Wednesday, 31 March 2021
খেলা হবে- Khela Hobe- Game on
এ কি শুনছি! রাজনীতি নাকি ‘খেলা’, অর্থনীতি নাকি ‘হেলাফেলা’!
✍রূপেশ সামন্ত
একদল বলছে আমি ‘এক টাকায়’ সব দেবো। আরেক দল বলছে আমি ‘বিনা পরসায়’ সব দেবো। অন্যদল বলছে আমি ‘বিনা পয়সায়’ ‘দ্বিগুন’ দেবো। কোথা থেকে দেবে, কেনো দেবে, কার নিয়ে দেবে, ভবিষ্যৎ কি- এসব অর্থনীতির প্রশ্ন অবান্তর! সবই আসলে ‘খেলা’! আর এ ‘খেলা’ যে আত্মঘাতী খেলা- বুঝবে কবে আপামর বাঙালি!
জনগন বলছে, ‘দিচ্ছে, ...তাই খাচ্ছি’। রাজনীতি বলছে, ‘দিচ্ছি, ...তাই (ভোট) পাচ্ছি’। আর জনগনের মধ্যে বাড়ির শিক্ষিত বেকার ছেলেটি বলছে, ‘কাজ নাই’। সেই জনগনের মধ্যে প্রান্তিক কৃষকটি বলছে, ‘ফসলের দাম নাই’। সেই জনগনের মধ্যে ব্যাগ হাতে করে রোজ বাজারে যাওয়া ক্রেতাটি বলছে, ‘সস্তায় কিছু নাই’। চারিদিকে শুধু ‘নাই’, ‘নাই’! পাইয়ে দেওয়া, দান-খয়রাতির রাজনীতিতে অর্থনীতির যে পুরো বারোটা বাজে, সেটা নিয়ে আসলে আমাদের কোন মাথা ব্যাথা ‘নাই’।
অপ্রয়োজনীয় খয়রাতিতে যে মানব সম্পদের অপব্যবহার হয়, উৎপাদন হ্রাস পায়, ঋণ বাড়তে থাকে, মুদ্রাস্ফীতি হয়- সেই ভাবনা আমাদের কোথায়? ধীরে ধীরে আমরা ‘অচলায়তন’ অর্থনীতির আবর্তে একটি ‘স্থবির’ মানব সম্পদ যুক্ত সমাজ গড়ে তোলার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, অস্বাস্থ্য, গুনমানহীন জীবন-যাপনের ঘুর্ণিপাকে আরও ডুবছি আমরা।
রাজনীতির সাথে অর্থনীতির গভীর যোগ। অথচ অদ্ভূতভাবে এই ভোটের ‘খেলা’র বাজারে রাজনৈতিক দল গুলির অর্থনীতির চর্চা সে ভাবে চোখে পড়েনি। কিভাবে বেকার ছেলে গুলো কাজ পাবে, কিভাবে মূল্যবৃদ্ধি হ্রাস হবে, কিভাবে ঋণের বোঝা কমবে, কিভাবে প্রকৃত গরীবকে সাহায্য করা হবে- সে চর্চা "খেলা হবে"র উত্তাপে হারিয়ে গেছে। হয়তো বা ‘পাব্লিক’ শুনতে চায়নি সেসব, "খেলা" দেখতে চেয়েছে!
যাইহোক, আমাদের মতো কৃষিপ্রধান দেশে কৃষি-অর্থনীতির প্রভুত উন্নতির সুযোগ রয়েছে। সে বিষয়ে চর্চা হতে পারতো। কৃষি প্রযুক্তির উন্নতিকরণ, কৃষির জৈবিকীকরণ, কৃষি উৎপাদন, কৃষিজাত পন্যের প্রক্রিয়াকরণ, কৃষি বিপনন প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিশাল উন্নতির সুযোগ রয়েছে। এতে কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে অর্থনীতির উন্নতিতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তো। এছাড়াও প্রাকৃতিক সম্পদ, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, শিল্প পরিকাঠামো, স্বাস্থ্য পরিকাঠামো, গ্রামীন পরিকাঠামো ইত্যাদি বিষয়ে কোন রাজনৈতিক দল সে ভাবে দিশা দেখালো না। শুধু ‘খেলা’, ‘খেলা’ আর ‘খেলা’!
