Wednesday, 17 October 2018

কুমারী পূজা

-----কুমারী মেয়েদের রক্ষা করাই কুমারী পূজার মূল উদ্দেশ্য-----
লেখক- রূপেশ সামন্ত


কুমারী পূজা দুর্গোৎসবের এক বর্ণাট্য অনুষ্ঠান পর্ব। বিশেষত কুমারীকে দেবী দুর্গার পার্থিব প্রতিনিধি হিসেবে পূজা করা হয়ে থাকে।
-----কুমারী পূজা কি?----
কোন কুমারী মেয়েকে দেবী দুর্গার সামনে মাতৃভাবে পূজা করাকে কুমারী পূজা বলে। দুর্গাপূজার মহাষ্টমী পূজার শেষে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
-----পৌরাণিক আঙ্গিক----
একদা কোলাসুর স্বর্গ-মর্ত্য অধিকার করে নিয়েছিল। দেবগন বিপন্ন হয়ে পড়েন। তাঁরা মহাকালীর শরণাপন্ন হন। তখন দেবী পুনর্জন্মে কুমারীরূপে আসেন এবং কোলাসুরকে বধ করেন। তখন থেকেই মর্ত্যে কুমারী পূজার প্রচলন শুরু হয়। লেখক- রূপেশ সামন্ত
----পূজার ‘কুমারী’ হওয়ার যোগ্যতা----
কুমারী পূজার জন্য মেয়েকে ষোল বছরের কম বয়সী হতে হবে। অবশ্যই মেয়েকে অরজঃস্বলা হতে হবে। জাতি, ধর্ম বা বর্ণ নির্বিশেষে যে কোন কুমারী মেয়েই কুমারী পূজার যোগ্য হতে পারে। বেশ্যাকুল জাতির কন্যাও কুমারী পূজার ‘কুমারী’ হতে পারে। তবে আগের দিনে মূলত ব্রাহ্মণ কন্যাই পূজিত হত।
----অন্য কোথায় কুমারী পূজা?----
দূর্গা পূজার সময় ছাড়াও কালীপূজা, জগদ্ধাত্রীপূজা এবং অন্নপূর্ণা পূজা উপলক্ষে কুমারী পূজা হয়। এছাড়াও কামাখ্যা শক্তিক্ষেত্রেও কুমারী পূজার প্রচলন রয়েছে। লেখক- রূপেশ সামন্ত
----দার্শনিক তত্বের আলোকে পর্যালোচনা----
কুমারী কন্যা ভবিষ্যতের নারীর বীজাবস্থা মাত্র। বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড তিনটি শক্তির সমাহার- সৃষ্টি, স্থিতি ও লয়। এই তিনটি শক্তিই সুপ্ত অবস্থায় কুমারী কন্যার মধ্যে নিহিত রয়েছে। তাই কুমারী কন্যা ছাড়া তিনটি শক্তিই আধারহীন হয়ে পড়বে এবং বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডও অস্তিত্বহীন হবে। বর্তমানের কুমারী কন্যা, যে ভবিষ্যতের নারী, তাকে চোখের মনির মতো রক্ষা করতে হবে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই। সেই কারনেই দেবীভাব আরোপ করে কুমারী কন্যার সাধনা করা হয়। এক্ষেত্রে কুমারী কন্যা ভোগ্যা নয়, পূজ্যা। বৃহত্তর অর্থে নারীও ভোগ্যা নয়, এই বিষয়টিও প্রতিষ্ঠা করাও উদ্দেশ্য। এ ভাবনায় ভাবিত হওয়ার মাধ্যমে আমরা রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবকে নিজের স্ত্রীকে ষোড়শীজ্ঞানে পূজা করতে দেখেছি। একজন নারীর শৈশবে রক্ষাকর্তা বাবা-মা, যৌবনে রক্ষাকর্তা স্বামী ও বৃদ্ধাবস্থায় রক্ষকর্তা সন্তান। কিন্তু কন্যাবস্থায় সে অত্যন্ত দুর্বল ও বোধহীন হয়। তাই সে সবচেয়ে অরক্ষিতও হয়। সেই কারনে কুমারী পূজার মাধ্যমে কন্যাকে দেবীভাবে ও শ্রদ্ধাসনে বসানো হয়েছে। ভবিষ্যতের নারীকে রক্ষা করাই উদ্দেশ্য। আবার জাতি, ধর্ম বা বর্ণ নির্বিশেষে যে কোন কুমারী মেয়েকেই কুমারী পূজার যোগ্যতা দানের মধ্য দিয়ে সম্প্রীতির দিকটিও তুলে ধরা হয়েছে। সর্বোপরি কুমারী পূজা মানবাতাবাদী ধর্মাচরন বলেই আমার মনে হয়েছে। লেখক- রূপেশ সামন্ত। ছবি সৌজন্য- বকুল ফুল
তথ্য সূত্র- কুমারী পূজা প্রয়োগ, দেবী পুরান, উইকিপিডিয়া। ছবি সৌজন্য- বকুল ফুল

