Popular Posts

Saturday, 14 September 2019

Mock Parliament - Question Hour


নকল বিধান সভা স্ক্রিপ্ট
MOCK YOUTH PARLIAMENT SCRIPT
Script Writer- Rupesh Kumar Samanta


চরিত্র- অধ্যক্ষ (১), সচিব (১), আর্দালি (১), সরকার পক্ষের মন্ত্রী ও বিধায়ক (৭), বিরোধী পক্ষের দলনেতা ও বিধায়ক (৫)

[১]
[সরকার পক্ষের মন্ত্রী ও বিধায়ক এবং বিরোধী পক্ষের দলনেতা ও বিধায়করা সকলে বিধান সভা কক্ষে প্রবেশ করে। সচিবের বসার জায়গায় রাখা খাতায় সই করেন। সরকার পক্ষ ডানদিকে ও বিরোধী পক্ষ বামদিকে নিজের নিজের জায়গায় গিয়ে বসেন। নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করতে থাকেন।]
[অধ্যক্ষের বসার আসনের কাছে মার্শালের প্রবেশ।]

মার্শালঃ  সদস্য মহোদয় ও মহোদয়াগণ, মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়/ মহাশয়া ...
[সচিব ও অধ্যক্ষ সভাকক্ষে প্রবেশ করেন। সভাকক্ষে উপস্থিত সবাই উঠে দাঁড়ায়। অধ্যক্ষ মহাশয়/ মহাশয়া প্রথমে সরকার পক্ষকে (ডানদিকে) পরে বিরোধী পক্ষকে (বাঁদিকে) নমস্কারের ভঙ্গীতে অভিবাদন জানান। অধ্যক্ষ মহাশয়/ মহাশয়াকে সকলে ঝুঁকে নমস্কারের ভঙ্গিতে অভিবাদন জানান। অধ্যক্ষ মহাশয়া বসলে সকলে বসেন। সচিব গিয়ে নিজের জায়গায় বসেন এবং টেবিলে রাখা ফাইল ও কাগজে মনোযোগ দেন। মার্শাল দণ্ডটি সচিবের সামনের টেবিলে রেখে যান। ফিরে গিয়ে স্পিকারের পাশে বামদিকে মার্শাল বসেন।]

[২]
স্পিকারঃ পাঁশকুড়া পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে নবনির্বাচিত বিধায়িকা আফরোজা বিবি মহাশয়া শপথ বাক্য পাঠ করবেন।
[নব নির্বাচিত সদস্য সচিবের কাছে গিয়ে কাগজ জমা দিল। ওখানের কাগজ নিয়ে গিয়ে স্পিকারের হাতে দিলে স্পিকার উঠে দাঁড়ান। শপথের জন্য স্পিকার শপথ বাক্য পাঠ করাতে থাকেন।]

স্পিকারঃ আমি…

বিধায়িকাঃবিধানসভার সদস্যা রূপে নির্বাচিত আমি আফরোজা বিবি ঈশ্বরের নামে শপথ করিতেছি ও নিষ্ঠার সহিত প্রতিজ্ঞা করিতেছি যে, আমি বিধি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ভারতের সংবিধানের প্রতি প্রকৃত বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ করিব, আমি ভারতের সার্বভৌমত্ব ও সংহতি রক্ষা করিয়া চলিব এবং আমি যে কর্তব্যভার গ্রহণ করিতে চলিয়াছি তাহা বিশ্বস্তভাবে নির্বাহ করিব।”
[শপথ গ্রহণ শেষে স্পিকারের সঙ্গে হ্যান্ডসেক/নমস্কার করেন। অন্য সকল সদস্যরা টেবিল চাপড়ে তাঁকে অভিবাদন জানায়। সদস্যা স্পিকারের পিছন দিক দিয়ে এসে সচিবের কাছে দাঁড়ান। কাগজে সই করেন। সচিবের সঙ্গে হ্যান্ডসেক করেন। মুখ্য মন্ত্রীর সঙ্গে হ্যান্ডসেক/ নমস্কার করেন। বিরোধীদলের প্রধানের সঙ্গে হ্যান্ডসেক/ নমস্কার করেন। তারপর নিজের জায়গায় গিয়ে বসেন।]
[৩]
[সচিব গিয়ে একটি কাগজ দিয়ে আসে।]
স্পিকারঃ  আজ সভা শুরুর প্রাক্কালে অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাই যে, ভারতের প্রাক্তন অর্থ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি মারা গেছেন। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর দিল্লির এইমস হাসপাতালে গত ২৪শে আগস্ট, ২০১৯ তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। তার কিডনিতে ক্রনিক সমস্যা দেখা দেয়ায় কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হয়। এমন শারীরিক প্রতিবন্ধকতার মধ্যেো তিনি প্রথম মোদি সরকারের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীকে আমি ভারতের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অরুন জেটলি সম্পর্কে কিছু বলতে বলছি।

মুখ্যমন্ত্রীঃ ব্যাক্তিগত ভাবে অরুন জেটলির সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল। রাজনীতির উর্ধে উঠে বিভিন্ন সময় আমাকে সাহায্যও করেছেন। অটল বিহারি বাজপেয়ি ও নরেন্দ্র মোদি জমানায় অরুণ জেটলি একাধিকবার অর্থ, বাণিজ্য ও আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। জিএসটি, নোটবন্দির মতো একাধিক নীতি প্রণয়ন করেছেন। যদিও আমরা তার বিরোধীতা করেছি। শুধু দক্ষ রাজনীতিবিদ নন, তিনি সুপ্রিমকোর্টের দক্ষ আইনজীবীও ছিলেন। ব্যক্তি অরুন জেটলি একজন খুব বড় মনের মানুষ ছিলেন। আমরা তাঁর অবদান ভুলবে না।

স্পিকারঃ মাননীয়া বিরোধী দলনেতাকে আমি ভারতের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অরুন জেটলি সম্পর্কে কিছু বলতে বলছি।

বিরোধী দলনেতাঃ প্রয়াত এই জননেতা জনসাধারণের জন্য অসামান্য কাজ করেছেন। জনপ্রতিনিধি হিসেবে তার অনুকরণীয় ভূমিকা ছিল। সাধারণ মানুষের জন্য সংসদের ভেতরে ও বাইরে সমান সক্রিয় ছিলেন তিনি। রাজনীতিতে জেটলির অবদান অনস্বীকার্য। অসাধারণ সংসদ সদস্য ও দক্ষ আইনজীবী ছিলেন। সব দলের নেতাদেরই প্রিয়জন ছিলেন তিনি। ভারতের রাজনীতিতে তার অবদান চিরকাল মনে থাকবে।

স্পিকারঃ প্রয়াত অরুন জেটলির বিদেহী আত্মার শান্তি কামনায় ও তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে সভার সকলকে এক মিনিট নীরবতা পালন করতে অনুরোধ করছি।
[সকলে উঠে দাঁড়ায়।]

[অল্প সময় পরে]
স্পিকারঃ ধন্যবাদ এবার সকলে বসতে পারেন।
[সবাই বসে পড়েন।]

স্পিকারঃ সচিব মহাশয়কে প্রয়াতের পরিবারের প্রতি একটি শোক বার্তা প্রেরণ করতে অনুরোধ জানাই।
[সচিব গিয়ে একটি কাগজ দিয়ে আসে।]


[৪]
স্পিকারঃ এখন শুরু হচ্ছে প্রশ্নোত্তর পর্ব । আমার কাছে মোট ১৭টি প্রশ্ন এসেছে। কিন্তু সময়ের অভাবে ও গুরুত্বের বিচারে মাত্র ৪টি প্রশ্ন আলোচনার জন্য  অনুমোদন করেছি।

স্পিকারঃ অনুমোদিত প্রশ্ন নং ১, বিরোধী দলনেতা

বিরোধী দলনেতাঃ মাননীয়/ মাননীয়া স্পিকার, অর্থ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী মহোদয় অনুগ্রহপূর্বক জানাবেন কি-
রাজ্য সরকারী কর্মীদের ডিএ মামলায় নির্দেশ দিয়েছে স্যাট। কেন্দ্রীয় হারেই ডিএ দিতে হবে রাজ্যকে। রায় ঘোষণা করে স্যাট জানিয়েছে, কীভাবে ডিএ দেওয়া হবে, তার আইন করা রাজ্যের দায়িত্ব। পাশাপাশি আরও বলা হয়েছে, বকেয়া মেটানো রাজ্যের কর্তব্য। হয় নগদে মেটাতে হবে বকেয়া টাকা, নইলে পিএফ অ্যাকাউন্টে তা ট্রান্সফার করে দিতে হবে। এক বছরের মধ্যে অথবা ষষ্ঠ পে কমিশনের রায়ের আগে তা কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছে স্যাট। রায় কি উনি জানেন? যদি জানেন, তবে তাঁর জন্য কি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন?

স্পীকারঃ মাননীয় অর্থ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী... ...

অর্থ মন্ত্রীঃ মাননীয়/ মাননীয়া স্পিকার, রাজ্য সরকারী কর্মীদের ডি.এ. নিয়ে একটা নোংরা রাজনীতির খেলা চলছে…

বিরোধী দলনেতাঃ মাননীয়/ মাননীয়া স্পিকার, এটা কোন নোংরা রাজনীতির কথা বলা হচ্ছে? রাজ্য সরকারী কর্মীদের ন্যাহ্য দাবীর কথা বলছি। ডি.এ. চাইতে গেলে পুলিশ দিয়ে পেটানো হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রীঃ মাননীয়া স্পিকার, আমাকে বলতে দেওয়া হোক।

স্পীকারঃ মাননীয় ... ..., আপনি শান্ত হোন। আপনাকে বসতে অনুরোধ করছি। আপনার সময়ে আপনি বলবেন।
[নিজের জায়গায় বসে পড়েন]

অর্থ মন্ত্রীঃ ধন্যবাদ মাননীয়/ মাননীয়া স্পিকার।  ডিএ দেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও অর্থের অভাবে ডিএ দিতে পারছে না সরকার। পূর্বতন সরকারের করে যাওয়া ঋণের সুদ দিতেই সরকারের রাজস্বের প্রায় সবটাই চলে যাচ্ছে। কেন্দ্র সরকারও অসহযোগিতা করছে। কারণ সেন্ট্রাল ফিনান্সিয়াল রেসপন্সিবিলিটি অ্যামেন্ডমেন্ট বিল অনুয়ায়ী রাজ্য ৩ শতাংশের  বেশি ধার নিতে পারবে না। ফলে কেন্দ্রের থেকে রাজ্য ধার নিতে পারছে না। সেই জন্য ডিএ দেওয়ার সমস্যা হচ্ছে। ৬ষ্ঠ পে-কমিশনের রিপোর্ট এখনও জমা পড়েনি। পে-কমিশনের রিপোর্ট জমা পড়লেই সরকার পদক্ষেপ করবে।

বিরোধী দলনেতাঃ মাননীয়/ মাননীয়া স্পিকার, মাননীয় অর্থ মন্ত্রী মূল জায়গাটিই এড়িয়ে যাচ্ছেন। স্যাটের রায়ে বকেয়া ডি.এ. দেওয়ার একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। বকেয়া ডি.এ পাওয়া রাজ্য সরকারী কর্মীদের সঙ্গত অধীকার। ডিএ সম্পূর্ণ মূল্যবৃদ্ধির সাথে যুক্ত। কিন্তু অবান্তর যুক্তি দেখিয়ে আসলে রাজ্য এড়িয়ে যেতে চাইছে। দিনের পর দিন মূল্যবৃদ্ধি হলেও রাজ্য সেই অনুপাতে মহার্ঘভাতা বৃদ্ধি করেনি।

স্পিকারঃ মাননীয় ... ..., আপনি আপনার যথাযথ প্রশ্নটি করুন, অযথা বক্তৃতা দিয়ে বিধান সভারর গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট করবেন না।

বিরোধী দলনেতাঃ মাননীয় স্পিকার, মাননীয় অর্থ মন্ত্রীকে আমার প্রশ্ন- স্যাটের রায় অনুসারে কবে থেকে বকেয়া ডিএ দেওয়া হবে?

অর্থ মন্ত্রীঃ স্যাটের দেওয়া সময় সীমা এখনও শেষ হয়নি। ভারতের বিচার ব্যবস্থার উপর সরকারের পূর্ণ আস্থা আছে। বিরোধীরা চাইলে মহামান্য আদালতে আবারও যেতেই পারেন। ধন্যবাদ।

স্পীকারঃ ধন্যবাদ

স্পিকারঃ অনুমোদিত প্রশ্ন নং ২, বিধায়ক... ...

বিধায়কঃ মাননীয়/ মাননীয় স্পিকার, কৃষি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী মহোদয় অনুগ্রহপূর্বক জানাবে কি-
এই বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় খরার কারনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা কত?
চাষ করা যায়নি এমন জমির পরিমান কত?
এর মোকাবিলায় সরকার কি পদক্ষেপ গ্রহন করেছে?