আমরা মেনে নিয়েছি, মেনে নিচ্ছি বা মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছি। এই হল গড়পড়তা বাঙালির মনন। আসলে রাজনৈতিক দল বা নেতাদের ভাবনার সঙ্গে আমরা সুন্দরভাবে ‘সেট’ করে নিচ্ছি। রাজনীতির সর্বগ্রাসী দুর্বৃত্তায়ন, সর্বব্যাপী দুর্নীতির আগ্রাসন ও সর্বনাশী ক্ষমতার আস্ফালন আমাদের ‘সেট’ হতে অনুঘটকের কাজ করছে। রাজনীতিটাকে ‘খেলনা’ করে কি সুন্দর ভাবে ‘খেলা’ খেলে অর্থনীতিটাকে ‘হেলাফেলা’ করে দেওয়া গেছে! দারুন "খেলা চলছে"!
✍️রূপেশ সামন্ত
পাঁশকুড়া পশ্চিম বিধানসভাঃ বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক স্থায়িত্ব থাকলেও বড় উন্নয়ন অধরা Panskura Paschim Assembly Constituency
পাঁশকুড়া পশ্চিম বিধানসভাঃ বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক স্থায়িত্ব থাকলেও বড় উন্নয়ন অধরা
পাঁশকুড়ার বৃহৎ উন্নয়ন কোথায়? স্বাধীনতার ৭৫ বছরের দোর গড়ায় এসে এই বৃহৎ প্রশ্নটি মনে জাগে। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে তা আরও প্রাসঙ্গিক।
প্রশ্ন-১। এই জেলারই অন্য অংশে অনেক বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠিত হলেও পাঁশকুড়ায় বৃহৎ কোন শিল্প কোথায়?
প্রশ্ন-২। পাঁশকুড়ার রেলপথের বয়স ১০০ বছরের বেশি। পাঁশকুড়ার লেভেল ক্রসিংয়ে আজও কেন ফ্লাইওভার হলো না?
প্রশ্ন-৩। পাঁশকুড়ায় রয়েছে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি-মন্দির-মসজিদ-পুরাকীর্তির স্বর্ণখনি। আজও কেন পাঁশকুড়া ‘ঐতিহ্যের পর্যটন কেন্দ্র’ হয়ে উঠলো না?
প্রশ্ন-৪। প্রাচীন কাল থেকেই পাঁশকুড়া ফুল-সব্জী-কৃষির সমৃদ্ধ ক্ষেত্র। আর কতদিন লাগবে বিপনন-সংরক্ষণ-প্রক্রিয়াকরণ-পর্যটন শিল্পের পরিকাঠামো গড়তে?
প্রশ্ন-৫। পাঁশকুড়ার শহর থেকে দক্ষিণাঞ্চল কয়েক মাস ধরে জলমগ্ন থাকে। এরজন্য বৃহৎ মাস্টারপ্ল্যান ও তার রূপায়ন আর কবে হবে?
প্রশ্ন-৬। পাঁশকুড়ার উপর দিয়ে বয়ে গেছে কাঁসাই ও ক্ষীরাই নদী। ২/৩টি পাকার ফুট ব্রীজ ছাড়া সব গুলিই বাঁশের বা কাঠের। বড় যানবাহন চলাচলের যোগ্য পাকার ব্রীজ গুলি আর কবে হবে?
প্রশ্ন-৭। পাঁশকুড়াবাসীকে আজও জরুরী ও জটিল স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য ছুটতে হয় তমলুক বা কলকাতায়। পাঁশকুড়ায় বৃহৎ স্বাস্থ্য পরিষেবা কবে আর গড়ে উঠবে ?
প্রশ্ন-৮। পাঁশকুড়ায় প্রায় ৩০ হাজারের বেশি তপশিলী জাতি ও প্রায় ১৩ হাজারের বেশি তপশিলী উপজাতির মানুষ বসবাস করেন। এদের সংস্কৃতির সংরক্ষণ করতে এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান প্রভৃতি ক্ষেত্রে সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে ও স্বনির্ভর করতে পাঁশকুড়া কেন্দ্রিক বৃহৎ পদক্ষেপ কবে আর হবে?
