বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট : ছাত্ররা দাবার ঘুঁটি মাত্র
আপাত ভাবে যেটি দৃশ্যত পরিস্ফুট, তা হল- ছাত্রদের বৈশম্য বিরোধী প্রবল কোটা আন্দোলনের ফলে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সেখ হাসিনা সরকারের পতন হয় এবং এই আন্দোলনে বহু প্রাণ চলে যায়। কিন্তু গভীর ভাবে বিশ্লেষণ করে দেখলে বোঝা যায়, বিষয়টিকে স্বাভাবিক জনরোষের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে দেখালেও আসলে বিষয়টি যে বিরাট রাজনৈতিক দাবা খেলার অংশ তা ধীরে ধীরে পরিস্কার হচ্ছে এবং ছাত্ররা কেবল সেই দাবার ঘুঁটি ছিল মাত্র।
দীর্ঘ ১৬ বছরের সেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে কিছু ক্ষেত্রে স্বাভাবিক প্রতিষ্ঠান বিরোধী মানসিকা জনমানসে তৈরি হয়েছিল, এটা অস্বীকার করা যায় না। বিভিন্ন ক্ষেত্রে হাসিনা সরকারের ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল না, একথাও বলা যায় না। তেমনি হাসিনা সরকার যে ১৬ বছরে একেবারেই ব্যর্থ ছিল, একথাও বলা যায় না। দেশের সাধারণ নাগরিকদের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট, পানীয় জল বিভিন্ন ক্ষেত্রে হাসিনা সরকারের উল্কেখ্যযোগ্য অবদান ছিল।
কিন্তু প্রশ্ন হল- বাংলাদেশে কেন এমন রাজনৈতিক সংকট তৈরি হল?
উত্তর খুঁজতে গেলে অনেক গুলি বিষয় সামনে চলে আসে। আর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল যে, এই রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে ছাত্র সমাজকে দাবার ঘুঁটি হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে ।
বৈশম্য বিরোধী আন্দোলন মোকাবিলায় শাসক দল হিসাবে আওয়ামী লীগও চরম ব্যর্থ ছিল। তা না হলে আন্দোলনের উৎস ও শক্তি সম্পর্কে আগাম অনুধাবন করতে আওয়ামী লীগ ব্যর্থ হল কেন? পালটা আন্দোলন গড়ে তোলা বা সরকারকে রক্ষা করতে রাজনৈতিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আওয়ামী লীগ পারল না কেন? এখানে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশল নির্মানের ব্যর্থতা, দলীয় কাঠামো ও নীতির অবক্ষয় ও নেতা-কর্মীদের অন্ত:সার শুন্যতা, নেতা-কর্মীদের বিচ্যুতিই প্রকট।
সরকারের প্রতি জনগণের প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা ও শাসক দলের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এতদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা প্রধান রাজনৈতিক দলগুলি, যেমন বি এন পি, জামাত ইত্যাদি সরকারকে বিপাকে ফেলতে সচেষ্ট হয়। ঠিক সেই সময়ই তাঁদের সামনে বৈশম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উর্বর ভুমিকে কাজে লাগানোর সুযোগ এসে যায়। সরকারকে বিপাকে ফেলার এই সুযোগকে কৌশলগত ভাবে কাজে লাগানো অন্যায় নয়।
কিন্তু আন্দোলনের একটা পর্যায়ে গিয়ে ছাত্ররা আর তাদের গন্ডী ধরে রাখতে পারেনি। বৈশম্য বিরোধী আন্দোলনের যে দাবী ছিল, তা সুপ্রিম কোর্টের রায় ও সরকারের মেনে নেওয়ার পর, ছাত্রদের আর নতুন করে আন্দোলনের জায়গা নেই। কিন্তু এরপর বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো তাদের উদ্দেশ্য সফল করতে ছাত্রদের ঢাল করে এবং সফল হয়। আসলে এই আন্দোলনে ছাত্রদের এক উদ্দেশ্য থাকলেও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর গোপন এজেন্ডা আলাদা ছিল। ছাত্ররা এই গোপন জায়গাটি ধরতে পারেনি অথবা তারাও গোপনে যুক্ত ছিল। যাইহোক, পরবর্তী কালে ছাছ্রদের ক্ষমতায় যোগদানের মধ্য দিয়ে গোপন যোগসাজশের বিষয়টিকেই পরিস্ফুট করে। ক্ষমতায় যোগদান করাটাও ছাত্রদের এক মহা ভুল, তা ভবিষ্যৎ বলবে। তবে সার্বিক ভাবে ক্ষমতার পরিবর্তন ও ক্ষমতার গ্রহনের মধ্য দিয়ে একটি বিষয় স্পষ্ট ভাবে বোঝা যায় যে, ছাত্রদের যে ব্যবহার করে রাজনৈতিক যে পটপরিবর্তন ঘটানো হয়েছে, তাতে ছাত্ররা যে কেবলই দাবার ঘুঁটি ছিল, তা ভবিষ্যৎ প্রমান করে দেবে।
© রূপেশ সামন্ত
No comments:
Post a Comment