স্পিকারঃ মাননীয় কৃষি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী

কৃষি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রীঃ মননীয়/ মাননীয়া স্পিকার, আমরা সকলে অবহিত আছি, এবছর সারা দেশেই পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়নি। গত ১০ বছরে এমন ভয়ংকর পরিস্থিতি পশ্চিমবঙ্গে সৃষ্টি হয়নি। এখনও কৃষকরা চাষ করতে পারেনি। এখনও পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এই খরায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ২০ লক্ষ।
খরা জনিত কারনে চাষ করা যায়নি ২৫.২৩ লক্ষ হেক্টর জমিতে।
মাননীয়/মাননীয়া স্পিকার, এই বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য কেন্দ্র সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পিছু দু’হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে।

বিরোধী দলনেতাঃ ঐ সামান্য টাকায় কি হবে? আপনারা আর কত কৃষকের আত্মহত্যা দেখতে চান? রাজ্যে একটি কৃষক বিরোধী সরকার চলছে। [বিরোধী পক্ষ বেঞ্চ চাপড়ে সমর্থন করেন]

কৃষি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রীঃ মাননীয়/ মাননীয়া স্পীকার, আমাকে বলতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।

স্পীকারঃ আপনারা শান্ত হোন। [সবাই চুপ করে] এবার আপনি বলুন।

কৃষি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রীঃ বিগত সরকারে ঋনের বোঝা আমরা বইছি। অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও সরকার কৃষকদের পাশে রয়েছে। আগামী দিনেও থাকবে। ধন্যবাদ।

স্পীকারঃ ধন্যবাদ।

সরকার পক্ষের বিধায়কঃ মাননীয়া স্পিকার, আমি একটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছি।

স্পিকারঃ আপনাকে অনুমতি দেওয়া হল।

সরকার পক্ষের বিধায়কঃ ধন্যবাদ মাননীয়/ মাননীয়া স্পিকার। সংসদের নবনির্বাচিত প্রতিনিধি আফরোজা বিবি বিধান সভায় সেলফি তুলছেন। মোবাইল নিয়েই ব্যস্ত আছেন।

স্পিকারঃ মাননীয় বিধায়িকা, বিধানসভা চলাকালীন সদস্যদের কাছথেকে যথোপযুক্ত আচরণ কাম্য। বিধানসভা চলাকালীন মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধ।

বিধায়কঃ আমি অত্যন্ত দুঃখিত মাননীয়/ মাননীয়া স্পিকার। ভবিষ্যতে এমন আচরণ আর হবে না।

স্পিকারঃ ধন্যবাদ বিধায়িকা আফরোজা বিবি।

স্পিকারঃ অনুমোদিত প্রশ্ন নং ৩, বিধায়ক... ...

বিধায়কঃ মাননীয়/ মাননীয়া স্পিকার, স্বাস্থ্য বিভাগের দায়ত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর কাছে আমার প্রশ্ন, এবছর কতজন মানুষের বজ্রপাতে  ও সর্পদংশনে মৃত্যু হয়েছে? জীবন রক্ষায় সরকার কি পদক্ষেপ করছে?

স্পিকারঃ মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী... ...

স্বাস্থ্য মন্ত্রীঃ মাননীয়া স্পিকার, আমরা ক্ষমতায় আসার পর যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে বিষয় গুলি দেখা হচ্ছে। এই বছর এখনও পর্যন্ত পশ্চিম বঙ্গে ২১৭ জন মানুষের বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে। সর্পদংশনে এবছর ৮২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের পরিবারকে সরকার এক লক্ষ টাকা  করে ক্ষতিপূরণ দেয়।

বিধায়কঃ কিন্তু সরকার মানুষের জীবন রক্ষায় কি পদক্ষেপ করছে?

স্বাস্থ্যমন্ত্রীঃ মাননীয়/মাননীয়া স্পীকার, আমাকে বলতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।

স্পীকারঃ মাননীয় বিধায়ক... , আপনি শান্ত হোন। [চুপ করে যায়] এবার আপনি বলুন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রীঃ মানুষের চেতনার অভাব রয়েছে। বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গায় থাকা উচিৎ নয়, এটা মানুষের বোঝা উচিত। তাই বজ্রঘাতে মৃত্যু বাড়ছে। মানুষের অজ্ঞতা, কুসংস্কার ঘোচেনি। পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, গত তিন বছরে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় সাপের কামড়ে মৃতদের ৯০ শতাংশ প্রথমেই ওঝা, গুণিনের শরণাপন্ন হয়েছেন। সরকার একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়েছে। তাদের ৬ মাসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। তারপরই সরকার যথোপযুক্ত পদক্ষেপ করবে। ধন্যবাদ।

স্পিকারঃ অনুমোদিত প্রশ্ন নং ৪, বিধায়ক... ...
বিধায়কঃ মাননীয়/ মাননীয়া স্পিকার, মাননীয়া মুখ্য মন্ত্রীর কাছে আমার প্রশ্ন, পাঁশকুড়ার সব্জী মার্কেট পশ্চিম বঙ্গের অন্যতম বড় পাইকারি বাজার। পাঁশকুড়া একটি পৌরসভা এলাকা। দীর্ঘদিন ধরে পাঁশকুড়ার লেভেল ক্রসিংয়ে উড়াল পুল নির্মিত হচ্ছে না। প্রতিদিন দু’শো জোড়া ট্রেন যাতায়াত করে। পাঁশকুড়ার গতি আজ রুদ্ধ। উড়াল পুল নির্মানের জন্য রাজ্য সরকার জমি অধিগ্রহন বা অর্থ দিচ্ছে না কেন?

স্পিকারঃ মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী... ...

স্বাস্থ্য মন্ত্রীঃ মাননীয়া স্পিকার, বিষয়টি নিয়ে ওরা নোংরা রাজনীতি করছে। এটি আমাদের বিষয়ই নয়। এটি কেন্দ্রের বিষয়।

বিধায়কঃ কিন্তু কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী সম্প্রতি পাঁশকুড়ায় এসে কেন্দ্র প্রকল্পের মোট খরচের অর্ধেক টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করে গেছেন। রাজ্যের অর্ধেক টাকা দেওয়ার দায়িত্ব পালনের কথা শুনিয়ে গেছেন। 

মুখ্যমন্ত্রীঃ আপনারা এতো বছর ক্ষমতায় ছিলেন। তখন করেননি কেন? আপনি আচরি ধর্ম! আমাদের উপদেশ দিতে হবে না। আমাদের সরকার মানুষের সরকার। মানুষের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা আছে। ওখানে জমি অধিগ্রহন করলে বহু মানুষের ঘরবাড়ি পড়ে যাবে। আমরা জোর করে জমি অধিগ্রহনের বিরোধী।  

বিরোধী দলনেতাঃ জমি অধিগ্রহন না করলে উন্নয়ন হবে কি করে? সিঙ্গুরকে তো শ্মশান বানিয়ে দিয়েছেন। [দুই পক্ষের হইচই, টেবিল চাপড়ানো ও গণ্ডগোল শুরু হয়ে যায়।]

স্পীকারঃ আপনারা শান্ত হোন। শান্ত হোন। [সবাই চুপ করে যায়]
মুখ্যমন্ত্রীঃ আমাদের ঐ এলাকার সাংসদ রেল মন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। কেন্দ্রের পদক্ষেপ অনুযায়ী আমরা পদক্ষেপ করবো। তবে সাধারণ মানুষের যাতে অসুবিধা না হয়, এটা মাথায় রাখতে হবে। থ্যাংক ইউ।
স্পীকারঃ ধন্যবাদ
[৫]
বিরোধী দলের বিধায়কঃ মাননীয়/মাননীয়া অধ্যক্ষ মহাশয়/ মহাশয়া, আমি মুলতুবি প্রস্তাব উত্থাপনের জন্য অনুমতি প্রার্থণা করছি।

