অপমানের জবাব দিতেই রাতারাতি তৈরি পাঁশকুড়ার প্রথম ছাপাখানা
©রূপেশ সামন্ত
পুস্তকঃ
“পাঁশকুড়ার স্বাধীনতা আন্দোলন
ও রাজনৈতিক বিবর্তন”, লেখকঃ
© রূপেশ সামন্ত
পাঁশকুড়ার এক ও অদ্বিতীয় ছাপাখানা
ছিল সেটি। তৈরি হয়েছিল রাতারাতি। এক রজনীতে তৈরি হয়েছিল বলে নাম হয়েছিল ‘রজনী
প্রেস’। পাঁশকুড়া স্টেশন বাজারের খিরিশতলার কাছে সেই প্রেসের পরিচিতির বিস্তার
হলেও তার সৃষ্টি কিন্তু রাধাবল্লভচক গ্রামে। সেই ছাপাখানার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন
বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী রাখালচন্দ্র নায়ক। তিনি আগস্ট
আন্দোলনকে সামনে রেখে রাসগাছতলায় যখন জমায়েত ও সভা
করেছিলেন, তখন ব্রিটিশ
পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। বিচারে এক বছরের
কারাদণ্ড হয়। এছাড়াও ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন চলাকালে কংগ্রেস পরিচালিত ‘বেঙ্গল
ভলিউন্টারি’র সদস্য হিসাবে বাংলাদেশের ঢাকায় ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে
গিয়েছিলেন। গ্রেপ্তার হয়ে জেলও খেটেছিলেন। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৫২
সাল নাগাদ পাঁশকুড়া-১ ব্লকের রাধাবল্লভচক গ্রামের নিজের বাড়িতেই গড়েছিলেন ‘রজনী
প্রেস’। পশ্চাতে রয়েছে এক রজনীতে ছাপাখানা তৈরির উপাখ্যানও।
তৎকালীন সময়ে প্রেস বা ছাপাখানার কাজ হত
মূলত তমলুকে। উল্লেখ্য, রাখালবাবু কলকাতায় কিছুদিন প্রেসের কর্মী হিসাবেও কাজ
করেছেন। তিনি একদিন একটি বিল-বই ছাপানোর প্রয়োজনে তমলুকের একটি প্রেসে গিয়েছিলেন। সেখানে
চারটাকা মূল্যের ছাপা-কাজের জন্য দশটাকা চেয়েছিল। রাখালবাবু প্রতিবাদ করায় তাঁকে
প্রচুর অপমান করা হয়। সেই অপমানের জবাব দিতেই সেই রাতেই বাড়িতে গড়েছিলেন হস্তচালিত
ছাপাখানা। এক রাতে বা এক রজনীতে তৈরি হওয়া প্রেসের নাম দিলেন ‘রজনী প্রেস’। স্বল্প
খরচে গুনমান সম্পন্ন ছাপার কাজ হওয়ায় প্রেসটির ব্যবসায়িক সাফল্য চূড়ান্ত ছিল।
উল্লেখ্য, যতদূর জানা যায়, ‘রজনী প্রেস’ হল ব্যবসায়িক ভিত্তিতে তৈরি পাঁশকুড়ার
প্রথম প্রেস। পরবর্তীকালে প্রেসটি হস্তান্তরিত হয়ে পারিবারিক অন্য সদস্যের হাত ধরে
পাঁশকুড়ার খিরিশতলায় স্থানান্তরিত হয়। সেই প্রেসের অস্তিত্ব আজ আর নেই।
ইতিপূর্বে পরাধীন ভারতে বিংশ শতকের
তিরিশ-চল্লিশের দশকে পাঁশকুড়ার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের দ্বারা এখানকার দু’টি গ্রামে
বুলেটিন ছাপার কাজ হত। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের প্রচার ও প্রসার করতে সংবাদ
বুলেটিন প্রকাশ অত্যন্ত গূরুত্বপূর্ণ ছিল। এক্ষেত্রে
পাঁশকুড়ার জোড়াপুকুর ছিল ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনকারীদের অন্যতম ঘাঁটি। জোড়াপুকুরে
শ্যামাদাস ভট্টাচার্যের বাড়িতে গোপনে সাইক্লোস্টাইল যন্ত্রে বুলেটিন ছাপা হত। পাঁশকুড়ার
বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী ইন্দুমতি ভট্টাচার্যের পুত্র কালিদাস ভট্টাচার্য জোড়াপুকুরের
বাড়িতে অনেক দিন বুলেটিন ছাপার কাজ করেছেন। পাঁশকুড়ার প্রত্যন্ত কালিদান গ্রামেও
সাইক্লোস্টাইলে বুলেটিন ছাপার কাজ হয়েছে। ব্রিটিশ পুলিশের চোখে ধূলো দিতে
সাইক্লোস্টাইল যন্ত্র এক বাড়িতে বেশিদিন রাখা হত না। এইসব গোপন কার্যকলাপের
বিরুদ্ধে ইন্দুমতি ভট্টাচার্যের বাড়িতে পুলিশি অভিযানও হয়েছে। ‘স্মৃতিকনা’য়
ইন্দুমতি দেবী তেমনই এক পুলিশি অভিযানের কথা লিখেছেন, ‘হঠাৎ দেখি অনেক লাল-পাগড়ি
পরা পুলিশভর্তি একটা মোটর গাড়ি রাস্তায় থামল। ... ... ...
(আরও জানতে উৎসাহী পাঠকেরা নিম্নলিখিত পুস্তকটি
অনুসরণ করতে পারেন। কেউ
কপি-পেস্ট করবেন না। ভালো লাগলে শেয়ার করতে পারেন।)
পুস্তকঃ
“পাঁশকুড়ার স্বাধীনতা আন্দোলন
ও রাজনৈতিক বিবর্তন”
লেখকঃ
© রূপেশ সামন্ত
প্রাপ্তিস্থান- দীপিকা বুক স্টল, পাঁশকুড়া স্টেশন।
For Online Booking, Whatsapp- 9153099507
No comments:
Post a Comment