প্রশ্ন-১০। পাঁশকুড়ার পথগুলি অত্যন্ত দুর্ঘটনা প্রবন। প্রতিবছর দুর্ঘটনায় বহু মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটে। পথচারীদের নিরাপত্তা বিধানে আধুনিক আধুনিক ‘ট্রাফিক কন্ট্রোল’ পরিকাঠামো কবে আর গড়ে তোলা হবে?
প্রশ্ন-১১। পাঁশকুড়ায় প্রায় সাড়ে তিনশোটি বিভিন্ন স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠান গুলির পরিকাঠামোগত উন্নয়নের ব্যাপক অসামাঞ্জস্য রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলির সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়ন ও কর্মমুখী বৃত্তিমুলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কাজ কবে আর শুরু হবে?
এবার পাঁশকুড়া পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের রাজনৈতিক স্থায়িত্বের পরিসংখ্যান ও বিশ্লেষনে আসি। এই কেন্দ্রে এ পর্যন্ত ১৬টি বিধানসভা নির্বাচন হয়ে গেছে। ২০২১এর নির্বাচন আসন্ন। বিগত ১৬টি নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী তথা বিধায়করা হলেন-
১। শ্যামাদাস ভট্টাচার্য- কংগ্রেস (১৯৫২) ২। শ্যামাদাস ভট্টাচার্য- কংগ্রেস (১৯৫৭) ৩। শ্যামাদাস ভট্টাচার্য- কংগ্রেস (১৯৬২) ৪। রজনীকান্ত প্রামানিক- বাংলা কংগ্রেস (১৯৬৭) ৫। অহীন্দ্র মিশ্র- বাংলা কংগ্রেস (১৯৬৯) ৬। ওমর আলি- সি.পি.আই (১৯৭১) ৭। ওমর আলি- সি.পি.আই (১৯৭২) ৮। ওমর আলি- সি.পি.আই (১৯৭৭) ৯। ওমর আলি- সি.পি.আই (১৯৮২) ১০। ওমর আলি- সি.পি.আই (১৯৮৭) ১১। ওমর আলি- সি.পি.আই (১৯৯১) ১২। চিত্তরঞ্জন দাসঠাকুর- সি.পি.আই (১৯৯৬) ১৩। চিত্তরঞ্জন দাসঠাকুর- সি.পি.আই (২০০১) ১৪। চিত্তরঞ্জন দাসঠাকুর- সি.পি.আই (২০০৬) ১৫। ওমর আলি- তৃণমুল কংগ্রেস (২০১১) ১৬। ফিরোজা বিবি- তৃণমুল কংগ্রেস (২০১৬)
উপরের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বিগত ১৬টি বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে সি.পি.আই জয়লাভ করেছে ৯ বার, কংগ্রেস জয়লাভ করেছে ৩ বার, বাংলা কংগ্রেস জয়লাভ করেছে ২ বার এবং তৃণমুল কংগ্রেস জয়লাভ করেছে ২ বার। এছাড়াও এই কেন্দ্র থেকে বিধায়ক হয়ে মন্ত্রী হয়েছেন ২ জন যথাক্রমে শ্যামাদাস ভট্টাচার্য ও ওমর আলি।
আবার পাঁশকুড়া পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রটি ১৯৫২-১৯৭১ সালের মধ্যে অনুষ্ঠিত ৫টি লোকসভা নির্বাচনে ‘ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে’র অন্তর্গত ছিল। ১৯৭৭-২০০৪ সালের মধ্যে অনুষ্ঠিত ১০টি লোকসভা নির্বাচনে পাঁশকুড়া পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রটি ‘পাঁশকুড়া লোকসভা কেন্দ্রে’র অন্তর্গত ছিল। ২০০৯ সাল থেকে অদ্যাবধি অনুষ্ঠিত ৩টি লোকসভা নির্বাচনে পাঁশকুড়া পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রটি ‘ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে’র অন্তর্গত ছিল। সুতরাং বিগত মোট ১৮টি লোকসভা নির্বাচনে (উপ নির্বাচন সহ) দলগত বিজয়ী দল গুলো হল- কংগ্রেস ৩ বার, সি.পি.আই ১০ বার, জনতা ১ বার, সি.পি.এম ১ বার, উপনির্বাচন সহ তৃণমুল ৩ বার। এই কেন্দ্রেরই এম.পি. শচীন্দ্রনাথ চৌধুরী, পরিমল ঘোষ ও আভা মাইতি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও হয়েছেন।
এতো তথ্য-পরিসংখ্যান দেওয়ার উদ্দেশ্য একটাই যে, এখানে এক একটি রাজনৈতিক দল দীর্ঘদিন দাপটের সঙ্গে স্থায়ী থেকেছে এবং কেন্দ্র-রাজ্যে মন্ত্রীত্বও করেছে। দাপুটে বিধায়ক-সাংসদরাও এই কেন্দ্রেরই ফসল। অথচ পাঁশকুড়ার বৃহৎ উন্নয়ন অধরা থেকে গেল কেন? রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব? অর্থনৈতিক অভাব? নাকি চিন্তার দৈনতা?
