জন-সুনামিতে বিধ্বস্ত পাঁশকুড়ার ফুলের উপত্যকা Panskura Flowers Valley in Danger

 

জন-সুনামিতে বিধ্বস্ত পাঁশকুড়ার ফুলের উপত্যকা

©রূপেশ সামন্ত

     লাঠি নিয়ে তেড়ে এলো এক চাষী বৌ। ‘কি ব্যাপার?’ জিজ্ঞাসা করায় উগরে দিল একরাশ ক্ষোভ, ‘সবাই ফুল বাগানে ঢুকে ফটো তুলছে। আর গাছ গুলো সব ভেঙে দিচ্ছে। সারাদিন জেগে বসে আছি’। জিজ্ঞাসা



করলাম, ‘বাড়ির কর্তা কোথায়’? উত্তর দিলেন, ‘আমরা পালা করে বাগান জাগি’। আমি বললাম, ‘ফুল বিক্রিও তো বেশ হচ্ছে’! সোজা উত্তর দিলেন, ‘সে হলে তো এক কথা ছিল! কম লোকই ফুল কিনে। বেশির ভাগই ঘুরতে আসে। আর ফুল ব্যবসায়ীরাও তো ব্যবসা করছে’।

     একের পর এক জন-সুনামি আছড়ে পড়ছে পাঁশকুড়ার ফুলের উপত্যকায়। সদর ঘাটের ব্রীজ থেকে গাড়ির লম্বা লাইন। ব্যাপক যানজট। সারা রাজ্য থেকে দর্শকরা ছুটে আসছে মল্লিকা, গাঁধা, গ্লাডিওলাস, মুরগাই ইত্যাদির রূপ-রস দু’চোখ ভরে শুষে নিতে। কিন্তু এই বিপুল জন সমাগম নিয়ন্ত্রনের পরিকাঠামো কোথায়?

     [১] বাগানের মধ্যে সরু সরু আল ধরে ঢুকে পড়ছে হাজার হাজার দর্শক। পদপিষ্ট হয়ে অকালে প্রাণ হারাচ্ছে নিরীহ গাছগুলি।

     [২] বাগানের মধ্যেই ঢুকে পড়ছে অবাধ্য সেলফি শিকারীরা। ফলে অঘোরে প্রাণ যাচ্ছে বা অঙ্গ-বিচ্যুতি হচ্ছে দুর্বল গাছ গুলির।

     [৩] বাগানের মধ্যে একটু ফাঁকা জায়গা পেলেই চলছে পিকনিক। প্লাস্টিক আর বর্জ্য খাবারে গাছগুলির প্রাণ ওষ্ঠাগত।

     [৪] মানুষের বিনোদন নিবারণে বাগানের মধ্যেই যেথসেথা বসে গেছে দোকান-পাট। বানিজ্য মূখ্য! কৃষি উৎপাদন গৌন!

     [৫] নদীর পাড় সাফ করে বানিজ্য-বিনোদনের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র করে ফেলা হয়েছে। চুলোয় যাক বাস্তুতন্ত্র!

     [৬] বাগানের পাশ দিয়েই গেছে রেললাইন। বেপরোয়া দর্শকদের জন্য বিপদের হাতছানি রয়েছে সবসময়।

     [৭] যান নিয়ন্ত্রন ও পার্কিংয়ের কোন ব্যবস্থা নেই। ফুলের উপত্যকায় যাত্রাপথ সত্যিই দীশাহীন।

     [৮] পানীয় জলের ব্যবস্থা, যাত্রী সাচ্ছন্দ্য, বর্জ্য নিস্কাশনের ব্যবস্থা অপ্রতুল। ফুলের রাজ্যে দূষণ বড্ড বেমানান!

 



     প্রয়োজন সুসংহত পরিকল্পনা। পরিবেশ বান্ধব পরিকল্পনা ও তার রূপায়ন ছাড়া এইভাবে চলতে থাকলে ফুলের উপত্যকা খুব শীঘ্রই মরুভূমি উপত্যকায় পরিনত হবে। এগিয়ে আসতে হবে সরকার, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সাধারন মানুষকে। অবশ্যই ধন্যবাদ প্রাপ্য দোকাণ্ডা গ্রামবাসীর। তাঁরা নিজ উদ্যোগে ফুল বাগান বাঁচানোর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

     [১] ফুলবাগান এলাকায় যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা উচিত। ফুলবাগান থেকে অন্তত এক কিলোমিটার দূরে পার্কিং স্থান করা উচিত।

     [২] ফুলবাগান চত্ত্বরে বন্ধ হোক সমস্ত রকম পিকনিক এবং খাওয়া-দাওয়া।

     [৩] ফুলবাগানে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ, প্লাস্টিকের জলের বোতল ও শুকনো খাবার বহন নিষিদ্ধ হোক।

     [৪] ফুলবাগান চত্ত্বরে মেলা ও দোকান-পাট বন্ধ করা হোক। কেবলমাত্র চাষীদের ফুল বিক্রীর জন্য চাষীদের মালিকানাধীন কিছু পরিবেশ বান্ধব দোকান বানানো হোক।

     [৫] ফুলবাগানকে কেন্দ্র করে ঋতুকালীন ফুল-বিনোদন মেলা পি.ডব্লিউ.ডি মাঠে করা যেতে পারে।

     [৬] ফুল বাগান চত্ত্বরে পানীয় জল, দর্শকদের বসার আসন, হোম-স্টে ইত্যাদি পরিবেশ বান্ধব রূপে গড়ে তোলা প্রয়োজন।

     [৭] বাগানের মধ্যে দর্শকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হোক। দূর থেকে বাগান দেখার পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে।

     [৮] এলাকাটিকে ‘সংরক্ষিত’ ঘোষনা করা উচিত। ফুলের উপত্যকার উন্নয়নে ফুল চাষী, সরকারী প্রতিনিধি ও গুনীজনদের নিয়ে একটি উন্নয়ন কমিটি গড়ে তোলা অবিলম্বে প্রয়োজন।





     আসুন। ফুলের উপত্যকা বাঁচাতে এগিয়ে আসুন। মতামত ব্যক্তিগত। সুপরামর্শ কাম্য।

©রূপেশ সামন্ত

কপি-পেস্ট করবেন না। প্রয়োজনে শেয়ার করুন।


















 





Comments

Popular posts from this blog

Essay [রচনা]- মাহে রমযান

250 YEARS OLD BEGUNBARI KALI PUJA, PANSKURA, WB, INDIA

----- HISTORY OF PANSKURA [WB, INDIA] [PART-1] -----