Popular Posts

Saturday 12 May 2018

Essay- সাবধান পার্থেনিয়াম থেকে


- -- --- ----মারণ গাছ পার্থেনিয়াম থেকে সাবধান----- --- -- -
শ্রী রূপেশ কুমার সামন্ত/ ২৮.০৪.২০১৮]


আপনি আদর করে আপনার ছোট্ট সোনার হাতে এক গোছা সাদা ‘কংগ্রেস ঘাস’ বা ‘গাজর ঘাসে’র ফুল তুলে দিলেন! ওর খুশিটা চেটেপুটে ভাগ করে নিতে থাকলেন! কিন্তু একবারও বুঝতেই পারলেন না যে, আপনার অজান্তেই আপনি আপনার ছোট্ট সোনার কি বিরাট ক্ষতি করে ফেললেন! মারণ ক্ষতি! গ্রীষ্মকালে একটু বর্ষা পেলেই এই গাছ গুলো সবুজ ডগমগে হয়ে রাস্থার ধারে বড় হয়ে ওঠে। সাক্ষাৎ মরণ ফাঁদ! আসলে ‘কংগ্রেস ঘাস’ বা ‘গাজর ঘাস’ হল পার্থেনিয়াম গাছ।
-----গাছ পরিচিতি---
অনেকটা ধনে গাছের মতো দেখতে ঝোপের মতো হয়ে থাকে। পাতা সবুজ এবং ফুল গুলি সাদা। এগুলো একধরনের বিষাক্ত আগাছা। উদ্ভিদটি সাধারণত উচ্চতায় থেকে . মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। নির্দিষ্ট বয়সে ফুল ফোটে। একটি গাছ বাঁচে তিন থেকে চার মাস। সময়েই তিনবার ফুল বীজ হয়। গোলাকার, সাদা, আঠালো এবং পিচ্ছিল হয়ে থাকে এর ফুল। পার্থেনিয়ামের একটি গাছ থেকে প্রায় ২৫ হাজার বীজের জন্ম হয়। স্থানীয় ভাবে একে গাজর ঘাসও বলে। বৈজ্ঞানিক নাম ‘পার্থেনিয়াম হিস্টেরোফোরাস’।
-----বাসস্থান-----
পার্থেনিয়াম মূলত দেখা যায় মেক্সিকো, আমেরিকা, আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত, পাকিস্তান, চীন, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশে সহ বিভিন্ন দেশে। রাস্তার ধারে, বাড়ির আশপাশে, বন-জঙ্গলে বা ফসলের মাঠে এই গাছ হয়ে থাকে।
-----গাছের বিস্তার-----
 এর বীজ খুবই ছোট। সাধারণত গোবর, গাড়ির চাকা, পথচারীদের জুতা, সেচের জল ও বাতাসের সঙ্গে এর বিস্তার ঘটে। এই গাছ বিদেশ থেকে আমাদের দেশে আমদানি হয়েছে। নিন্দুকরা বলেন, তৎকালিন সময়ে বিদেশিরা নাকি এই গাছের বীজ ভারতে রপ্তানি করা গমের সঙ্গে মিশিয়ে এদেশে পাচার করেছিল। এই গাছ থেকে সৃষ্ট রোগের ঔষধ নাকি ঐ বিদেশিদের কাছেই ছিল। সেই ঔষধ বিক্রীর জন্যই নাকি এদেশে গাছ পাচার হয়েছে। 

-----পার্থেনিয়ামকে ‘কংগ্রেস ঘাস’ বলা হয় কেন?
পার্থেনিয়াম ফুল গুলিকে সাদা টুপি পরিহিত কংগ্রেস কর্মীদের মতো দেখতে লাগে বলে এই গাছকে ‘কংগ্রেস ঘাস’ বলে। আবার অন্য মতও রয়েছে। ১৯৫০ সালে দুর্ভিক্ষের সময় কংগ্রেস আমেরিকা থেকে গম আমদানির সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছিল। সেই গমের মধ্যেই ভয়ংকর পার্থেনিয়াম বীজ মেশানো ছিল, যা ভারতে ছড়িয়ে পড়েছিল। তাই মানুষ এই ঘাসের নাম দিয়েছিল ‘কংগ্রেস ঘাস’। যদিও এর সত্যতা গবেষনা সাপেক্ষ।
-----পার্থেনিয়ামকে ‘গাজর ঘাস’ বলা হয় কেন?
গাছটি জন্মানোর পর দেখতে গাজর গাছের মতো লাগে। তাই এই গাছকে ‘গাজর ঘাস’ বলা হয়।
------রাসায়নিক উপাদান-----
পার্থেনিয়ামে রয়েছে পার্থেনিন নামক ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান। এতে রয়েছে Sesquiterpene Lactones নামক টক্সিন বা বিষ এই বিষ গঠিত হয় Caffeic acid, Vanillic acid, Ansic acid, P-anisic acid, Chlorogenic acid, Ges Parahydroxy benzoic acid দ্বারা।
-----ক্ষতিকর প্রভাব-----
১. পার্থেনিয়াম মানুষের হাতে-পায়ে লাগলে প্রাথমিক অবস্থায় হাত-পা চুলকায়, লাল হয়ে যায় এবং পরে ত্বকে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।
২. পার্থেনিয়ামে আক্রান্ত ব্যক্তি ঘন ঘন জ্বর, অসহ্য মাথাব্যথা উচ্চরক্তচাপে ভুগতে পারে।
৩. দশ মিটার দূর থেকেও এই আগাছাটির ফুলের রেণু মানুষের এলার্জি, হাঁপানি রোগ সৃষ্টি করতে পারে।
৪. পার্থেনিয়াম আগাছা যুক্ত মাঠে গবাদিপশু চরলে পশুর শরীর ফুলে যায়, তীব্র জ্বর, বদহজমসহ নানা রোগের উপসর্গ দেখা দেয়।
৫. এই গাছ খেলে গাভীর দুধ তিতা হয়, যা দীর্ঘদিন পান করলে এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
৬. এই বিষাক্ত আগাছা এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করে যা কীটপতঙ্গ ফসল উভয়ের ক্ষতি করে।
৭. পার্থেনিয়াম আগাছা জমিতে থাকলে ফসলের উৎপাদন প্রায় চল্লিশ শতাংশ কমে যায়।
৮. পার্থেনিয়ামের রেণু বাতাসে মিশে টমেটো, মরিচ বেগুনের ফুল ঝরিয়ে দেয়।
৯. এই গাছ থেকে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণের ফলে ডাল জাতীয় ফসলের গাছের নাইট্রোজেন তৈরিতে সহায়তাকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে দেয়।
-----পার্থেনিয়াম দমন-----
১. এই আগাছার পুড়িয়ে ফেলা যেতে পারে।
২. গাছ কেটে গভীরগর্তে পুতে ফেলা যেতে পারে। 
৩. কীটনাশক ব্যবহার করেও আগাছা দমন করা যেতে পারে।
৪. চারা অবস্থায় গাছগুলোকে উপড়ে ফেলা যেতে পারে।
৫. পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হওয়া।
 
লেখক ও ছবি- শ্রী রূপেশ কুমার সামন্ত/ ২৮.০৪.২০১৮]

1 comment:

  1. Steps to be taken immediately to make our environment healthy to live. What is the suitable pesticide to destroy it?

    ReplyDelete