পাঁশকুড়ায় আগস্ট আন্দোলন (স্বাধীনতার পঁচাত্তরে- পর্ব ১)
১৯৪২ সালের ৯ আগষ্ট কংগ্রেসের তরফে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়। গান্ধিজী ডাক দিলেন, ‘Do or Die’। মেদিনীপুর জেলায় এই আগস্ট আন্দোলন বা ভারত ছাড়ো আন্দোলন এক গনবিদ্রোহের চেহারা নেয়। কংগ্রেস বে-আইনী ঘোষিত থাকায় নিষিদ্ধ হয় সভা, সমিতি ও শোভাযাত্রা। প্রায় সমস্ত প্রথম সারির নেতারা গ্রেপ্তার হয়ে যায়। ফলে গোটা দেশের সঙ্গে পাঁশকুড়াতেও এই আন্দোলন ধাক্কা খায়। নেতৃবর্গ কারাগারের অন্তরালে থাকায় বা নেতৃত্বের অভাবে পাঁশকুড়ায় এই আন্দোলন স্বাভাবিক গতি লাভ করতে পারেনি। ১৯৪২ সালে গ্রেপ্তার হয়ে যান পাঁশকুড়ার চৈতন্যপুর-১ অঞ্চলের কালই গ্রামের ‘সন্ন্যাসী পুরুষ’ রজনীকান্ত প্রামানিক। জেলে বন্দী থাকেন ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত। জোড়াপুকুরের মহীয়সী নারী ইন্দুমতি ভট্টাচার্য বা তাঁর ছেলে শ্যামাদাস ভট্টাচার্যের মতো নেতৃত্ব শারীরিক ও ব্যক্তিগত কারনে এই আন্দোলন থেকে বিরত থেকে ছিলেন। কোলাঘাটের রাধাগোবিন্দ চক্রবর্তী ও তাঁর স্ত্রী বিভারাণী চক্রবর্তী আগস্ট আন্দোলনে যোগদান করে প্রচুর অত্যচার ও নির্যাতনের শিকার হন। কোলাঘাটে গোবিন্দ চক্রবর্তীর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। তিনি কলকাতায় আত্মগোপন করেন। কিন্তু তিনি গ্রেপ্তার হয়ে যান। রাধাবল্লভচক গ্রামের রাখালচন্দ্র নায়ক রাসগাছতলায় আগস্ট আন্দোলনকে সামনে রেখে জমায়েত ও সভা করেছিলেন। সভা চলাকালীন সময়ে রাখালচন্দ্র নায়কও গ্রেপ্তার হয়ে যান। বিচারে এক বছরের কারাদণ্ড হয়। উল্লেখযোগ্য নেতৃত্বের অংশগ্রহন না থাকলেও পাঁশকুড়ায় আগস্ট আন্দোলন থেমে থাকেনি। সেই আন্দোলনের স্বাভাবিক গতি বজায় না থাকলেও ১৯৪২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর পাঁশকুড়ায় রাস্তা অবরোধের দুর্ধর্ষ রাত ও ২৯ সেপ্টেম্বর পাঁশকুড়া থানা অভিযানের রোমহর্ষক কর্মসূচি ‘তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার’ প্রতিষ্ঠায় গূরুত্বপূর্ণ মাইলষ্টোন হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ২৮ সেপ্টেম্বরের রাত্রে পাঁশকুড়ায় উড়িয়ে দেওয়া হয় কালভার্ট, কেটে দেওয়া হয় রাস্তা, উপড়ে ফেলা হয় টেলিগ্রাফ পোস্ট। .... ... (ক্রমশ...)
[আসছে ...// ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ ও বিশ্লেষন সমন্বিত বইঃ “পাঁশকুড়ার স্বাধীনতা আন্দোলন ও রাজনৈতিক বিবর্তন” © রূপেশ সামন্ত // প্রকাশিত হবেঃ ১৫ আগস্ট, ২০২১]
No comments:
Post a Comment