Popular Posts

Wednesday, 31 March 2021

পাঁশকুড়া পশ্চিম বিধানসভাঃ বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক স্থায়িত্ব থাকলেও বড় উন্নয়ন অধরা Panskura Paschim Assembly Constituency

পাঁশকুড়া পশ্চিম বিধানসভাঃ বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক স্থায়িত্ব থাকলেও বড় উন্নয়ন অধরা
পাঁশকুড়ার বৃহৎ উন্নয়ন কোথায়? স্বাধীনতার ৭৫ বছরের দোর গড়ায় এসে এই বৃহৎ প্রশ্নটি মনে জাগে। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে তা আরও প্রাসঙ্গিক। প্রশ্ন-১। এই জেলারই অন্য অংশে অনেক বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠিত হলেও পাঁশকুড়ায় বৃহৎ কোন শিল্প কোথায়? প্রশ্ন-২। পাঁশকুড়ার রেলপথের বয়স ১০০ বছরের বেশি। পাঁশকুড়ার লেভেল ক্রসিংয়ে আজও কেন ফ্লাইওভার হলো না? প্রশ্ন-৩। পাঁশকুড়ায় রয়েছে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি-মন্দির-মসজিদ-পুরাকীর্তির স্বর্ণখনি। আজও কেন পাঁশকুড়া ‘ঐতিহ্যের পর্যটন কেন্দ্র’ হয়ে উঠলো না? প্রশ্ন-৪। প্রাচীন কাল থেকেই পাঁশকুড়া ফুল-সব্জী-কৃষির সমৃদ্ধ ক্ষেত্র। আর কতদিন লাগবে বিপনন-সংরক্ষণ-প্রক্রিয়াকরণ-পর্যটন শিল্পের পরিকাঠামো গড়তে? প্রশ্ন-৫। পাঁশকুড়ার শহর থেকে দক্ষিণাঞ্চল কয়েক মাস ধরে জলমগ্ন থাকে। এরজন্য বৃহৎ মাস্টারপ্ল্যান ও তার রূপায়ন আর কবে হবে? প্রশ্ন-৬। পাঁশকুড়ার উপর দিয়ে বয়ে গেছে কাঁসাই ও ক্ষীরাই নদী। ২/৩টি পাকার ফুট ব্রীজ ছাড়া সব গুলিই বাঁশের বা কাঠের। বড় যানবাহন চলাচলের যোগ্য পাকার ব্রীজ গুলি আর কবে হবে? প্রশ্ন-৭। পাঁশকুড়াবাসীকে আজও জরুরী ও জটিল স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য ছুটতে হয় তমলুক বা কলকাতায়। পাঁশকুড়ায় বৃহৎ স্বাস্থ্য পরিষেবা কবে আর গড়ে উঠবে ? প্রশ্ন-৮। পাঁশকুড়ায় প্রায় ৩০ হাজারের বেশি তপশিলী জাতি ও প্রায় ১৩ হাজারের বেশি তপশিলী উপজাতির মানুষ বসবাস করেন। এদের সংস্কৃতির সংরক্ষণ করতে এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান প্রভৃতি ক্ষেত্রে সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে ও স্বনির্ভর করতে পাঁশকুড়া কেন্দ্রিক বৃহৎ পদক্ষেপ কবে আর হবে? প্রশ্ন-১০। পাঁশকুড়ার পথগুলি অত্যন্ত দুর্ঘটনা প্রবন। প্রতিবছর দুর্ঘটনায় বহু মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটে। পথচারীদের নিরাপত্তা বিধানে আধুনিক আধুনিক ‘ট্রাফিক কন্ট্রোল’ পরিকাঠামো কবে আর গড়ে তোলা হবে? প্রশ্ন-১১। পাঁশকুড়ায় প্রায় সাড়ে তিনশোটি বিভিন্ন স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠান গুলির পরিকাঠামোগত উন্নয়নের ব্যাপক অসামাঞ্জস্য রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলির সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়ন ও কর্মমুখী বৃত্তিমুলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কাজ কবে আর শুরু হবে?