Panskura Durga Puja Rout-map

পাঁশকুড়ার পূজা দেখার একটা রুটম্যাপ। -👇
শুরু করুন মেচোগ্রামের পূজা👉পৌরসভার পাশে নারান্দা ইউথ এর পূজা👉বাডলি বার্ট মাঠের পূজা(এখানে কিছু খেতে পারেন)👉পুরাতন বাজার ক্যানেল পাড়ের পূজা👉পি ডব্লিউ ডি মাঠের পূজা👉বালিডাংরির পূজা👉প্রতাপ পুরের পূজা👉সুরার পুলের পূজা(এখানে কিছু খেতে পারেন)👉বাজার ব্যবসায়ী সমিতির পূজা👉পুরাতন বাস স্ট্যান্ড এর পূজা(এখানে কিছু খেতে পারেন)👉রেল কলোনির পূজা👉ত্রিকোন পার্ক এর পূজা(এখানে কিছু খেতে পারেন)👉লেভেল ক্রসিং এর পূজা (শেষ)

👉👉পাঁশকুড়ার কিছু রেস্টুরেন্ট ১. নটুর হোটেল, পুরাতন বাস স্ট্যান্ড ২. ঘরে বাইরে, জে এস এম ৩. মারহাব্বা, জে এস এম এর পাশে ৪. কোলকাতা বিরিয়ানি, ইউ বি আই এর কাছে ৫. অভিনব ক্যাটারার, সুরার পুল ৬.গৌর নিতাই, সুরার পুল ৬. এক্সক্লুসিভ, মেচোগ্রাম ৭. চেটেপুটে, কনক পুর ইত্যাদি। আপনারা আরও সমৃদ্ধ করুন।
🌹ধন্যবাদ আনন্দ করুন। পূজা দেখুন।🌹

Monday, 15 October 2018

Durga Puja at Panskura, Purba Medinipur, West Bengal, India- 2018

 Tribeni Sangha, Balidangri
 Apanjan, PWD
 Apanjan, PWD
 Canel Bazar, Old Panskura
 Agrabhumi, Old Panskura
 Agrabhumi, Old Panskura
 Naranda Youth Society
 Mechogram
 Mechogram



 Sangrami Sathi, Level Crossing
 Sangrami Sathi Level Crossing
 Amra kajan, Trikon Park
  Amra kajan, Trikon Park
 Rail Colony
 Agradut, Panskura old Bus Stand
 Byabsayi Samity, Panskura
 Byabsayi Samity, Panskura

দুর্গা পূজার বিবর্তন- পুরান থেকে ইতিহাস [Durga Puja- History and Puran]

