Sunday, 27 October 2019

পঞ্চমুণ্ডির আসনের সামনে পূজিতা হন আলুগ্রামের ৩০০ বছরের প্রাচীন কালী



পঞ্চমুণ্ডির আসনের সামনে পূজিতা হন আলুগ্রামের ৩০০ বছরের প্রাচীন কালী
-রূপেশ কুমার সামন্ত, শিক্ষক

     ‘এক ব্যক্তির হাতে পায়ে লোহার শিকল দিয়ে বেড়ি পরানো। বীভৎস তার রূপ। তার হিংস্র আচরণে মানুষ সন্ত্রস্ত। তাকে এনে রাখা হল কালী মায়ের সামনে। ব্রাহ্মণ পরিয়ে দিলেন মন্ত্রপুত বালা। ধীরে শান্ত হয়ে গেল সেই উন্মাদ।’ এই কথাগুলি বলছিলেন উষৎপুর সৌদামিনী বিদ্যামন্দিরের (উ.মা.) শিক্ষক ও পাঁশকুড়ার হাউর গ্রাম পঞ্চায়েতের আলুগ্রামের বাসিন্দা অতনু ব্যানার্জী। তিনি আরও বলছিলেন, ‘আমাদেরকেও অবাক করে এই অলৌকিক ঘটনা। অসংখ্য পাগলকে এই দেবালয়ে নিজের চোখেই সুস্থ হতে দেখেছি’। মনস্কামনা নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এখানে জড়ো হয়। তাঁদের এই বিপুল সমাগমই এলাকাবাসীদের বিশ্বাসের বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করে। পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উড়িষ্যা সহ বিভিন্ন রাজ্যের ভক্তবৃন্দ প্রতি শনি ও মঙ্গলবার পূজার ডালি নিয়ে হাজির হন পাঁশকুড়ার আলুগ্রামের এই শ্মশানকালী মন্দিরে।

ইতিহাসের পথ ধরে
     সে প্রায় ৩০০ বছর আগের কথা। আলুগ্রামের এই এলাকাটি ছিল জল-জঙ্গলে পূর্ণ। বর্তমান দেবালয়ের স্থানেই ছিল ব্রাহ্মণদের শ্মশান। তৎকালীন সময়ে অজানা জ্বরে বহু মানুষের মৃত্যু হতে থাকলো। মৃত্যুর জেরে গ্রাম প্রায় উজাড় হয়ে গেল। আলুগ্রামের বাসিন্দা তথা কুমরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক অরুন ব্যানার্জী জানালেন, ‘তৎকালীন সময়ে রোগের কারনে গ্রাম প্রায় মানুষ শুন্য হয়ে গিয়েছিল। বর্তমানে এই গ্রামের বেশির ভাগ বাসিন্দাই বাইরে থেকে আগত, এখানকার আদি বাসিন্দা নয়।’ এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য গ্রামের সন্ধ্যা রানী ভট্টাচার্যের পূর্বপুরুষরা উপায় খুঁজছিলেন। এমন সময় গ্রামে হাজির হলেন এক কাপালিক। তিনি তাঁর সাধনার জন্য একটি ব্রাহ্মণ শ্মশানের খোঁজ করছিলেন। মানুষের রোগ মুক্তির জন্য তাঁকে এই ব্রাহ্মণ শ্মশানে সাধনা করতে অনুমতি দান করা হল। তিনিই এই শ্মশানে শুরু করলেন শ্মশান কালীর পূজা। তার পর থেকেই গোটা গ্রাম নাকি রোগ মুক্ত হয়েছিল। সেই থেকেই এই গ্রামে আজও চলছে এই শ্মশান কালীর পূজা।

