Popular Posts

Thursday, 5 December 2024

কোন পথে বাংলাদেশ? ধর্ম, ভাষা, নাকি বিজ্ঞান?

এ কোন পথে বাংলাদেশ?
ধর্ম, ভাষা, নাকি বিজ্ঞান?

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান (যার মধ্যে ছিল বাংলাদেশও) স্বাধীন রাস্ট্র হয়েছিল ধর্মের দাবীতে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন রাস্ট্র হল ভাষার (বাংলা ভাষা) দাবীতে। সেই স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছিল ভারত। 

পরাজিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল নিয়াজি ঢাকার রমনা রেসকোর্সে ৯৩,০০০ সেনাদল সঙ্গে নিয়ে জেনারেল জগজিৎ সিং আরোরার নেতৃত্বাধীন ভারতীয় সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল। বিজয় সুচিত হয়েছিল '৭১ এর ১৬ই ডিসেম্বর। ভারত এই দিনটি "বিজয় দিবস" রূপে আজও পালন করে। ভারতই বাংলাদেশকে প্রথম স্বাধীন ও সার্বভৌম রাস্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছিল।

ধর্ম নিরেপক্ষ ভারত রাস্ট্র আজ বিজ্ঞানে মহাকাশ বিজয় করে চাঁদে মিশন করছে। অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রেও ভারত আজ শক্তিধর রাস্ট্র। আর সেই পাকিস্তান আজ দেউলিয়ার পথে। অন্যদিকে ভাষার ভিত্তিতে মুক্তি যোদ্ধাদের বাংলাদেশ রাস্ট্র গড়ার মুল স্পিরিটটাই আজ ভূলুণ্ঠিত। উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পথ থেকেও দেশটি আজ বিচ্যুতির পথে। এখন বাংলাদেশ বাসীকেই ঠিক করতে হবে, ভারতের মতো বন্ধু দেশের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভাষার পরে বিজ্ঞানের পথে পাড়ি দেবে, নাকি তলিয়ে যাওয়া দেশ পাকিস্তানের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধর্মান্ধতার অন্ধগলি পথে পাড়ি দেবে! শেষ কথা একটাই-

ধর্ম থাকুক যে যার,
দেশটা হোক সবার।
দেশ গড়তে
দাবি একটাই,
ধর্ম নয়
বিজ্ঞান চাই।

© রূপেশ কুমার সামন্ত 

Wednesday, 27 November 2024

ধর্মমঙ্গল কাব্যের কিংবদন্তী লাউসেনের ময়নাগড়ের দুর্ভেদ্য পরীখা

 ময়নাগড়ের দুর্ভেদ্য পরীখা

রূপেশ কুমার সামন্ত

আনুমানিক দশম শতাব্দীর ধর্মঙ্গল মহাকাব্যের লাউসেনের কিংবদন্তী রাজধানী হল ময়নাগড়। গৌড়েশ্বর ধর্মপালের রাজত্বকালে কর্ণসেন তাঁর অধীনে রাজত্ব করতেন। ইছাই ঘোষের সঙ্গে যুদ্ধে কর্ণসেন তাঁর ছয় পুত্রকে হারান। তাঁর স্ত্রী বিষপানে দেহত্যাগ করেন। তখন গৌড়েশ্বর ধর্মপাল নিজের শ্যালিকা রঞ্জাবতীর সঙ্গে কর্ণসেনের বিয়ে দেন। কর্ণসেনকে দক্ষিণবঙ্গের একটি বিশেষ অঞ্চল দান করেন। এটি কর্ণগড় নামে খ্যাত। এই কর্ণগড়ই পরে ময়নাগড় নামে প্রসিদ্ধ হয়। এই রঞ্জাবতীর ছেলে ছিল লাউসেন। এই লাউসেনের কিংবদন্তী রাজধানী হল ময়নাগড়। পরবর্তী কালে  বাহুবলীন্দ্র রাজারা বালিসীতাগড় থেকে নিজেদের রাজধানী ময়নাগড়ে স্থানান্তরিত করেন। কালিদহ ও মাকড়দহ নামে দুটি পরীখা দিয়ে ঘেরা এই ছোট্ট দ্বীপ ময়নাগড়। দ্বীপটি ছিল দুর্ভেদ্য দুর্গ। চারিদিকে ঘেরা ছিল পার্বত্য গুলিবাঁশের ঝাড়ের দুর্ভেদ্য প্রাকৃতিক প্রাচীর।

