প্রসঙ্গ বাংলাদেশ: আওয়ামিলীগকে নিষিদ্ধকরণ এক রাজনৈতিক দেউলিয়াপনার নিদর্শন

 প্রসঙ্গ বাংলাদেশ:

আওয়ামিলীগকে নিষিদ্ধকরণ এক রাজনৈতিক দেউলিয়াপনার নিদর্শন 



✍️নিষিদ্ধকরণের মাধ্যমে কোন প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বা মতাদর্শকে মুছে ফেলা যায় না। বরং তা গুমরে গুমরে আরও তীব্র রূপে একদিন বিস্ফোরিত হয় অথবা অন্য কোন নামে আরও সংগঠিত বহিঃপ্রকাশ ঘটে। অন্যদিকে যারা রাজনৈতিক ক্ষমতাবলে নিষিদ্ধকরণের মতো জঘন্য কাজটি করেন, তাঁরা তাদের রাজনৈতিক দুর্বলতা ও হতাশার বহিঃপ্রকাশ তাঁদের অজ্ঞাতেই জনসাধারণের কাছে ঘটিয়ে ফেলেন। তাই বিরোধী দলের রাজনৈতিক মোকাবিলা করাটাই অনেক বেশি রাজনৈতিক পরিপক্কতার পরিচয়, যা একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য অপরিহার্য।


বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ একটি ঐতিহাসিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত নাম। ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই দল দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তী রাষ্ট্র গঠনে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। এমন একটি দলকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব বা উদ্যোগ নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি অবজ্ঞার পরিচয় বহন করে।


রাজনৈতিক বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্রের মেরুদণ্ড:

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ভিন্নমত ও বহু দলীয় রাজনীতি স্বাভাবিক ও জরুরি। একটি জনপ্রিয়, বহুসমর্থিত রাজনৈতিক দলকে কেবলমাত্র মতবিরোধ বা ক্ষমতা পালাবদলের লড়াইয়ের কারণে নিষিদ্ধ করার চিন্তা গণতন্ত্রের আত্মাহুতি দেওয়ার নামান্তর। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার অর্থ শুধু একটি দল নয়, বরং ইতিহাস, একটি আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকারকে অস্বীকার করা।


একটি দলকে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া সাধারণত আসে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, রাষ্ট্রদ্রোহ কিংবা সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রেক্ষাপটে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার নামে এ ধরনের পদক্ষেপ নিলে তা দমনমূলক রাষ্ট্রযন্ত্রের জন্ম দেয়, যেখানে আইন নয়, রাজনৈতিক স্বার্থই মূল চালিকা শক্তি হয়ে ওঠে। এটি শুধু যে এক ধরনের দেউলিয়াপনা তা নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।

 রাজনৈতিক মতভেদ থাকতেই পারে, কিন্তু এসব মোকাবেলার জায়গা জনগনের দরবার,  সংসদ ও ব্যালট বাক্স। সেন্সর বা নিষেধাজ্ঞা নয়। একটি শক্তিশালী বিরোধী দল থাকাই সরকারকে জবাবদিহিতার মধ্যে রাখে। আর আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার মানে পুরো রাজনীতিকে একমুখী ও একনায়কতান্ত্রিক পথে ঠেলে দেওয়া।


আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া;

 একটি ঐতিহাসিক ও অতীত-ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার কোনো পদক্ষেপ নিলে আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। একটি দলের কিছু নেতা বা নীতি খারাপ হলেও তার জন্য আইন আদালত রয়েছে। সেসব ক্ষেত্রে আওয়ামিলীগের বিরুদ্ধে এখনও সেরকম কিছু আইনী প্রক্রিয়া চোখে পড়েনি। এই দলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিরূপ প্রতিক্রিয়াও চোখে পড়েনি। 


সর্বপোরি বিষয়টিকে বাংলাদেশের জনগন কি চোখে দেখছে সেটাই বড় বিষয়। যাই ঘটুক এই রকম একটি অপরিপক্ক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত শুধু সিদ্ধান্তকারীদেরই শুধু দেউলিয়াপনা প্রকাশ করে না, একটি রাস্ট্রও রাজনৈতিক দেউলিয়া হওয়ার দিকে এগিয়ে যায়।


 ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যেকোনো মত বা দলকে দমন করে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করা যায় না — বরং তা নতুন রূপে, আরও তীব্রভাবে ফিরে আসে। তাই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা হোক রাজনৈতিক ময়দানে, নিষেধাজ্ঞা বা দমন নীতিতে নয়।


©  রূপেশ সামন্ত

Comments

Popular posts from this blog

Essay [রচনা]- মাহে রমযান

250 YEARS OLD BEGUNBARI KALI PUJA, PANSKURA, WB, INDIA

----- HISTORY OF PANSKURA [WB, INDIA] [PART-1] -----