পঞ্চমুণ্ডির আসন
     দেবী মূর্তির সামনে রয়েছে পঞ্চমুণ্ডির আসন। সেই কাপালিক সাধনার জন্য শ্মশানের উপর বটবৃক্ষ তলে নির্মান করেছিলেন এই পঞ্চমুণ্ডির আসন। সেই বটবৃক্ষ আজও রয়েছে। এই পঞ্চমুণ্ডি আসনের নিচে রয়েছে পাঁচটি জীবের মুণ্ড বা মাথা। সবই স্ত্রী প্রজাতির। একটি নিচু সম্প্রদায়ের আত্মঘাতী মহিলার মাথা, একটি ‘কালনাগিনী’ সাপের মাথা, দু’টো স্ত্রী পেঁচার মাথা, একটি স্ত্রী শেয়ালের মাথা দিয়ে নির্মিত এই পঞ্চমুণ্ডির আসন। এই আসনে বসেই নাকি সেই কাপালিক মোক্ষলাভ করেছিলেন। প্রথা অনুসারে আজও এই আসনে বসে ব্রাহ্মণ পূজা করেন। এখানে প্রতিবছর প্রায় ৭০ থেকে ৮০টি ছাগল বলি দেওয়া হয়।

মেলা ও অনুষ্ঠান
     পূজা উপলক্ষ্যে প্রচুর মানুষের সমাগম হয়। মেলা বসে। মেলায় প্রয়োজনীয় দ্রব্য ছাড়াও নানান মুখরোচক খাবার বিক্রী হয়। নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পূজার পরের দিনও মেলা-অনুষ্ঠান চলে। বিশেষ আকর্ষণের বিষয় হল- মন্দিরের সামনে রয়েছে প্রায় ৩০ফুট উচ্চতার এক সুউচ্চ শিবের পূর্ণাবয়ব মূর্তি।

পরিচালনা
     পূজাটি গ্রামীন হলেও একটি কমিটি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। প্রধান উপদেষ্টা হলেন মৃণাল ব্যানর্জী। কমিটিতে রয়েছেন অরুন ব্যানার্জী, হরেকৃষ্ণ জানা, বীরেন গাঁতাইত, বিশ্বজীৎমান্না, কালিপদ নায়েক, বানেশ্বর সামন্ত, রামকৃষ্ণ দাস, নারায়ন জানা ও নিমাই সামন্ত।

পথনির্দেশ
     দক্ষিন-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর শাখায় হাউর ষ্টেশনে নামতে হবে। হাউর ষ্টেশন থেকে দক্ষিনপূর্ব দিকে ২.৫ কি.মি. রাস্তা। যানবাহন হিসাবে টোটো রয়েছে।

বিস্তারিত- এখানে লেখা ও বিবিরণ সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। আলুগ্রামের এই শ্মশানকালী সম্পর্কিত বিস্তারিত বিবরণ পাবেন আগামী ১লা নভেম্বর পাঁশকুড়া থেকে প্রকাশিত ‘সংবাদ আশার দিশারী’ পত্রিকায়।

Monday, 14 October 2019

Nobel in Economics

অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন বাঙালি অর্থনীবিদ অভিজিৎ বন্দোপাধ্যায়। পৃথিবীর দারিদ্র দূরীকরণেরউপর গবেষণা করার জন্য এই নোবেল পুরস্কার। আজ বাঙালি হিসাবে গর্বিত হওয়ার দিন।      

Wednesday, 9 October 2019

ছাত্র সাথী অ্যাপস - Students Companion Apps

 ছাত্র সাথী
ছাত্র ছাত্রীদের দারুন উপযোগী একটি এপ। মক টেস্টদিন, পড়াশোনা করুন, ম্যাগাজিন দেখুন।https://play.google.com/store/apps/details?id=io.kodular.hemanta_ruidas_2019.StudentCompanion 