স্পিকারঃ হ্যাঁ, এখন মুলতুবি প্রস্তাব উত্থাপনের জন্য আপনাকে আহ্বান জানাচ্ছি।

বিধায়কঃ মাননীয়া স্পিকার, বর্তমান রাজ্য সরকার এন.আর.সি. বা নাগরিক পঞ্জি তৈরির বিরোধিতা করছে। দেশের স্বার্থেই পশ্চিমবঙ্গে এন.আর.সি. বা নাগরিক পঞ্জি তৈরির উদ্যোগ গৃহীত হোক। আমি এই বিষয়ে মুলতুবি প্রস্তাব উত্থাপনের অনুমতি প্রার্থনা করছি।

স্পিকারঃ প্রশ্ন হল যে মাননীয়া সদস্যাকে মুলতুবি প্রস্তাব উত্থাপনের অনুমতি দেওয়া হোক। যারা প্রস্তাবের পক্ষে তারা উঠে দাঁড়ান।
[বিরোধী পক্ষের কয়েকজন উঠে দাঁড়ায়।]

স্পিকারঃ ধন্যবাদ।
[সকলে বসে পড়েন।]

স্পিকারঃ যেহেতু পার্লামেন্টের এক দশমাংশের বেশী সদস্য মুলতুবি প্রস্তাব উত্থাপনের পক্ষে তাই মুলতুবি প্রস্তাব উত্থাপনের অনুমতি দেওয়া হল।

বিরোধী দলের বিধায়কঃ মাননীয়া স্পিকার, পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা অনেক বেশি। তাদের চিহ্নিত করে এখান থেকে বিতাড়ন করতে হবে। আসামের নাগরিক পঞ্জিকরণ নিয়ে ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এসব না করে এই রাজ্যেও এনআরসি প্রক্রিয়া শুরু করুক রাজ্য সরকার। এখানে অনুপ্রবেশকারী মুসলিমদের ভোট ব্যাংক হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি সমাজে বিভিন্ন ধরনের জেহাদি কার্যকলাপ বাড়ছে। পাশাপাশি বাংলার ভূমিপুত্রদের সরকারী সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তিতে অনুপ্রবেশকারীদের জন্য সুযোগ কমছে। দেশ ও রাজ্যের স্বার্থ সুরক্ষিত করতে অবিলম্বে এন আর সি প্রক্রিয়া শুরু করু রাজ্য।

স্পিকারঃ মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী, আপনি বিষয়টি বিবেচনা করে উত্তর দেবেন।

মুখ্যমন্ত্রীঃ এন আর সি করে দেশে গৃহযুদ্ধ লাগানোর চেষ্টা চলছে। পশ্চিমবঙ্গে ১৯৭১ সালের পর থেকে বড় সংখ্যায় অনুপ্রবেশ ঘটেনি। তাছাড়া প্রশ্নটি হল মানবিকতার। এই ভাবে মানুষের ভবিষ্যত নিয়ে ছিনিমিনি খেলা একটি অপরাধ। ওরা রাজনীতির কারনে দেশে বিভাজন করতে চাইছে। আমরা তা হতে দেব না। আমরা শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে এন আর সি রুখব।

বিরোধী দলের সদস্যঃ তার মানে আপনারা বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের বিতাড়ন করতে চাইছেন না।

সরকারী দলের বিধায়কঃ কেন্দ্রীয় সরকার এবং এন আর সি কর্তৃপক্ষ মিলে নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত করছে। পুঁজিপতি গোষ্ঠীর স্বার্থে জল-জমি-জঙ্গল কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত করছে। অধিকারহীন সস্তার শ্রমিক বানাবার জন্য এ-জাতীয় নাগরিকদের নাগরিকত্বহীন করে দেওয়ার চক্রান্ত করছে।

বিরোধী দলের বিধায়কঃ বাংলাদেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীদের দেশছাড়া করতে হবে। বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসা অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের এক এক করে চিহ্নিত করতে হবে এবং তাদের বহিষ্কার করতে হবে।
পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী মুসলমানদের এনআরসি সমর্থনের ডাক দিয়েছিলেন। আমরা এ রাজ্যে ক্ষমতায় এলে আসামের মতই এনআরসি তালিকা প্রকাশ করব।

মুখ্যমন্ত্রীঃ মাননীয়া স্পিকার, কেন্দ্রীয় সরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী হংসরাজ আহির একটি লিখিত জবাবে সংসদে জানিয়েছেন, “১৯৫১ সালের এনআরসি ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন এবং ২০০৩ সালের নাগরিকত্ব বিধির আওতায় আসামে পরিমার্জিত হচ্ছে। বর্তমানে আসাম ছাড়া অন্য কোনও রাজ্যে এনআরসি লাগু করার প্রস্তাব নেই।” ফলে এন আর সি নিয়ে রাজ্য সরকারের পদক্ষেপ করার কোন প্রশ্নই আসে না। [সরকার পক্ষ টেবিল চাপড়ায়]

স্পিকারঃ মাননীয় বিধায়ক, আপনাকে মুলতুবি প্রস্তাবের জবাবি ভাষণ দেওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে।

বিরোধী দলের বিধায়কঃ মাননীয়া স্পিকার, রাজধানী দিল্লীসহ পশ্চিমবঙ্গ, অসম এবং দেশের অন্যান্য রাজ্যেগুলিতে আড়াই-তিন কোটি ‘বাংলাদেশী' মানুষ বে-আইনীভাবে বসবাস করছে। পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কিন্তু বাংলাদেশী বিতাড়নের ক্ষেত্ৰে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ফলপ্ৰসূ কাৰ্য্যক্রম গ্ৰহণ করেনি। সারা দেশের মধ্যে বাংলাদেশী সমস্যায় জৰ্জরিত রাজ্য হিসাবে পশ্চিমবঙ্গের পরেই অসমের স্থান। অসম এন আর সি করতে পারে, পশ্চিমবঙ্গ পারে না। এখানে সরকার পক্ষ রাজনৈতিক ভোটব্যাংকের স্বার্থে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিচ্ছে। তাই দেশ ও রাজ্যের স্বার্থ সুরক্ষিত করতে অবিলম্বে এন আর সি প্রক্রিয়া শুরু করু রাজ্য- এই মর্মে আমি মুলতুবি প্রস্তাব রাখছি।

স্পিকারঃ মুলতুবি প্রস্তাবটি আলোচিত হল। যারা মুলতুবি প্রস্তাবকে সমর্থন করছেন, তারা হ্যাঁ বলুন।
[বিরোধী দলের সকলে ‘হ্যাঁ’ বলে।]

স্পিকারঃ যারা মুলতুবি প্রস্তাবটির বিরোধিতা করছেন তারা ‘না’ বলুন।
[সরকার পক্ষের সকলে ‘না’ বলে]