মঞ্জুশ্রী বাহুবলীন্দ্রের 'চিকের আড়ালে' প্রবন্ধ থেকে জানা যায়, পূর্বে পরীখা দুটি কচুরীপানা ও পদ্মতে পরিপূর্ণ ছিল। কচুরিপানা এত ঘন ছিল যে তার উপর দিয়ে মানুষ বা জন্তু জানোয়ারের চলাফেরা করতে অসুবিধে হত না। পদ্মের ডাটায় জড়িয়ে থাকত সর্পকুল। আর দুই পরীখার মাঝের ঘন জঙ্গলে বিচরণ করত হরিণ, ময়ূর, ছোট বাঘ, বিষধর সাপ।  জলে ভেসে বেড়াত কুমির। একবার জনৈকা দাসী শীতকালে কাজের অবসরে চুল মেলে কালিদহের ধারে ঘুমিয়ে পড়লে সেই অসতর্ক মুহুর্তে কুমির তাকে গভীর জলে টেনে নিয়ে যায়।  গড়ে বসবাসরত প্রতিটি পরিবার এর নিজস্ব নৌকা রাখা ও নৌকা চালানো শেখা বাধ্যতামূলক। 

তথ্যসূত্র

কিল্লা ময়নাচৌরা

সম্পাদনা ড. কৌশিক বাহুবলীন্দ্র

ধর্মমঙ্গল কাব্যের কিংবদন্তী লাউসেনের ময়নাগড়ের বাঁশঝাড়ের দুর্ভেদ্য প্রাকৃতিক প্রাচীর

 ময়নাগড়ের বাঁশঝাড়ের দুর্ভেদ্য প্রাকৃতিক প্রাচীর 

রূপেশ কুমার সামন্ত

আনুমানিক দশঅম শতাব্দীর ধর্মঙ্গল মহাকাব্যের লাউসেনের কিংবদন্তী রাজধানী হল ময়নাগড়। গৌড়েশ্বর ধর্মপালের রাজত্বকালে কর্ণসেন তাঁর অধীনে রাজত্ব করতেন। ইছাই ঘোষের সঙ্গে যুদ্ধে কর্ণসেন তাঁর ছয় পুত্রকে হারান। তাঁর স্ত্রী বিষপানে দেহত্যাগ করেন। তখন গৌড়েশ্বর ধর্মপাল নিজের শ্যালিকা রঞ্জাবতীর সঙ্গে কর্ণসেনের বিয়ে দেন। কর্ণসেনকে দক্ষিণবঙ্গের একটি বিশেষ অঞ্চল দান করেন। এটি কর্ণগড় নামে খ্যাত। এই কর্ণগড়ই পরে ময়নাগড় নামে প্রসিদ্ধ হয়। এই রঞ্জাবতীর ছেলে ছিল লাউসেন। এই লাউসেনের কিংবদন্তী রাজধানী হল ময়নাগড়। পরবর্তী কালে  বাহুবলীন্দ্র রাজারা বালিসীতাগড় থেকে নিজেদের রাজধানী ময়নাগড়ে স্থানান্তরিত করেন। কালিদহ ও মাকড়দহ নামে দুটি পরীখা দিয়ে ঘেরা এই ছোট্ট দ্বীপ ময়নাগড়। দ্বীপটি ছিল দুর্ভেদ্য দুর্গ। চারিদিকে ঘেরা ছিল কাঁটাবাঁশ ঝাড়ের দুর্ভেদ্য প্রাকৃতিক প্রাচীর।