Tuesday, 8 October 2019

পাঁশকুড়ার তৃণমূল নেতা কুরবান শা'কে গুলি করে হত্যা - Shoot out at Panskura

তৃণমূল নেতা কুরবান শা'কে গুলি করে হত্যা
পাঁশকুড়া, অক্টোবর ৮ঃ পাঁশকুড়ার মাইশোরায় নিজের অফিসেই গুলি করে হত্যা করা হল তৃনমুল কংগ্রেসের প্রভাবশালী নেতা তথা পাঁশকুড়া ব্লকের সহ সভাপতি কোরবান শাহকে। বয়স মাত্র ৩১ বছর। স্থানীয় সূত্রে খবর গতকাল রাত ১০ টা নাগাদ মাইশোরা বাজারে তৃনমুলকংগ্রেস পার্টি অফিসে বসেছিলেন পাঁশকুড়ার তরুন নেতা কুরবান শা। অফিসে তিনি ছাড়াও দলের তিনজন কর্মী ছিল বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। স্থানীয় মানুষের দাবী, তিনিটি বাইকে সাতজন দুষ্কৃতী এসেছিল। দূরে আরও কিছু বাইক দাঁড়িয়ে ছিল বলে জানা যায়। কুরবানের অফিসের সামনে বাইক দাঁড় করিয়ে ঢুকে যায় কুরবানের অফিসে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুষ্কৃতীরা কুরবানকে লক্ষ করে ৬ রাউন্ড গুলি চালায় বলে অভিযোগ। নিজের অফিসেই মৃত্যুর কোলে লুটিয়ে পড়েন কুরবান। শ্যুট আউট করে দুষ্কৃতীরা বাইক নিয়ে পাঁশকুড়ার দিকে চলে যায়। ঘটনাস্থলে বহু মানুষের ভীড় জমে যায়। বিক্ষোভ শুরু হয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পাঁশকুড়া থানার পুলিশ। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত দু'জন গ্রেপ্তার হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। গোটা পাঁশকুড়া জুড়ে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। -RS

Monday, 7 October 2019

মূল রামায়ণে দুর্গাপূজার অস্তিত্বই নেই - Ramayan Akalbodhan Durga

--মূল রামায়ণে দুর্গা পূজার অস্তিত্বই নেই-----
লেখক- রূপেশ সামন্ত

রামায়নের রচয়িতা ছিলেন বাল্মিকী। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় সেই মূল রামায়নে অকালবোধন বা শারদীয়া দুর্গা পূজার কোন উল্লেখই নেই। কিন্তু কালিকা পুরাণ ও বৃহদ্ধর্ম পুরাণ থেকে আমরা জানতে পারি, রাম ও রাবণের যুদ্ধের সময় শরৎকালে দুর্গাকে পূজা করা হয়েছিল। ব্রহ্মাই দুর্গার পূজা করেছিলেন। তার উদ্দেশ্য ছিল অশুভ শক্তির বিনাশ করার জন্য রামকে সাহায্য করা। কৃত্তিবাস ওঝা তার লেখা রামায়ণে কালিকা পুরাণ ও বৃহদ্ধর্ম পুরাণ এর ঘটনাকে কিছুটা পরিবর্তন করেছিলেন। তার লেখা রামায়ণ থেকে জানতে পারি, রাম নিজেই শরৎকালে দুর্গার বোধন ও পূজা করেছিলেন। সেখানেও উদ্দেশ্য ছিল অশুভ শক্তি বা আসুরিক শক্তি রাবনের বিনাশ।