এবার পাঁশকুড়া পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের রাজনৈতিক স্থায়িত্বের পরিসংখ্যান ও বিশ্লেষনে আসি। এই কেন্দ্রে এ পর্যন্ত ১৬টি বিধানসভা নির্বাচন হয়ে গেছে। ২০২১এর নির্বাচন আসন্ন। বিগত ১৬টি নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী তথা বিধায়করা হলেন- ১। শ্যামাদাস ভট্টাচার্য- কংগ্রেস (১৯৫২) ২। শ্যামাদাস ভট্টাচার্য- কংগ্রেস (১৯৫৭) ৩। শ্যামাদাস ভট্টাচার্য- কংগ্রেস (১৯৬২) ৪। রজনীকান্ত প্রামানিক- বাংলা কংগ্রেস (১৯৬৭) ৫। অহীন্দ্র মিশ্র- বাংলা কংগ্রেস (১৯৬৯) ৬। ওমর আলি- সি.পি.আই (১৯৭১) ৭। ওমর আলি- সি.পি.আই (১৯৭২) ৮। ওমর আলি- সি.পি.আই (১৯৭৭) ৯। ওমর আলি- সি.পি.আই (১৯৮২) ১০। ওমর আলি- সি.পি.আই (১৯৮৭) ১১। ওমর আলি- সি.পি.আই (১৯৯১) ১২। চিত্তরঞ্জন দাসঠাকুর- সি.পি.আই (১৯৯৬) ১৩। চিত্তরঞ্জন দাসঠাকুর- সি.পি.আই (২০০১) ১৪। চিত্তরঞ্জন দাসঠাকুর- সি.পি.আই (২০০৬) ১৫। ওমর আলি- তৃণমুল কংগ্রেস (২০১১) ১৬। ফিরোজা বিবি- তৃণমুল কংগ্রেস (২০১৬) উপরের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বিগত ১৬টি বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে সি.পি.আই জয়লাভ করেছে ৯ বার, কংগ্রেস জয়লাভ করেছে ৩ বার, বাংলা কংগ্রেস জয়লাভ করেছে ২ বার এবং তৃণমুল কংগ্রেস জয়লাভ করেছে ২ বার। এছাড়াও এই কেন্দ্র থেকে বিধায়ক হয়ে মন্ত্রী হয়েছেন ২ জন যথাক্রমে শ্যামাদাস ভট্টাচার্য ও ওমর আলি। আবার পাঁশকুড়া পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রটি ১৯৫২-১৯৭১ সালের মধ্যে অনুষ্ঠিত ৫টি লোকসভা নির্বাচনে ‘ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে’র অন্তর্গত ছিল। ১৯৭৭-২০০৪ সালের মধ্যে অনুষ্ঠিত ১০টি লোকসভা নির্বাচনে পাঁশকুড়া পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রটি ‘পাঁশকুড়া লোকসভা কেন্দ্রে’র অন্তর্গত ছিল। ২০০৯ সাল থেকে অদ্যাবধি অনুষ্ঠিত ৩টি লোকসভা নির্বাচনে পাঁশকুড়া পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রটি ‘ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে’র অন্তর্গত ছিল। সুতরাং বিগত মোট ১৮টি লোকসভা নির্বাচনে (উপ নির্বাচন সহ) দলগত বিজয়ী দল গুলো হল- কংগ্রেস ৩ বার, সি.পি.আই ১০ বার, জনতা ১ বার, সি.পি.এম ১ বার, উপনির্বাচন সহ তৃণমুল ৩ বার। এই কেন্দ্রেরই এম.পি. শচীন্দ্রনাথ চৌধুরী, পরিমল ঘোষ ও আভা মাইতি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও হয়েছেন। এতো তথ্য-পরিসংখ্যান দেওয়ার উদ্দেশ্য একটাই যে, এখানে এক একটি রাজনৈতিক দল দীর্ঘদিন দাপটের সঙ্গে স্থায়ী থেকেছে এবং কেন্দ্র-রাজ্যে মন্ত্রীত্বও করেছে। দাপুটে বিধায়ক-সাংসদরাও এই কেন্দ্রেরই ফসল। অথচ পাঁশকুড়ার বৃহৎ উন্নয়ন অধরা থেকে গেল কেন? রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব? অর্থনৈতিক অভাব? নাকি চিন্তার দৈনতা? ©রূপেশ সামন্ত (পুনশ্চঃ মতামত সম্পূর্ণ রূপে ব্যক্তিগত। আর্টিকেলটি রাজনৈতিক হলে কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ভাবে লেখা নয়। এই লেখা কাউকে বা কোন দলকে আঘাত করে থাকলে আমি আগাম ক্ষমাপ্রার্থী। আপনারাও তথ্য দিয়ে ও শালীনতা বজায় রেখে মতামত ব্যক্ত করতে পারেন।)

1 comment:

  1. বড়ো হাসপাতাল, ট্রাফিক কন্ট্রোল, ফ্লাইওভার......... ইত্যাদি সমস্ত উন্নয়ন হোক।

    ReplyDelete