Popular Posts

Saturday 9 June 2018

বিশ্বকাপ ফুটবলঃ অনেক কৌতুহল


-----বিশ্বকাপ ফুটবলঃ অনেক কৌতুহল-----
রূপেশ সামন্ত/


বিশ্বকাপ ফুটবলে ভারত কিন্তু খেলার সুযোগ পেয়েছিল। তবে, ভারত খালি পায়ে খেলতে চেয়েছিল। খেলার অনুমতি পায়নি।* আবার ফুটবলের রাজপুত্রমারাদোনা হাত দিয়ে গোল করেই চির-প্রতিদ্বন্দী ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দিয়েছিলেন। ঐ হাত নাকি ভগবানের হাতছিল!* [বিস্তারিত পরে] এখন গোটা বাংলা বিশ্বকাপ ফুটবল জ্বরে আক্রান্ত। অনেক কৌতুহল! অনেক জানা-অজানা বিষয়! আসুন, বিশ্বকাপ ফুটবলের কিছু আকর্ষনীয় গল্প ভাগ করে নিই।
১. ১৯৩০ সালে যুক্তরাষ্ট্র আর্জেন্টিনার মধ্যে বিশ্বকাপ ফুটবলের সেমিফাইনালের ম্যাচ চলছে। মার্কিন ট্রেনার রেফারিকে একটি প্রতিবাদ জানাতে সোজা মাঠের মাঝখান দিয়ে দৌড় লাগালেন এমন সময় হঠাৎ তিনি তাঁর ডাক্তারি ব্যাগটি রেগে মাটিতে ছুড়ে মারেন। তখন  ক্লোরোফর্মের বোতলটি ভেঙে যায়। আর সেই ক্লোরফর্মের প্রভাবে তিনি নিজেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
. বিশ্বকাপের ট্রফি ১৯৬৬ সালে সাতদিনের জন্য চুরি হয়ে যায়এক প্রদর্শনী থেকেই চুরি হয়একটি ছোট্ট কুকুর শেষ পর্যন্ত চুরি যাওয়া ট্রফিটি শনাক্ত করে এবং ট্রফিটি উদ্ধার হয়। ১৯৮৩ সালে সেটি আবারও চুরি হয়ে যায়, যেটি আজ পর্যন্ত আর উদ্ধার করা যায়নি
. কিংবদন্তি ক্রিকেট তারকা স্যার ভিব রিচার্ড একমাত্র ক্রীড়াবিদ ছিলেন, যিনি ফুটবল ক্রিকেট উভয় বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছেন। ১৯৭৪ সালে এনিটগুয়ার হয়ে ফুটবল বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে অংশ নিয়েছিলেন এই কিংবদন্তি ক্রিকেটার
. বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুত গোল হয়েছিল খেলা শুরুর মাত্র ১১ সেকেন্ডে। ২০০২ সালের বিশ্বকাপের তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে তুরস্কের হাকান সুকুর দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে মাত্র ১১ সেকেন্ডের মাথায় গোলটি করেছিলেন।
. ১৯৫০ সালের বিশ্বকাপে ভারত যোগ্যতা অর্জন করে। মানুষের মধ্যে প্রচার ছিল যে, খালি পায়ে খেলতে চাওয়ায় ভারতকে বিশ্বকাপে খেলার অনুমতি দেওয়া হয়নি। এর আগে ১৯৪৮ এর অলিম্পিকে ভারত খালি পায়েই খেলেছিল। কিন্তু এগুলো হয়তো ভারতীয় ফুটবল সংস্থার অক্ষমতা ঢাকার প্রচার মাত্র। প্রকৃত পক্ষে, তৎকালীন ভারতীয় ফুটবল সংস্থা বিশ্বকাপ ফুটবলের গূরুত্বই হয়তো বোঝেনি। তাই খেলার অনুমতি দেয়নি। কারণগুলি দেখানো হয়েছিল- যাতায়াতের ব্যয় বহন করার অক্ষমতা এবং টিম নির্বাচন ও অনুশীলনের সময়ের অভাব।  
. বিশ্বকাপ ১৮ তে চাম্পিয়ন টিম পাবে ৩ কোটি ৮০ লক্ষ মার্কিন ডলার অর্থাৎ ভারতীয় মূদ্রায় প্রায় ২,৫৪,৮১,৫৪,৬০০ টাকা। রানার-আপ পাবে ২ কোটি ৮০ লক্ষ মার্কিন ডলার। এইভাবে ৩২ তম স্থানাধীকারী পর্যন্ত মোট ৪০ কোটি মার্কিন ডলার অর্থ পুরস্কার হিসাবে দেওয়া হবে।
. বিশ্বকাপ ১৮-র আনুষ্ঠানিক মাস্কট হচ্ছে একটি নেকড়ে, যেটির নামকরন করা হয়েছে জাবিভাকারাশিয়ান ভাষায় জাবিভাকাশব্দের অর্থ- ‘যিনি গোল করেন
. ২০২৬ সালে বিশ্বকাপ ফুটবল মোট ৪৮টি দল নিয়ে খেলা হবে। ১৯৯৮ সাল থেকে বিশ্বকাপ ফুটবল ৩২টি টিম, ১৯৮২ সাল থেকে বিশ্বকাপ ফুটবল ২৪টি টিম এবং ১৯৩৪ সাল থেকে বিশ্বকাপ ফুটবল ১৬টি টিম নিয়ে খেলা হয়েছে
. ১৯৮৬-র বিশ্বকাপে চিরপ্রতিদ্বন্দী ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মারাদোনা গোল করতে মাথার পরিবর্তে হাত ব্যবহার করেছিলেনবিষয়টির মধ্যে এতই চতুরতা ছিল যে রেফারি লক্ষ্য করেননি। গোলের হুইসেল বাজিয়ে দেন। পরে সাংবাদিকদের মারাদোনা মজা করে বলেছিলেন, ‘গোলটি হয়েছে কিছুটা মাথা দিয়ে এবং কিছুটা হাত দিয়ে।’ এর পর থেকেই ঐ গোলটি ‘ইশ্বরের হাতের গোল’ রূপে চিহ্নিত হয়ে আসছে
১০. ১৯৮৬-র বিশ্বকাপে ৫১ মিনিটের প্রথম গোলটি "হ্যান্ড অফ গড গোল" নামে পরিচিত হয়ে ওঠে আর  তার চার মিনিট পরে মারাদোনার দ্বিতীয় গোলটি করেন, যে গোলটি ‘গোল অফ দ্য সেঞ্চুরি’ নামে পরিচিত হয়ে আছে মারাদোনাকে ইংল্যান্ডের পাঁচ খেলোয়াড় ঘিরে ধরেছিলকিন্তু সবাইকে বোকা বানিয়ে বল ড্রিবল করে অভূতপূর্ব  কৌশলে গোলটি দিয়ে দেন। গোলটি ‘সেঞ্চুরির সেরা গোল’ নামে পরিচিত। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হওয়ার জন্য মারাদোনা সোনালী বল জয় করেন