-----মূল রামায়ণে দুর্গা পূজার অস্তিত্বই নেই-----
লেখক- শ্রী রূপেশ সামন্ত
 
[‘অকালবোধন’ কেন? ‘বারোয়ারী’ পূজা বলে কেন? ‘মহাভারতে’ কি দুর্গা পূজা আছে? রাবন কি দুর্গা পূজা করতেন? পুরান থেকে ইতিহাস- দুর্গাপূজার বিবর্তন নিয়ে লেখা। লেখাটি ‘সংবাদ আশার দিশারী’ ও ‘পুস্পাঞ্জলি’তে প্রকাশিত। লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করবেন।]
দুর্গা পূজা বাঙালীর সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্বজনীন উৎসব। আশ্বিন ও চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষে দুর্গা পূজা হয়। আশ্বিন মাসের দুর্গা পূজা শারদীয়া দুর্গা পূজা ও চৈত্র মাসের দুর্গা পূজা বাসন্তী দুর্গা পূজা নামে পরিচিত।
-------শরৎ কালের দুর্গা পূজাই ‘অকালবোধন’----
রামায়নে রাম ও রাবণের যুদ্ধের সময় শরৎকালে দুর্গাকে পূজা করা হয়েছিল। হিন্দু মতে, শরৎকালে দেবতারা নিদ্রা দেন। তাই শরৎকালে পূজা করার বিধি নেই। কিন্তু অকালে রাম এই দুর্গা পূজা করেছিলেন বলেই শারদীয়া দুর্গা পূজাকে অকালবোধন বলে।
-----মূল রামায়ণে দুর্গা পূজার অস্তিত্বই নেই-----
রামায়নের রচয়িতা ছিলেন বাল্মিকী। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় সেই মূল রামায়নে অকালবোধন বা শারদীয়া দুর্গা পূজার কোন উল্লেখই নেই। কিন্তু কালিকা পুরাণ ও বৃহদ্ধর্ম পুরাণ থেকে আমরা জানতে পারি, রাম ও রাবণের যুদ্ধের সময় শরৎকালে দুর্গাকে পূজা করা হয়েছিল। ব্রহ্মাই দুর্গার পূজা করেছিলেন। তার উদ্দেশ্য ছিল অশুভ শক্তির বিনাশ করার জন্য রামকে সাহায্য করা। কৃত্তিবাস ওঝা তার লেখা রামায়ণে কালিকা পুরাণ ও বৃহদ্ধর্ম পুরাণ এর ঘটনাকে কিছুটা পরিবর্তন করেছিলেন। তার লেখা রামায়ণ থেকে জানতে পারি, রাম নিজেই শরৎকালে দুর্গার বোধন ও পূজা করেছিলেন। সেখানেও উদ্দেশ্য ছিল অশুভ শক্তি বা আসুরিক শক্তি রাবনের বিনাশ।
------ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ মতে কৃষ্ণই প্রথম দুর্গাপূজা করেন-----
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ অনুসারে কৃষ্ণই দুর্গাপূজার প্রচলন করেছেন। সৃষ্টির প্রথম পর্বে কৃষ্ণ আদি-বৃন্দাবন ক্ষেত্রের মহারাসমণ্ডলে প্রথম দুর্গাপূজা করেন। এরপর ব্রহ্মা দ্বিতীয় দুর্গাপূজা করেন। তিনি দুর্গা পূজা করেছিলেন কৈটভ ও মধু নামে দুই অসুরকে নিধন করার জন্য। এরপর তৃতীয় দুর্গাপূজা করেন শিব। ত্রিপুর নামে এক অসুরের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে শিব পরাজয়ের সম্মুখীন হয়ে সংকটাপন্ন হন। তখন বিপন্মুক্ত হওয়ার জন্য শিব দুর্গার পূজা করেন। এরপর ইন্দ্র চতুর্থ দুর্গা পূজা করেন। দুর্বাসা মুনির অভিশাপে লক্ষ্মীকে হারিয়ে ইন্দ্র দুর্গা পূজার আয়োজন করেছিলেন শাপমুক্তির জন্য। এরপর থেকেই হিন্দুরা নিয়মিত দুর্গা পূজা করে আসছে।
