'হারানো সুরে'র পথ ধরে গাজন তলায়- Gajan

'হারানো সুরে'র পথ ধরে গাজন তলায়... ✍️রূপেশ সামন্ত
'রথ দেখা, কলা বেচা'- প্রবাদ বাক্যটি নেহাতই প্রবাদ নয়, বাস্তবও। সেই চোট্ট বেলায় দেখেছি, গাজন শেষে বৈশাখী রথের মেলায় কলা বিক্রি করে দাদুরা ৫ পয়সার মিষ্টি -রথ কিনে দিচ্ছে নাতিদের। তখনকার সময়ে সিঙ্গাপুরি কলার প্রচলন হয়নি। কলা বলতে চাঁপা কলা, কাঁঠালি কলা আর বিচাকলাই ছিল। আর মেলায় বিক্রি হত পাকা বিচাকলা। তখনকার সময়ে গাজন মেলা পাকা বিচাকলায় ম ম করত। উপোষী রমনীরা শিবলিঙ্গে জল পাকা বিচাকলা কিনে নিয়ে বাড়ি যেত। ভেজানো সাবুদানার সাথে পাকা বিচাকলা, তরমুজ, পাটালি গুড় ইত্যাদি খেত। গাজন মেলায় গোলাকৃতির বড় বড় তরমুজ বিক্রি হত। এই তরমুজ গুলি মেলার পার্শ্ববর্তী গ্রাম গুলিতেই চাষিরা চাষ করত। সেই সব তরমুজের স্বাদ ছিল অতুলনীয়। এখন সে সব তরমুজের দেখা মেলে না। এখন দেখা মেলে না পাকা বিচাকলারও। তখনকার সময়ে গাজন মেলায় বিক্রি হত পাকা বেল। গ্রীষ্মের দুপুরে পাকা বেলের সরবত ছিল অনন্য তৃষ্ণা নিবারক। গাজন তলার 'শিবের বেলগাছে' ঢিল ছুঁড়ে পাকা বেল পাড়ার মজাটাই আলাদা ছিল দুষ্টু ছেলেদের। এছাড়া বড় বড় সাইজের রাঙা আলু প্রচুর বিক্রি হত গাজন মেলায়। দিনের বেলায় রান্না শেষে মা-ঠাকুমারা রাঙা আলুকে উনুনের মরা আগুনে দিয়ে দিত। বিকালে ঘুম থেকে উঠে সেই পোড়া রাঙা আলু খাওয়ার স্বাদ আজও যাওয়ার নয়। পাকা সবেদা গাজন মেলার স্বাদটাই পালটে দিত। গাছ থেকে কাঁচা সবেদা পেড়ে ৩/৪ দিন কুঁড়ো বা খড়ের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখা হত। এরপর পাকা সবেদা গুলো ভেঙে ভেঙে কোষ ছাড়িয়ে খাওয়া হত। হারিয়ে গেছে গাজন মেলার সেই দিন গুলি। এখন সেই ভাবে আর গাজন মেলাও হয় না। মানুষের দৈনন্দিন জীবনের গতিময়তা, আধুনিক জীবন-যাপন, শপিংমল সংস্কৃতি মেলার উপযোগিতাকেই কমিয়ে দিয়েছে। যেখানে আজও টুকটাক মেলা হয়, সেখানে সেই আদি সংস্কৃতির জায়গায় স্থান নিয়েছে প্রসেসড ফুড, ফার্স্ট ফুড। হারিয়ে গেছে গাজন তলার সেই পাকা বিচাকলা, পাকা বেলের 'ম' 'ম' সুবাস! 'হারানো সুরে'র পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে নাকে ভেসে আসে শুধু চিকেন 'মো' 'মো' সুবাস! ©রূপেশ সামন্ত

Comments

Popular posts from this blog

Essay [রচনা]- মাহে রমযান

250 YEARS OLD BEGUNBARI KALI PUJA, PANSKURA, WB, INDIA

----- HISTORY OF PANSKURA [WB, INDIA] [PART-1] -----