Popular Posts

Sunday, 9 September 2018

মজার গল্প- 'নারান' বিভ্রাট

-----‘নারান’ বিভ্রাট-----@ Rupesh
[একটি মজার ছোট গল্প]

‘নারান চৌধুরির বাড়ি কোনটা?’ গ্রামে ঢুকেই পিয়ন বাবু চিঠি হাতে খোঁজ শুরু করলেন। নারায়ণ চৌধুরীর নামে চাকরির ইন্টারভিউ এর চিঠি এসেছে। গ্রামে ঢুকলেই প্রথম বাড়িটাই নারায়ণ চৌধুরীর। চিঠিটা নিলেন তিনি। যথারীতি ইন্টারভিউও দিতে গেলেন।
গন্ডগোলটা বাঁধলো তখনই, যখনই জানা গেল এই নারায়ন চৌধুরী আসল চাকরী প্রার্থী নয়। ততক্ষণে বড্ড দেরী হয়ে গেছে। আসল চাকুরী প্রার্থী ইন্টারভিউ এর সুযোগটাই হারালো।
আসলে গণ্ডগোলের নেপথ্যে রয়েছে নাম বিভ্রাট। গ্রামের নাম নারান পুর। সেই গ্রামের অধিকাংশ মানুষের নামই নারান। ‘নারায়ণ’ নামের কথ্যরূপ ‘নারান’ শব্দটিই প্রচলিত। সবাই নারায়নকে ‘নারাণ’ বলেই ডাকে। ঐ গ্রামে শিশুর জন্মের পর প্রত্যেকে নারায়ণ দেবতার নামেই শিশুর নামকরণ করেন। প্রথম প্রথম একই নাম রাখা নিয়ে প্রতিবেশিদের মধ্যে ঝগড়াও হোত। কিন্তু দেবতা নারায়ণ তো কারও একার নয়! তিনি পুরুষ শ্রেষ্ঠ ‘পুরুষোত্তম’। ফলে তাঁর ভক্ত সংখ্যাও প্রচুর। তাঁর নামে অধিকাংশ মানুষ নাম রাখবেন এটাই স্বাভাবিক।
নামের বিভ্রাট চলতেই থাকলো। পুলিশ অপরাধী ধরতে এসে নাম বিভ্রাটে কাঙ্খিত নারানকে ধরতে হিমশিম! বিয়ের বরযাত্রী নাম বিভ্রাটে কাঙ্খিত নারানের পরিবর্তে অন্য নারানের বাড়িতে আতিথ্য গ্রহন করে চলে যায়! আরও কতো সমস্যা! বলে শেষ হবে না।
‘নামের আমি, নামের তুমি, নাম দিয়ে যায় চেনা’। আর এখানে নামটাই প্রায় সকলের একই। আবার যিনি ‘দেবতা নারায়ণ’, তিনিই ‘দেবতা হরি’। ফলে যেখানে বাবার নাম আগে থেকেই হরি আছে, সেখানে ছেলের নাম নারায়ণ  হওয়াটাই স্বাভাবিক। 'হরি' বা 'নারায়ণ' নামের মধ্য দিয়ে সকলেই নারায়ণ দেবতাকে আঁকড়ে ধরতে চায়। ফলে একই নামের বাবা এবং একই নামে ছেলের সংখ্যাটা বেড়েই চলেছে।
তাহলে কি হবে? সবাই হাজির হল গ্রামের মোড়লের কাছে। তারও নাম আবার নারাণ। তিনি গ্রামের নারায়ণ মন্দির প্রাঙ্গনে সভা ডাকলেন।
সভায় গ্রামের মানুষ হাজির। কিভাবে নাম বিভ্রাট থেকে বাঁচা যায়, সেই আলোচনা শুরু হল। কেউ বলল নারায়ণ নাম আর রাখা যাবে না। কেউ বলল নারায়ণ নাম পালটে ফেলতে হবে। সভায় প্রবল বাক-বিতণ্ডা শুরু হয়ে গেল। কেউই নারায়ণ নামের স্বত্ব ছাড়তে চায় না।
