ময়নাগড়ের রাসমেলা
রূপেশ কুমার সামন্ত
আনুমানিক দশম শতাব্দীর ধর্মঙ্গল মহাকাব্যের লাউসেনের কিংবদন্তী রাজধানী হল ময়নাগড়। গৌড়েশ্বর ধর্মপালের রাজত্বকালে কর্ণসেন তাঁর অধীনে রাজত্ব করতেন। ইছাই ঘোষের সঙ্গে যুদ্ধে কর্ণসেন তাঁর ছয় পুত্রকে হারান। তাঁর স্ত্রী বিষপানে দেহত্যাগ করেন। তখন গৌড়েশ্বর ধর্মপাল নিজের শ্যালিকা রঞ্জাবতীর সঙ্গে কর্ণসেনের বিয়ে দেন। কর্ণসেনকে দক্ষিণবঙ্গের একটি বিশেষ অঞ্চল দান করেন। এটি কর্ণগড় নামে খ্যাত। এই কর্ণগড়ই পরে ময়নাগড় নামে প্রসিদ্ধ হয়। এই রঞ্জাবতীর ছেলে ছিল লাউসেন। এই লাউসেনের কিংবদন্তী রাজধানী হল ময়নাগড়। পরবর্তী কালে বাহুবলীন্দ্র রাজারা বালিসীতাগড় থেকে নিজেদের রাজধানী ময়নাগড়ে স্থানান্তরিত করেন। কালিদহ ও মাকড়দহ নামে দুটি পরীখা দিয়ে ঘেরা এই ছোট্ট দ্বীপ ময়নাগড়। দ্বীপটি ছিল দুর্ভেদ্য দুর্গ। চারিদিকে ঘেরা ছিল কাঁটাবাঁশ ঝাড়ের দুর্ভেদ্য প্রাকৃতিক প্রাচীর।
- ১৯৬৬ সাল থেকে বিশেষ সান্ধ্য রাস বা নৈশকালীন বিহার চালু হয়। রাস পূর্ণিমার সন্ধায় শ্যামসুন্দর জিউ দুই রাধিকাকে সঙ্গী করে পরীখার রাজঘাট থেকে নৌকাবিহার করেন। জমকালো সাজানো নৌকায় এই বিহারযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। পরীখার জ্যোতস্নালোকিত শান্ত জলে ভেসে বেড়ান শ্যামসুন্দর। আতসবাজি আর আলীর বন্যায় চারিদিক ভেসে যায়। বেজে ওঠে শঙ্খ, কাঁসর, ঘন্টা, ঢাক, ঢোল, মৃদঙ্গ, খোল, করতাল। উৎসবের আবেশে রাস পুর্নিমা থেকে শুরু হয় রাসমেলা। লক্ষ মানুষের ভিড়ে সেই মেলা আজও তার ঐতিহ্য বহন করে চলেছে।
No comments:
Post a Comment