স্পিকারঃ ধ্বনিভোটের ভিত্তিতে মুলতুবি প্রস্তাবটি বাতিল করা হল।
[সরকার পক্ষের সকলে টেবিল চাপড়ায়]
[সচিব গিয়ে একটি কাগজ দিয়ে আসেন।]
[৬]
স্পীকারঃ বিরোধী দলের বিধায়কদের কাছ থেকে তিনটি বিষয়ের দৃষ্টি আকর্ষণী প্রস্তাব এসেছে। চারটি বিষয়ের মধ্য থেকে গুরুত্ব অনুসারে মাননীয় বিধায়ক … ……………… মহাশয়কে  দৃষ্টি আকর্ষণী প্রস্তাব উত্থাপনের অণুরোধ জানাই।

বিরোধীপক্ষের বিধায়কঃ ধন্যবাদ মাননীয়/ মাননীয়া স্পিকার। আমি বিনপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক। আমি নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাইছি: পশ্চিম মেদিনীপুর পিছিয়ে পড়া জেলা গুলির মধ্যে অন্যতম। অনেকচেষ্টা করেও এই জেলার রক্তাল্পতায় আক্রান্ত শিশু-কিশোরের সংখ্যা কমানো যাচ্ছে না। ৭০% ছাত্রছাত্রী রক্তাল্পতার শিকার। শুধু ছাত্রছাত্রী নয়, প্রসুতি মায়েরাও রক্তাল্পতার শিকার। মাননীয় মন্ত্রীর কাছে অনুরোধ পিছিয়ে পড়া জেলা গুলির ক্ষেত্রে নতুন স্বাস্থ্য নীতি ঘোষণা করা হোক।

স্পিকারঃ মাননীয়া স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে উত্তর দিতে অনুরোধ করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রীঃ মাননীয়া স্পিকার, আমি আগামী অধিবেশনে বিষয়টি নিয়ে উত্তর দেওয়ার অনুমতি ও সময় চাইছি।

স্পিকারঃ মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী আপনাকে অনুমতি দেওয়া হল।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীঃ ধন্যবাদ মাননীয়/ মাননীয়া স্পিকার।

স্পিকারঃ এরপর গুরুত্ব অনুসারে মাননীয় বিধায়ক … ……………… মহাশয়কে  দৃষ্টি আকর্ষণী প্রস্তাব উত্থাপনের অণুরোধ জানাই।

বিরোধীপক্ষের বিধায়কঃ ধন্যবাদ মাননীয় স্পিকার। আমি ময়না বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক। আমি শিক্ষামন্ত্রীর মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাইছি: সামাজিক কারণে মহিলারা ঋতুকালীন শারিরীক ও স্বাভাবিক ঘটনা আজও লজ্জায় লুকিয়ে রাখে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে নিয়মিত শারীরিক এই প্রক্রিয়া লুকিয়ে এসেছেন মহিলারা। ওষুধের দোকানে স্যানিটারি ন্যাপকিন এখনও বিক্রি করা হয় কাগজে মুড়ে, কালো পলিথিনে ভরে। আজও মহিলারা অস্বাস্থ্যকর প্রাচীন পন্থা অবলম্বন করে। ফলে নানান জটিল স্ত্রী-রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা এর কু-প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আবেদন, অবিলম্বে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্যানিটারি ভেণ্ডিং মেশিন সরবরাহ করা হোক।
স্পিকারঃ মাননীয়া শিক্ষা মন্ত্রীকে উত্তর দিতে অনুরোধ করা হচ্ছে।

শিক্ষামন্ত্রীঃ মাননীয়/ মাননীয়া স্পিকার, এ বিষয়ে সরকার একটি সুসংহত পরিকল্পনা গ্রহন করেছে। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় সচেতনতা মূলক প্রচার ও স্যানিটারি ভেণ্ডিং মেশিন সরবরাহের কাজ করবে। খুব শীঘ্রই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। আশা করা যায়, আগামী অর্থ বর্ষের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
স্পিকারঃ ধন্যবাদ
শিক্ষামন্ত্রীঃ ধন্যবাদ মাননীয়/ মাননীয়া স্পীকার।
স্পিকারঃ দৃষ্টি আকর্ষণী প্রস্তাব পর্যায়টি এখানেই শেষ হল।
[৭]
স্পিকারঃ মাননীয়  ......................... মহাশয়কে  উল্লেখ পর্বের প্রশ্ন উত্থাপনের অণুরোধ জানাই।

বিধায়কঃ ধন্যবাদ মাননীয়/ মাননীয়া স্পীকার। পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রতিকতিবৃষ্টি ও কিছু জায়গায় বন্যাতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ১০ লক্ষ। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষিজাত ফসলের আর্থিক মূল্য ১০হাজার কোটি টাকা। এখন প্রশ্ন হল ২০১৯ সালের জন্য পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের কৃষি ঋণ মুকুব না করলে তাঁরা চরম সংকটের মুখোমুখি হবেন। তাদের প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও আবেদন করছি। বিভাগীয় মন্ত্রীকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা করতে অনুরোধ করছি।

স্পিকারঃ মাননীয় কৃষি মন্ত্রীকে উত্তর দিতে অনুরোধ করছি।

কৃষিমন্ত্রীঃ মাননীয়/ মাননীয়া স্পীকার, এই দক্ষিণ ভারতের সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টি ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য কৃষি ঋণ মুকুবের ব্যবস্থা নেওয়া এখনও সম্ভব হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সংখ্যা এখনও যেহেতু বেড়ে চলেছে, তাই সঠিক পরিসংখ্যান না পাওয়া পর্যন্ত যথাযথ মত দেওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব। আমি বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী অধিবেশনে বলার অনুমতি চাইছি।

স্পিকারঃ মাননীয়া কৃষি মন্ত্রী আপনাকে অনুমতি দেওয়া হল।

কৃষিমন্ত্রীঃ ধন্যবাদ মাননীয়/ মাননীয়া স্পীকার।

স্পীকারঃ মাননীয়  বিরোধীপক্ষের বিধায়ক.................... মহাশয়কে  উল্লেখ পর্বের প্রশ্ন উত্থাপনের অ।নুরোধ জানাই।

বিরোধীপক্ষের বিধায়কঃ মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় রাজ্যে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে শিশুসহ ২১ থেকে জনের মৃত্যু হয়েছে। আমরা তো দেখতে পাচ্ছি এটা মহামারি আকারে রূপ নিতে বাকি নেই। মশা নিয়ন্ত্রণে সরকার  কী পদক্ষেপ নিয়েছে এবং সে সব পদক্ষেপের কার্যকারিতা কতটা?