-------দেবীভাগবত পুরাণ মতে মনু দুর্গা পূজার প্রচলন করেন-----
দেবীভাগবত পুরান অনুসারে ব্রহ্মার মানসপুত্র ছিলেন মনু। তিনি পৃথিবীর শাসক হিসাবে নিযুক্ত হলেন। এরপর তিনি ক্ষীরোদসাগরের তীরে দুর্গার মৃন্ময়ী মূর্তি রচনা করে পূজা করেন এবং তিনি ঘোর তপস্যায় রত হলেন। একশো বছর ধরে তিনি তপস্যা করেন। দুর্গা প্রীত হলেন। মনুকে বর দিলেন। দুর্গা মনুর শাসন কার্যের পথ নিস্কন্টক করলেন। দেবীভাগবত পুরাণ অনুসারে এইভাবে পৃথিবীতে দুর্গা পূজার প্রচলন হল।
--------মার্কেণ্ডেয় পুরাণ মতে সুরথ দুর্গা পূজার প্রচলন করেন -----
মার্কেণ্ডেয় পুরাণে শ্রীশ্রীচণ্ডী বা দেবীমাহাত্ম্যম অংশে দুর্গা পুজা প্রচলনের কাহিনী জানা যায়। সুরথ ছিলেন পৃথিবীর রাজা। অত্যন্ত প্রজাহিতৈসী ছিলেন তিনি। যবন জাতির কাছে তিনি এক যুদ্ধে পরাজিত হয়ে যান। জঙ্গলে আশ্রয় নেন। মেধা নামে এক ঋষির আশ্রমে বসবাস করতে থাকেন। কিন্তু সেখানেও তিনি হারানো সাম্রাজ্যের প্রজাদের কথা ভাবতে থাকেন। তাদের কল্যান-অকল্যানের চিন্তা করতে থাকেন। এরপর রাজার একদিন দেখা হয় সমাধি নামে এক বৈশ্যর সঙ্গে। তাঁর থেকে সব কিছু কেড়ে নিয়ে তাঁর স্ত্রী ও পুত্ররা তাকে বিতাড়িত করেন। কিন্তু তা সত্বেও তিনি স্ত্রী-পুত্রের কল্যান-অকল্যানের চিন্তা করতে থাকেন। দুজনেই ঋষির কাছে জানতে চাইলেন তাদের এইরূপ দুঃশ্চিন্তার কারণ কি। ঋষি তাদেরকে মহামায়া বা দুর্গার মায়ার কথা বললেন। তিনি সুরথকে দুর্গার মধু ও কৈটভ দৈত বধের কাহিনী, মহিষাসুর বধের কাহিনী এবং শুম্ভ ও নিশুম্ভ অসুর বধের কাহিনী বললেন। ঋষির গল্প শুনে সুরথ তিন বছর কঠিন তপস্যা ও দুর্গা পূজা করেন। তপস্যায় প্রীত হয়ে দুর্গা সুরথকে হারানো সাম্রাজ্য ফিরিয়ে দিলেন এবং সমাধিকে তত্ব উপদেশ দিলেন। এইভাবে পৃথিবীতে দুর্গা পূজার প্রচলন হয়ে গেল। সুরথ এই পূজা বসন্ত কালে করেছিলেন বলে একে বাসন্তী পূজাও বলা হয়।
-------কৃত্তিবাসি রামায়ণে দুর্গা পূজা করেন রাম-----