১. একটি ম্যাচও না খেলে বিশ্বকাপের চুড়ান্ত পর্বে অংশ নেয়ার সুযোগ পেয়েছিল ইসরায়েল। ১৯৫৮ সালে বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে তাদের ৫টি প্রতিপক্ষ দল নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেয়। যাতে ইসরায়েল ওই সুবর্ণ সুযোগটি লাভ করে।
২. রাশিয়ার ওলেগ সালেংকো প্রথম কোন ফুটবলার যিনি বিশ্বকাপের এক ম্যাচে পাঁচ গোল করার কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। ১৯৯৪ সালে ক্যামেরুনের বিপক্ষে গোলগুলো করেছিলেন তিনি।
১৩. বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গোল হয়েছিল বিশ্বকাপ’৫৪ এর একটি ম্যাচে। অস্ট্রেলিয়া সুইজারল্যান্ডকে ৭-৫ গোলে পরাজিত করেছিল।
 ১. বিশ্বকাপ ১৮-র আনুষ্ঠানিক ম্যাচ বলটির নাম টেলস্টার ১৮  ১৯৭০ সালের প্রথম অ্যাডিডাস বিশ্বকাপ বলের নাম এবং নকশাটির উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে এটিকে।
. টুর্নামেন্টের অফিসিয়াল গান হিসাবে নির্বাচিত হয়েছে লিভ ইট আপতিনজন শিল্পী এই গানটি গেয়েছে।
১৬. বিশ্বকাপ ফুটবলে অতিরিক্ত কিছু পুরস্কারও দেওয়া হয়। গোল্ডেন বুটশীর্ষ গোলদাতাকে, ‘গোল্ডেন বলসবচেয়ে ভালো খেলোয়াড়কে, গোল্ডেন গ্লোভ শ্রেষ্ঠ গোলরক্ষককে, ‘ফেয়ার প্লে ট্রফি যে দলের ক্রীড়া আচরণ সবচেয়ে ভাল তাদেরকে, ‘মোস্ট এন্টারটেইনিং টিম যে দলের খেলা দর্শকদের সবচেয়ে বেশি আনন্দ দেয় তাদেরকে দেওয়া হয়।
১৭. ইতালীয় গোল রক্ষক এবং অধিনায়ক দিনো জফ হচ্ছে বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সী খেলোয়াড় যিনি বিশ্বকাপে নিজ দেশের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৮২ সালের ফিফা বিশ্বকাপে তিনি ইতালীয় দলের নেতৃত্ব দেন
১৮. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারনে ১৯৪২ ও ১৯৪৬ সালে দু’টি বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিতই হয়নি।
১৯. সবচেয়ে বেশি বিশ্বকাপে অংশ নেয়া খেলোয়াড় হল অ্যান্টনিও কারবাজাল (৫ বার), লোথার ম্যাথিউস (৫ বার)।
.২০. আইসল্যান্ড এবং পানামা বিশ্বকাপের ইতিহাসে এই প্রথমবার অংশগ্রহণ করবে।
২১. বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি বয়সী গোলদাতা ছিলেন রজার মিল্লা ১৯৯৪ সালে ৪২ বছর বয়সে তিনি রাশিয়ার বিপক্ষে ক্যামেরুনের হয়ে একটি গোল করেন।
২২. রাশিয়ার মোট ১১টি শহরের ১২টি স্টেডিয়ামে সর্বমোট ৬৪টি খেলার সম্পন্ন হবে।
. রাশিয়া এই প্রথম বিশ্বকাপ ফুটবল-‘১৮ আয়োজনের দায়িত্ব পেল। এই বার নিয়ে তারা মোট ১১ বার বিশ্বকাপ ফুটবলে অংশগ্রহন করবে।
২৪. এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে ক্রমান্বয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতারা হলেন মিরোস্লাভ ক্লোসা (১৬ টি), রোনালদো (১৫ টি), গার্ড মুলার (১৪ টি), জাঁ ফতেইন (১৩ টি), পেলে (১২ টি), ইয়ুর্গেন ক্লিন্সমান (১১ টি), স্যান্ডর কক্সিস (১১ ট), গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা (১০ টি), টিওফিলো কিউবিলাস (১০ টি), লাটো (১০ টি), লিনেকার (১০ টি), হেল্মুট রান (১০ টি)।

লেখক- শ্রী রূপেশ সামন্ত/ ০৬.০৬.২০১৮

No comments:

Post a Comment