রাজা গোবর্ধনানন্দ ময়নাগড় অধিকার করে সংস্কারের কাজ করেন। তিনি পুরাতন গড় ভেঙে নতুন ও প্রসস্থ গড় নির্মান করেন। গড়ের চারিদিকে পরীখার পার্শে পার্বত্য বাঁশের ঝাড় ঝাড় তৈরি করে দুর্ভেদ্য এক প্রাকৃতিক প্রাচীর তৈরি করেন। এই পার্বত্য বাঁশের ঝাড় এমন ভাবে পরস্পর সংলগ্ন ও জড়িয়ে থাকত যে তা এক নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় তৈরী করত। এই প্রাচীর ভেদ করে লৌহ নির্মিত তীর বা কামানের গোলাও যেতে পারত না। শত্রুপক্ষের অশ্বারোহী সৈনিকও এই প্রাচীর ভেদ করে ঢুকতে পারত না। ১৩৩৯ সালের ভয়ংকর ঝড়ে এই বাঁশঝাড়ের প্রাচীরের প্রভূত ক্ষতিসাধন হয়। বর্তমানে এই বাঁশঝাড়ের বিচ্ছিন্ন কিছু অস্তিত্ব রয়েছে।

তথ্যসূত্র

কিল্লা ময়নাচৌরা, ড. কৌশিক বাহুবলীন্দ্র

ধর্মমঙ্গল কাব্যের কিংবদন্তী লাউসেনের ময়নাগড়ের কদমা ও থালা বাতাসা

 ময়নাগড়ের কদমা ও থালা বাতাসা

রূপেশ কুমার সামন্ত

আনুমানিক দশম শতাব্দীর ধর্মঙ্গল মহাকাব্যের লাউসেনের কিংবদন্তী রাজধানী হল ময়নাগড়। গৌড়েশ্বর ধর্মপালের রাজত্বকালে কর্ণসেন তাঁর অধীনে রাজত্ব করতেন। ইছাই ঘোষের সঙ্গে যুদ্ধে কর্ণসেন তাঁর ছয় পুত্রকে হারান। তাঁর স্ত্রী বিষপানে দেহত্যাগ করেন। তখন গৌড়েশ্বর ধর্মপাল নিজের শ্যালিকা রঞ্জাবতীর সঙ্গে কর্ণসেনের বিয়ে দেন। কর্ণসেনকে দক্ষিণবঙ্গের একটি বিশেষ অঞ্চল দান করেন। এটি কর্ণগড় নামে খ্যাত। এই কর্ণগড়ই পরে ময়নাগড় নামে প্রসিদ্ধ হয়। এই রঞ্জাবতীর ছেলে ছিল লাউসেন। এই লাউসেনের কিংবদন্তী রাজধানী হল ময়নাগড়। পরবর্তী কালে  বাহুবলীন্দ্র রাজারা বালিসীতাগড় থেকে নিজেদের রাজধানী ময়নাগড়ে স্থানান্তরিত করেন। কালিদহ ও মাকড়দহ নামে দুটি পরীখা দিয়ে ঘেরা এই ছোট্ট দ্বীপ ময়নাগড়। দ্বীপটি ছিল দুর্ভেদ্য দুর্গ। চারিদিকে ঘেরা ছিল পার্বত্য গুলিবাঁশের ঝাড়ের দুর্ভেদ্য প্রাকৃতিক প্রাচীর।