কৃত্তিবাস ওঝা তার লেখা রামায়ণে কালিকাপুরাণ ও বৃহদ্ধর্মপুরাণ-এর কাহিনি অত্যন্ত সুনিপুন ভাবে অন্তর্ভূক্ত করেছেন। বাল্মীকির রামায়ণে দুর্গা পূজার কোন উল্লেখ নেই। কৃত্তিবাস ওঝার রামায়ণ অনুসারে, রাবনকে বধ করার জন্য ব্রহ্মা রামকে পরামর্শ দেন শিবের স্ত্রী দুর্গাকে পূজা করার জন্য। কেননা, রাবন ছিলেন শিব ভক্ত। শিবের স্ত্রী দুর্গাকে পূজা করলেই শিব তুষ্ট হবেন। তখন রাম শরৎকালে দুর্গার বোধন, চণ্ডীপাঠ ও পূজার আয়োজন করেন। তুষ্ট হয়ে দুর্গা রামকে কাঙ্ক্ষিত বর দেন। কৃত্তিবাস কালিকাপুরাণ ও বৃহদ্ধর্মপুরাণের কাহিনীর কিছুটা পরিবর্তন করেন। ঐ দুই পুরাণ অনুসারে দুর্গার পূজা করেন ব্রহ্মা। কিন্তু কৃত্তিবাসি রামায়ণে দুর্গার পূজা করেন রামচন্দ্র।
------কালিকা পুরাণ মতে রাবনও দুর্গা পূজা করতেন-----
কালিকা পুরাণ অনুযায়ী মহিষাসুর দেবতাদের স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করেছিলেন এবং স্বর্গ রাজ্য দখল করেছিলেন। মহিষাসুর ব্রহ্মার বরে বলিয়ান ছিলেন। এরপর অসুরকে বিনাশ করতে বিষ্ণু, শিব, ব্রহ্মা ও অন্যান্য দেবতারা সমবেত হয়ে তাদের তেজ থেকে দুর্গার সৃষ্টি করলেন। সেই দুর্গাই বিনাশ করে অসুরকে। রাবন ত্রেতাযুগে চৈত্র মাসে দুর্গা পূজা করতেন।
-------বৃহদ্ধর্ম পুরাণ মতে ব্রহ্মা দুর্গা পূজা করেন -----
এই পুরাণের মতে, রাম-রাবনের যুদ্ধে রামকে সাহায্যের জন্য কুম্ভকর্নের নিদ্রাভঙ্গ করা হল। এরপর রাবন বধে রামচন্দ্রের মঙ্গল কামনায় সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা দুর্গার পূজা করতে চাইলেন। কিন্তু তখন শরৎকাল, দক্ষিনায়ন। দেবতারা ঘুমিয়ে থাকেন। অসময়ে ব্রহ্মা দুর্গা পূজা শুরু করলেন। দুর্গা উগ্রচণ্ডী হলেন। ব্রহ্মা তাকে সন্তুষ্ট করে ততদিনই দুর্গা পূজা করতে থাকলেন, যতদিন না রাবন বধ হয়। এরপর দেবী দুর্গার কৃপায় নবমীতে রাবন বধ হয়। দশমীতে রামের বিজয়োৎসব। রামের অকাল বোধনের পরই দুর্গা পূজা ব্যাপক প্রচার লাভ করে।
-------কৃত্তিবাসি রামায়ণে দুর্গা পূজা করেন রাম-----
বৃহন্নন্দীকেশর পুরাণে রামচন্দ্র কর্তৃক দুর্গা পূজার উল্লেখ পাওয়া যায়।
-------মহাভারতে দুর্গা পূজার অস্তিত্ব রয়েছে----
মহাভারত অনুসারে, দ্বারকা নগরীতে শ্রীকৃষ্ণের রাজত্বকালে কুলদেবী হিসেবে দেবী দুর্গার পূজা হত। যুদ্ধক্ষেত্রে পান্ডব পক্ষের অর্জুন ও প্রদুন্ম দুর্গা পূজা করেছিলেন।
-------বারো ‘ইয়ারে’র পূজা বলেই ‘বারোয়ারী’ পূজা------
১৭৯০ সাল নাগাদ দুর্গা পূজায় আকৃষ্ট হয়ে হুগলি জেলার গুপ্তি পাড়াতে বার জন বন্ধু [বারো ইয়ার] মিলে চাঁদা তুলে প্রথম সার্বজনীন দূর্গা উৎসবের আয়োজন করেন। এই পূজা বারো বন্ধু বা বারো ইয়ারের পূজা বলেই ‘বারোয়ারী’ পূজা নামে পরিচিতি পায়।
