Popular Posts

Wednesday, 27 November 2024

ধর্মমঙ্গল কাব্যের কিংবদন্তী লাউসেনের ময়নাগড়ের দুর্ভেদ্য পরীখা

 ময়নাগড়ের দুর্ভেদ্য পরীখা

রূপেশ কুমার সামন্ত

আনুমানিক দশম শতাব্দীর ধর্মঙ্গল মহাকাব্যের লাউসেনের কিংবদন্তী রাজধানী হল ময়নাগড়। গৌড়েশ্বর ধর্মপালের রাজত্বকালে কর্ণসেন তাঁর অধীনে রাজত্ব করতেন। ইছাই ঘোষের সঙ্গে যুদ্ধে কর্ণসেন তাঁর ছয় পুত্রকে হারান। তাঁর স্ত্রী বিষপানে দেহত্যাগ করেন। তখন গৌড়েশ্বর ধর্মপাল নিজের শ্যালিকা রঞ্জাবতীর সঙ্গে কর্ণসেনের বিয়ে দেন। কর্ণসেনকে দক্ষিণবঙ্গের একটি বিশেষ অঞ্চল দান করেন। এটি কর্ণগড় নামে খ্যাত। এই কর্ণগড়ই পরে ময়নাগড় নামে প্রসিদ্ধ হয়। এই রঞ্জাবতীর ছেলে ছিল লাউসেন। এই লাউসেনের কিংবদন্তী রাজধানী হল ময়নাগড়। পরবর্তী কালে  বাহুবলীন্দ্র রাজারা বালিসীতাগড় থেকে নিজেদের রাজধানী ময়নাগড়ে স্থানান্তরিত করেন। কালিদহ ও মাকড়দহ নামে দুটি পরীখা দিয়ে ঘেরা এই ছোট্ট দ্বীপ ময়নাগড়। দ্বীপটি ছিল দুর্ভেদ্য দুর্গ। চারিদিকে ঘেরা ছিল পার্বত্য গুলিবাঁশের ঝাড়ের দুর্ভেদ্য প্রাকৃতিক প্রাচীর।

মঞ্জুশ্রী বাহুবলীন্দ্রের 'চিকের আড়ালে' প্রবন্ধ থেকে জানা যায়, পূর্বে পরীখা দুটি কচুরীপানা ও পদ্মতে পরিপূর্ণ ছিল। কচুরিপানা এত ঘন ছিল যে তার উপর দিয়ে মানুষ বা জন্তু জানোয়ারের চলাফেরা করতে অসুবিধে হত না। পদ্মের ডাটায় জড়িয়ে থাকত সর্পকুল। আর দুই পরীখার মাঝের ঘন জঙ্গলে বিচরণ করত হরিণ, ময়ূর, ছোট বাঘ, বিষধর সাপ।  জলে ভেসে বেড়াত কুমির। একবার জনৈকা দাসী শীতকালে কাজের অবসরে চুল মেলে কালিদহের ধারে ঘুমিয়ে পড়লে সেই অসতর্ক মুহুর্তে কুমির তাকে গভীর জলে টেনে নিয়ে যায়।  গড়ে বসবাসরত প্রতিটি পরিবার এর নিজস্ব নৌকা রাখা ও নৌকা চালানো শেখা বাধ্যতামূলক। 

তথ্যসূত্র

কিল্লা ময়নাচৌরা

সম্পাদনা ড. কৌশিক বাহুবলীন্দ্র

No comments:

Post a Comment