অন্য চোখে পুরি------
---------------পুরির বাঁশি
লেখক- রূপেশ কুমার সামন্ত
রাত তখন দশ’টা। ঢেউ গুলো আছড়ে পড়ছিল পায়ের কাছে। ঢেউয়ের সুরে সুর বাঁধছিল নস্ট্যালজিয়া। হঠাৎ এলোমেলো করে দিল হ্যামলিনের বাঁশি। সী-বিচের থিকথিকে ভীড়টা তখন আর নেই। চাঁদের প্রতিবিম্বের আলো-ছায়ায় স্পষ্ট দেখা যচ্ছিল বাঁশিওয়ালাকে। বাঁশির সেই সুরকে পিছু ধাওয়া না করে উপায় কি- ‘তোমার সুরে সুর বেধেছি…’!
-‘তোমার বাঁশির সুরখানা বেশ! একটা ভিডিও করব?’ বলেই ফেললাম।
-‘না, ভিডিও অডিও কোনটাই হবে না’। সটান বলে দিল বাঁশিওয়ালা।
অগত্যা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে কানে শুনেই মন ভরানো ছাড়া উপায় রইলো না।
পরদিন সন্ধ্যায় আবার ধাওয়া। কোথাও দেখা মিলল না সেই বাঁশিওয়ালার। মিলল এক অন্য বাঁশিওয়ালার। তাঁকেও আবদারটা করেই ফেললাম, ‘একটা ভিডিও করব?’
-‘না, ভিডিও অডিও কোনটাই হবে না। এটাই আমাদের রীতি’।
কারণ জিজ্ঞাসা করার ফুরসত ছিল না। ব্যবসায়িক তাগিদে সেই বাঁশিওয়ালা ততক্ষণে স্থান ত্যাগ করেছে। [লেখক- রূপেশ কুমার সামন্ত]
এবার পা বাড়ালাম জগন্নাথ মন্দিরের দিকে। সেখানেই দেখা মিলল সেই প্রথম বাঁশিওয়ালার সাথে।
-‘ভাই তোমার নাম কি?’ বন্ধুত্ব লাভের বাসনায় জিজ্ঞাসই করলাম।
-‘বিকাশ রাজ’, উত্তর দিল বাঁশিওয়ালা।
ব্যাস! কথায় কথায় জমে উঠল বন্ধুত্ব। বিকাশের আদি বাড়ি ছিল বিহার। কিন্তু সে কোনদিনই যায়নি সেখানে বা জানেও না বিহার কোন দিকে! তার কোন এক পূর্বপুরুষ পূন্য লাভের আশায় এসেছিল জগন্নাথ ধামে। আর ফেরা হয়নি। ঠাঁই নিয়েছে এই পূন্য ভূমিতে। সেই আদি পুরুষ থেকেই তারা রুটি-রুজির ভরসা করেছে শ্রীকৃষ্ণের মাহাত্ম্য মাখা পুরির শ্রীকৃষ্ণের বাঁশিকেই। সংস্কার বশতই তারা তাদের শিল্পী-স্বত্বাকে ক্যামেরা বন্দী করতে দেয় না।
-‘তুমি পড়াশোনা কর?’ এবার জিজ্ঞাসা করলাম।
-‘হ্যাঁ, স্কুলে যাই। বাবা অসুস্থ। বেরোতে পারে না। আমি বিকেল থেকে বাঁশি বিক্রী করি। লাভের ষাট-সত্তর টাকা বাবার হাতে তুলে দিই। নিজের কাছে কুড়ি টাকা রাখি। সেই টাকাতেই পড়াশোনা করি। পড়ার চাপ থাকলে বেরোতে পারি না’। বিকাশ একটানে কথা গুলো বলে গেল।
পরিশেষে, নিজে থেকেই রাজী হয়ে গেল ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে।
পুরি থেকে ফেরার দিন সন্ধ্যায় সী-বিচে ক্ষণিকের দেখা। জিজ্ঞাসা করলাম, ‘বিকাশ, কেমন আছো?’
-বিকাশ উদাস ভাবে তাকিয়ে বলল, ‘ভালো অছি!’