-------দুর্গা পূজা প্রথম প্রচলনের ইতিহাস অন্ধকারময়-----
বিভিন্ন পুরাণে আমরা দুর্গা পূজার উল্লেখ পাই। একই ভাবে ইতিহাসেও প্রাচীন কালে দুর্গা পূজা প্রচলনের সত্যতা নিরূপিত হয়। তবে কবে, কোথায় প্রথম দুর্গা পূজা চালু হয়েছিল সে বিষয়ে প্রামান্য কোন তথ্য নেই। সিন্ধু সভ্যতায় পশুপতি শিবের পূজার প্রচলন ছিল। দুর্গা ছিলেন শিবের অর্ধাঙ্গিনী। সেই হিসাবে তখন দুর্গারও পূজা হয়ে থাকতে পারে। ৯ম থেকে ১২শ শতাব্দীর মধ্যে বাংলার বিভিন্ন স্থানে মহিষাসুরমর্দিনীর মূর্তি আবিস্কৃত হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই বলা যায়, ঐ সময় দুর্গাপূজার প্রচলন ছিল। একাদশ শতাব্দীতে পন্ডিত ভবদেব ভট্ট দুর্গার মাটির মূর্তি পূজার কথা বলে গেছেন। চতুর্দশ শতাব্দীতে মিথিলার কবি বিদ্যাপতি ‘দুর্গা ভক্তি-তরঙ্গিণী’ ও বাঙালি পন্ডিত শূলপাণি ‘দুর্গোৎসব-বিবেক’ বই দুইটিতে দুর্গা পূজার উল্লেখ করে গেছেন। ১৫১০ সালে কুচ বংশের রাজা বিশ্ব সিংহ কুচবিহারে দূর্গা পূজা করেছিলেন। প্রচলিত আছে যে, সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে (১৫৫৬-১৬০৫) রাজশাহী জেলার তাহিরপুরের রাজা কংসনারায়ণ প্রথম দুর্গাপূজার প্রচলন করেন । অন্যমতে, নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় তার রাজত্বকালে (১৭১০-১৭৮৩) প্রথম দুর্গা পূজার প্রচলন করেন। ১৬১০ সালে কলকাতার বারিশার রায় চৌধুরী পরিবার প্রথম দূর্গা পূজা করেছিল বলে মনে করা হয়। আধুনিক দূর্গা পূজা ১৮শ শতকে নানা বাদ্য যন্ত্র প্রয়োগে প্রচলন ছিল। পাটনাতে ১৮০৯ সালের দূর্গা পূজার অঙ্কন চিত্র পাওয়া গেছে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে নদিয়ার ভবানন্দ মজুমদার, বড়শিয়ার সাবর্ণ রায়চৌধুরী, কোচবিহার রাজবাড়ি সর্বত্রই মহাসমারোহে দুর্গোৎসবের আয়োজনের তথ্য পাওয়া যায়। অষ্টাদশ শতকের শেষ পর্যন্ত ইউরোপীয়রাও দুর্গোৎসব করত। উনিশ শতকে কলকাতায় বিপুল আয়োজনে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হতো। বর্তমানে দুর্গোৎসব বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবে পরিনত হয়েছে।
তথ্যসূত্র- গরুড় পুরান, মার্কেণ্ডেয় পুরান, উইকিপিডিয়া, অষ্টাদশ পুরান সমগ্র- কামিনী প্রকাশনালয়, কৃত্তিবাসী রামায়ন, মহাভারত, সনাতন ধর্মতত্ত্ব
লেখক- রূপেশ সামন্ত/