©রূপেশ সামন্ত
(পুনশ্চঃ মতামত সম্পূর্ণ রূপে ব্যক্তিগত। আর্টিকেলটি রাজনৈতিক হলে কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ভাবে লেখা নয়। এই লেখা কাউকে বা কোন দলকে আঘাত করে থাকলে আমি আগাম ক্ষমাপ্রার্থী। আপনারাও তথ্য দিয়ে ও শালীনতা বজায় রেখে মতামত ব্যক্ত করতে পারেন।)
Monday, 29 March 2021
মাটির 'সোরা'। কুমোর শিল্প।
মাটির 'সোরা'। কুমোর শিল্প। এই গ্রীষ্মে এগুলির চাহিদা প্রচুর। বিষেষত এই সময় মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যের অনুগামী ও বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীরা হরিনাম সংকীর্তন বা নিশিকীর্তনের পর নানাস্থানে মহোৎসবের আয়োজন করে। এই ধরনের মহোৎসবে পোড়ামাটির 'সোরা' প্রসাদ বিতরণে ব্যবহৃত হয়। তাই এই সময় মাটির 'সোরা' তৈরিতে কুম্ভকার পাড়ায় ব্যস্ততা তুঙ্গে থাকে। মাটির 'সোরা' গুলিকে রোদে শুকিয়ে খড়ের আগুনে ভাটিতে পোড়ানো হয়। এরপর পোড়ামাটির 'সোরা' গুলি চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। ছবিতে 'সোরা' গুলি পাঁশকুড়া ব্লকের চৈতন্যপুর-২ অঞ্চলের কিসমত জগন্নাথ চক গ্রামের কুম্ভকার পাড়ার। এই শিল্প এখন অবলুপ্তপ্রায়। শিল্পজাত দ্রব্যগুলি অলাভজনক হওয়ায় শিল্পীরা উৎসাহ হারাচ্ছে। তারা অন্য পেশায় আগ্রহী হয়ে উঠছে। প্রয়োজন উন্নত শিল্প-পরিকাঠামো গড়ে তোলা ও লাভজনক বিপনন ব্যবস্থা তৈরি করা।
✍️রূপেশ সামন্ত
Subscribe to:
Posts (Atom)
জীবনের ভুল — সত্যিই ভুল?
জীবনের ভুল — সত্যিই ভুল? জীবন এক অমোঘ প্রবাহ—সময়ের স্রোতে আমাদের চিন্তা, অনুভব ও সিদ্ধান্ত সবই পরিবর্তিত হয়। আজ যা ভুল মনে হয়, কাল তা সঠি...

-
-----মাহে রমযান----- শ্রী রূপেশ কুমার সামন্ত/ রমযানের শান্তির বানী, নব-প্রভাতের বানী অনুরণিত হয় কাজী নজরুল ইসলামের লেখনীতেও। ‘...
-
------250 YEARS OLD BEGUNBARI KALI PUJA, PANSKURA, WB------ Rupesh Samanta/ 16.05.2018 Rattanti Kali Puja of Tintauri Begunbari...
-
----- HISTORY OF PANSKURA [WB, INDIA] [PART-1] ----- Rupesh Samantha Netaji Subhas Chandra Bose came to Panskura in ...