আজ শরৎচন্দ্রের জন্মদিনে ঘুরে আসুন দেউলটির বাড়ি
©রূপেশ সামন্ত
মনে পড়ে ছোটবেলার কথা। মামার বাড়ি গেলেই শরৎচন্দ্রের দেউলটির সামতাবেড়ের
বাড়িতে গিয়ে বসে থাকতাম। আমার মামাবাড়ি সামতাবেড়ের পাশের গ্রাম মেল্লকে। শরৎচন্দ্রের
বাড়ি রূপনারায়ণের তীরে শান্ত-নিরিবিলি ছবির মতো সাজানো পরিবেশে। অমর কথাসাহিত্যিক
শরৎচন্দ্রের বাড়িতে দু’দণ্ড বসলে রূপনারায়ণের শীতল হাওয়া জুড়িয়ে দেবে মন-প্রাণ।
১৮৭৬ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জন্মগ্রহন হুগলী জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে। মধ্যবয়সে শরৎচন্দ্র এই সামতাবেড় গ্রামের মাটির বাড়িতে বাস করতেন। এখানে কাটিয়ে ছিলেন জীবনের বারোটি বছর। দেউলটি স্টেশন থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পথ। বাড়ির সামনে পাশাপাশি দুটো পুকুর রয়েছে। পুকুরে রয়েছে বাঁধানো সানের ঘাট। পুকুরের পাশে বাগানে রয়েছে ডালিম, পেয়ারা গাছে প্রভৃতি ফলের গাছ। ১৯৭৮ সালের প্রবল বন্যায় পাশাপাশি সব বাড়ি ভেঙে গিয়েছিল। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে ভাঙেনি শরৎচন্দ্রের মাটির বাড়ি। একুস্ময় শরৎচন্দ্র বার্মা রেলের হিসাব পরীক্ষক হিসেবে পঁচাত্তর টাকা মাইনের কেরেনিগিরির চাকরি করতেন। রেঙ্গুনের বোটাটং পোজনডং অঞ্চলে কলকারখানার মিস্ত্রিদের পল্লিতে বসবাস করতেন। ফলে তাঁর সামতাবেড়ের বাড়িটিতে বার্মা স্থাপত্যের প্রভাব লক্ষ্যনীয়। বর্তমানে বাড়িটির জানালা পর্যন্ত ইঁট-সিমেন্টে গাঁথা। সরকারি উদ্যোগে কিছুটা মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ হয়েছে।
শরৎচন্দ্র লেখালেখির সময় পাশ দিয়ে প্রবহমান রূপনারায়ণের দিকে তাকিয়ে মনের খোরাক যোগাতেন। এখন নদীটি খাত পরিবর্তন করে দূরে সরে গেছে। এই বাড়িতে বসেই শরৎচন্দ্র অভাগীর স্বর্গ, কমললতা, শেষপ্রশ্ন, পল্লীসমাজ, রামের সুমতি, পথের দাবী ও মহেশ-এর মতো গল্প-উপন্যাসগুলি লিখেছিলেন। শরৎচন্দ্র ও তার ভাই স্বামী বেদানন্দ এই বাড়িতে থাকতেন। বেদানন্দ বেলুড় মঠের সন্ন্যাসী ছিলেন। এই বাড়ির পাশে আজও রয়েছে তাঁদের সমাধি মন্দির। শরৎচন্দ্রের নিজের লাগানো গুলঞ্চ, পেয়ারা গাছ এই বাড়িতে এখনও রয়েছে। বাড়িটি দোতলা। বাড়িটিতে রয়েছে বার্মা কাঠের আসবাবপত্র। রয়েছে তাঁর লেখার ডেস্ক, জাপানি ঘড়ি, ব্যবহৃত পোষাক, বইয়ের তাক, হুঁকো ইত্যাদি। সবই সজত্নে সংরক্ষিত। রয়েছে শরৎচন্দ্রের হোমিওপ্যাথি ওষুধের চেম্বার। দরিদ্র মানুষদের বিনাপয়সায় চিকিৎসা দিতেন তিনি। রয়েছে একটি পাখির খাঁচাও। পাখি পোষার শখ ছিল শরৎচন্দ্রের।
১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের
১৬ই জানুয়ারী যকৃতের ক্যান্সারে শরৎচন্দ্রের মৃত্যু হয়। প্রতিবছর জানুয়ারী মাসের
শেষ সপ্তাহে এখানে বড় আকারের ‘শরৎ মেলা’ বসে। বড়দিদি, বিরাজবৌ, পন্ডিতমশাই, পল্লী-সমাজ,
চন্দ্রনাথ, শ্রীকান্ত, দেবদাস, চরিত্রহীন প্রভৃতি উপন্যাস প্রণেতার বাড়ি একবার
ঘুরে আস্তে পারেন।
©রূপেশ সামন্ত
No comments:
Post a Comment