শাঁখা সিঁদুর (ছোট গল্প)

 ---আমার আবার বিয়ে হবে!

হোয়াটসঅ্যাপে রাসমনির এমন মেসেজ দেখেই চমকে উঠলো নিঝুম। বিবাহিতা বান্ধবীর এমন মেসেজ দেখে স্বভাবতই কিছুটা উদ্বিগ্নও দেখাল নিঝুমকে। এরপরই রাসমনিকে একের পর এক মেসেজ করতে থাকে নিঝুম, 'কেন? কি হল আবার? কার সাথে বিয়ে?'

এমন হাজার প্রশ্ন পরপর করতে থাকল নিঝুম। ওদিকে রাসমনি শুধু একটি করে হাসির ইমোজি পাঠায় আর চুপ করে যায়! কোন উত্তর আর দেয় না। শুধুই হাসির ইমোজি!

নিঝুম এবার রাগ দেখিয়ে বলল, 'এত টেনশন দিস কেন? কি হয়েছে বল আগে'।

এবার রাসমনি বলল, 'নেক্সট সান ডে আমার বাড়ি চলে আয়।  চুটিয়ে আড্ডা দেওয়া যাবে। সব কথা হবে'।


রবিবারের দুপুরে রাসমনির বাড়ি পৌঁছে গেল নিঝুম। প্রথমেই ছুটে এল রাসমনির ছেলে কৃতি। নিঝুমের কাছে গিয়ে বলল, 'হাউ আর ইউ আঙ্কেল?’

---ওয়েল। হাউ আর ইউ?

---নাইস। প্লিজ কাম ইন।

সামনে রাসমনিকে দেখে নিঝুম বলল, 'তোর ছেলে তো বেশ ইংলিশ বলে! কোন ক্লাস হল?'

রাসমনি বলল, 'এই ক্লাস এইট। সারাক্ষণ ইংলিশ কার্টুন দেখে ঐসব শিখেছে! আমাকে তো সারাক্ষণ জ্বালিয়ে খায়'!

---আর কাকে জ্বালাবে? তুইই ওর বাবা, তুইই ওর মা। সেই কবে ওর বাবা ছেড়ে চলে গেছে! বাবা কি জিনিস ছেলেটা জানলোই না!

---হুম

কৌতুহলী হয়ে নিঝুম জিজ্ঞাসা করে, 'এখন বাবাকে খুঁজে নাকি?'

---না। আর না খুঁজুক, সেটাই চাই। বাবার মতো ছেলেটা হোক, চাই না।

--- ওর বাবা আর খোঁজ নেয় না?

রাসমনির দুচোখে রাগ ঝরে পড়ল। ক্ষুব্ধস্বরে বলল, 'বিশ্বাসঘাতক! যোগাযোগের চেষ্টা করে। আবার ফিরতে চায়। কিন্তু আমি আর চাই না। যে মানুষটা অন্য নারীতে সুখ খুঁজে চলে গেছে; নিজের সন্তান-পরিবারের কথা এক বিন্দু ভাবল না, তাকে আর বিশ্বাস করতে চাই না'।

---নতুন করে তো আবার সংসার বাঁধতে পারতিস!

---না রে! এই তো আমার সুখের সংসার। মা-ছেলের সুখের নীড়। আমি যে টুকু রোজগার করি, তাতেই সন্তুষ্ট। বেশ চলে যায় মা-ছেলের সংসার। আর কোন সুখের দরকার নেই।

আবারও কৌতুহলী হয়ে নিঝুম জিজ্ঞাসা করল, 'ডিভোর্সটা কি তোদের হয়ে গেছে? শাঁখা-সিঁদুর তো পরে আছিস! আবার বিয়ে করবি বলছিস তাহলে কেন? ব্যাপার কি?'

---পাগল বটে তুই!

---কেন?

এবার হাসতে হাসতে রাসমনি বলল, 'আরে আমার ছেলে বলছে, মা তূমি আমার কিউট গার্ল ফ্রেন্ড! তোমাকেই বিয়ে করব! আমার মনে হল, ছেলের কথাটা তোর সাথে শেয়ার করি! তাই তোকে পাঠালাম'।

---আরে আমি তো অবাক হয়ে গিয়ে ছিলাম! ভাবলাম সত্যিই বিয়ে নাকি!

গম্ভীর হয়ে রাসমনি বলল, 'নাহ! আর বিয়ে করার কোন ইচ্ছেই নেই। নতুন করে কাউকে আর বাঁধতে চাই না। বাঁধা পড়তেও চাই না। মায়া আর মোহে নিজেকে আর হারিয়ে ফেলতে চাই না। নিজের পৃথিবীতে নিজেকে ভালবাসতে চাই। নতুন করে গড়তে চাই'। 

-এখনো তো দিব্যি শাঁখা-সিঁদুর পরে আছিস? ডিভোর্স কি হয়নি তোদের?

- আর ডিভোর্স! মনের ডিভোর্স তো অনেক দিনই হয়ে গেছে। কাগুজে ডিভোর্সের আর কি মূল্য আছে? সেই সম্পর্ক আমার কাছে আজ মৃত।

নিঝুম ইতস্তত করতে করতে বলল, 'তাহলে এই শাঁখা-সিঁদুর কার জন্য?'

রাসমনির চোখের কোনে জল। ভারাক্রান্ত গলায় বলল, 'এই শাঁখা-সিঁদুর স্বামীর জন্যও নয়, অন্য কারুর জন্যও নয়। এই সমাজের জন্য। চারিদিকে শুধু লোভ আর লালসার মায়াজাল! এই সমাজে একজন স্বামীহীন মেয়ের বেঁচে থাকার লড়াই খুব কঠিন। আমি সঙ্গীহীন নারীর রূপটা  সমাজকে দেখাতে চাই না। তাছাড়া আমার নি:সঙ্গ জীবনের দুর্বলতার চোরাগলিতে কেউ প্রবেশ করে মা-ছেলের সুন্দর পৃথিবীটা এলোমেলো করে দিক, সেটাও আমি চাই না। এই শাঁখা-সিঁদুরই বিষময় সমাজে আমার সুরক্ষা বলয়'। 


শাঁখা সিন্দুর (ছোট গল্প) © রূপেশ কুমার সামন্ত

Comments

Popular posts from this blog

Essay [রচনা]- মাহে রমযান

250 YEARS OLD BEGUNBARI KALI PUJA, PANSKURA, WB, INDIA

----- HISTORY OF PANSKURA [WB, INDIA] [PART-1] -----