নল
সংক্রান্তি- ধানের সাধভক্ষণ
©রূপেশ সামন্ত
‘নল পড়ল ভুঁয়ে
যা শনি উত্তর মুয়ে’।
আশ্বিন মাসের সংক্রান্তিতে বাংলার চাষিরা এই শ্লোকটি আউড়ে ধান জমিতে নল পুঁতে আসে। এটি একটি আদি প্রথা। সমাজে গর্ভবতী মহিলাদের সাধ দেওয়ার প্রচলন রয়েছে। একই রকম ভাবে ধানের ‘থোড়’ বা শিষ ধরলে মনে করা হয় ক্ষেতের লক্ষ্মী গর্ভবতী হয়েছেন। তাই ধান জমিতে সাধ দেওয়া হয়। আজকের দিনটিতে অর্থ্যাৎ আশ্বিন মাসের শেষ দিনে বা সংক্রান্তিতে এই অনুষ্ঠানটি হয়। এই সংক্রান্তিকে নল সংক্রান্তিও বলা হয়। আগের দিন সন্ধ্যায় নল গাছের পাতায় নানান প্রাকৃতিক বস্তুর মিশ্রনের মশলা বেঁধে দেওয়া হয়। এই মশলাতে থাকে কাঁচা হলুদ, কাঁচা নিম পাতা, তিতা পাটের পাতা, তিতা পাটের বিচি, খড়ের গুঁড়ো, শুটকি মাছের গুঁড়ো, ওল, আতপচাল গুঁড়ো ইত্যাদি। এরপর সংক্রান্তির সকালে কৃষকরা নতুন বা শুদ্ধ পোষাক পরে মাঠের মধ্যে গিয়ে ধানক্ষেতে নল গুলিকে পুঁতে দেয়। ©রূপেশ সামন্ত
এর মাধ্যমে কৃষকরা ধানের সমস্ত বিপদ দূরীকরণের
মাধ্যমে কামনা করেন ভালো ফসলের। পোকা-মাকড়, কীট-পতঙ্গের হাত
থেকে ধানকে রক্ষা করার জন্য জমিতে নল পোঁতার লোকবিশ্বাসের উদ্ভব হয়েছে। নল বাঁধতে ব্যবহৃত ভেষজ উপাদান গুলি মাঠে দেওয়ার মধ্য দিয়ে
পোকামাকড়কে প্রতিরোধ করাই মূল উদ্দেশ্য ছিল। অতীতে রাসায়নিক সার ও ঔষধের ব্যবহার ছিল না। তাই এই ভেষজ পদ্ধতিই একমাত্র পথ ছিল। নল পোঁতার সময় কৃষ্কের বলা ছড়ার মধ্যেও সেই উদ্দেশ্য পরিস্ফুট
হয়-
‘এতে আছে কেঁউ
ধান করে মেউ
মেউ।
এতে আছে বড়ের
খড়
ধান মাচা করে
কড় কড়।
এতে আছে
সুক্তা
ধান ফলবে
গজমুক্তা।
এতে আছে শুকা
পোকামাকড়
লুকা।
এতে আছে ওল
মহাদেবের বোল।
এবার ধান
ফোল’।
সংক্রান্তির দিন সকালে এই নল বাঁধার মশলার কিছুটা
অংশ আলাদা করে বেটে বাড়ির সকলকে একটু একটু করে খাওয়ানো হয়। খাওয়ার পর বিভিন্ন এলাকায় ‘গজড়’ বা তাল আঁটির শাঁস খাওয়ার
রীতি রয়েছে। এই সব কিছু খাওয়ার মধ্য দিয়ে ভেষজ উপকারিতার দিকটি অস্বীকার করা যায় না। এই লোক বিশ্বাসের মধ্যে নারীর মতো ধানগাছের সাধ খাওয়ার মধ্য
দিয়ে মানুষ ও প্রকৃতির অভিন্নতা স্থাপনের দিকটি উপেক্ষা করা যায় না। ©রূপেশ সামন্ত। ছবি- গুগুল ইমেজ ও বিশ্বজিৎ পাত্র
[বি.দ্রঃ
কেউ কপি-পেস্ট করবেন না। শেয়ার করুন।]
No comments:
Post a Comment