Popular Posts

Sunday, 21 February 2021

বঞ্চিত ‘বারাং চিতি’

ভাষা দিবসে আওয়াজ উঠুক- বঞ্চিত ‘বারাং চিতি’র স্বীকৃতি চাই ©রূপেশ সামন্ত
বিপুল হাত তালির মধ্য দিয়ে শেষ হল মৌ মনগাণ্ডির কবিতা পাঠ। সেটা ছিল পাড়ার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আসর। সু্কুমার গাগরাই বিপুল হাত তালির মধ্য দিয়ে আঞ্চলিক ভাষায় গল্প বলে প্রথম পুরস্কার পেল। সে গল্পটি বলেছিল স্কুলের গল্প-কথা কম্পিটিশনে। মৌ পড়ে ক্লাস ফাইভে। আর সুকুমার ক্লাস সেভেনে পড়ে। দুজনেই কবিতা আর গল্প পাঠ করেছে বারাংচিতি ভাষায়। বেশির ভাগ সাধারণ মানুষ এই ভাষার অর্থ না বুঝলেও এই ভাষার আকর্ষণ তাদের কাছে এতটুকুও কম নেই। তপশিলি উপজাতি গোষ্ঠী ভূক্ত হো সম্প্রদায়ের মানুষের নিজস্ব ভাষা হল বারাং চিতি (Warang Chiti)। উপরোক্ত খণ্ডচিত্র গুলি পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পাঁশকুড়া ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের। কেবল পাঁশকুড়া ব্লকেই এখনও প্রায় দু’হাজার মানুষ বারাং চিতি ভাষায় কথা বলে। তাহলে গোটা ভারতবর্ষের চিত্রটি কত বিশাল, তা সহজেই অনুমেয়। বারাং চিতি হল হো সম্প্রদায়ের মানুষের ভাষার লিখিত রূপ। এটির আবিস্কর্তা লাকো বডরা। তিনি ঝাড়খণ্ডের পশ্চিম সিংভূমের বাসিন্দা। জন্ম ১৯১৯ সালের ১৯শে সেপ্টেম্বর। হো সম্প্রদায়ের হো ভাষাটি অস্ট্রো-এশিয়াটিক ভাষা গোষ্ঠীর মুণ্ডা ভাষা। এই ভাষায় হো, মুণ্ডা, কোল প্রভৃতি সম্প্রদায়ের মানুষ কথা বলে। প্তিটি ভাষার মধ্যে তার জাতিসত্ত্বা লুকিয়ে থাকে। লুকিয়ে থাকে সেই জাতির স্বাভিমান। প্রতিটি সম্প্রদায়ের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে। সেই ঐতিহ্যের সঠিক গুনগত বহিঃপ্রকাশ একমাত্র সেই সম্প্রদায়ের মাতৃভাষার মধ্য দিয়েই সম্ভব বলে বিশ্বাস করি। কিন্তু সেই ভাষার সরকারি স্বীকৃতি না থাকলে কি হবে? হো সম্প্রদায়ের মানুষের নিজস্ব সংস্কৃতি, নিজস্ব ঐতিহ্যের টুকরো টুকরো কিছু প্রকাশিত হয় দেবনাগরী, ওড়িয়া, বাংলা প্রভৃতি ভাষার মধ্য দিয়ে। হো সম্প্রদায়ের মধ্যে রয়েছে বিপুল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ভাণ্ডার। বারাং চিতিতে স্বীকৃতি নেই। ফলে বিপুল হো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বাদ থেকে বঞ্চিত আমরা সকলে। হারিয়ে যাচ্ছে তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, হারিয়ে যাচ্ছে তাদের জাতিসত্ত্বা। ইউনিভার্সিটি গ্রান্ট কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর জন্য এই ভাষার স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু ভারতের সংবিধানের ৮ম তপশিলে এই ভাষার স্বীকৃতি আজও মেলেনি। ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশা সরকারের কিছু প্রচেষ্টা এই বিষয়ে রয়েছে। হো সম্প্রদায়ের মানুষ লাগাতার ভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বারাং চিতির স্বীকৃতি দাবী করছে। পরিশেষে আজও বঞ্চিত বারাং চিতি। তাই এই ভাষা দিবসে আওয়াজ উঠুক- বঞ্চিত ‘বারাং চিতি’র স্বীকৃতি চাই।

No comments:

Post a Comment