Popular Posts

Saturday 19 May 2018

Essay [রচনা]- মাহে রমযান


-----মাহে রমযান-----
শ্রী রূপেশ কুমার সামন্ত/


রমযানের শান্তির বানী, নব-প্রভাতের বানী অনুরণিত হয় কাজী নজরুল ইসলামের লেখনীতেও। ‘কেন জাগাইলি তোরা’ শীর্ষক কবিতায় মাহে রমজান প্রসঙ্গ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ-
“মাহে রমজান এসেছে যখন, আসিবে ‘শবে কদর’
নামিবে রহমত এই ধূলির ধরার পর।… … …
আমি দেখিয়াছি – আসিছে তোদের উৎসব-ঈদ-চাঁদ, –
ওরে উপবাসী ডাক তাঁরে ডাক, তাঁর নাম লয়ে কাঁদ।
আমি নয় ওরে আমি নয় – ‘তিনি’ যদি চান ওরে তবে
সূর্য উঠিবে, আমার সহিত সবার প্রভাত হবে।”
রমযান মাস মুশলিমদের একটি ধর্মীয় পবিত্র মাস। কিন্তু আপামর জনসাধারণের মনে এই পবিত্র মাসটি সম্পর্কে রয়েছে নানান কৌতুহল। এটি মুশলিমদের ধর্মীয় আচার হলেও এর বিশ্বজনীন তাৎপর্য অসীম। 

-----‘মাহে রমযানে’র অর্থ কি?
‘মাহে রমযান' অর্থ রমযানের মাস। 'রমযান' শব্দটি আরবি 'রময' শব্দ থেকে এসেছে। 'রময' অর্থ দহন বা পোড়ানো। রমযান মাসে মাসে রোজা পালন করলে মানুষের মধ্য থেকে লোভ, লালসা, পাপ, হিংসা ও বিদ্বেশ দূর হয়। রোজা পালনকারী রমযানে তার সব পাপ মুছে ফেলার পবিত্র সুযোগ লাভ করেন। রমযান মাসে পালিত ইসলামিক উপবাসকে রমজানের রোজা বলা হয়। রমজান মাসে রোজাপালন ইসলামের পঞ্চ-স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম। এই পাঁচটি স্তম্ভের উপর ইসলামের বুনিয়াদ স্থাপিত। এগুলো হলো- .ঈমান . নামাজ . যাকাত . রোজা . হজ্জ। রমজান মাস চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে ২৯ অথবা ত্রিশ দিনে হয়ে থাকে। এই মাসে মুসলমানগণ ধর্ম চর্চার অংশ হিসেবে ভোর থেকে সুর্যাস্তের পর পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার স্ত্রী সংসর্গ বর্জন করে থাকেন। একে আরবীতে 'সিয়াম' বলে এদেশে একে 'রোজা' বলে।


-----‘রমযানে’র গূরুত্ব কি?
রমযানের গুরুত্ব অপরিসীম। পবিত্র কুরআন ও হাদিসের মাধ্যমে এর গুরুত্ব সম্পর্কে জানা যায়। এ মাসে জান্নাতের [Paradise] দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের [Hell] দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। বিশ্বাস মতে, প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী এই বলে ঘোষণা দিতে থাকেন, ‘হে সৎকর্মের অনুসন্ধানকারী, তুমি অগ্রসর হও! হে অসৎ কাজের অনুসন্ধানকারী, তুমি থেমে যাও!’ এ মাসের প্রতি রাতে সৃষ্টিকর্তা জাহান্নাম থেকে বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।


-----কাদের ক্ষেত্রে রমযানের রোজা শিথিল করা হয়েছে?
বৃদ্ধ, অসুস্থ, গর্ভবতী, সদ্যপ্রসবা, ডায়বেটিক রোগী, ঋতুমতী নারীদের ক্ষেত্রে রমযানের রোজা শিথিল করা হয়েছে।. নাবালক শিশুদের ওপর রোজা শিথিল অসুস্থ ব্যক্তি, যিনি রোজা রাখতে অক্ষম, তিনি কোনও দরিদ্র ব্যক্তিকে খাদ্য দান করলে তাঁর রোজা হয়ে যাবেঅনিচ্ছাকৃত রোজাভঙ্গ শাস্তিযোগ্য নয়

-----ইফতার কি?
সূর্যাস্তের পরে অর্থাৎ মাগরিবের নামাযের আজান শুনে ইফতার হয়। রমযান মাসে মুসলিমগণ সারাদিন রোজা রাখার পর, সূর্যাস্তের সময় যে খাবার গ্রহণ করেন, তাকে ইফতার বলে। রমযান মাসে সবাই একত্রে বসে ইফতার গ্রহণ করেন। খেজুর খাওয়ার মাধ্যমে ইফতার শুরু করা নিয়ম। আমাদের এখানে বেশির ভাগ স্থানে জল খাবার মাধ্যমে, আবার অনেক স্থানে ভেজা চাল মুখে দেবার মাধ্যমে ইফতারি শুরু করা হয়। রমযান মাসে সন্ধ্যায় নামাযের আগে বাজারে ইফতার বিক্রি হয়। ইফতারের খাবার হিসাবে পিঁয়াজি, বেগুনি, ছোলা, মুড়ি, জিলাপি, ফল ইত্যাদি বেশ জনপ্রিয়।


-----ঈদ-উল-ফিতর কি?
রমযানের রোজা শেষ হয় ঈদ-উল-ফিতরের মধ্য দিয়ে। ঈদ-উল-ফিতর দান, সংযম, আত্মশুদ্ধির এবং রোজাদারের জন্য আনন্দের উৎসব। দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখা বা সিয়াম সাধনার পর মুসলমানেরা এই দিনটি ধর্মীয় কর্তব্যপালনসহ খুব আনন্দর সাথে পালন করে থাকে। পরস্পর সম্প্রীতির কোলাকুলিতে মেতে ওঠে। 

-----প্রতিবছর ‘রমযানে’র তারিখ পরিবর্তন হয় কেন?
রমযান হল ইসলামিক বর্ষপঞ্জিকা অনুসারে নবম মাস। প্রতিবছর ইসলাম ধর্মীয় দিবস ও মাস ১১ দিন করে এগিয়ে আসে। এর পেছনে কোন রহস্য নেই, রয়েছে জ্যোতির্বিজ্ঞানের নিখুঁত হিসাব। আরবি ক্যালেন্ডার বা হিজরি সন ইংরেজি বা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের বছরের চেয়ে প্রায় ১১ দিন কম। হিজরি সনের প্রতিটি মাস শুরু হয় অমাবস্যার পরের সন্ধ্যায় প্রথম চাঁদ দেখার মধ্য দিয়ে। চাঁদ পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করতে যে সময় নেয়, সেটা ইংরেজি ক্যালেন্ডারের সম্য অনুযায়ী প্রায় সাড়ে ২৯ দিনের সমান। কিন্তু যেহেতু মাসের হিসাবে দিনের ভগ্নাংশ থাকে না, তাই আরবি মাস চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২৯ বা ৩০ দিনে হয়। ১২ মাসে মোট দিনের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৯.৫ x ১২ = ৩৫৪ দিন। কিন্তু ইংরেজি ক্যালেন্ডার হিসাব করা হয় সৌরবছর দিয়ে। পৃথিবী সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরে আসতে প্রায় ৩৬৫ দিন লাগে। প্রার্থক্য ৩৬৫ – ৩৫৪ = ১১ দিন। তাই রমজান বর্ষপঞ্জী হিসেব করে প্রতিবছর ১১ দিন এগিয়ে আসে।

-----‘রমযান মাস’ অত্যন্ত পবিত্র কেন?
রমযান মাস অন্য মাসের মত কোন সাধারণ মাস নয়। এটি অত্যন্ত পবিত্র এবং পূণ্যের মাস। এই পুরো মাসটিই ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে পূর্ণ। মাসে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে মাসে জান্নাতের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়। তাই মাসে সমগ্র মুসলিম বিশ্বে এক পবিত্র ভাবধারা বিরাজ করে। সমগ্র মুসলিম ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিগন এই পবিত্র মাসে মহান সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভের চেষ্টা করেন। মাসে জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ রাখা হয় এবং শয়তান গুলোকে বন্দী রাখা হয়। তাই মাসে ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিগনের হৃদয়, মন আত্মা মহান সৃষ্টিকর্তার দিকে নিবিষ্ট থাকে।

