‘পঞ্চমুণ্ডি’ আসনে পূজিতা হন পাঁশকুড়ার
‘যশোড়া রাজবাড়ি’র দুর্গা
©রূপেশ সামন্ত
সপ্তমীতে জ্বালানো হয় হোমযজ্ঞের আগুন। সেই
আগুন নেভে দশমীর বিসর্জনে। সপ্তমীতে শুরু হয় ছাগবলি। চলে নবমী পর্যন্ত। হোমযজ্ঞের
আগুন ও বলির হাড়িকাঠের সামনে ‘পঞ্চমুণ্ডি’ আসনে পূজিতা হন জমিদার বাড়ির দেবী
দুর্গা। এই দুর্গাপূজা স্থানীয় ভাবে অত্যন্ত জনপ্রিয় ও প্রভাব-প্রতিপত্তিময়। ১৭৯৩
খ্রিষ্টাব্দে লর্ড কর্ণওয়ালিশের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা চালু হয়। সেই
আইনে ১৭৯৪ খ্রিষ্টাব্দে কাশিজোড়া পরগনার জমিদারী ক্রোক হয় এবং নিলাম হয়। জমিদার তারাপদ ভূঞ্যা কাশিজোড়া পরগনার সেই নিলামকৃত
সম্পত্তির দু’আনা মালিক ছিলেন বলে জানা যায়। ফলে সেই সময়কাল ধরলে জমিদার তারাপদ ভূঞ্যার চালু করা
দুর্গা পূজার বয়স ২০০ বছরের অধিক। যশোড়ায় জমিদারে নির্মিত বিরাট ইঁটের বাড়ি এখন ধ্বংসপ্রায়। জঙ্গলাকীর্ণ
কিছুটা বাড়ি এখনও দাঁড়িয়ে আছে। স্থানীয় মানুষ এটিকে ‘রাজবাড়ি’ নামেই চেনে।
‘জমিদারী সম্পত্তির’ বর্তমান উত্তরাধিকারীরা নিজদেরকে
তৎকালীন জমিদারের বংশধর বলেই দাবী করেন।
যাইহোক, দেবী দুর্গার প্রাচীন দালান মন্দির
রয়েছে। মন্দিরটি বর্তমানে সংস্কার হয়েছে। মন্দিরের কারুকার্য ও কাঠের দরজা গুলি
প্রাচীন। দরজায় রয়েছে অপরূপ খোদিত চিত্রশিল্প। মন্দিরের মধ্যে মানুষ সহ পাঁচটি
জীবের মাথা দিয়ে তৈরি ‘মহাশক্তিশালী’ ‘পঞ্চমুণ্ডি’ আসনে দেবী দুর্গার মৃন্ময়ী
প্রতিমা বসানো হয়। এছাড়াও পূজার সময় মন্দিরে পিতলের রাজ-রাজেশ্বরী ও চণ্ডীমূর্তি বসানো
হয়। সপ্তমীতে যে হোমযজ্ঞ শুরু হয়, তা বিসর্জণ পর্যন্ত জ্বলতে থাকে। মন্দিরের
সম্মুখেই সপ্তমীতে রাজবাড়ির পক্ষ থেকে একটি ছাগবলি দেওয়া হয়। এরপর রাজবাড়ির পক্ষ থেকে অষ্টমীতে একটি ও নবমীতে
চারটি ছাগবলি দেওয়া হয়। ভক্তদের মানত করা ছাগবলিও এখানে হয়। পূজার সামগ্রী হিসাবে
ব্যবহৃত পিতলের থালা, কশাকুশি ইত্যাদি সবই প্রাচীন।
যাতায়াতঃ দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ের পাঁশকুড়া স্টেশন
থেকে ঘাটাল-পাঁশকুড়া সড়কে যশোড়া বাসস্ট্যাণ্ড যেতে হবে। এরপর পশ্চিমে কিছুটা এগোলে
মন্দিরে পৌঁছানো যাবে। পাঁশকুড়া থেকে মোট দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার।
©রূপেশ সামন্ত
[কপিপেস্ট করবেন না।
নকল বা চুরি করবে না। কপিরাইট সংরক্ষিত। শেয়ার করুন। আরও পড়তে ভিজিট করুন- ]
No comments:
Post a Comment