Bengali Story- গল্প- মা দুগ্গা, একটাই বর দ্যাও দেকিনি!

-----মা দুগ্গা, একটাই বর দ্যাও দেকিনি!-----
[একটি মজার গল্প] @রূপেশ সামন্ত

     ‘মা দুর্গা, আমার একটা রিকোয়েস্ট ছিল! সারা বছর স্মার্ট ফোনে সেলফি তুলেছি, গেম খেলেছি। তুমি তো সবই জানো, মা। এবারের মতো উচ্চমাধ্যমিকটা পাশ করিয়ে দাও। কথা দিচ্ছি, আর স্মার্টফোন ঘাঁটব না। এই আমি শপথ করছি, আর জীবনে ফোন ছোঁবই না!’ গভীর রাতে মণ্ডপে মা দুর্গাকে একা পেয়ে অম্বর তার প্রার্থণাটা সেরে ফেলল।
      ‘তোর কোন চিন্তা নেই, তুই পরীক্ষায় পাশ করে যাবি’, মা দুর্গা বর দিলেন।
      ‘ম্যাডাম, আপনি কথাও বলেন? বা! বা! ঠিক আছে আমার প্রেয়ারটা সাকসেসফুল হলেই আমি একটা ঝক্কাস স্মার্টফোন গিফট দিয়ে যাবো!’ কথা গুলো বলেই অম্বর মা দুর্গার সঙ্গে একটা সেলফি তুলেই মণ্ডপ ত্যাগ করল।
      এরপর প্রীতিকা এদিক ওদিক তাকিয়ে ফাঁকা মণ্ডপে টুক করে ঢুকে পড়ল; আর প্রার্থণাটা সেরেই ফেলল, ‘সবাই বলে আমি সুন্দর দেখতে! আমার পেছনে ছেলেরা ঘুর ঘুর করে। আর আমিও একট-আধটু...থাক, মা, সবই তো জানো! পড়াশোনাটাই করিনি। কোন রকমে উচ্চমাধ্যমিক পাশ। একটা ফার্স্টক্লাস, হ্যান্ডসাম হাজব্যান্ড দিয়ে দাও মা!’
      ‘তোর কোন চিন্তা নেই, তুই ফার্স্টক্লাস, হ্যান্ডসাম হাজব্যান্ড পাবি’, মা দুর্গা বর দিলেন।
এরপর ভবানী প্রসাদ বাবু মণ্ডপে ঢুকলেন। ভাগাড়ের মাংসের কারবার। মা দুর্গার কাছে প্রার্থণা করলেন, ‘ভাগাড়ে যেন রোজ রোজ পশুর ডেডবডি পড়ে। আমি যেন আরো আরো ব্যাংক ব্যালেন্স পারি!’
      ‘তোর কোন চিন্তা নেই, তুই প্রচুর রোজগার করবি’, মা দুর্গা বর দিলেন। এর কিছুক্ষন পর ফাঁকা মণ্ডপে ঢুকলেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি পিকলু’দা। সাথে পার্সোনাল এ্যাসিস্টেন্ট রাজা। এই পুজা কমিটির সভাপতিও পিকলু’দা। ‘মা, তুমি তো সবই জানো! পাবলিককে ধমকে চমকে এতো বড় পূজা করছি। শুধু তোমাকেই খুশি করতে। সামনেই ইলেকশন। সারা বছর যা করেছি, ভোট হলে কেউ ভোট দেবে না। এবারের মতো ইলেকশনটা উতরে দাও, মা!’
      ‘তোর কোন চিন্তা নেই, তুই ইলেকশনে জিতবি’, মা দুর্গা বর দিলেন।
      ‘পিকলুদা, মা প্রেয়ার গ্র্যান্ট করে দিয়েছে। তাহলে রবীনকে একটু কেলিয়ে আসি! খুব আমাদের বিরুদ্ধে গলার শির ফুলিয়ে স্লোগান দেয়!’ রাজা বলল।
      ‘ওটা দশমীতে তোলা থাক!’ বলেই পিকলু’দা বেরিয়ে গেল।
      ‘মা, রঙ চেঞ্জ করে আমি এদিকে এসেছি। হরিলুটের প্রচুর বাতাসাও কুড়িয়েছি! লিডারদের পাশে থাকলে যা হয় আর কি! লাভের গুড় পিঁপড়েতে যেন না খায়, মা!’ রাজাও প্রার্থণাটা সেরে ফেলল।
      ‘তোর কোন চিন্তা নেই, তোর টাকা তোরই কাজে আসবে’, মা দুর্গা বর দিলেন।
       এরপর স্বর্ণ মণ্ডপে প্রবেশ করল। বিবাহিত পুরুষ। মা দুর্গার কাছে ফিসফিস করে বলল, ‘আমি একটু-আধটু পরকিয়া করছি! যদিও পরকিয়ার পক্ষে আইন পাশ রয়েছে, তবুও সব যেন গোপন থাকে।’
‘তোর কোন চিন্তা নেই, তোর পরকিয়া গোপন থাকবে’, মা দুর্গা বর দিলেন। /লেখক- রূপেশ সামন্ত

