Popular Posts

Monday, 19 October 2020

 

ধ্বংসের প্রহর গোনে আজুড়িয়ার মনসা মন্দিরের জীর্ণ টেরাকোটা

© রূপেশ সামন্ত

     চেতুয়া পরগনার মন্দিরময় দাসপুর একসময় বানিজ্যে সমৃদ্ধময় অঞ্চল ছিল। রেশম শিল্প, নীল উৎপাদন, হস্ত শিল্প প্রভৃতি অর্থনীতিকে বেশ পুষ্ট করেছিল। পলাশপাই নদীর প্রবহমানতা সেই অর্থনীতিকে যোগ্য সঙ্গত করেছিল। দাসপুর ব্লকের আজুড়িয়ায় বাস ছিল সাগর সাঁই নামে এক প্রখ্যাত ব্যবসায়ীর। তাঁর ছিল বাতাসার ব্যবসা। মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যের ভাবাদর্শে অনুপ্রানিত এই সব অঞ্চলে সে সময় হরিনাম-সংকীর্তনের প্রবল জোয়ার ছিল। ফলে হরিলুটের বাতাসার বিপুল ব্যবসায়িক চাহিদাও ছিল। ফুলেফেঁপে উঠেছিল সাগর সাঁইয়ের বাতাসা ব্যবসা। এছাড়া নদী-জল-জঙ্গলে পূর্ণ এই অঞ্চলে সর্পকূলের বাড়বাড়ন্তও ছিল। ফলে মনসাদেবীর প্রভাবও ছিল অনস্বীকার্য। সুতরাং অর্থবান সাগর সাঁই ১২৭৭ সালে প্রতিষ্ঠা করলেন শিখর দেউল রীতির মনসা মন্দির। টেরাকোটা ফলকের অলঙ্করণে গড়ে তুললেন এক অনিন্দ্যসুন্দর মন্দির। কিন্তু আজ সাঁই পরিবারের সেই সম্পদও নেই, প্রভাবও নেই। ফলে সেই মন্দির হারিয়েছে তার জৌলুস। তাকে গ্রাস করেছে ক্ষয়িষ্ণুতা। ধ্বংসের প্রহর গোনে তার জীর্ণ টেরাকোটা।

    টেরাকোটা ফলক শোভিত শিখর দেউল রীতির দক্ষিণমুখী মন্দিরটি প্রদক্ষিণ-পথ সহ একটি উঁচু বেদীর উপর প্রতিষ্ঠিত। মন্দিরের সম্মুখে ত্রিখিলান প্রবেশপথ রয়েছে। বর্গাকার মন্দিরটির দৈর্ঘ্য-প্রস্থ ১৬ ফুট এবং উচ্চতা প্রায় ৩৫ ফুট।

     গর্ভগৃহে প্রবেশের জন্য রয়েছে একখিলান প্রবেশপথ। খিলানের উপর ভল্টের সাহায্যে গড়া গর্ভগৃহের সিলিং। মন্দিরের সামনের দেওয়ালের বিভিন্ন অংশে রয়েছে টেরাকোটার বহু ফলক। ফলকগুলি লাগানো রয়েছে মন্দিরের প্রবেশপথের চারটি স্তম্ভের উপরের অংশে উল্লম্ব ভাবে। এক্ষেত্রে মোট ১৬টি টেরাকোটা ফলক রয়েছে। মন্দিরের কার্নিশের নীচে একটি সারিতে ছোট ছোট খোপে ১৯টি টেরাকোটা ফলক লাগানো রয়েছে। মন্দিরের সামনে প্রবেশ পথের উপরে রয়েছে একজোড়া সিংহ মূর্তি। ©রূপেশ সামন্ত

     টেরাকোটা ফলকগুলিতে রয়েছে মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য, বংশীবাদনরত কৃষ্ণ, রাজা, ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর, জোড়হাত নারী, নারায়ণ, সওদাগর প্রভৃতির মূর্তি। কিন্তু কালের নিয়মে টেরাকোটা ফলকগুলি একে একে ঝরে পড়ছে। লবনাক্ত জলীয় বাতাস ক্ষয়িষ্ণুতাকে দ্রুতগামী করছে। কিছুদিনের মধ্যেই হারিয়ে যাবে অনিন্দ্যসুন্দর এই স্থাপত্য। শ্রীহীন মন্দিরের শ্রী ফেরাতে আজ দেবী মনসার কৃপা খোঁজেন সাঁই পরিবার। ©রূপেশ সামন্ত (১৯.১০.২০)

[কপি-পেস্ট করবে না। নকল করবেন না। শেয়ার করুন। ভিজিট করুন ]

No comments:

Post a Comment