Tuesday, 19 June 2018

ভ্যারাইটি জামাই [পর্ব- ২]-------- ---------- @ লেখক- রূপেশ সামন্ত/


--------- --------ভ্যারাইটি জামাই [পর্ব- ]-------- ----------
@ লেখক- রূপেশ সামন্ত

“জামাই ষষ্ঠী উপলক্ষ্যে এখানে ভ্যারাইটি জামাই ভাড়ায় পাওয়া যায়।” কলেজ পাড়ার মেসের ছেলেগুলো রাস্থার ধারে এই রকম একটি নোটিশ ঝুলিয়ে রেখেছেভাবলাম, ‘ভ্যারাইটি স্টোর’ আছে, কিন্তু ‘ভ্যারাইটি জামাই’ আবার কি! মনস্তাত্ত্বিক আর আর্থ-সামাজিক দ্বন্দের ভুলভুলাইয়াতে ভাবতে ভাবতে একটা ভাবনা দাঁড় করানো গেল। এখন দেখা যাক ‘ভ্যারাইটি জামাই’এর ভ্যারাইটি ব্যাপার-স্যাপার-
-----‘রাজপুত্র’ জামাই-----
এরা সাধারণত সুদর্শণ চেহারাররূপ নিয়ে বেশ অহংকারও আছে। শরীর চর্চা ও খাদ্য তালিকার ব্যাপারে বেশ খুঁতখুঁতেবয়স বাড়লেও এদের গ্ল্যামার কমে না। শাশুড়ির মুখে সবসময় এই ধরনের জামাই এর তারিফ শোনা যায়।
----‘সর্বভুক’ জামাই----
এরা বেশ গুছিয়ে-বাগিয়ে খেতে পারেন। পারলে জামাই ষষ্ঠীর আগের দিন থেকে শ্বশুর বাড়িতে পৌঁছে যান। জলখাবার থেকেই ভুরিভোজ শুরু হয়। সারাদিন অনবরত খানাপিনা চলে। রাত্রিতে ভুরিভোজের পর একগ্লাস গরম দুধ খেয়ে তবেই ঘুমোতে যান। শ্বশুরের কষ্ট হলেও শাশুড়ি কিন্তু খাইয়ে বেশ তৃপ্তি পান।
----‘অসামাজিক’ জামাই-----
এরা বেপরোয়া ধরনেরনিজের সম্পর্কে বিরাট ধারনা পোষন করেনশ্বশুরবাড়ি যান না। স্ত্রীকেও নানা বাহানায় বাড়িতে আটকে রাখেন। শ্বশুরবাড়ির চোখে এরা অসামাজিক, মেয়ের জীবন নষ্টকারী
----‘সংস্কৃতিবান’ জামাই-----
শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে হারমোনিয়াম বা গীটার বাজাতে বসে। শিল্প-সংস্কৃতি নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে দীর্ঘ লেকচার দেন। শ্বশুর বাড়িকে আর্ট মিউজ়িয়ামের স্টাইলে সাজাতে পরামর্শ দেনটিভিতে ক্লাসিক্যাল চ্যানেল দেখেন
----‘কিপটে’ জামাই-----
এরা প্রতি পদক্ষেপে হিসাব করে চলে। শ্বশুর বাড়িতেও হিসেব করে মিষ্টি ও উপহার নিয়ে যায়। স্ত্রীর শাড়ি-গয়নার দাবীকে বাজে খরচ ভাবে। শ্যালিকারা পকেট কাটবে- এই ভয়ে তাদের এড়িয়ে চলে।
-----‘শাশুড়িপ্রিয়’ জামাই-----
এরা শাশুড়ি মাতার প্রতি একটু বেশিই ভক্ত হন শাশুড়িমাতাই এদের কাছে ধ্যান-জ্ঞান। স্ত্রীর কথা নয়, শাশুড়ি মাতার কথা এরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন।
-----‘এক্সপ্রেস’ জামাই-----
এরা জামাই ষষ্ঠীর সময় স্ত্রীকে আগে থেকেই বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। কাজ না থাকলেও নিজে খুব অল্প সময়ের জন্য শ্বশুর বাড়িতে আসেন। দ্রুত আসেন, খাওয়া-দাওয়া করে আবার দ্রুত শ্বশুর বাড়ি ত্যাগ করেন।
-----‘ত্যাজ্য’ জামাই----
এরা বাড়ির অমতে মেয়েকে ফুসলিয়ে বিয়ে করেছেনএই সব জামাই শ্বশুর বাড়ি থেকে বিতাড়িত। এদের বিরুদ্ধে সর্বদা গালমন্দ চলে। যদিও এইসব জামাই এর জন্য শাশুড়ির মন ভারাক্রান্ত থাকে।
-----‘ব্যক্তিত্বহীন’ জামাই-----
দের মান-সম্মান বোধ কম। শ্বশুর বাড়িতে খাতির-যত্ন পান না। স্ত্রী’রা জামাইয়ের উপর ছড়ি ঘোরায়। শ্বশুর বাড়িতে সর্বদা লাথি-ঝাঁটা খায়।
-----‘ঘরজামাই’-----
শ্বশুরের ছেলে না থাকার কারনে অথবা জামাই এর অক্ষমতার দরুন এরা শ্বশুর বাড়িতেই থাকে। এদের ঘরজামাই বলে। এই ধরনের জামাইদের শ্বশুর বাড়িতে মর্যাদা থাকে না। সমাজও এদের ভালো চোখে দেখে না।
-----‘খাই-খাই’ জামাই----
এরা সর্বদা শ্বশুরের কাছ থেকে অর্থ ও জিনিসপত্র হাসিল করার ফন্দি আঁটেন। স্ত্রী’দেরও কাজে লাগায়। চার চাকা গাড়ি, দামি মোবাইল, ল্যাপটপ ইত্যাদি রয়েছে সেই তালিকায়। কিছু প্রাপ্তির পরও এদের খাইখাই থামে না।