      ‘যার যেটা পাওয়ার কথা নয়, অযোগ্যরা সেটা পেয়ে গেলে তো আর কেউ আমাদের রেসপেক্ট করবে না; পৃথিবীতে ভারসাম্যও থাকবে না!’ পাশ থেকে মা দুর্গার ছেলে-মেয়ে গনেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী ও সরস্বতী অভিযোগ করল।
      মা দুর্গা বললেন, ‘আমার উপর ভরসা রাখ! এরা তো মানুষ! এদের বেশির ভাগই লোভী! সহনশীল নয়! নিজেদের যোগ্যতার বেশি চায়! নিজে থেকে শেখে না! ঠেকে শেখে! আমি তো জগজ্জননী! সকলের মা! আমি ঠিক শিখিয়ে পড়িয়ে মানুষ করে দেব।’
      এইভাবে কেটে গেল তিন বছর। মা দুর্গার বর সকলের উপর কার্যকরী হয়েছে। প্রায় সকলেই একসঙ্গে দুর্গা মায়ের মণ্ডপে হাজির। কিন্তু পরিস্থিতি এখন ভিন্ন। /লেখক- রূপেশ সামন্ত
      অম্বর বর পেয়ে উচ্চমাধ্যমিকে স্টার পেয়েছে। কলেজে ইংরাজি অনার্সে ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু যোগ্যতায় কুলোয় নি। যথারীতি ফেল করেছে। মার্কশিটের ওজনে ভারাক্রান্ত হয়ে মালবাহকের কাজটাও করতে পারলো না!
      আর প্রীতিকা ফার্স্টক্লাস হ্যান্ডসাম বর পেয়েছিল। কিন্তু যোগ্যতা ও মানসিক দূরত্বের ফারাক এতো বেশি ছিল যে, বিয়ের দু'বছরের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে গেছে।
      এদিকে ভবানী প্রসাদ বাবুর সস্তা ভাগাড়ের মাংসের ঠেলায় পুরো বাজারটাই ভাগাড়ের মাংসে ভরে গেল। বিষক্রিয়ায় বহু মানুষের মৃত্যু হল। ভবানী প্রসাদের জেল হল। কিন্তু পুলিশের হাত থেকে ছিনতাই হয়ে গিয়ে গনপ্রহারেই তার মৃত্যু হল।
      অন্যদিকে পিকলু'দা ভোটে জিতল। কিন্তু জনসমর্থন নেই। ক্ষমতার দম্ভে অন্ধ পিকলু'দার জনরোষেই মৃত্যু হল।
      আবার রাজার উপরও আছড়ে পড়ে গনপ্রহার। হাত-পা খুইয়ে পথের ধারে ভিক্ষা করে। তার চিকিৎসাতেই 'হরিলুটের বাতাসা' সব শেষ!
      স্বর্ণের পরকিয়া প্রেম জমেছে। তবে স্বর্ণের দ্বারা মানসিক নির্যাতনে বিতশ্রদ্ধ হয়ে ও ভালবাসা না পেয়ে তার স্ত্রীও পরকিয়া সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছে। বিষয়টি জানতে পেরে স্বর্ণ স্ত্রীকে হারানোর ভয়ে আবার উন্মাদের মতো স্ত্রীকে ভালবাসতে শুরু করেছে।
 

      ‘আমাদের সব পাপ মুক্ত করো মা! আমরা আমাদের ভূল বুঝতে পেরেছি। লক্ষ্মণরেখা কখনোই পেরোন উচিৎ নয়।’ একযোগে সকলে বলল।

      এবার নড়েচড়ে উঠলেন মহিষাসুর। খুব ম্রিয়মান গলায় বললেন, ‘মা দুগ্গা, একটাই বর দ্যাও দেকিনি! এরা আমাকে দেকেও শিকেনি! বেশি বাড়াবাড়ি না করলে কি আমাকে এইভাবে ত্রিশুল বিদ্ধ হয়ে পড়ে থাকতে হোত!’
      ‘কি বর দেব?’ মা দুর্গা বললেন।
মহিষাসুর বললেন, ‘শুধু একটা আয়না দাও। তাতে শুধু নিজের বাইরেটা নয়, ভিতরটাও যেন দে্ষা যায়!’

লেখক- রূপেশ সামন্ত/ 06.10.18.


Comments

Popular posts from this blog

Essay [রচনা]- মাহে রমযান

250 YEARS OLD BEGUNBARI KALI PUJA, PANSKURA, WB, INDIA

----- HISTORY OF PANSKURA [WB, INDIA] [PART-1] -----