Popular Posts

Monday, 11 May 2020

বন্ধ হল বেগুনবাড়ির ফলহারিণী কালী পূজা -ভাস্করব্রত পতি



করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে বন্ধ হল বেগুনবাড়ির ফলহারিণী কালী পূজা

https://jugasankha.in/to-prevent-corona-infection-kali-puja-the-fruit-gardener-of-begunbari-was-stopped/


ভাস্করব্রত পতি, তমলুক : একসময় ‘কলেরা’ রোগের হাত থেকে বেঁচে উঠতে যে পূজোর সূচনা হয়েছিল, সেই পূজো আজ বন্ধ হল ‘কোরোনা’ রোগের হাত থেকে বাঁচতে। এই প্রথম তিনতাউড়ি বেগুনবাড়ির ফলহারিণী কালিপূজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে চলতি বছরের জন্য। আগামী ২১ শে মে অমাবস্যার তিথিতে জেলার অন্যতম প্রাচীন এই পূজা বন্ধ করে দেওয়ার নোটিশ দিয়েছে পূজা কমিটি। প্রশাসন থেকেও অনুমতি মেলেনি। স্বাভাবিকভাবেই এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন স্থানীয় লোকজন।
মূলত, বাগদী সম্প্রদায়ের মানুষজনের পূজিতা দেবী হলেও আপামর জনসাধারণের কাছে ঘরের দেবী হয়ে উঠেছেন। যেহেতু এবছর কোভিড ১৯ এর বাড়বাড়ন্তের জন্য অত্যধিক জনসমাগম ঠেকাতে পূজা কমিটি বিভিন্ন এলাকায় পোস্টারিং করে জানিয়ে দিয়েছে পূজা বন্ধের ঘোষণা। ফলে এবছর দেবীর সামনে মানত করা পাঁঠাবলিও বন্ধ থাকবে। শুধুমাত্র ঘটস্থাপন করেই পূজার রীতি বজায় করা থাকবে। প্রতিমা তৈরি করে পূজা হবেনা। সাধারণত মশালের আলোয় ঘটোদক হোতো এখানে। এবার সব বন্ধ।
ক্ষীরাই নদীর মধ্যে বেগুনবাড়ি গ্রামে শতাব্দী প্রাচীন এই পূজা চলে আসছে বহুদিন ধরে। শিক্ষক তথা আঞ্চলিক গবেষক রূপেশ সামন্তর কথায়, এই মেলা ২৫০ বছরের পুরনো। গবেষক সুধাংশুশেখর ভট্টাচার্যও সমর্থন করেছেন মেলার বয়স নিয়ে। তবে এখন নতুন রূপে নতুন মন্দিরে পূজিত হচ্ছেন ফলহারিণী কালী। দক্ষিনেশ্বরের ভবতারিণী মন্দিরের আদলে তৈরি হয়েছে নতুন মন্দির। জনগনের দেওয়া আর্থিক সহায়তায় এটি নির্মিত। এটি জেলার অন্যতম জনপ্রিয় উৎসব। শুধু পূর্ব মেদিনীপুর নয়, পার্শ্ববর্তী পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কলকাতা, হুগলি, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড থেকেও প্রচুর মানুষ আসেন।
জনশ্রুতি রয়েছে এই এলাকা কাশীজোড়া রাজবংশের অধীনস্থ ছিলো। তখনকার রাজা রাজনারায়ণ রায়ের ( ১৭৫৬-১৭৭০) রাজত্বকালে দুজন লেঠেল ছিলো। কেউ বলেন , তাঁরা ডাকাত। এঁরা বাগদী বা জেলে সম্প্রদায়ের লোক। সেসময় এলাকায় ব্যাপক ওলাউঠা তথা কলেরা রোগের প্রাদুর্ভাব ছড়ায়। কিন্তু এই দুই ডাকাত মা কালীর কাছে মানত করে যে, সকলে সুস্থ হয়ে উঠলে ঘটা করে মা কালীর পূজা করবে। অবশেষে এলাকা রোগমুক্ত হতে ঐ দুই ডাকাত ডাকাতি করে মায়ের পূজার্চনা শুরু করে। সেই শুরু। এরপর প্রতিবছর জৈষ্ঠ্য মাসের অমাবস্যার দিন তাঁরা ডাকাতি করে পূজা চালিয়ে যায়। যা আজও চলছে।
পরবর্তীতে কাশীজোড়ার রাজা জমিদান করেন মন্দিরের জন্য। সেটি ছিল শ্মশান এবং বেগুনখেতের পাশে। সেই থেকে নাম হয়ে যায় বেগুনবাড়ির কালী। যদিও এখন সরাইঘাট, পাওবাঁকি এবং বেগুনবাড়ি- এই তিন গ্রামের লোকজন মেলা পরিচালনা করেন। প্রায় একমাস ধরে চলে এই মেলা। গ্রামীন মেলার যাবতীয় চরিত্র ধরে রেখেছে এই মেলা। বিভিন্ন লৌকিক বাদ্যযন্ত্র, খেজুর পাতার টুপি, একতারা, ঢোল, মাদুর, ঝুড়ি, লোহার সামগ্রী সহ জিলিপি, মিস্টি, পেটাই পরোটা এখানে মেলে মেলার দিনগুলোতে।
সন্তানের জন্য যাঁরা মানত করেন তাঁরা অভীষ্ট পূরণ হলে মাটির মূর্তি দিয়ে যায় দেবীর কাছে। তাছাড়া বাতাসার মালা, টাকার মালা দেওয়ার রীতি রয়েছে। পার্শবর্তী হাডডাঙার শিকার উৎসবের চল শুরু হয়েছিল এই ফলহারিণী কালীপূজাকে সামনে রেখেই। যদিও পরিবেশপ্রেমীদের আন্দোলনের জন্য গত কয়েক বছর যাবৎ এই শিকার উৎসব বন্ধ।

No comments:

Post a Comment