Saturday, 6 October 2018

Mahalaya - মহালয়া

-- --মহালয়া ও তিন পুরুষের শ্রাদ্ধ-- ---
--- -- --দিনটি কি আদৌ শুভ?-- --- --
লেখক- রূপেশ সামন্ত
----মহালয়া-----
প্রতি চান্দ্রমাসে দুটি পক্ষ রয়েছে- শুক্লপক্ষ এবং কৃষ্ণপক্ষ। পক্ষ ১৫ দিনের হয়। এইভাবে বছরের ১২মাসে ২৪টি পক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে ২টি পক্ষ তাৎপর্য্যপূর্ণ। প্রথমটি পিতৃপক্ষ ও দ্বিতীয়টি দেবীপক্ষ। আশ্বিন মাসের কৃষ্ণ পক্ষকে বলা হয় পিতৃপক্ষ। পিতৃপক্ষের পরের পক্ষকে বলা হয় দেবী পক্ষ। পিতৃপক্ষে স্বর্গত পিতৃপুরুষের শ্রাদ্ধ ও তর্পন করা হয়। এই সময় পিতৃলোক বা যমালোক থেকে মর্ত্যলোকে প্রয়াত পিতৃ পুরুষেরা আসেন। ফলে প্রয়াত আত্নার যে সমাবেশ হয় তাহাকে মহালয় বলা হয়। আর এই মহালয় থেকে মহালয়া শব্দটি এসেছে। পিতৃপুরুষদের তৃপ্ত করার জন্য তিল, জল সহযোগে ‘পিণ্ড’ দান করা হয়। মহালয়া হচ্ছে পিতৃপক্ষের শেষ দিন এবং দেবী পক্ষ শুরুর আগের দিন।
-----রামায়ন যোগসূত্র-----
পিতৃপক্ষের শেষ দিনটি অমাবস্যা হয়। এই অমাবস্যায় পিতৃপূজা সেরে পরের পক্ষে দেবীপূজায় প্রবৃত্ত হতে হয়। পিতৃপক্ষে আত্নসংযমের মধ্য দিয়ে দেবী পক্ষে শক্তি সাধনায় উত্তীর্ণ হতে হয়। হিন্দু ধর্মে কোন শুভ কাজ করতে গেলে পিতৃপুরুষদের জন্য তর্পণ করতে হয়। রামায়নে ভগবান শ্রীরামচদ্র লঙ্কা বিজয়ের আগে এই দিনে পিতৃ তর্পণ করেছিলেন। এরপর দেবীপক্ষে শরৎকালীন দুর্গা পূজা বা অকালবোধনে ব্রতী হয়েছিলে।
-----মহাভারত যোগসূত্র-----
মহাভারত অনুসারে, মৃত্যুর পর মহাবীর দাতা কর্ণের আত্মা পিতৃলোকে গেলে সেখানে তাঁকে শুধুই সোনা আর ধনরত্ন খেতে দেওয়া হল। কর্ণ কারণ জিজ্ঞাসা করলে যম [মতান্তরে ইন্দ্র] বললেন যে তার হাতে পিতৃপুরুষ জল পায়নি। কর্ণ কেবলই সারাজীবন সোনা ধনরত্ন বিলিয়েছেন। তাই কর্ণের জন্যে এই ব্যবস্থা। তখন কর্ণ বললেন যে তার কোন দোষ নেই। কেননা সে তার পিতৃপুরুষের কথা জানতো না। যুদ্ধ শুরুর আগের রাতে মা কুন্তী তার পূর্ব পুরুষদের পরিচয় ব্যক্ত করেছিলেন। তারপর যুদ্ধে কর্ণের মৃত্যু হয়। ফলে তিনি পিতৃতর্পণের সময় পান নি। ইন্দ্র কর্ণের দোষ খুঁজে পেলেন না। তাই তিনি কর্ণকে পনেরো দিনের জন্য মর্ত্যে ফিরে গিয়ে পিতৃপুরুষকে জল ও অন্ন দিতে অনুমতি দিলেন। তখন কর্ণ এক পক্ষকাল ধরে মর্ত্যে অবস্থান করে পিতৃপুরুষকে অন্নজল দিলেন। তাঁর পাপস্খালন হল। সেই পক্ষটি পিতৃপক্ষ নামে পরিচিত হল ।
----গরুড় পুরান যোগসূত্র----
মহালয়া তিথিতে পিতৃপুরুষের শ্রাদ্ধ তর্পণ করা হয়। এ দিন তর্পণ করলে পিতৃপুরুষরা নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পায়। তারা উত্তরসূরিদের আশীর্বাদ প্রদান করেন। পিতৃপক্ষে পুত্র কর্তৃক এই তর্পণ শ্রাদ্ধানুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। এই অনুষ্ঠানের ফলেই মৃতের আত্মা স্বর্গে প্রবেশ করতে পারেন। গরুড় পুরাণ গ্রন্থে বলা হয়েছে, পুত্র ছাড়া মুক্তি নাই। গৃহস্থ দেবতা, ভূত ও অতিথিদের সঙ্গে পিতৃতর্পণের কথা বলা হয়েছে।
----মার্কণ্ডেয় পুরাণ যোগসূত্র----
মার্কেণ্ডেয় পুরানে বলা হয়েছে, পিতৃপুরুষ শ্রাদ্ধে সতুষ্ট হলে স্বাস্থ্য, ধন, জ্ঞান ও দীর্ঘায়ু প্রাপ্তির আশীর্বাদ প্রদান করেন। এছাড়াও উত্তরপুরুষকে স্বর্গ ও মোক্ষ প্রদান করেন।
-----তিন পুরুষের শ্রাদ্ধ----