-----রমযানে হাজার মাসের চেয়েও উত্তম রাত কোনটি?
এই মাসে এমন এক রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এই রাতটির নাম ক্বদরের রাত। মাসের শেষ দশ দিনের রাত সমূহের মধ্যেই ক্বদরের রাত নিহিত থাকে। পাপ মাফ এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির আশায় সময় মুসলমানরা মসজিদে মসজিদে এতেকাফ করে থাকেন। ক্বদরের রাত ছাড়াও মাসের প্রতিটি রাত, প্রতিটি দিন এবং প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত পবিত্রতাপূর্ণ। বিশ্বাস মতে, যে ব্যক্তি ক্বদরের রাত থেকে বঞ্চিত হয় তার মত হতভাগ্য আর নেই। 

-----রমযান মাসের তিনটি ভাগ কি কি?
রমযান মাসকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। রমযান মাসের প্রথম দশ দিন রহমতে পূর্ণ থাকে। দ্বিতীয় দশদিন ক্ষমা লাভ এবং শেষ দশ দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের উপায়। তবে এ সবকিছুই নির্ভর করে এই পবিত্র মাসের মাহাত্ম্য ও তাৎপর্যকে যথাযথভাবে উপলব্ধি করার উপর।

-----রোজার তাৎপর্য কি?
মনে রাখতে হবে, ‘সিয়াম’ বা ‘রোজা’ শুধু মাত্র সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত না খেয়ে থাকার নাম নয়, বরং এটি রীতিমত একটি সাধনার নাম। রোজার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তাক্বওয়ার গুণাবলী অর্জন করা। এর অর্থ হচ্ছে সৃষ্টিকর্তাকে ভয় করে, ভালোবেসে চলা, তার আদেশ নিষেধ মেনে চলা, আত্মশুদ্ধি করা। যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলে এবং মিথ্যা কাজ করে, তার রোজা রেখে পানাহার ত্যাগ করায় কোন অর্থ নেই। কারণে আত্মসংযম হল রোজা রাখা বা সিয়াম সাধনার মূল কথা। সমস্ত লোভ, লালসা থেকে বেঁচে থাকা রমযানের বড় শিক্ষা। এজন্য যথেষ্ট ধৈর্য্য প্রয়োজন। প্রয়োজন পরস্পরের প্রতি সহনশীল হওয়া, সহমর্মিতা প্রকাশ করা।
 
-----রমজান মাস কি সত্যিই দোয়া কবুলের মাস?
রমজান হলো দোয়া কবুলের মাস। বিশ্বাস মতে, এই মাসে প্রত্যেক মুসলিমের দোয়া কবুল করা হয়। রমজানের প্রতি রাতে দিনে সৃষ্টিকর্তা বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন এবং প্রতি রাত দিবসে মুসলিমের দোয়া-প্রার্থনা কবুল করা হয়।

-----রমযান এ কি বার্তা আমরা পাই?
ইদানিং আমাদের দেশে নাগরিকদের মধ্যে হিংসা, বিদ্বেষ রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। রমযানের সঠিক চেতনা তথা ভ্রাতৃত্ববোধ, সহনশীলতা, ধৈর্য্যই আমাদেরকে এই সংকট থেকে রেহাই দিতে পারে। কবি ফজল-এ-খোদার ভাষাতেই হোক অঙ্গীকার-
“হে রমজান হে রমজান!
দাও স্বস্তি, দাও শান্তি
ধরণীতে করো মনোরম
তোমারে হেরিয়া বিশ্ব বিবেক
সংযম হোক দুর্দম...”

বি.দ্র. - পরামর্শ ও সংশোধনী আন্তরিক কাম্য। ধন্যবাদ।
লেখক- শ্রী রূপেশ কুমার সামন্ত/ ২৫.০৪.২০১৮

1 comment:

  1. why dont you write it as real essay....you just writ like a peragraph ... over all good

    ReplyDelete