স্পীকারঃ ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রীকে উত্তর দিতে অনুরোধ  করছি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীঃ মাননীয়া স্পীকার, ডেঙ্গু পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যুর তথ্য সঠিক নয়। আমার কাছে স্বাস্থ্য দপ্তরের রিপোর্ট রয়েছে। ডেঙ্গু জ্বরে এপর্যন্ত মৃত্যুর খবর নেই। সরকার সবরকম সচেতনতা মূলক পদক্ষেপ করছে। হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলিতে প্রয়োজনীয় ঔষধ ও রক্ত পরীক্ষার কীট মজুত রয়েছে। উদ্বেগের কোন কারন নেই।

স্পিকারঃ ধন্যবাদ

স্বাস্থ্যমন্ত্রীঃ ধন্যবাদ মাননীয়/ মাননীয়া স্পীকার।
[৮]
স্পিকারঃ বিধানসভার প্রথম পর্বের সমাপ্তি হল। এখন সভার দ্বিতীয় পর্বের অধিবেশন শুরুর আগে জীরো আওয়ার আলোচনার অনুমতি দেওয়া হল।

বিরোধীপক্ষের বিধায়কঃ শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর সংখ্যার নিরিখে রাজ্যের শিক্ষা পরিকাঠামোর হাল এমনই করুণ যে, কোনও মতে জোড়াতালি দিয়ে চলতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছে ওই সব প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, স্কুলের দৈনন্দিন হিসাবপত্র থেকে শিক্ষকদের বেতন সংক্রান্ত রিক্যুইজিশন তৈরি, ভর্তি প্রক্রিয়া, প্রভিডেন্ট ফান্ডের কাজের মতো দায়িত্ব স্কুল গুলিকে সামলাতে হয়। তার উপর বর্তমানে মিড-ডে-মিল, কন্যাশ্রী, শিক্ষাশ্রী, ঐক্যশ্রী, সবুজ সাথী, স্বপ্নভোর প্রকল্পের কাগজপত্র সামলানোর কাজও স্কুল গুলিকে করতে হচ্ছে। এই সব কাজের সূত্রে কখনও ডিআই বা এডিআই অফিস, কখনও বিডিও অফিস, কখনও এসআই অফিসে যাতায়াত করতে হয়। ফলে এই সব কাজ সামলাতে প্রাণান্তকর অবস্থা হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। এ ভাবে চলতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট স্কুল গুলিতে পঠন পাঠন মার খাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পড়ুয়ারা। এ হেন পরিস্থিতিতে শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে ছাত্রছাত্রী সকলেই ক্ষুব্ধ। কিন্তু এর সমাধান কি?

শিক্ষামন্ত্রীঃ মাননীয়া স্পীকার, শুধু নেগেটিভ দিকটাই বললেন। রাজ্যের সব জেলায় স্কুল ছুটের সংখ্যা গত বছর গুলিতে উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এ রাজ্যের ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। শিশুদের স্কুলে পাঠানোর পরিবারের অনুপাত ১০০ শতাংশ ছুঁয়েছে। এমনই তথ্য উঠে এসেছে ইউনিসেফের রিপোর্টে। কন্যাশ্রী, সবুজ সাথী, সর্ব শিক্ষা মিশনের মত প্রকল্পের জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে  বলে  ‘ দ্য স্টেট অফ দ্য ওয়ার্ল্ড"জ চিল্ড্রেন রিপোর্ট-’এ দাবি করা হয়েছে  রিপোর্টে বিশেষভাবে কন্যাশ্রী প্রকল্পের প্রশংসা করা হয়েছে। একদিকে মেয়েদের স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা শেষ করতে উৎসাহ দিচ্ছে কন্যাশ্রী আর অন্যদিকে, এই প্রকল্পে আটকানো যাচ্ছে কম বয়সে বিয়েও ৷ শিক্ষকরা সমাজ গড়ার কারিগর। ছাত্রছাত্রীদের কল্যান সাধনে সামাজিক প্রকল্প গুলির সঠিক রূপায়নে শিক্ষকরা আগামী দিনেও দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।

স্পিকারঃ ধন্যবাদ

শিক্ষামন্ত্রীঃ ধন্যবাদ মাননীয়/ মাননীয়া স্পিকার।







[৯]
স্পীকারঃ মাননীয় বিরোধী দলনেতা মন্ত্রীসভার উপর অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন। যারা এই অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপনের পক্ষে তারা উঠে দাঁড়ান।
[বিরোধী দলের সকলে উঠে দাঁড়ান।]

স্পীকারঃ যেহেতু বিধানসভার এক দশমাংশের বেশী সদস্য অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপনের পক্ষে, তাই অনাস্থা প্রস্তাব আলোচনার জন্য অনুমতি দেওয়া হল।

বিরোধী দলনেতাঃ ধন্যবাদ মাননীয়/ মাননীয়া স্পীকার। এই সভা মন্ত্রি পরিষদের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করছে। রাজ্যের নানা ক্ষেত্রে নানান শ্রেণির মানুষ এই সময়ে দাঁড়িয়ে নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছেন। রক্তাক্ত বাংলা। রাজনৈতিক হিংসার বলি হতে হল দুইজনকে, আহত আরও তিনজন। কলকাতা থেকে মাত্র ৩০ কিমি দূরে ভাটপাড়ায় ঘটল ঐ হিংসার ঘটনা। এই হিংসার ঘটনার সময় বোমাবাজির পাশাপাশি চালানো হয় গুলিও। পরিস্থিতি সামাল দিতে কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে পুলিশ, শূন্যে গুলিও ছোঁড়ে তাঁরা। ভাটপাড়া, জগদ্দল, সন্দেশখালি থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক মধ্যমগ্রাম, নানুরের ঘটনা, রাজনৈতিক হিংসার জেরে একের পর এক প্রাণহানি হচ্ছে। এছাড়া ধর্মের নিরিখে যে বিভ্রান্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি করা হচ্ছে তাতে সব ধর্মের মানুষ অসহায় বোধ করছেন। চলতি বছরের রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ১৫০টি সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ঘটেছে। লাগাতার রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনায় রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রশ্নে রাজ্য সম্পূর্ণ ব্যর্থ। মাননীয়া স্পীকার গত কয়েক মাস ধরে ঘটে চলা সারা রাজ্যের ঘটনা গুলিই  মন্ত্রীসভার উপর আস্থার  অভাব রাখছে। প্রত্যেকটি ঘটনায় সরকার চুপ থেকে বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁরা সেই অরাজকতার পক্ষে। এই সভা মন্ত্রী পরিষদের প্রতি তাই অনাস্থা প্রকাশ করছে।

স্পীকারঃ মন্ত্রীসভার প্রধান মাননীয় মুখ্য মন্ত্রীকে তাঁর উত্তর দিতে অনুরোধ করছি।

মুখ্যমন্ত্রীঃ কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নিয়ে সামগ্রিক রাজ্যের বিচার করার চেষ্টা যে হাস্যকর। ৯ কোটি জনসংখ্যার এই রাজ্যের মাত্র কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা দিয়ে অনাস্থা আনা যায়না। এই ঘটনা গুলির জন্য সরকার দায়ী নয়। প্রত্যেকটি ঘটনায় অপরাধীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনা গুলি বিচারধীন। সরকার কোনোভাবেই সেই বিচার পক্রিয়াকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করবে না।