-----‘কুড়ে’ জামাই-----
এরা শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে সারাদিন শুয়ে থাকে। এদের স্ত্রী’রাই সব কাজ করেন। বিছানাতেই খাবার দিয়ে আসতে হয়। ঘুমেই এদের চরম শান্তি।
-----‘সবজান্তা’ জামাই----
শ্বশুরে প্রেশারের ওষুধ থেকে শাশুড়ির হাতে ছ্যাঁকা লেগে যাওয়ার মলম বা শ্যালকের মাস্টার ডিগ্রির ফিজিক্স বইএর লেখক থেকে শ্যালিকার পাত্র পছন্দ- সবেতেই এই ধরনের জামাইদের জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য থাকে।
-----‘সর্ব ঘটে কাঁঠালি কলা’ জামাই----
এরা খুব দায়িত্বশীল জামাই শ্বশুরকে ডাক্তার দেখানো থেকে শুরু করে শ্যালকের বিয়ে- সব কাজেতেই এরা দণ্ড-মুণ্ডের কর্তা। এরা কাজ ঠিকমতো মেটাতে সিদ্ধহস্ত। শ্বশুর বাড়ির যেকোন অনুষ্ঠানে, নিত্যপ্রয়োজনে এদের আগে ডাক পড়ে।
-----‘পাড়া মাতানো’ জামাই----
এরা খুব মিশুকে। এই জামাইরা শ্বশুর বাড়ি এলে এলে চারদিকে হই হই পড়ে যায় হাসি-ঠাট্টা করতে করতে পাড়ায় ঘুরে বেড়ায়
-----ব্যস্ত জামাই-----
এরা সর্বদা কাজ নিয়েই মেতে থাকেন। শ্বশুর বাড়িতে এসেও অফিস আদালতের কাজ করেন। সর্বদা স্মার্টফোন, ল্যাপটপ অন থাকে। ঘন ঘন ফোন আসে।
-----‘ফিটফাট’ জামাই----
এরা সবকিছুতে লেটেস্ট ফ্যাশন ব্যবহার করেন। লেটেস্ট গাড়ি থেকে লেটেস্ট সার্ট। দামি পারফিউম, জুতো ইত্যদি এরা ব্যবহার করেন। নিখুঁত সাজগোজের মধ্যে নিজেকে টিপটপ রাখে।
-----‘হাই পার্সোন্যালিটি’ জামাই-----
এরা খুব গম্ভীর থাকেঅসম্ভব পার্সোন্যালিটি নিয়ে চলেকারো সাথে সেভাবে কথা বলে না।
-----‘পাঠক’ জামাই-----
এরা শ্বশুর বাড়িতে গিয়েও পড়াশোনা করে। এরা সবসময় বইয়ে মুখ গুঁজে পড়ে থাকেন। বই না পেলে খবরের কাগজকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েন।
লেখক- রূপেশ সামন্ত/ ১৭.০৬.২০১৮

জামাই ষষ্ঠী আসলে জামাইদের হাইজ্যাক করা অনুষ্ঠান [পর্ব-১]


--- --জামাই ষষ্ঠী আসলে জামাইদের হাইজ্যাক করা অনুষ্ঠান [পর্ব-]-- ---
@লেখক- শ্রী রূপেশ সামন্ত/