মোড়লের দাপট প্রচুর। সবাইকে চুপ করিয়ে দিয়ে মোড়ল একটা প্রস্তাব উত্থাপন করলেন। তিনি বললেন, ‘নারাণ নামটির সাথে প্রত্যেকের পেশা, শারিরীক গঠন ইত্যাদি জুড়ে দেওয়া হোক। তাতে আর নাম বিভ্রাট থাকবে না’। এই প্রস্তাবে সবাই রাজী হয়ে গেল।
এবার একেক নারাণকে ধরে নামকরণ শুরু হল। প্রথম যে নারাণকে ধরা হল, তিনি পেশায় কাঠ মিস্ত্রী। তাই তার নাম হল, ‘কেঠো নারাণ’। এরপর যিনি, তিনি পেশায় ছুতোর মিস্ত্রী। তার নাম স্থির হল, ‘ছুতোর নারাণ’। একজন ছিলেন বেঁটে, তার নাম স্থির হল, ‘গেঁঠে নারাণ’। এই ভাবে লম্বা হওয়ায় ‘লম্বু নারাণ’, গায়ের রঙ কালো হওয়ায় ‘কেলো নারাণ’, গায়ের রঙ ফর্সা হওয়ায় ‘ফর্সা নারাণ’, পিঠে কুঁজ থাকায় ‘কুঁজো নারাণ’, একটি পা খোঁড়া হওয়ায় ‘খোঁড়া নারাণ’, কানে শুনতে পায়না বলে ‘কালা নারাণ’, একচোখ অন্ধ বলে ‘কানা নারাণ’, পেশায় কামার বলে ‘কামার নারাণ’, মুদিখানা দোকান আছে বলে ‘মুদি নারাণ’।
কিন্তু গণ্ডগোল দেখা দিল এক ভবঘুরে মাতালকে নিয়ে। প্রস্তাব এলো, ওর নাম রাখা হোক ‘ভবঘুরে নারাণ’। কিন্তু মোড়ল বাবু বললেন, ‘না, ও সারাদিন মদ খেয়ে ঘুরে বেড়ায়। ওর নাম রাখা হোক ‘মাতাল নারাণ’।’ ভবঘুরে মাতালের কোন প্রতিবাদই শোনা হল না। তার নাম স্থির হয়ে গেল, ‘মাতাল নারাণ’। এরকম আরও অনেক নাম স্থির হল। বলে শেষ হবে না।
এবার শেষে সবাই চিন্তায় পড়লো, মোড়লের নাম কি হবে। তারও নাম তো নারাণ। এমন সময় ‘মাতাল নারাণ’ গর্জে উঠল। তিনি বললেন, ‘মোড়ল বাবুর দুধের ব্যবসা। প্রচুর গরু বাড়িতে রয়েছে। তাই ওনার নাম হোক, ‘গরু নারাণ’।’ গোটা বিচার সভাটাই স্তব্ধ হয়ে গেল। সবাই এর মুখ নিচু হয়ে গেল। কারও মুখে কোন কথা নেই। শুধু মোড়লের রাগে লাল হয়ে যাওয়া মুখটা দেখা যাচ্ছিল।
@ রূপেশ সামন্ত/ ০৮.০৯.২০১৮/ ছবি- নিজস্ব
বি.দ্র.- লেখাটির কপিরাইট লেখক কতৃক সম্পূর্ণ রূপে সংরক্ষিত। গল্পের স্থান, কাল, চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক। কোন নাম, বিষয়বস্তু, পেশা বা ধর্ম বিষয়ে আঘাত করা লেখকের মোটেই উদ্দেশ্য নয়। কোথাও কোন মিল থাকলে, তা নেহাতই কাকতালীয়। কাউকে দুঃখ দেওয়া মোটেই উদ্দেশ্য নয়। সেক্ষেত্রে আমি ক্ষমা প্রার্থী। এটি একটি মজার গল্প মাত্র। সাধারণ একটি গল্পের দৃষ্টিতেই গল্পটিকে দেখবেন।

1 comment:

  1. গল্পটা অন্য ভাবে ও শেষ করা যেতে পারত

    ReplyDelete