Popular Posts

Sunday, 17 November 2024

পাঁশকুড়ার অপরূপা এক নদী বাকসী

© রূপেশ কুমার সামন্ত
সুজলা সুফলা পাঁশকুড়ার পশ্চিমে মায়াবী আঁচলে বয়ে চলা এক নদী হল বাকসী। অনেকে একে খালও বলে থাকে। দিগন্ত বিস্তৃত মাঠের জলরাশিতে পুষ্ট হওয়া অপরূপা এই নদী অবিরাম প্রবহমান। পাঁশকুড়ার গ্রামগঞ্জ, মানুষের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে মিশে আছে এই নদী। এই নদীর কতিপয় স্বকীয়তা আছে। নিরন্তর বয়ে চলাই তার বৈশিষ্ট্য। এই নদীতে খেলে জোয়ার-ভাটা। কখনো উজানে স্রোত, কখনো ভাটিতে। মাঝে মাঝে দুই তীরকে ভাসিয়ে জল ও পলি দিয়ে সজীব ও উর্বর করে তুলে। নদীর ওপর দিয়ে চলে নৌকা, ডোঙা, ভেলা। নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে হাটবাজার, গ্রাম-গঞ্জ। বক, মাছরাঙা খেলা করে এই নদীর জলে। পানকৌড়িরা নদীর বুকে ডুব দিয়ে মাছ শিকার করে। জেলেরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। আবার কখনো কখনো রুদ্ররূপ ধারণ করে গ্রাস করে নেয় গ্রামজনপদ, ঘরবাড়ি ও ফসলের জমি। বর্ষায় এই নদী যেমন ভয়ংকরী, আবার শীতে হাঁটুজলে সেই নদীই সুন্দরী। তখন বিস্তৃত উপত্যকা জুড়ে শুধুই বাহারী ফুল আর সব্জী। এই নদী নিয়ে কত গল্প, উপন্যাস, কবিতা, গান স্থান পায় বইয়ের পাতায়। লাজুক পল্লিবধূর মতা ছন্দ তুলে এঁকেবেঁকে চলা সেই নদীই হল বাকসী।

উৎস সন্ধানে
ডেবরা ব্লকের দক্ষিন হীজলদা গ্রামে মেদিনীপুর ক্যানেল থেকে বাকসী নদীর সৃষ্টি। মেদিনীপুর ক্যানেলে বাকসী নদীর সৃষ্টি মুখে রয়েছে লকগেট বা পুল। এটিকে ‘ঝাঁপার পুল’ বলে। বৃটিশ আমলে লকগেট বা পুলটি এমন ভাবে তৈরি, যাতে বর্ষাকালে মেদিনীপুর ক্যানেলের অতিরিক্ত জল ঝাঁপিয়ে বাকসী নদীতে ঢোকে। তাই এই লকগেটটির ‘ঝাঁপার পুল’ নামে পরিচিত।

প্রবাহ পথ
মেদিনীপুর ক্যানেলের ‘ঝাঁপার পুলে’র কাছে বাকসী খাল সৃষ্টি হয়ে ডেবরা ব্লকের দক্ষিন হীজলদা গ্রামকে পশ্চিম দিকে রেখে ও পাঁশকুড়া ব্লকের ঘোষপুর গ্রামকে পূর্ব দিকে রেখে দক্ষিন দিকে প্রবাহিত হয়েছে। এরপর সুন্দরপুরের রেলপুল পেরিয়ে হাউর গ্রাম পঞ্চায়েতের হাউর গ্রাম, হরশঙ্কর গ্রামের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কালিদান গ্রামে এসে বাকসী নন্দী পূর্বদিকে বেঁকে প্রবাহিত হয়েছে। খালটি পূর্বদিকে রাধাবনেরর কছে ক্ষীরাই নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। নদীর পরবর্তী অংশ ক্ষীরাই-বাকসি নাম নিয়ে দক্ষিন-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে কংসাবতী নদীতে মিশেছে। উল্লেখ্য, কালিদান গ্রামে বাকসি খালের একটি শাখা পাটচাঁদা খাল নামে সৃষ্টি হয়ে পিংলার গোবর্ধনপুর হয়ে দক্ষিন দিকে প্রবাহিত হয়ে চণ্ডিয়া নদীতে মিশেছে।

প্রকটতা
বাকসী নদী মূলত বর্ষায় মাঠের জল ও মেদিনীপুর ক্যানেলের অতিরিক্র জলে পুষ্ট। বর্ষাকালে কালিদান গ্রাম থেকেই বাকসী খালের ভয়ংকর রূপ প্রকট হয়। একই ভাবে এতদঞ্চলে অর্থনীতিতেও এই নদীর প্রভাব অত্যন্ত প্রকট।

No comments:

Post a Comment