জামাই ষষ্ঠী এলো কিভাবে? কত ভ্যারাইটির জামাই রয়েছে? ভুরিভোজ কেমন চলে? বৌমা ষষ্ঠী হয়না কেন? জামাই ষষ্ঠী নিয়ে কি লোকগল্প আছে? কিভাবেই বা পালিত হয়?  নানান কৌতুহল! জামাই ষষ্ঠীর দিন সকলে মিলেমিশে ভুরিভোজ আর মহা সমারোহে উৎসব পালন!
-----জামাই ষষ্ঠী কেন জামাইদের দ্বারা হাইজ্যাক হল-----
প্রাচীন কালে সমাজে একটা রীতি ছিল যে, কন্যার বিবাহের পর কন্যা যতদিন না সন্তানবতী হয় ততদিন পিতা-মাতা কন্যাগৃহে যেতে পারবেন না। কিন্তু শিশু মৃত্যু জনিত বা অন্যান্য কারনে কন্যা দীর্ঘদিন সন্তানবতী না হলে পিতা-মাতা কন্যার মুখদর্শনে বঞ্চিত হত। এই সমস্যার সমাধানে তৎকালীন সমাজ পরিচালকরা ঠিক করলেন যে, জৈষ্ঠ মাসের শুক্লা ষষ্ঠীর দিনে মেয়ে-জামাই নিমন্ত্রিত হয়ে বাবার বাড়ি যাবে ও সেই সঙ্গে সন্তান কামনায় ষষ্ঠী পূজা হবে। এর দুটি উদ্যেশ ছিল- প্রথমত, এর মধ্য দিয়ে জামাই-কন্যা নিমন্ত্রিত হয়ে বাবার বাড়িতে আসবে ফলে কন্যার মুখদর্শন হবে। দ্বিতীয়ত, মা ষষ্ঠীর পুজো করে তাঁকে খুশি করা যাতে কন্যা শীঘ্রই সন্তানবতী হয়। এই কারনে জামাই-কন্যা বাবার বাড়িতে নিমন্ত্রিত হয়ে এলে মেয়ের চেয়ে নতুন জামাই প্রচুর সমাদর পেল অনুষ্ঠানের সব আলো জামাই এর উপর গিয়েই পড়ল অন্যদিকে একই সাথে ষষ্ঠী পূজাও হোত এই দুয়ে মিলে হয়ে গেল জামাই ষষ্ঠী। মেয়ের মুখদর্শন প্রকৃত উদ্দেশ্য হলেও অনুষ্ঠানটিজামাই ষষ্ঠীনামে জামাইদের হেফাজতে চলে গেল
-----সংস্কারের বিবর্তন----
বর্তমানে এই সংস্কার অনেক বিবর্তিত হয়েছে। এখন আর বিবাহিত কন্যা সন্তানবতী না হওয়া পর্যন্ত পিতা-মাতার মুখদর্শন করার বিষয়টি কঠোর নিয়মে আবদ্ধ নেই এখন যে ব্যক্তি কন্যা সম্প্রদান করবেন, তিনি কেবল এক বৎসর কন্যার বাড়ি যাবেন না বা গেলেও কন্যার বাড়ির অন্নগ্রহণ করবেন না যদিও আধুনিকতায় এই সংস্কারও বিলুপ্তপ্রায়
-----লোক কথা- জামাই ষষ্ঠীর সাথে ষষ্ঠী পূজার সম্পর্ক----
লোককথায় আছে, এক পরিবারে দুটি বউ এর মধ্যে ছোট বউ খুব লোভী ছিল সে ভাল খাবার লুকিয়ে খেয়ে নিত, আর শাশুড়ির কাছে বেড়ালে খেয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ করত বেড়াল যেহেতু মা ষষ্ঠীর বাহন, তাই বেড়াল মা ষষ্ঠীর কাছে অভিযোগ জানাল মা ষষ্ঠী রেগে গিয়ে অভিষাপ দিলেন ছোট বউয়ের এক এক করে সাত পুত্র ও এক কন্যা মারা যায় ফলে পরিবারের লোকেরা তাকে ‘অলক্ষণা’ বলে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয় ছোট বউ মনের দুঃখে বনে চলে যায় সেখানে কাঁদতে থাকে শেষে মা ষষ্ঠী বৃদ্ধার ছদ্মবেশে তার কাছে এসে কান্নার কারণ জানতে চাইল ছোট বৌ তার দুঃখের কথা বলল এবং মাফ চাইল তখন মা ষষ্ঠী তাকে ভক্তিভরে তার (ষষ্ঠীর) পুজো করতে বললেন তখন ছোট বউ সংসারে ফিরে এসে ঘটা করে মা ষষ্ঠীর পুজো করে ও এক এক করে তার পুত্র কন্যাদের ফিরে পায় এর পর থেকেই চতুর্দিকে সন্তান মঙ্গল কামনায় ষষ্ঠী পুজোর মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়ে তাই মেয়ের মুখদর্শনের নিমিত্ত এবং মেয়ে সন্তানবতী হোক সন্তানরা সুখে থাকুক- এই মঙ্গল কামনায় জামাই ষষ্ঠীর দিন শাশুড়িরা ষষ্ঠীব্রত করেন এটাই জামাই ষষ্ঠী কেন্দ্রিক ষষ্ঠী ব্রতের লোককথা।
-----জামাই ষষ্ঠী কিভাবে পালিত হয়-----
এদিন শাশুড়িরা ঘটা করে ষষ্ঠীর পূজা করেন শাশুড়ি সকাল থেকে উপোস থেকে নতুন পাখার ওপর আম্রপল্লব, আমসহ পাঁচটি ফল এবং ১০৮টি দুর্বাবাঁধা আঁটি আর ধান দিয়ে পূজার উপকরণ সাজান করমচাসহ পাঁচ-সাত বা নয় রকমের ফল কেটে কাঁঠাল পাতার ওপর সাজিয়ে পুজোর উপকরণ প্রস্তুত করা হয়। ধান বহু সন্তানের প্রতীক এবং দুর্বা চিরসতেজতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয় এরপর জামাইকে আসনে বসিয়ে প্রথমে কপালে দইয়ের ফোঁটা দিয়ে আশীর্বাদ করেন জামাই-কে আশীর্বাদ করে ষাট-ষাট বলেন। এরপর মা ষষ্ঠীর আশীর্বাদপূত তেল-হলুদে মাখানো সুতো জামাই এর হাতে বেঁধে দেন। এরপর শাশুড়ি জামাই এর হাতে নতুন বস্ত্র তুলে দেন আর খেতে দেন মিষ্টান্ন ও ফল। জামাইও প্রণামী হিসেবে শাশুড়িকে বস্ত্রাদি দিয়ে থাকে
-----জামাই ষষ্ঠী একটি সংস্কার না উদ্দেশ্যপূর্ণ-----
আসলে জামাই ষষ্ঠীর  পিছনে রয়েছে গভীর উদ্দেশ্যআর এই উদ্দেশ্যটা হল জামাইকে তোষামোদ কারণ, এতে মেয়ে ভাল থাকবে। তাই এতো লোকাচার। আসলে মেয়ের মঙ্গলচিন্তায় এবং তাঁর সংসার সুখী রাখার জন্যই এত আয়োজন হয়। কন্যার বিবাহের পর একটি পরিবারের সঙ্গে আর একটি পরিবারের সম্পর্ক সুদৃঢ় করাও এই জামাই ষষ্ঠীর উদ্দেশ্য