বিরোধীপক্ষের বিধায়কঃ মুখ্যমন্ত্রী কি ভুলে গেলেন কি নির্মম ভাবে বিরোধী দলের সাংসদকে মারা হল। মুখ্যমন্ত্রী কি ভুলে যাচ্ছেন, প্রকাশ্য দিবালোকে কিভাবে আপনার নিজের দলের কর্মীরা গোষ্ঠীদন্দ্বে খুন হচ্ছেন।

মুখ্যমন্ত্রীঃ প্রতিটি মৃত্যুই দুঃখজনক। এইসব ঘটনার পেছনে আপনাদের উস্কানি রয়েছে। আপনারা ঘোলা জলে মাছ ধরতে চাইছেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে সরকার কোন ভাবেই এমন ঘটনাকে সমর্থন করে না। কঠোর ভাবেই মোকাবিলা করা হবে। ভারতের সংবিধান প্রত্যেক নাগরিককে যে অধিকার দিয়েছে, আমাদের সরকার সেই অধিকার রক্ষায় বদ্ধপরিকর।

স্পিকারঃ বিরোধী দলনেতাকে জবাবী ভাষণ দিতে অনুরোধ করছি।

বিরোধী দলনেতাঃ গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজ্যে যে সংঘর্ষ চলছে, তা প্রশমিত করতে না পারা রাজ্যের ব্যর্থতা। রাজ্যবাসীর আস্থা অর্জনে আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। শুধু তাই নয়, এই ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যে রাজ্যের থেকে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে কেন্দ্র। রাজ্যের কোথায় শান্তি নেই। গোটা রাজ্যজুড়ে সন্ত্রাস চলছে। বিরোধী দলের কর্মীদের মারধর করা হচ্ছে। এই সভা মন্ত্রিসভার প্রতি আস্তার অভাব প্রকাশ করছে মাননীয়া স্পীকার।

স্পিকারঃ অনাস্থা প্রস্তাবটি আলোচিত হল। যারা অনাস্থা প্রস্তাবকে সমর্থন করছেন, তারা হাত তুলুন।
[বিরোধী দলের সকলে হাত তোলেন]

স্পিকারঃ ধন্যবাদ। এবার যারা অনাস্থা প্রস্তাবটির বিরোধিতা করছেন তারা হাত তুলুন।
[সরকার পক্ষের সকলে হাত তোলেন]

স্পিকারঃ সংখ্যা গরিষ্ঠের সমর্থন অনাস্থার  বিপক্ষে থাকায় এই সভা সরকারের উপর আস্থা বজায় রাখছে।  সভা সরকারের উপর আস্থা বজায় রাখছে।
[সরকার পক্ষের সকলে টেবিল চাপড়ায়]

[সচিব গিয়ে একটি কাগজ দিয়ে আসেন।]














[১০]
স্পিকারঃ এখন জনস্বার্থ সম্বন্ধীয় জরুরী আলোচনায় অংশগ্রহনের জন্য মাননীয় বিধায়ক ......................... তাঁর প্রশ্ন রাখতে অনুরোধ করছি।

বিরোধী দলের বিধায়কঃ মাননীয়া স্পীকার, আমি আপনার অনুমতি নিয়ে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করতে চাই।

স্পিকারঃ  আপনাকে অনুমতি দেওয়া হল।

বিরোধী দলের বিধায়কঃ আপনারা বলছেন, অর্থাভাব আমাদের রাজ্যের জ্বলন্ত সমস্যা। অর্থাভাবের কারণে ঘোষিত প্রকল্প গুলিতে বরাদ্দ টাকা দিতে পারছেন না। সরকারী কর্মীদের ভাতা দিতে পারছেন না। পরিকাঠামো উন্নয়ন তলানিতে। বিপরীতে দেখছি অন্য চিত্র। ক্লাব গুলিকে যথেচ্চ অনুদান দেওয়া হচ্ছে। পূজা কমিটিকে টাকা দেওয়া হচ্ছে। সরকারী খরচে চলছে মেলা, খেলা। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক মিটিংয়ে বিলাসবহুল আয়োজন হচ্ছে। সরকারী কোষাগারের এই অপব্যবহার কেন?

স্পিকারঃ মাননীয়/ মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে উত্তর দিতে অনুরোধ করছি।

মুখ্যমন্ত্রীঃ মাননীয় স্পীকার, যাদের টাকা দেওয়া হচ্ছে, তারা ছোট্ট ছোট্ট ছাত্র-যুব। কখনও তারা দুর্গাপুজো, কখনও কালীপুজো, কখনও বা ঈদ, বড়দিনের উৎসবে মেতে ওঠে। মাল্টিজিম, বিচিত্রানুষ্ঠান করে। ওই সব ভাইবোনেরা আমাদের সংস্কৃতি ধরে রেখেছে। আমি পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী উৎসাহ দিতে চেয়েছি, যে ছাত্র-যুবরা দেশের ভবিষ্যত। ওরাই একদিন নবজাগরণ আনবে।
[সরকার পক্ষের সকলে টেবিল চাপড়ায়]
স্পিকারঃ ধন্যবাদ
মুখ্যমন্ত্রীঃ ধন্যবাদ আপনাকেও, মাননীয়/ মাননীয় স্পিকার।

স্পিকারঃ এখন জনস্বার্থ সম্বন্ধীয় জরুরী আলোচনায় অংশগ্রহনের জন্য মাননীয় বিধায়ক ....................প্রশ্ন রাখতে অনুরোধ করছি।
বিরোধী দলের বিধায়কঃ ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো রেলের সুড়ঙ্গ তৈরির কাজের জন্য বৌবাজার এলাকায় হঠাৎ ভেঙে পড়ে বেশ কয়েকটি পুরনো বাড়ি। তৎক্ষণাৎ বাড়ি খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। আর এরপরই সংশ্লিষ্ট বাড়ি গুলির বাসিন্দারা কার্যত একবস্ত্রে বাড়ি ছেড়ে সরে যায়। বর্তমানে তারা গৃহহীন। সরকার কি ব্যবস্থা গ্রহন করেছে?
মুখ্যমন্ত্রীঃ সরকার অসহায় গৃহহীন মানুষদের পাশে রয়েছে। গৃহহীন মানুষদের হোটেলে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ত্রানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগামীদিনে মেট্রো কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ওই জায়গায় নতুন করে বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে। তবে তা সময়সাপেক্ষ।
স্পিকারঃ ধন্যবাদ
মুখ্যমন্ত্রীঃ ধন্যবাদ আপনাকেও, মাননীয়/ মাননীয় স্পিকার।
স্পিকারঃ জনস্বার্থ সম্বন্ধীয় জরুরী আলোচনাটি এখানেই শেষ হল।
[১১]
স্পীকারঃ মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী মহাশয়কে সভায় বিল উত্থাপনের অনুরোধ জানাই।

