তপ্ত দুপুরের পলাশপাই
© রূপেশ সামন্ত
এই তপ্ত দুপুরে কুলকুল বয়ে চলে
পলাশপাই। ভরা ভাদ্রেও ক্ষীণকায়া। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর ব্লকের একটি নদী। তবে সেচ
দপ্তরের নথিতে এটি একটি খাল। বসন্তপুর থেকে মহিষঘাটা পর্যন্ত দৈর্ঘ প্রায় ২০ কিলোমিটার।
এটি পুরাতন কাঁসাইয়ের শাখানদী। পলাশপাই গ্রামের নাম অনুসারে নদীটির নাম পলাশপাই।
এই পলাশপাই নদী বহু ইতিহাস ও ঐতিহ্যের
সাক্ষী। পলাশপাইয়ের তীরে রয়েছে জ্যোতঘনশ্যাম গ্রাম। ব্রিটিশ আমলে
এই গ্রাম ছিল লবন আইন অমান্য আন্দোলনকারীদের অবাধভূমি। ব্রিটিশ পুলিশের অত্যাচারে
আন্দোলনকারীরা রক্তাক্ত হয়েছিল। দাসপুর থানার অত্যাচারী ভোলা দারোগার নেতৃত্বে মুগুর
দিয়ে থেঁতলে দেওয়া হয়েছিল আন্দোলনকারীদের হাত-পায়ের আঙ্গুল। হাত-পা বেঁধে গরম
বালিতে শুইয়ে রাখা হয়েছিল আন্দোলনকারীদের। একবিন্দুও জলপান করতে দেওয়া হয়নি। সেদিন
নারীরা ব্রজবালা কুইলা ও মেনকা মাইতির নেতৃত্বে তৃষ্ণার্ত আন্দোলনকারীদের বুকের
দুধ পান করিয়ে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের দেওয়াল তুলেছিলেন। © রূপেশ
সামন্ত
পলাশপাইয়ের
তীরের চেঁচুয়া হাট স্বাধীনতা আন্দোলনের আরেক রক্তাক্ত ইতিহাসের স্বাক্ষী। লবন আইন
অমান্য আন্দোলনের অন্যতম পীঠস্থান ছিল এই চেঁচুয়া হাট। ভোলা দারোগার অত্যাচারে
মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে বিপ্লবী মৃগেন ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে প্রতিবাদ আন্দোলন সংগঠিত
করতে থাকেন। ১৯৩০ সালের ৩রা জুন আন্দোলনকারীরা অতর্কিতে চেঁচুয়াহাটের পুলিশ
ক্যাম্প আক্রমন করে অত্যাচারী ভোলা দারোগা ও তাঁর সঙ্গী অনিরুদ্ধ সামন্তকে হত্যা
করে। এরপর ব্রিটিশ পুলিশ স্থানীয় গ্রামগুলিতে নামিয়ে আনে অকথ্য অত্যচার। প্রতিবাদে
স্থানীয়রা ৬ই জুন প্রতিবাদ সভার ডাক দেন। সেই প্রতিবাদ সভায় ব্রিটিশ পুলিশ বিনা
প্ররোচনায় গুলি চালায়। পলাশপাইয়ের জল সেদিন রক্তে লাল হয়ে গিয়েছিল। শহীদ হয়েছিলেন ১৪
জন।
পলাশপাইয়ের
তীরে গঙ্গামাড়োতলায় প্রতিবৎসর মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশীতে বসে গঙ্গাবারুণী মেলা। মেলাটি
প্রায় ২৫০ বৎসরের প্রাচীন। রয়েছে নবনির্মিত গঙ্গা মন্দির। মন্দিরে পূজিত গঙ্গার
প্রাচীন দারুবিগ্রহটি নিমকাঠের। গঙ্গার এইরূপ দারু বিগ্রহ বাংলায় আর কোথাও নেই। এখানেই
রয়েছে গঙ্গাধর শিবের আটচালা জীর্ণ মন্দির।
পলাশপাইয়ের
তীরে গোবিন্দনগরে রয়েছে গোস্বামীদের প্রাচীন রাধাগোবিন্দজীউর পঞ্চরত্ন মন্দির। এটি
নির্মিত হয়েছিল ১৭৮১ খ্রিষ্টাব্দে। মন্দিরটি টেরাকোটা শিল্পের অনন্য নিদর্শণ। এটি
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সংরক্ষিত পুরাকীর্তি। ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে বুকে বহন করে এই তপ্ত
দুপুরেও একই ভাবে প্রবহমান সেই পলাশপাই।
© রূপেশ সামন্ত
[তথ্যসূত্র- মেদিনীপুরের নদ-নদী
কথা, সম্পাদনা- তাপস মাইতি, পলাশপাই, আশিস হুদাইত, Bengal District Gazetteers- Midnapore,
LSS O’Malley]
[কপি-পেস্ট
বেয়াইনি। শেয়ার করুন। ভিজিট করুন- ]
No comments:
Post a Comment