Popular Posts

Monday 26 August 2024

সুখ (ছোট গল্প)


 প্রতিদিন সকালে পার্কে হাঁটতে আসেন পলাশ। পেশায় ব্যাঙ্কের অফিসার। সবসময় হাসিমুখ। বেশ নম্র-ভদ্র ব্যবহার। সবার সাথে মিষ্টি করে হেসে কথা বলেন। বাড়ি ফেরার সময় নির্দিষ্ট একটি ফুলের দোকান থেকে এক গোছা ফুল কিনে নিয়ে যান। ফুলের দোকানটি ৩০-৩৫ বছরের একটি মেয়ে চালায়।  মেয়েটির নামেই দোকান- 'পিয়ালি ফ্লাওয়ার্স'। দেখেই বোঝা যায় মেয়েটি স্বামীহারা। দোকানে মাঝে মাঝে সাহায্য করে মেয়েটির একমাত্র কন্যা। তাঁর বয়স বছর পনেরো হবে। প্রতিদিন দোকানে গিয়ে পলাশ সৌজন্যবশত বলেন, 'ভালো আছেন?' আবার ফুল নেওয়ার শেষে টাকা মিটিয়ে বলেন, 'ধন্যবাদ'। কিন্তু দোকানদার পিয়ালি প্রতি-সৌজন্যবশত কখনোই ধন্যবাদ জানান না। উলটে মুখের এমনই বিকৃতি করেন যে, পলাশের এই প্রাত্যহিক সৌজন্য জ্ঞাপনে তিনি বিরক্ত। 

কিন্তু অবাক বিষয়, দিনের পর দিন পলাশ এই সৌজন্যবোধটুকু বজায় রেখে চলেছেন। প্রতিদিনই দোকানে গিয়েই পলাশ সেই একই কথা বলেন, 'ভালো আছেন?' ফেরার সময় 'ধন্যবাদ' বলতেও ভুলেন না। বিষয়টি ভালো ভাবেই পর্যবেক্ষণ করেছে দোকানদারের মেয়ে। সে মাকে বলে, 'আমার সাথে কেউ এমন রূঢ় ব্যবহার করলে আমি দ্বিতীয়বার সৌজন্যের ধার ধারতাম না! পলাশ আঙ্কেল অনেক ভালো বলেই আমাদের দোকানে আসে। একটু ভালো ব্যবহার করতে পারো না?'

জ্বলে উঠল পিয়ালি। রাগে গরগর করতে করতে বলল, 'পুরুষ জাতিকে আমার চিনতে বাকি নেই! কোথাও মেয়ে দেখলেই…'

কথা থামিয়ে দিয়ে পিয়ালির মেয়ে বলে, 'বাবা তোমাকে ছেড়ে চলে গেছে বলেই কি সব পুরুষ মানুষ খারাপ?'

-'নাহ! আমিই খারাপ! তাই তো তোর বাবাও ছেড়ে দিয়েছে আমায়', বলেই কাঁদতে শুরু করে পিয়ালি। আর কথা বাড়ায় না মেয়ে।

কয়েক বছর পর বিয়ে হয়ে যায় পিয়ালির মেয়ের। এখন দোকান একা সামলায় পিয়ালি। পলাশ সেই আগের মতোই রোজ সকালে পিয়ালির দোকানে আসে। আর এক গোছা করে ফুল কিনে নিয়ে যায়। এখনো আগের মতোই রোজ আসা যাওয়ার সময় সেই সোজন্য দেখাতে ভোলেন না। আর পিয়ালির বিরক্তি প্রকাশটাও সেই একই ভাবে চলতে থাকে।

একদিন সকালে পিয়ালি দোকানের চেয়ারটায় হেলান দিয়ে বসে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে অত্যন্ত অসুস্থ ও অবসন্ন। ফুল কিনতে গিয়ে পলাশ প্রতিদিনের মতোই বললে, 'ভালো আছেন?'

