Popular Posts

Thursday, 15 August 2019

History Of Panskura- স্বাধীনতা সংগ্রামে পাঁশকুড়া

স্বাধীনতার লড়াইয়ে পাঁশকুড়া- ২৮শের দুর্ধর্ষ রাত
@ রূ পে শ   কু মা র   সা ম ন্ত

     উড়িয়ে দেওয়া হল কালভার্ট, কেটে দেওয়া হল রাস্তা, উপড়ে ফেলা হল টেলিগ্রাফ পোস্ট, রাস্তার উপর শুইয়ে দেওয়া হল বড় বড় গাছ, ডুবিয়ে দেওয়া হল ফেরি নৌকা। স্তব্ধ হয়ে গেল তমলুক-পাঁশকুড়া বাস রাস্তা। আর এই পুরো ঘটনাটি ঘটল মাত্র ৬ ঘন্টায়। ঘড়ির কাঁটায় রাত্রি ১০টা থেকে ভোর ৪টার মধ্যে। সাল ১৯৪২, তারিখ ২৮শে সেপ্টেম্বর।
     ভারতবর্ষ জুড়ে চলছে আগস্ট আন্দোলন। স্বাধীনতার যুদ্ধ। আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়লো তমলুক মহকুমায়। ১৯৪২ এর ২৯শে সেপ্টেম্বর তমলুক থানা আক্রমন করলেন বীর সংগ্রামীরা। ব্রিটিশ বর্বর পুলিশের গুলিতে অন্যতম শহীদ হলেন মাতঙ্গিনী হাজরা। তমলুকে শহীদ হলেন মোট ১৩ জন। গুরুতর আহত হলেন ২০ জন। সেই রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের রেশ ধরেই ১৯৪২ এর ১৭ই ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার’। কিন্তু এই আন্দোলনে উপেক্ষিতই থেকে গেছে পাঁশকুড়ার অবদান। ২৯শে সেপ্টেম্বরের তমলুক থানা আক্রমনের ঘটনাকে সফল করতে তার আগের রাত ২৮শে সেপ্টেম্বরে তমলুককে ব্রিটিশ প্রসাশন থেকে বিচ্ছিন্ন করতে অত্যন্ত গূরুত্বপূর্ণ একটি কাজ সংগঠিত হয়ে ছিল পাঁশকুড়ায়। [লেখক- রূপেশ সামন্ত]
     তমলুক মহকুমার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাকা রাস্তা ছিল পাঁশকুড়ায়। তাই তমলুক থানা আক্রমনকে মসৃণ করতে তমলুক-পাঁশকুড়া বাস রাস্তা বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া জরুরী হয়ে পড়ে। যাতে না ব্রিটিশ ফৌজ তমলুকে দ্রুত প্রবেশ করতে পারে। অত্যন্ত গোপনে তৈরী হল নিখুঁত পরিকল্পনা। স্বাধীনতা সংগ্রামী সতীশ সামন্ত ও অজয় মুখার্জী পাঁশকুড়ার জোড়াপুকুরে শ্যামাদাস ভট্টাচার্যের বাড়িতে বসে কাজের রূপরেখা ছকে ফেলেন।
     সে এক দুর্ধর্ষ রাত। গোপনে খবর পৌঁছে গেল সংগ্রামীদের কাছে। ব্রিটিশ চরদের চোখ এড়িয়ে সাইকেলে বা পায়ে হেঁটে খবরাখবরের মাধ্যমে পুরো পরিকল্পনা স্থির হয়ে গেল। ২৮শে সেপ্টেম্বর রাত ১০টা। কোদাল, গাঁইতি, কাটারি, কুড়ুল, করা্ত, ঝুড়ি, বেলচা, দড়ি ইত্যাদি হাতে দলে দলে মানুষ জড়ো হয়ে গেল তমলুক-পাঁশকুড়া বাস রাস্তায়। ঘড়ির কাঁটা ধরে শুরু হল অপারেশন। ২০-৩০ হাত করে রাস্তা কাটা হল। সমস্ত টেলিগ্রাফ পোস্ট উপড়ে ফেলা হল। হলদি ও কাঁসাই নদীর গভীরে ডুবিয়ে দেওয়া হল সব ফেরি নৌকা। কালভার্ট গুলোকে ভেঙে দেওয়া হল। রাস্তার ধারের সমস্ত বড় বড় গাছ কেটে ঘিরে দেওয়া হল রাস্তা। লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল পুরো যোগাযোগ ব্যবস্থা। ঘড়ির কাঁটায় ভোর ৪টার মধ্যে সমস্ত কাজ শেষ করে প্রত্যেকে বাড়ি ফিরে গেল। বৃহত্তর তমলুক মুক্তাঞ্চলে পরিনত হল। [লেখক- রূপেশ সামন্ত]
     কিন্তু ব্রিটিশ পুলিশ খবর পেয়ে এলাকাবাসীর উপর নির্মম অত্যাচার নামিয়ে আনে। বলপুর্বক এলাকাবাসীকে রাস্তা সারাইয়ে অংশ গ্রহন করায়। তমলুক থানা আক্রমনের নির্ধারিত সময় ছিল দুপুর ২টা। তার মাত্র কিছু সময় আগে পুলিশ তমলুকে পৌঁছাতে সক্ষম হয় এবং গুলি চালনার মতো নারকীয় অপরাধ সংগঠিত করে।
     কিন্তু সেই দুর্ধর্ষ রাতের পাঁশকুড়ার বীর বিপ্লবীদের পরিচয় আজও রহস্যাবৃত। ইতিহাসে লেখা নেই নাম। এটা নিশ্চিত যে, এত বড় পরিকল্পনাকে সফল করতে ও ব্রিটিশ পুলিশ থেকে নিজেদের গোপন রাখতে সেই দুর্ধর্ষ বীরদের পরিচয় অত্যন্ত গোপন রাখা হয়েছিল। আর ভারতবর্ষকে স্বাধীন করতে কত অজানা মানুষ সাথ দিয়েছিল, তার খবর আমরা কতটুকুই বা রেখেছি! আজও পাঁশকুড়ার গ্রামে কান পাতলে তাদের কথা শোনা যায়। কেউ স্বাধীনতা সংগ্রামীর পেনশন পেয়েছে, কেউ পায়নি বা কেউ নেননি। স্যালুট জানাই সে দুর্ধর্ষ রাতের দুর্ধর্ষ বীরদের।  [ছবি- প্রতিকী]
@ রূ পে শ   কু মা র   সা ম ন্ত

1 comment: