ধর্মমঙ্গল কাব্যের কিংবদন্তী লাউসেনের ময়নাগড়ের বাঁশঝাড়ের দুর্ভেদ্য প্রাকৃতিক প্রাচীর

 ময়নাগড়ের বাঁশঝাড়ের দুর্ভেদ্য প্রাকৃতিক প্রাচীর 

রূপেশ কুমার সামন্ত

আনুমানিক দশঅম শতাব্দীর ধর্মঙ্গল মহাকাব্যের লাউসেনের কিংবদন্তী রাজধানী হল ময়নাগড়। গৌড়েশ্বর ধর্মপালের রাজত্বকালে কর্ণসেন তাঁর অধীনে রাজত্ব করতেন। ইছাই ঘোষের সঙ্গে যুদ্ধে কর্ণসেন তাঁর ছয় পুত্রকে হারান। তাঁর স্ত্রী বিষপানে দেহত্যাগ করেন। তখন গৌড়েশ্বর ধর্মপাল নিজের শ্যালিকা রঞ্জাবতীর সঙ্গে কর্ণসেনের বিয়ে দেন। কর্ণসেনকে দক্ষিণবঙ্গের একটি বিশেষ অঞ্চল দান করেন। এটি কর্ণগড় নামে খ্যাত। এই কর্ণগড়ই পরে ময়নাগড় নামে প্রসিদ্ধ হয়। এই রঞ্জাবতীর ছেলে ছিল লাউসেন। এই লাউসেনের কিংবদন্তী রাজধানী হল ময়নাগড়। পরবর্তী কালে  বাহুবলীন্দ্র রাজারা বালিসীতাগড় থেকে নিজেদের রাজধানী ময়নাগড়ে স্থানান্তরিত করেন। কালিদহ ও মাকড়দহ নামে দুটি পরীখা দিয়ে ঘেরা এই ছোট্ট দ্বীপ ময়নাগড়। দ্বীপটি ছিল দুর্ভেদ্য দুর্গ। চারিদিকে ঘেরা ছিল কাঁটাবাঁশ ঝাড়ের দুর্ভেদ্য প্রাকৃতিক প্রাচীর।

রাজা গোবর্ধনানন্দ ময়নাগড় অধিকার করে সংস্কারের কাজ করেন। তিনি পুরাতন গড় ভেঙে নতুন ও প্রসস্থ গড় নির্মান করেন। গড়ের চারিদিকে পরীখার পার্শে পার্বত্য বাঁশের ঝাড় ঝাড় তৈরি করে দুর্ভেদ্য এক প্রাকৃতিক প্রাচীর তৈরি করেন। এই পার্বত্য বাঁশের ঝাড় এমন ভাবে পরস্পর সংলগ্ন ও জড়িয়ে থাকত যে তা এক নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় তৈরী করত। এই প্রাচীর ভেদ করে লৌহ নির্মিত তীর বা কামানের গোলাও যেতে পারত না। শত্রুপক্ষের অশ্বারোহী সৈনিকও এই প্রাচীর ভেদ করে ঢুকতে পারত না। ১৩৩৯ সালের ভয়ংকর ঝড়ে এই বাঁশঝাড়ের প্রাচীরের প্রভূত ক্ষতিসাধন হয়। বর্তমানে এই বাঁশঝাড়ের বিচ্ছিন্ন কিছু অস্তিত্ব রয়েছে।

তথ্যসূত্র

কিল্লা ময়নাচৌরা, ড. কৌশিক বাহুবলীন্দ্র

Comments

Popular posts from this blog

Essay [রচনা]- মাহে রমযান

250 YEARS OLD BEGUNBARI KALI PUJA, PANSKURA, WB, INDIA

----- HISTORY OF PANSKURA [WB, INDIA] [PART-1] -----