ধীরে ধীরে চোখ মেলে পিয়ালি বলল, 'ভালো নেই'।

পিয়ালি বলল, 'কদিন ধরেই বুকটা খুব যন্ত্রনা করছে। শ্বাস নিতে পারছি না। মাথার যন্ত্রনা হচ্ছে। খুব ঘাম দিয়ে যাচ্ছে'।

পলাশ জিজ্ঞাসা করল, 'মেয়েকে জানিয়েছেন?'

পিয়ালির চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে এল। অস্ফুট কণ্ঠে বলল, 'মেয়েটাও আর যোগাযোগ রাখে না। সবাই ছেড়ে চলে গেছে'।

পলাশ আস্বস্ত করে বলল, 'চিন্তা করবেন না। আমি তো আছি। চলুন, এখন হাসপাতালে নিয়ে যাই'।

এরপর পলাশ তদারকি করে পিয়ালিকে হাসপাতালে ভর্তি করল। কিছু দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠল পিয়ালি। আবার দোকানদারি শুরু করল। পলাশ প্রতিদিনের মতোই দোকানে ফুল কিনতে বলল, ‘ভালো আছেন'?

পিয়ালি একরাশ কৃতজ্ঞতা ভরে বলল, 'আপনি না থাকলে বোধহয় এই ভালো থাকাটা আর হত না। আচ্ছা, একটা কথা জিজ্ঞাসা করব?'

পলাশ বলল, 'অবশ্যই'।

পিয়ালি বলল, “আচ্ছা আপনার সাথে এত অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছি। বিরক্তি দেখিয়েছি। তবুও মিষ্টি ব্যবহার করেছেন। বিপদে পাশে থেকেছেন। কেন বলুন তো?'

পলাশ একগাল হেসে বললেন, “সৌজন্য, ভালবাসা - এই দুইটি জিনিস একান্ত ভাবে আমার নিজের। আমি কারুর হাতে যেমন আমার সৌজন্য-ভালবাসা ছেড়ে দিই না, তেমনি কারুর দ্বারা প্রভাবিত হয়েও বদলে ফেলি না।  আমি তাই সবার সাথে সমানভাবে হাসিমুখে সৌজন্য দেখিয়ে যাই, সমান ভালবাসা দিয়ে যাই। মানুষটি প্রতিদানে কী দিল, সেটি আমার কাছে মুখ্য নয়।  তাই মনের গভীরে গভীর সুখ অনুভব করতে পারি। তাই বোধহয় আমি খুব সুখীও বটে!'

 


Saturday 9 March 2024

বিস্ময়ের প্রাচীন বৃহৎ শিবলিঙ্গ

বিস্ময়ের প্রাচীন বৃহৎ শিবলিঙ্গ 
© পাঁশকুড়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্য, রূপেশ কুমার সামন্ত 

কথিত আছে, এক জমিদার বাড়ির মন্দিরে প্রতিষ্ঠার জন্য এই বৃহৎ শিবলিঙ্গটি বহু ক্রোশ দূর থেকে আনা হচ্ছিল। জমিদার বাড়ির কর্মচারীরা শিবলিঙ্গটি কাঁধে করে বহন করছিল। পথিমধ্যে তাঁরা ক্লান্ত হয়ে শিবলিঙ্গটি মাটিতে নামিয়ে রেখে বিশ্রাম করছিল। বিশ্রাম শেষে শিবলিঙ্গটি আবার বহন করতে গেলে কিছুতেই আর কাঁধে তুলতে পারল না। শিবলিঙ্গটি প্রচণ্ড ভারি হয়ে যায়। রাত্রে স্বপ্নাদেশ হয়, বাবা শিব এখানেই অবস্থান করবেন। আর কোথাও যেতে চান না। সেই থেকে গোবিন্দনগর অঞ্চলের পূর্ব রাজনগর গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় এই শিবলিঙ্গটি। কালো পাথরের বিরাট আকৃতির শিবলিঙ্গটি দেখলে বিস্ময়ের উদ্রেক হয়। এটি পাঁশকুড়া ব্লকের মধ্যে বৃহৎ শিবলিঙ্গ।