এখানে প্রতিবছর রাসপূর্ণিমায় শুরু হয় বিখ্যাত রাসমেলা। এই মেলার মুখ্য আকর্ষণ হল থালা বাতাসা ও কদমা। এই বাতাসা গুলি থালার মতো বড় বড় সাইজের হয়। আর কদমা গুলি বড় বলের ন্যায়। উপকরণ হিসাবে লেবু ও চিনির রস দ্বারা প্রস্তুত 'গাবী'র সঙ্গে হাইড্রো নামক পাউডার অনেকটাই মেশানো হয়। এজন্য এগুলো হালকা, নরম ও সাদা হয়। তবে কদমাতে শুধুমাত্র গাবী মেশানো হয়। পাউডার মেশানো হয় না। কদমা গোল ও কুমড়োর মতো শিরাবিন্যাস যুক্ত হয়। কদম ফুলের মতো দেখতে হওয়ার কারনে এর নাম কদমা। এক একটি কদমার ওজন দেড় থেকে দুই কেজি পর্যন্ত হয়। আর এক একটি থালা বাতাসার ওজন দুই থেকে আড়াই কেজি পর্যন্ত হয়।

তথ্যসূত্র

কিল্লা ময়নাচৌরা, সম্পাদনা . কৌশিক বাহুবলীন্দ্র

ধর্মমঙ্গল কাব্যের কিংবদন্তী লাউসেনের ময়নাগড়ের রাসমেলা

 ময়নাগড়ের রাসমেলা

রূপেশ কুমার সামন্ত

আনুমানিক দশম শতাব্দীর ধর্মঙ্গল মহাকাব্যের লাউসেনের কিংবদন্তী রাজধানী হল ময়নাগড়। গৌড়েশ্বর ধর্মপালের রাজত্বকালে কর্ণসেন তাঁর অধীনে রাজত্ব করতেন। ইছাই ঘোষের সঙ্গে যুদ্ধে কর্ণসেন তাঁর ছয় পুত্রকে হারান। তাঁর স্ত্রী বিষপানে দেহত্যাগ করেন। তখন গৌড়েশ্বর ধর্মপাল নিজের শ্যালিকা রঞ্জাবতীর সঙ্গে কর্ণসেনের বিয়ে দেন। কর্ণসেনকে দক্ষিণবঙ্গের একটি বিশেষ অঞ্চল দান করেন। এটি কর্ণগড় নামে খ্যাত। এই কর্ণগড়ই পরে ময়নাগড় নামে প্রসিদ্ধ হয়। এই রঞ্জাবতীর ছেলে ছিল লাউসেন। এই লাউসেনের কিংবদন্তী রাজধানী হল ময়নাগড়। পরবর্তী কালে  বাহুবলীন্দ্র রাজারা বালিসীতাগড় থেকে নিজেদের রাজধানী ময়নাগড়ে স্থানান্তরিত করেন। কালিদহ ও মাকড়দহ নামে দুটি পরীখা দিয়ে ঘেরা এই ছোট্ট দ্বীপ ময়নাগড়। দ্বীপটি ছিল দুর্ভেদ্য দুর্গ। চারিদিকে ঘেরা ছিল কাঁটাবাঁশ ঝাড়ের দুর্ভেদ্য প্রাকৃতিক প্রাচীর।

  • ১৯৬৬ সাল থেকে বিশেষ সান্ধ্য রাস বা নৈশকালীন বিহার চালু হয়। রাস পূর্ণিমার সন্ধায় শ্যামসুন্দর জিউ দুই রাধিকাকে সঙ্গী করে পরীখার রাজঘাট থেকে নৌকাবিহার করেন। জমকালো সাজানো নৌকায় এই বিহারযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। পরীখার জ্যোতস্নালোকিত শান্ত জলে ভেসে বেড়ান শ্যামসুন্দর।  আতসবাজি আর আলীর বন্যায় চারিদিক ভেসে যায়। বেজে ওঠে শঙ্খ, কাঁসর, ঘন্টা, ঢাক, ঢোল, মৃদঙ্গ, খোল, করতাল। উৎসবের আবেশে রাস পুর্নিমা থেকে শুরু হয় রাসমেলা। লক্ষ মানুষের ভিড়ে সেই মেলা আজও তার ঐতিহ্য বহন করে চলেছে।
তথ্যসূত্র
কিল্লা ময়নাচৌরা, সম্পাদনা ড. কৌশিক বাহুবলীন্দ্র