Sunday, 6 October 2019

Kumari Puja - কুমারী পূজা

----কুমারী মেয়েদের রক্ষা করাই কুমারী পূজার মূল উদ্দেশ্য-----
লেখক- রূপেশ সামন্ত


কুমারী পূজা দুর্গোৎসবের এক বর্ণাট্য অনুষ্ঠান পর্ব। বিশেষত কুমারীকে দেবী দুর্গার পার্থিব প্রতিনিধি হিসেবে পূজা করা হয়ে থাকে।
-----কুমারী পূজা কি?----
কোন কুমারী মেয়েকে দেবী দুর্গার সামনে মাতৃভাবে পূজা করাকে কুমারী পূজা বলে। দুর্গাপূজার মহাষ্টমী পূজার শেষে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। আবার কোথাও কোথাও নবমীতেও কুমারী পূজা হয়।
-----পৌরাণিক আঙ্গিক----
একদা কোলাসুর স্বর্গ-মর্ত্য অধিকার করে নিয়েছিল। দেবগন বিপন্ন হয়ে পড়েন। তাঁরা মহাকালীর শরণাপন্ন হন। তখন দেবী পুনর্জন্মে কুমারীরূপে আসেন এবং কোলাসুরকে বধ করেন। তখন থেকেই মর্ত্যে কুমারী পূজার প্রচলন শুরু হয়। লেখক- রূপেশ সামন্ত
----পূজার ‘কুমারী’ হওয়ার যোগ্যতা----
কুমারী পূজার জন্য মেয়েকে ষোল বছরের কম বয়সী হতে হবে। অবশ্যই মেয়েকে অরজঃস্বলা হতে হবে। জাতি, ধর্ম বা বর্ণ নির্বিশেষে যে কোন কুমারী মেয়েই কুমারী পূজার যোগ্য হতে পারে। বেশ্যাকুল জাতির কন্যাও কুমারী পূজার ‘কুমারী’ হতে পারে। তবে আগের দিনে মূলত ব্রাহ্মণ কন্যাই পূজিত হত।
----অন্য কোথায় কুমারী পূজা?----
দূর্গা পূজার সময় ছাড়াও কালীপূজা, জগদ্ধাত্রীপূজা এবং অন্নপূর্ণা পূজা উপলক্ষে কুমারী পূজা হয়। এছাড়াও কামাখ্যা শক্তিক্ষেত্রেও কুমারী পূজার প্রচলন রয়েছে। লেখক- রূপেশ সামন্ত
----দার্শনিক তত্বের আলোকে পর্যালোচনা----
কুমারী কন্যা ভবিষ্যতের নারীর বীজাবস্থা মাত্র। বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড তিনটি শক্তির সমাহার- সৃষ্টি, স্থিতি ও লয়। এই তিনটি শক্তিই সুপ্ত অবস্থায় কুমারী কন্যার মধ্যে নিহিত রয়েছে। তাই কুমারী কন্যা ছাড়া তিনটি শক্তিই আধারহীন হয়ে পড়বে এবং বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডও অস্তিত্বহীন হবে। বর্তমানের কুমারী কন্যা, যে ভবিষ্যতের নারী, তাকে চোখের মনির মতো রক্ষা করতে হবে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই। সেই কারনেই দেবীভাব আরোপ করে কুমারী কন্যার সাধনা করা হয়। এক্ষেত্রে কুমারী কন্যা ভোগ্যা নয়, পূজ্যা। বৃহত্তর অর্থে নারীও ভোগ্যা নয়, এই বিষয়টিও প্রতিষ্ঠা করাও উদ্দেশ্য। এ ভাবনায় ভাবিত হওয়ার মাধ্যমে আমরা রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবকে নিজের স্ত্রীকে ষোড়শীজ্ঞানে পূজা করতে দেখেছি। একজন নারীর শৈশবে রক্ষাকর্তা বাবা-মা, যৌবনে রক্ষাকর্তা স্বামী ও বৃদ্ধাবস্থায় রক্ষকর্তা সন্তান। কিন্তু কন্যাবস্থায় সে অত্যন্ত দুর্বল ও বোধহীন হয়। সংসারে ব্যস্ত মা বা অর্থ উপার্জনে ব্যস্ত বাবার পক্ষে কন্যাসন্তানকে রক্ষা করা সম্ভব নয়। তাই সে সবচেয়ে অরক্ষিতও হয়। সেই কারনে কুমারী পূজার মাধ্যমে কন্যাকে দেবীভাবে ও শ্রদ্ধাসনে বসানো হয়েছে। ভবিষ্যতের নারীকে রক্ষা করাই উদ্দেশ্য। আবার জাতি, ধর্ম বা বর্ণ নির্বিশেষে যে কোন কুমারী মেয়েকেই কুমারী পূজার যোগ্যতা দানের মধ্য দিয়ে সম্প্রীতির দিকটিও তুলে ধরা হয়েছে। সর্বোপরি কুমারী পূজা মানবাতাবাদী ধর্মাচরন বলেই আমার মনে হয়েছে। লেখক- রূপেশ সামন্ত। ছবি সৌজন্য- বকুল ফুল
তথ্য সূত্র- কুমারী পূজা প্রয়োগ, দেবী পুরান, উইকিপিডিয়া।