শিবলিঙ্গটি প্রতিষ্ঠিত রয়েছে আটচালা রীতিতে তৈরি এক প্রাচীন মন্দিরে। দক্ষিণমুখী মন্দিরটির দৈর্ঘ ও প্রস্থ যথাক্রমে ১৩ ফুট ও ১২ ফুট। উচ্চতা ২৫ ফুট। চুন-সুরকি দিয়ে তৈরি মন্দিরের গর্ভ গৃহের ছাদ খিলানের উপর ভল্ট করা। মন্দিরটি জরাজীর্ণ ও অশ্বত্থ গাছ দ্বারা বেষ্টিত। অশ্বত্থ গাছটি পুরো মন্দিরটিকে এমন ভাবে আচ্ছাদিত করে ফেলেছে যে, একঝলকে এটিকে বিস্ময়কর বৃক্ষমন্দির বলে মনে হবে। 

মন্দিরে নিত্যপূজা হয়। প্রতিবছর বৈশাখী গাজন মেলা হয়। মনস্কামনা পূরণে দূর-দূরান্তের ভক্তরা এখানে আসে। 

পুস্তক- পাঁশকুড়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্য 
লেখক- রূপেশ কুমার সামন্ত 
প্রাপ্তি স্থান- দিপীকা বুক স্টল, পাঁশকুড়া স্টেশন সংলগ্ন বাজার 
ক্যুরিয়ারে পেতে- 9153099507

Sunday 31 December 2023

পাঁশকুড়ার রেশম ব্যবসায়ীর নামেই নামকরণ হয় কালকাতার কাশিপুর

পাঁশকুড়ার রেশম ব্যবসায়ীর নামেই কলকাতার কাশিপুর নামকরণ 
© রূপেশ কুমার সামন্ত, লেখক, ‘পাঁশকুড়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্য'