স্বাস্থ্য মন্ত্রীঃ মাননীয়া স্পীকার, মেয়েদের স্বাস্থ্য ও অধিকার সংক্রান্ত– ‘আলোশ্রী’ বিল, ২০১৯ সভায় উত্থাপন করার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করছি।

স্পীকারঃ মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী মহাশয়কে মেয়েদের স্বাস্থ্য ও অধিকার সংক্রান্ত– ‘আলোশ্রী’ বিল, ২০১৯ সভায় উত্থাপন করার জন্য অনুমতি দেওয়া হল।

স্বাস্থ্য মন্ত্রীঃ মেয়েদের স্বাস্থ্য ও অধিকার সংক্রান্ত ‘আলোশ্রী’ বিল, ২০১৯ সভায় বিবেচনার জন্য পেশ করছি।

‘আলোশ্রী’ বিল, ২০১৯
ক- ধারায়- কন্যা ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ যারা করবে, তাদের ১ লক্ষ টাকা জরিমানা ও আজীবন কারাদণ্ড দেওয়া হবে।
খ- ধারায়- কন্যা সন্তান জন্মালে পঞ্চায়েতের উদ্যোগে শিশু উৎসব পালন করা হবে।
গ- ধারায়- কন্যা সন্তান জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এক কালীন ৩ লক্ষ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট দেওয়া হবে, যা বিয়ে না করে পড়াশোনা চালিয়ে গেলে ১৮ বছর বয়স হলে সুদ সমেত তুলতে পারবে।
ঘ- ধারায়- নারী নির্যাতন কারীর অপরাধ প্রমান হলে ৬ বছর পর্যন্ত জেল ও ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হবে।
 [বিলটি মার্শাল সবাইকে দিয়ে আসেন। খামে ভরা থাকবে। খাম থেকে বের করে সকলে পড়বে।]

স্পীকারঃ মাননীয় বিরোধী দলনেতাকে এই বিল সম্পর্কে আলোচনার জন্য আপনাকে অনুরোধ জানাই।

বিরোধী দলনেতাঃ ধন্যবাদ মাননীয়/ মাননীয়া স্পীকার। মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী দ্বারা উত্থাপিত মেয়েদের স্বাস্থ্য ও অধিকার সংক্রান্ত– আলোশ্রী’ বিল, ২০১৯ কি আদৌ যুক্তি যুক্ত? পৃথিবীতে যে মহিলারা বাল্যবিবাহের শিকার হন তাদের এক তৃতীয়াংশ মহিলা ভারতের। ইউনিসেফ ও ভারত সরকারের যৌথ সমীক্ষার‍্যাপিড সার্ভে অন চিলড্রেন’ থেকে বাল্য বিবাহের ভয়াবহ চিত্র পাওয়া যায়। এই বিল কি করে সেই সমস্যার মোকাবিলা করবে? মেয়েদের স্বনির্ভরতার সঙ্গে বাল্যবিবাহের একটি সরাসরি সম্পর্ক আছে। সেক্ষেত্রে তার কোন উল্লেখই নেই এই বিলে।

স্পীকারঃ মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রীকে তাঁর বক্তব্য রাখতে অনুরোধ করছি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রীঃ বাল্যবিবাহ দূর করার জন্য এই বিলটি আনা হয়েছে। স্বনির্ভরতার সঙ্গে বাল্যবিবাহের সরাসরি কোন সম্পর্ক নেই। তাছাড়া নারীদের স্ব-নির্ভরতার জন্য রাজ্যে অন্য প্রকল্পও রয়েছে। কন্যা সন্তান ও তার বেড়ে ওঠার দিকেই লক্ষ্য রাখা হয়েছে এই বিলে।

বিরোধী দলের বিধায়কঃ এককালীন কণ্ডিশনাল ফিক্সড ডিপোজিটের কথা বলা হয়েছে। ২০১৩ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কন্যাশ্রী প্রকল্প চালু হয়। মাননীয়া স্পীকার, এত কিছু করেও বাল্যবিবাহ কমাতে পারা যাচ্ছে না যখন, তখন সরকার নতুন করে ফিক্সড ডিপোজিটের কথা বলে কেন বিল আনছেন?

মুখ্যমন্ত্রীঃ মাননীয়া স্পীকার, আমার বিরোধী দলের বন্ধুকে একটা পরিসংখ্যান দিতে চাই। বিরোধী দলনেতাকে জানাতে চাই, ‘ইউনিসেফ ও ভারত সরকারের যৌথ সমীক্ষার‍্যাপিড সার্ভে অন চিলড্রেন’ থেকে বাল্য বিবাহের যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, তাতে কন্যাশ্রী চালুর পর পশ্চিম বঙ্গে বাল্য বিবাহ ক্রমহ্রসমান। এই বিল চালু হলে আমরা বাল্য বিবাহকে শুন্যে নামিয়ে আনতে পারবো। এই প্রকল্পে তাই আমি বিরোধী দলের সহযোগিতা চাইছি।
[সরকার পক্ষের লোক টেবিল চাপড়ায়]

স্পীকারঃ মেয়েদের স্বাস্থ্য ও অধিকার সংক্রান্ত– ‘আলোশ্রী’ বিল, ২০১৯ সভায় আলোচিত হল। এখন মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রীকে বিলটি বিবেচনার জন্য পেশ করতে অনুরোধ করছি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রীঃ মাননীয়/ মাননীয়া স্পীকার, বিলটি যেভাবে সভায় স্থিরীকৃত হল তা গ্রহণ করা হোক।

স্পীকারঃ প্রশ্ন হল মেয়েদের স্বাস্থ্য ও অধিকার সংক্রান্ত– ‘আলোশ্রী’ বিল, ২০১৯ সভায় যেভাবে স্থিরীকৃত হল তা পাশ করা হোক।

যারা বিলের পক্ষে তাঁরা ‘হ্যাঁ’ বলুন।
[সরকার পক্ষের সকলে ‘হ্যাঁ’ বলে]
আর যারা বিলের বিপক্ষে তাঁরা ‘না’ বলুন।
[বিরোধী পক্ষের অধিকাংশ সদস্য ‘না’ বলে]

বিলটি সভায় গৃহীত হল। গৃহীত হল।
[সরকার পক্ষের সকলে টেবিল চাপড়ায়]
বিলটি রাষ্ট্রপতির নিকট সম্মতির জন্য প্রেরণ করা হল।
সভা আগামী ২৬শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০ টা পর্যন্ত পর্যন্ত মুলতুবি রাখা হল।

স্পীকার খাতায় সই করেন। উঠে দাঁড়ান। মার্শাল দণ্ডটি নিয়ে আসেন।  সকলে ধীরে ধীরে সভাকক্ষ ত্যাগ করেন।

-----ধন্যবাদ-----

No comments:

Post a Comment