর বাড়ি
ত্যাগ করেন।
-----‘ত্যাজ্য’ জামাই----
এরা বাড়ির অমতে মেয়েকে
ফুসলিয়ে বিয়ে করেছেন। এই
সব জামাই শ্বশুর বাড়ি থেকে বিতাড়িত। এদের বিরুদ্ধে সর্বদা গালমন্দ চলে। যদিও এইসব
জামাই এর জন্য শাশুড়ির মন ভারাক্রান্ত থাকে।
-----‘ব্যক্তিত্বহীন’ জামাই-----
এদের মান-সম্মান বোধ কম। শ্বশুর বাড়িতে
খাতির-যত্ন পান না। স্ত্রী’রা জামাইয়ের উপর ছড়ি ঘোরায়। শ্বশুর বাড়িতে সর্বদা
লাথি-ঝাঁটা খায়।
-----‘ঘরজামাই’-----
শ্বশুরের ছেলে না থাকার কারনে অথবা জামাই এর অক্ষমতার দরুন এরা শ্বশুর বাড়িতেই থাকে। এদের ঘরজামাই বলে। এই ধরনের জামাইদের শ্বশুর বাড়িতে মর্যাদা থাকে না। সমাজও এদের ভালো চোখে দেখে না।
শ্বশুরের ছেলে না থাকার কারনে অথবা জামাই এর অক্ষমতার দরুন এরা শ্বশুর বাড়িতেই থাকে। এদের ঘরজামাই বলে। এই ধরনের জামাইদের শ্বশুর বাড়িতে মর্যাদা থাকে না। সমাজও এদের ভালো চোখে দেখে না।
-----‘খাই-খাই’ জামাই----
এরা সর্বদা শ্বশুরের কাছ থেকে
অর্থ ও জিনিসপত্র হাসিল করার ফন্দি আঁটেন। স্ত্রী’দেরও কাজে লাগায়। চার চাকা গাড়ি,
দামি মোবাইল, ল্যাপটপ ইত্যাদি রয়েছে সেই তালিকায়। কিছু প্রাপ্তির পরও এদের খাইখাই
থামে না।
-----‘কুড়ে’ জামাই-----
এরা শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে
সারাদিন শুয়ে থাকে। এদের স্ত্রী’রাই সব কাজ করেন। বিছানাতেই খাবার দিয়ে আসতে হয়।
ঘুমেই এদের চরম শান্তি।
-----‘সবজান্তা’ জামাই----
শ্বশুরে প্রেশারের ওষুধ থেকে
শাশুড়ির হাতে ছ্যাঁকা লেগে যাওয়ার মলম বা শ্যালকের মাস্টার ডিগ্রির ফিজিক্স বইএর
লেখক থেকে শ্যালিকার পাত্র পছন্দ- সবেতেই এই ধরনের জামাইদের জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য
থাকে।
-----‘সর্ব ঘটে কাঁঠালি কলা’
জামাই----
এরা খুব দায়িত্বশীল জামাই। শ্বশুরকে
ডাক্তার দেখানো থেকে শুরু করে শ্যালকের বিয়ে- সব কাজেতেই এরা দণ্ড-মুণ্ডের কর্তা।
এরা কাজ ঠিকমতো মেটাতে সিদ্ধহস্ত। শ্বশুর বাড়ির যেকোন অনুষ্ঠানে, নিত্যপ্রয়োজনে এদের আগে ডাক
পড়ে।
-----‘পাড়া মাতানো’ জামাই----
এরা খুব মিশুকে।
এই জামাইরা শ্বশুর বাড়ি এলে এলে চারদিকে হই হই পড়ে যায়। হাসি-ঠাট্টা করতে করতে পাড়ায় ঘুরে বেড়ায়।
-----ব্যস্ত জামাই-----
এরা সর্বদা কাজ নিয়েই মেতে
থাকেন। শ্বশুর বাড়িতে এসেও অফিস আদালতের কাজ করেন। সর্বদা
স্মার্টফোন, ল্যাপটপ অন থাকে। ঘন ঘন ফোন আসে।
-----‘ফিটফাট’ জামাই----
এরা সবকিছুতে লেটেস্ট ফ্যাশন
ব্যবহার করেন। লেটেস্ট গাড়ি থেকে লেটেস্ট সার্ট। দামি পারফিউম, জুতো ইত্যদি এরা
ব্যবহার করেন। নিখুঁত সাজগোজের মধ্যে নিজেকে টিপটপ রাখে।
-----‘হাই পার্সোন্যালিটি’
জামাই-----
এরা খুব গম্ভীর থাকে। অসম্ভব পার্সোন্যালিটি নিয়ে চলে। কারো সাথে সেভাবে কথা বলে না।
-----‘পাঠক’ জামাই-----
এরা শ্বশুর বাড়িতে গিয়েও পড়াশোনা করে। এরা সবসময় বইয়ে মুখ গুঁজে পড়ে থাকেন। বই
না পেলে খবরের কাগজকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েন।
লেখক- রূপেশ সামন্ত/ ১৭.০৬.২০১৮
No comments:
Post a Comment