প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ইভান কটন এক জায়গায় লিখেছেন, "কাশীপু্রের তীরবর্তী অংশটি নদীর (হুগলি নিদী) তীরবর্তী সবচেয়ে সুন্দর অংশগুলির অন্যতম। এইখানে অনেকগুলি বাগানবাড়ি অবস্থিত। সেই যুগেই কাশীপুর একটি শিল্পাঞ্চল হিসাবে গড়ে ওঠে। এখানে স্থাপিত হয় গভর্নমেন্ট গান ফাউন্ড্রি, স্নাইডার ও রাইফেল শেল কারখানা (কর্নেল হাচিনসন কর্তৃক স্থাপিত) এবং একাধিক চিনিকল ও চটকল”। কাশিপুরেই রয়েছে ভারত সরকারের বিখ্যাত 'গান এন্ড শেল ফ্যাক্টরি'। এই ফ্যাক্টরির স্থানেই ছিল ব্রিটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মূলত রেশমজাত সুতার গুদাম। আঠারো শতকের মাঝামাঝি সময়ে রেশম উৎপাদনের অন্যতম কেন্দ্র ছিল তৎকালীন রাধানগর (ঘাটাল), কুতুবপুর, নাড়াজোল, কাশিজোড়া পরগনা (পাঁশকুড়া)। এই অঞ্চল গুলিতে যে উন্নতমানের রেশম চাষ হত, তা জানা যায় ও’মালির ‘বেঙ্গল ডিষ্ট্রিক্ট গেজেটিয়ার- মেদিনীপুর’ গ্রন্থ থেকে। অর্থ্যাৎ ঘাটাল, দাসপুর, নাড়াজোল, পাঁশকুড়া জুড়ে এক বৃহৎ অঞ্চলে উন্নতমানের রেশম চাষ হত। এতদঞ্চলের রেশম ব্যবসায়ীদের গগনচুম্বী সমৃদ্ধি অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল। পাঁশকুড়ার কাশিনাথ বর্মা ছিলেন এমনই এক ধনী রেশম ব্যবসায়ী। তাঁর বাড়ি ছিল ততকালীন কাশিজোড়া পরগণার রাজবল্লভপুর গ্রামে, যা বর্তমানে পাঁশকুড়ার রঘুনাথবাড়ি গ্রামপঞ্চায়েতের অবস্থিত সুন্দরনগর গ্রাম নামে পরিচিত। এই কাশিনাথ বর্মা একদিকে যেমন সমৃদ্ধ রেশম ব্যনসায়ী ছিলেন, অন্যদিকে তেমন রাজা সুন্দরনারায়ণ রায়ের 'কলিকাতার এজেন্ট' ছিলেন। ব্যবসায়িক সূত্রে তিনি কলকাতার কাশিপুরে বাস করতেন। তাঁরই নাম অনুসারে স্থানটির নাম হয় কাশিপুর। এবিষয়ে ২৮/১২/১৯৮০ তারিখে প্রকাশিত 'যুগান্তর' পত্রিকার একটি প্রতিবেদনের কিয়দংশ উল্লেখ্য- 'দমদম বিমান ঘাঁটির একটি অংশ পরিচিত কাশীপুর নামে। ১৭৭০ সালের কোন এক সময়ে মেদিনীপুরের রাজবল্লভপুর গ্রামের (সুন্দরনগর) রেশম ব্যবসায়ী কাশীনাথ বর্মা এখানে এসে বাস করতে থাকেন। তাঁর নাম থেকে হয় কাশীপুর। কাশীপুর গান এন্ড শেল ফ্যাক্টরির জায়গায় ছিল কোম্পানির সুতা গুদাম'।
ছবি- ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত

পুস্তক- “পাঁশকুড়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্য”
লেখক- রূপেশ কুমার সামন্ত 
পুস্তক প্রাপ্তিস্থান- দিপীকা বুক স্টল 
পাঁশকুড়া স্টেশন সংলগ্ন বাজার 
অনলাইন / ক্যুরিয়ার- 9153099507

Thursday 28 December 2023

Panskura Fire-testing Range Wall

ভারত-চিন যুদ্ধের ইতিহাস বুকে আজও দাঁড়িয়ে কনকপুরের ফায়ার-টেস্টিং রেঞ্জ ওয়াল
© রূপেশ কুমার সামন্ত 

সীমানা নিয়ে বিরোধ থেকে ১৯৬২ সালে ভারত-চিন যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। চিন তিব্বত দখল করার পর ভারতের বর্তমান অরুণাচল প্রদেশ ও আকসাই চীনকে চিন তাদের অন্তর্ভুক্ত এলাকা বলে দাবী করে। সেই নিয়েই যুদ্ধের সূত্রপাত। চিনের এক তরফা আগ্রাসন রুখতে ভারত তার সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। সেই লক্ষ্যে কলেজ ছাত্রদের বাধ্যতামূলক মিলিটারি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। মিলিটারি প্রশিক্ষণের অন্যতম অংশ ছিল বন্দুক চালনার প্রশিক্ষণ দেওয়া। সেই প্রকল্পে পাঁশকুড়া বনমালি কলেজের ছাত্রদের মিলিটারি প্রশিক্ষণ দিতে পাঁশকুড়া পৌরসভার কনকপুরের ফাঁকা মাঠে মিলিটারি ট্রেনিং ক্যাম্প তৈরি করা হয়। নির্মান করা হয় একটি উঁচু চওড়া দেওয়াল। এই দেওয়ালকে নিশানা করে বন্দুক চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। এই দেওয়ালটিকে ফায়ার টেস্টিং রেঞ্জ ওয়াল বলা হয়। ভারত-চিন যুদ্ধের ইতিহাস জড়িত এই ওয়াল বর্তমানে পরিত্যক্ত। জঙ্গল-আগাছার আগ্রাসনে তা ধ্বংসের প্রহর গুনছে। কারুর কোন ভ্রুক্ষেপ নেই সংরক্ষণের। ইতিহাসের শেষ চিহ্নটুকু শুধু মুছে যাওয়ার অপেক্ষা।