পাঁশকুড়ার লেভেল ক্রসিংয়ে ভয়াবহ বিপদ থেকে রক্ষা। দেখুন ভিডিও। - Panskura Level Crossing

পাঁশকুড়ার লেভেল ক্রসিংয়ে ভয়াবহ বিপদ থেকে রক্ষা
দেখুন ভিডিও-

পাঁশকুড়ার লেভেল ক্রসিংয়ে ভয়াবহ বিপদ থেকে রক্ষা পেল এক পথচারী। বন্ধ লেভেল ক্রশিং মোটর সাইকেল নিয়ে পেরোতে গিয়ে ধাবমান ট্রেনের মুখোমুখি পড়ে যায় ঐ যাত্রী। কোন রকমে লাফ দিয়ে জীবন রক্ষা করে। গাড়িটি চূর্ণ-বিচুর্ণ হয়ে গেছে। পাঁশকুড়ায় লেভেল ক্রশিংয়ের উপর যে অবিলম্বে ফ্লাই-ওভার প্রয়োজন, এই ঘটনা আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। এখনই যা অবস্থা, এরপর ট্রেন দাঁড় করিয়ে একঘন্টা অন্তর যাত্রীদের পারাপার করাতে হবে! মেদিনীপুর থেকে হাওড়া পর্যন্ত কোন জনবহুল ষ্টেশনের নিকটস্থ স্থানে ফ্লাইওভার হয়নি, এমন উদাহরণ বিরল। অথচ পাঁশকুড়ার মতো বিরাট জনবহুল, পাইকারি বাজার সমৃদ্ধ ও কলেজ-হাসপাতাল কেন্দ্রিক এলাকায় লেভেল ক্রসিংয়ে ফ্লাইওভার নেই, ভাবাই যায় না! ট্রেনের আপ লাইন এখন তিন লাইন হয়ে যাওয়ায় ট্রেনের সংখ্যা প্রচুর বেড়ে গেছে। ফলে এখন লেভেল ক্রশিং খোলা থাকে না বললেই হয়। ঘন্টার উপরও সময় অপেক্ষা করতে হয়। লেভেল ক্রশিংয়ে আটকে পড়ে ছাত্র-ছাত্রী, রোগী, অফিস যাত্রী, সাধারণ মানুষের অসহায় যপ করা ছাড়া উপায় নেই। দুর্দশার এক শেষ! অথচ পাঁশকুড়া ষ্টেশন বর্তমানে ঘাটাল থেকে তমলুকের একটি বৃহৎ অঞ্চলের প্রবেশদ্বার। অবিলম্বে একটি ফ্লাইওভার প্রয়োজন। যতদিন না ফ্লাইওভার হচ্ছে, অন্তত ততদিন পর্যন্ত যদি তমলুক পুল থেকে কনকপুর পর্যন্ত রেললাইনের উত্তর পাশ দিয়ে একটি বাইপাস রাস্তা করা যায়, সে বিষয়টিও দেখা উচিত। উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণে পোস্টটি বেশি করে শেয়ার করুন।

Bengali Story- গল্প- মা দুগ্গা, একটাই বর দ্যাও দেকিনি!