-----জামাই ষষ্ঠীর ভুরিভোজ পর্ব----
এর পরের পর্বটি জামাইদের জন্য খুবই লোভনীয়। সকাল থেকে শ্বাশুড়ি মায়েরা নানারকম রান্না করেন। নিজেরা উপবাস করে থাকেন যাক, এখানে ভুরিভোজের একটি উদাহরণ তুলে ধরা হল।
জল খাবার- লুচি, আলুভাজা, পটলভাজা, বেগুনভাজা, ছোলার ডালনা, উপযোগী তরকারি, সিমাই পায়েস, সন্দেশ মিষ্টি
দুপুরের আহার- গন্ধরাজ লেবু, আলুভাজা, বেগুনভাজা, বাসমতি চালের ভাত, ফুলকপির তরকারি, পটলের দোরমা, চিংড়া মাছের মালাইকারি, ইলিশের পাতুরি, খাসির মাংস, আমসত্ত্বের চাটনি, পাঁপড়, দই, মিষ্টি ও আইসক্রীম
 [চলবেপর্ব-/ বাকী অংশ জামাই ষষ্ঠীর প্রকাশিত হবেআপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন]
@লেখক- রূপেশ সামন্ত/ ১৭.০৬.২০১৮

জীবনের ভুল — সত্যিই ভুল?

  জীবনের ভুল — সত্যিই ভুল? জীবন এক অমোঘ প্রবাহ—সময়ের স্রোতে আমাদের চিন্তা, অনুভব ও সিদ্ধান্ত সবই পরিবর্তিত হয়। আজ যা ভুল মনে হয়, কাল তা সঠি...