পুস্তক- "পাঁশকুড়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্য"
লেখক- রূপেশ কুমার সামন্ত 

পুস্তকটির প্রাপ্তিস্থান- দিপীকা বুক স্টল
পাঁশকুড়া স্টেশন সংলগ্ন বাজার
অনলাইন/ ক্যুরিয়ারে পেতে- 9153099507
#regionalhistory #historyfacts #history

Sunday 14 November 2021

গনগনি- বাংলার গ্র‍্যান্ড ক্যানিয়ন

 গনগনি- বাংলার গ্র‍্যান্ড ক্যানিয়ন

©রূপেশ সামন্ত


নদীর পাড়ে ছিল এক বিরাট রাক্ষস। নাম তার বকরাক্ষস। সে প্রতিদিন একজন করে মানুষকে খেত।

তার আহার হিসাবে গ্রামের একজন করে মানুষ তার কাছে পালা করে যেত। একদিন এক গরীব ব্রাহ্মনের পালা পড়ল।

সে নদীর পাড়ে বসে দুঃখে কষ্টে কাঁদতে শুরু করল। অজ্ঞাতবাসে ঘুরতে ঘুরতে মহাভারতের যুধিষ্ঠিরের নজরে পড়ল এই দৃশ্য। যুধিষ্ঠির সমস্ত ঘটনা শোনার পর ভীমকে বকরাক্ষস বধ করার জন্য নির্দেশ দিলেন। প্রবল যুদ্ধের পর ভীম বকরাক্ষসকে বধ করেন। ভীম ও রাক্ষসের প্রবল দাপাদাপিতেই এই গিরিখাতের সৃষ্টি হয়। অনেকে সাদা অস্থির ন্যায় দেখতে প্রস্তরখণ্ডগুলিকে বকরাক্ষসের অস্থি-পিঞ্জর বলে অভিহিত করেন। শুধু মহাভারতীয় এই কিংবদন্তী নয়, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গনগনির শিলাবতী নদীর পাড়ের উঁচুনিচু পাথরের উপত্যকার সৌন্দর্য স্থানটিকে জনপ্রিয় করে তুলেছে।

মহাভারতের সঙ্গে স্থানটির কোন প্রত্যক্ষ ঐতিহাসিক সম্পর্ক আছে কিনা জানা নেই, তবে জল-আবহাওয়ার প্রত্যক্ষ প্রভাবে যে এই অপরূপ সুন্দর দৃশ্যপটের সৃষ্টি হয়েছে তা অস্বীকার করার জায়গা নেই। 

জলের স্রোত ও বাতাসের ক্রমাগত ঘর্ষণের ফলে এইরূপ গিরিখাত বা ক্যানিয়নের সৃষ্টি হয়েছে। একে আরিজোনার গ্র‍্যান্ড ক্যানিয়নের সঙ্গে তুলনা করা হয়। গনগনিকে 'বাংলার গ্র‍্যান্ড ক্যানিয়ন' বলা হয়। লাল-হলুদের ঢেউ খেলানো পাথুরে প্রান্তর, কাজুবাদাম গাছের সারি, শাল পিয়ালের দোলা, তালের সারি, শিলাবতীর কুলকুল প্রবহমানতা সৌন্দর্য প্রিয় মানুষকে টেনে আনে এখানে। 

শুধু গনগনির গিরিখাত নয়, পাশাপাশি রয়েছে বেশকিছু প্রাচীন ও প্রসিদ্ধ মন্দির। রয়েছে প্রসিদ্ধ বারোশিব ও লক্ষ্মীজনার্দন মন্দির।