বিশ্বাস অনুযায়ী, স্বর্গ ও মর্ত্যের মাঝে রয়েছে পিতৃলোক। এই পিতৃলোকেই রয়েছে মৃত্যুদেবতা যমরাজ। তিনিই মৃতের আত্মাকে নিয়ে যান। এই পিতৃলোকে জীবিত ব্যক্তির আগের মৃত তিন পুরুষ বাস করেন। জীবিত প্রজন্মের কারো মৃত্যু হলে সেই আত্মা পিতৃলোকে গমন করে এবং পিতৃলোক থেকে আগের প্রজন্মের একটি আত্মা স্বর্গে গমন করে। সেখানে পরমাত্মা বা ঈশ্বরে লীন হয়ে যায়। তখন তার আর শ্রাদ্ধের প্রয়োজন হয়না। তাই কোন জীবিত ব্যক্তি কেবল পূর্ববর্তী তিন পুরুষের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করতে পারে। একেই বহুক্ষেত্রে ‘তিন পুরুষের শ্রাদ্ধ’ বলা হয়। যেহেতু এই মহালয়ার সঙ্গে পিতৃপুরুষের শ্রাদ্ধের মতো বিষয় জড়িয়ে রয়েছে তাই একে শুভদিন বলা মোটেই বাস্তব সম্মত নয়।
-----মহালয়ার শ্রাদ্ধানুষ্ঠান-----
মহালয়ার দিন পিতৃপুরুষের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠিত হয় নদী তীরে বা গৃহে। মৃত ব্যক্তির পুত্র বা পুরুষ আত্মীয়ই শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের অধিকারী। পূর্বপুরুষকে রান্না করা খাদ্য উৎসর্গ করা হয় রুপোর পাত্র, তামার পাত্র বা কলাপাতার উপর। স্নান করে শুদ্ধ হয়ে ধুতি পরে খালি গায়ে শ্রাদ্ধ করতে হয়। শ্রাদ্ধের সময় সিদ্ধ অন্ন, ময়দা, ঘি ও তিল দিয়ে মাখিয়ে পিণ্ড তৈরী করে উৎসর্গ করা হয়। একে পিণ্ডদান বলে। শ্রাদ্ধে বিষ্ণু এবং যমের পূজা করা হয়। এই খাদ্য যদি কোনো কাক এসে খেয়ে যায়, তাহলে ধরা হয় যে খাদ্য পিতৃগণ কর্তৃক গৃহীত হয়েছে। খাদ্য গোরু ও কুকুরদেরও খাওয়ানো হয়। এরপর ব্রাহ্মণ ভোজন হয়। কাক রূপী পূর্বপুরুষের প্রতিনিধি এবং ব্রাহ্মণ ভোজনের পর অন্যান্যরা ভোজন করে।
-----সামাজিক তাৎপর্য----
মানুষ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অতীত প্রজন্মকে ভুলে যায়। কিন্তু অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের সম্পর্কের সূদৃঢ বন্ধনের মধ্য দিয়েই একটি সমৃদ্ধ সভ্যতার জন্মলাভ করতে পারে। এই পিতৃ তর্পণের মধ্য দিয়েই পূর্ববর্তী তিন পুরুষের উদ্দেশ্যে পিণ্ড ও জল প্রদান করা হয়। তাঁদের নাম এবং গোত্রকে স্মরণ করা হয়। ফলে একজন ব্যক্তিকে মৃত তিন পুরুষ ও জীবিত তিন পুরুষ অর্থাৎ মোট ছয় প্রজন্মের নাম স্মরণে রাখতে হয়। এর ফলে বংশের মধ্যে বন্ধন দৃঢ় হয়। পারিবারিক ঐক্য সুদৃঢ় হয়। এছাড়াও এর মধ্য দিয়ে পিতৃপুরুষের ঋণ স্বীকার করার নৈতিক দিকটিও সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।
লেখক- রূপেশ সামন্ত/ ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করুন। [সতর্কীকরণ- লেখাটি লেখক কতৃক সর্বসত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে লেখাটির কোন অংশ অন্যত্র প্রকাশ করা বা নকল করা সম্পূর্ণ বে-আইনী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। নজরে এসেছে, এইরূপ কিছু লেখা লেখকের নাম বাদে ‘সংগৃহীত’ নামে অন্যত্র প্রকাশ হচ্ছে, যা বে-আইনী।]
তথ্যসূত্র- গরুড় পুরান, মার্কেণ্ডেয় পুরান, উইকিপিডিয়া, অষ্টাদশ পুরান সমগ্র- কামিনী প্রকাশনালয়, কৃত্তিবাসী রামায়ন, মহাভারত।


জীবনের ভুল — সত্যিই ভুল?

  জীবনের ভুল — সত্যিই ভুল? জীবন এক অমোঘ প্রবাহ—সময়ের স্রোতে আমাদের চিন্তা, অনুভব ও সিদ্ধান্ত সবই পরিবর্তিত হয়। আজ যা ভুল মনে হয়, কাল তা সঠি...