-----মা দুগ্গা, একটাই বর দ্যাও দেকিনি!-----
[একটি মজার গল্প] @রূপেশ সামন্ত

     ‘মা দুর্গা, আমার একটা রিকোয়েস্ট ছিল! সারা বছর স্মার্ট ফোনে সেলফি তুলেছি, গেম খেলেছি। তুমি তো সবই জানো, মা। এবারের মতো উচ্চমাধ্যমিকটা পাশ করিয়ে দাও। কথা দিচ্ছি, আর স্মার্টফোন ঘাঁটব না। এই আমি শপথ করছি, আর জীবনে ফোন ছোঁবই না!’ গভীর রাতে মণ্ডপে মা দুর্গাকে একা পেয়ে অম্বর তার প্রার্থণাটা সেরে ফেলল।
      ‘তোর কোন চিন্তা নেই, তুই পরীক্ষায় পাশ করে যাবি’, মা দুর্গা বর দিলেন।
      ‘ম্যাডাম, আপনি কথাও বলেন? বা! বা! ঠিক আছে আমার প্রেয়ারটা সাকসেসফুল হলেই আমি একটা ঝক্কাস স্মার্টফোন গিফট দিয়ে যাবো!’ কথা গুলো বলেই অম্বর মা দুর্গার সঙ্গে একটা সেলফি তুলেই মণ্ডপ ত্যাগ করল।
      এরপর প্রীতিকা এদিক ওদিক তাকিয়ে ফাঁকা মণ্ডপে টুক করে ঢুকে পড়ল; আর প্রার্থণাটা সেরেই ফেলল, ‘সবাই বলে আমি সুন্দর দেখতে! আমার পেছনে ছেলেরা ঘুর ঘুর করে। আর আমিও একট-আধটু...থাক, মা, সবই তো জানো! পড়াশোনাটাই করিনি। কোন রকমে উচ্চমাধ্যমিক পাশ। একটা ফার্স্টক্লাস, হ্যান্ডসাম হাজব্যান্ড দিয়ে দাও মা!’
      ‘তোর কোন চিন্তা নেই, তুই ফার্স্টক্লাস, হ্যান্ডসাম হাজব্যান্ড পাবি’, মা দুর্গা বর দিলেন।
এরপর ভবানী প্রসাদ বাবু মণ্ডপে ঢুকলেন। ভাগাড়ের মাংসের কারবার। মা দুর্গার কাছে প্রার্থণা করলেন, ‘ভাগাড়ে যেন রোজ রোজ পশুর ডেডবডি পড়ে। আমি যেন আরো আরো ব্যাংক ব্যালেন্স পারি!’
      ‘তোর কোন চিন্তা নেই, তুই প্রচুর রোজগার করবি’, মা দুর্গা বর দিলেন। এর কিছুক্ষন পর ফাঁকা মণ্ডপে ঢুকলেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি পিকলু’দা। সাথে পার্সোনাল এ্যাসিস্টেন্ট রাজা। এই পুজা কমিটির সভাপতিও পিকলু’দা। ‘মা, তুমি তো সবই জানো! পাবলিককে ধমকে চমকে এতো বড় পূজা করছি। শুধু তোমাকেই খুশি করতে। সামনেই ইলেকশন। সারা বছর যা করেছি, ভোট হলে কেউ ভোট দেবে না। এবারের মতো ইলেকশনটা উতরে দাও, মা!’
      ‘তোর কোন চিন্তা নেই, তুই ইলেকশনে জিতবি’, মা দুর্গা বর দিলেন।
      ‘পিকলুদা, মা প্রেয়ার গ্র্যান্ট করে দিয়েছে। তাহলে রবীনকে একটু কেলিয়ে আসি! খুব আমাদের বিরুদ্ধে গলার শির ফুলিয়ে স্লোগান দেয়!’ রাজা বলল।
      ‘ওটা দশমীতে তোলা থাক!’ বলেই পিকলু’দা বেরিয়ে গেল।
      ‘মা, রঙ চেঞ্জ করে আমি এদিকে এসেছি। হরিলুটের প্রচুর বাতাসাও কুড়িয়েছি! লিডারদের পাশে থাকলে যা হয় আর কি! লাভের গুড় পিঁপড়েতে যেন না খায়, মা!’ রাজাও প্রার্থণাটা সেরে ফেলল।
      ‘তোর কোন চিন্তা নেই, তোর টাকা তোরই কাজে আসবে’, মা দুর্গা বর দিলেন।
       এরপর স্বর্ণ মণ্ডপে প্রবেশ করল। বিবাহিত পুরুষ। মা দুর্গার কাছে ফিসফিস করে বলল, ‘আমি একটু-আধটু পরকিয়া করছি! যদিও পরকিয়ার পক্ষে আইন পাশ রয়েছে, তবুও সব যেন গোপন থাকে।’
‘তোর কোন চিন্তা নেই, তোর পরকিয়া গোপন থাকবে’, মা দুর্গা বর দিলেন। /লেখক- রূপেশ সামন্ত

