বিবর্তনের পথে কীর্তন? Kirtan

বিবর্তনের পথে কীর্তন? ✍️ রূপেশ সামন্ত স্বামীজির মতে কীর্তন হল বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সঙ্গীত। কীর্তন হল ভাবপ্রধান গান। এতে তালের এতরকম ফের আছে যা অন্য কোন সঙ্গীতে নেই। 'গীতগোবিন্দে' একটি গান আছে যার একটা লাইনেই আটরকম তাল রয়েছে। কীর্তনের ভাষায় একে অষ্টতাল বলা হয়। এমন তাল বিশ্বের আর কোন সঙ্গীতে প্রয়োগ নেই। নেতাজী সুভাষচন্দ্র থেকে শুরু করে প্রত্যেক মনীষী, দেশপ্রেমিক ও বাংলার কবিরা কীর্তন বড় ভালোবাসতেন। সাধারণ ভাবে কীর্তন মানে গান। রামায়ণ মহাভারত থেকে উদ্ধৃত কথার ব্যাখা নয়। এটাকে অনেকে তত্ত্ব বলে থাকেন। তা কিন্তু নয়। কীর্তন মানে গানের মাধ্যমে পদাবলী সাহিত্যের ব্যাখা, যাতে আত্মা ও পরমাত্মার যোগ সাধনা থাকে। কীর্তনের পরিভাষায় একে তত্ত্বকথা বলে। কীর্তন বিভিন্ন ঘরানায় হয়। তবে গরানহাটি, মনোহরশাহি, রেনেটি, মন্দারী, ঝাড়খন্ডী ঘরানার মধ্যে প্রথম তিনটিকে মূলত প্রাধান্য দেওয়া হয়। এক একটা ঘরের এক একটা স্বরূপ। কীর্তন বিভিন্ন ঘরের বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। তবে মূল বিষয় কিন্তু তিনটি। সুর, তাল আর গানের কথাই হল প্রধান। উচ্চাঙ্গসংগীতের মাধ্যমে বাকী পাঁচটি উপাঙ্গের প্রয়োগ থাকতে পারে। তারপর অন্যান্য সঙ্গীত যেমন, রবীন্দ্রনাথের কীর্তন, নজরুলের কীর্তন, লালনের গান কিংবা ভজনগীতও কীর্তন হতে পারে, তবে এগুলি অবশ্যই যেন কীর্তনাসরে একটা বড় তালের গান হয়। এর মধ্যে একটা পদাবলী গুরুমুখী ভাব অবশ্যই যেন থাকে, নইলে মিছে মিছে আসরে সময় কাটানো ছাড়া আর কিছু নয়। আজ থেকে দু'দশক আগেও গ্রামে কীর্তনের অনুষ্ঠান শুনেছি। বিখ্যাত সব শিল্পীদের গান শোনার সৌভাগ্য হয়েছে। এখনও তেমন ভালো কীর্তন শিল্পী খুব কম আছে বলে মনে করি না। আধুনিকতার আগ্রাসনে তারা হয়তো একঘরে হয়ে গেছে। আবার কিছু কীর্তন শিল্পী আধুনিকতার আগ্রাসনে গা ভাসিয়ে কীর্তনকে প্রহসনেও পরিণত করেছেন, এটাও ঠিক। বহু ক্ষেত্রে কীর্তন ব্যবসার আঙ্গিক হয়ে গেছে। দুই তিন ঘন্টা গানের জন্য একটু নাম করা শিল্পীরা চল্লিশ, পঞ্চাশ হাজার টাকা করে নিচ্ছেন। এমনকি লক্ষাধিক টাকাও নিচ্ছেন। রক-ব্যাণ্ডের তালে 'কীর্তন'ও শুনতে হচ্ছে। তবে শুনছেও মানুষ। হয়তো 'কীর্তন' নয়, নামে তো 'কীর্তন'! ©রূপেশ সামন্ত। (১৪.০৪.২১)

Comments

Popular posts from this blog

Essay [রচনা]- মাহে রমযান

250 YEARS OLD BEGUNBARI KALI PUJA, PANSKURA, WB, INDIA

----- HISTORY OF PANSKURA [WB, INDIA] [PART-1] -----