গড়বেতার সত্যনারায়ণ মোড়ে এই মন্দির গুলির অবস্থান। এখানে সারিবদ্ধভাবে রয়েছে বারোটি শিব মন্দির।

সেগুলি হল বৈদ্যনাথ, অমরেশ্বর, মহাকাল, মল্লিকার্জুন, সোমনাথ, ভীমশংকর, রামেশ্বর, নাগেশ্বর, বিশ্বেশ্বর,  এম্যকেশ্বর, কেদারনাথ ও ঘুশ্নেশ্বর। পাশেই রয়েছে একরত্ন লক্ষ্মীজনার্দন মন্দির। মন্দিরগুলি পঞ্চরথের শিখর দেউল রীতিতে নির্মিত। আনুমানিক ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ মন্দির গুলি নির্মিত। অপরূপ সুন্দর ও প্রসিদ্ধ এই মন্দিরগুলি মনকে প্রসন্ন করবেই। 

পাশাপাশি প্রসিদ্ধ মহাশক্তি সর্ব্বমঙ্গলা মন্দিরটি একটি প্রাচীন কীর্তি। প্রতিষ্ঠাকাল জানা যায় না। কেউ কেউ বলেন, বগড়ীর প্রথম রাজা গজপতি সিংহ প্রতিষ্ঠা করেন মন্দিরটি।

আবার কেউ কেউ বলেন, মহাভারতীয় কালে উজ্জয়নীপতি রাজা বিক্রমাদিত্যের রাজত্বকালে জনৈক সিদ্ধ পুরুষ দেবীমূর্তির প্রতিষ্ঠা করেন। কিংবদন্তি রয়েছে, উজ্জয়নিপতি রাজা বিক্রমাদিত্য এখানে এসে শব সাধনা করেগিয়েছেন।

পাশাপাশি রয়েছে 'ঘটি' শিবের মন্দির। মন্দিরে রয়েছে বিরাট শিবলিঙ্গ।

কিংবদন্তী রয়েছে, এই শিবলিঙ্গ নাকি প্রতিদিন বড় হত। ব্রাহ্মণের পূজা করতে অসুবিধা হচ্ছিল। তাই তিনি একদিন শিবলিঙ্গের মাথায় ঘটি দিয়ে আঘাত করেন। ফলে সেই অবস্থায় শিবলিঙ্গটি মাথায় বিকৃতি  নিয়ে রয়েছে। 

পাশাপাশি চিংড়িবাঁধের কাছে রয়েছে শৈলেশ্বর জিউ শিব মন্দির, ভদ্রকালী ও ভদ্রকেশ্বর শিব মন্দির। শিলাবতীর তীরে এই মন্দিরগুলি অপরূপ সুন্দর।


পথনির্দেশ 

দক্ষিন-পূর্ব রেলের হাওড়া থেকে ট্রেনে গড়বেতা স্টেশন যেতে হবে। পথ প্রায় ১৭৪ কিমি। সড়ক পথেও যাওয়া যাবে। পুরো পথ চারচাকা চলাচলের যোগ্য। গড়বেতা স্টেশন থেকে টোটো বা অটো করে দর্শনীয় স্থানগুলিতে যাওয়া যাবে।

রাত্রিবাসের জন্য গড়বেতা স্টেশন সংলগ্ন বেশকিছু ছোট বড় হোটেল রয়েছে। স্টেশন থেকে গনগনির ক্যানিয়ন যেতে টোটো ভাড়া জন প্রতি ১৫/- টাকা। গনগনির ক্যানিয়ন সহ অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলি দেখার জন্য স্টেশন থেকে টোটো বা অটো বুক করে নেওয়াই ভালো। সেক্ষেত্রে ভাড়া লাগবে ৩০০/- থেকে ৪০০/- টাকা।

©রূপেশ সামন্ত