লেখক- রূপেশ কুমার সামন্ত/ ২৬.১০.১৮ [Copyright Reserved by the Author]
---------------পুরির বাঁশি
লেখক- রূপেশ কুমার সামন্ত
রাত তখন দশ’টা। ঢেউ গুলো আছড়ে পড়ছিল পায়ের কাছে। ঢেউয়ের সুরে সুর বাঁধছিল নস্ট্যালজিয়া। হঠাৎ এলোমেলো করে দিল হ্যামলিনের বাঁশি। সী-বিচের থিকথিকে ভীড়টা তখন আর নেই। চাঁদের প্রতিবিম্বের আলো-ছায়ায় স্পষ্ট দেখা যচ্ছিল বাঁশিওয়ালাকে। বাঁশির সেই সুরকে পিছু ধাওয়া না করে উপায় কি- ‘তোমার সুরে সুর বেধেছি…’!
-‘তোমার বাঁশির সুরখানা বেশ! একটা ভিডিও করব?’ বলেই ফেললাম।
-‘না, ভিডিও অডিও কোনটাই হবে না’। সটান বলে দিল বাঁশিওয়ালা।
অগত্যা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে কানে শুনেই মন ভরানো ছাড়া উপায় রইলো না।
পরদিন সন্ধ্যায় আবার ধাওয়া। কোথাও দেখা মিলল না সেই বাঁশিওয়ালার। মিলল এক অন্য বাঁশিওয়ালার। তাঁকেও আবদারটা করেই ফেললাম, ‘একটা ভিডিও করব?’
-‘না, ভিডিও অডিও কোনটাই হবে না। এটাই আমাদের রীতি’।
কারণ জিজ্ঞাসা করার ফুরসত ছিল না। ব্যবসায়িক তাগিদে সেই বাঁশিওয়ালা ততক্ষণে স্থান ত্যাগ করেছে। [লেখক- রূপেশ কুমার সামন্ত]
এবার পা বাড়ালাম জগন্নাথ মন্দিরের দিকে। সেখানেই দেখা মিলল সেই প্রথম বাঁশিওয়ালার সাথে।
-‘ভাই তোমার নাম কি?’ বন্ধুত্ব লাভের বাসনায় জিজ্ঞাসই করলাম।
-‘বিকাশ রাজ’, উত্তর দিল বাঁশিওয়ালা।
ব্যাস! কথায় কথায় জমে উঠল বন্ধুত্ব। বিকাশের আদি বাড়ি ছিল বিহার। কিন্তু সে কোনদিনই যায়নি সেখানে বা জানেও না বিহার কোন দিকে! তার কোন এক পূর্বপুরুষ পূন্য লাভের আশায় এসেছিল জগন্নাথ ধামে। আর ফেরা হয়নি। ঠাঁই নিয়েছে এই পূন্য ভূমিতে। সেই আদি পুরুষ থেকেই তারা রুটি-রুজির ভরসা করেছে শ্রীকৃষ্ণের মাহাত্ম্য মাখা পুরির শ্রীকৃষ্ণের বাঁশিকেই। সংস্কার বশতই তারা তাদের শিল্পী-স্বত্বাকে ক্যামেরা বন্দী করতে দেয় না।
-‘তুমি পড়াশোনা কর?’ এবার জিজ্ঞাসা করলাম।
-‘হ্যাঁ, স্কুলে যাই। বাবা অসুস্থ। বেরোতে পারে না। আমি বিকেল থেকে বাঁশি বিক্রী করি। লাভের ষাট-সত্তর টাকা বাবার হাতে তুলে দিই। নিজের কাছে কুড়ি টাকা রাখি। সেই টাকাতেই পড়াশোনা করি। পড়ার চাপ থাকলে বেরোতে পারি না’। বিকাশ একটানে কথা গুলো বলে গেল।
পরিশেষে, নিজে থেকেই রাজী হয়ে গেল ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে।
পুরি থেকে ফেরার দিন সন্ধ্যায় সী-বিচে ক্ষণিকের দেখা। জিজ্ঞাসা করলাম, ‘বিকাশ, কেমন আছো?’
-বিকাশ উদাস ভাবে তাকিয়ে বলল, ‘ভালো অছি!’
লেখক- রূপেশ কুমার সামন্ত/ ২৬.১০.১৮ [Copyright Reserved by the Author]
No comments:
Post a Comment