      ‘যার যেটা পাওয়ার কথা নয়, অযোগ্যরা সেটা পেয়ে গেলে তো আর কেউ আমাদের রেসপেক্ট করবে না; পৃথিবীতে ভারসাম্যও থাকবে না!’ পাশ থেকে মা দুর্গার ছেলে-মেয়ে গনেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী ও সরস্বতী অভিযোগ করল।
      মা দুর্গা বললেন, ‘আমার উপর ভরসা রাখ! এরা তো মানুষ! এদের বেশির ভাগই লোভী! সহনশীল নয়! নিজেদের যোগ্যতার বেশি চায়! নিজে থেকে শেখে না! ঠেকে শেখে! আমি তো জগজ্জননী! সকলের মা! আমি ঠিক শিখিয়ে পড়িয়ে মানুষ করে দেব।’
      এইভাবে কেটে গেল তিন বছর। মা দুর্গার বর সকলের উপর কার্যকরী হয়েছে। প্রায় সকলেই একসঙ্গে দুর্গা মায়ের মণ্ডপে হাজির। কিন্তু পরিস্থিতি এখন ভিন্ন। /লেখক- রূপেশ সামন্ত
      অম্বর বর পেয়ে উচ্চমাধ্যমিকে স্টার পেয়েছে। কলেজে ইংরাজি অনার্সে ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু যোগ্যতায় কুলোয় নি। যথারীতি ফেল করেছে। মার্কশিটের ওজনে ভারাক্রান্ত হয়ে মালবাহকের কাজটাও করতে পারলো না!
      আর প্রীতিকা ফার্স্টক্লাস হ্যান্ডসাম বর পেয়েছিল। কিন্তু যোগ্যতা ও মানসিক দূরত্বের ফারাক এতো বেশি ছিল যে, বিয়ের দু'বছরের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে গেছে।
      এদিকে ভবানী প্রসাদ বাবুর সস্তা ভাগাড়ের মাংসের ঠেলায় পুরো বাজারটাই ভাগাড়ের মাংসে ভরে গেল। বিষক্রিয়ায় বহু মানুষের মৃত্যু হল। ভবানী প্রসাদের জেল হল। কিন্তু পুলিশের হাত থেকে ছিনতাই হয়ে গিয়ে গনপ্রহারেই তার মৃত্যু হল।
      অন্যদিকে পিকলু'দা ভোটে জিতল। কিন্তু জনসমর্থন নেই। ক্ষমতার দম্ভে অন্ধ পিকলু'দার জনরোষেই মৃত্যু হল।
      আবার রাজার উপরও আছড়ে পড়ে গনপ্রহার। হাত-পা খুইয়ে পথের ধারে ভিক্ষা করে। তার চিকিৎসাতেই 'হরিলুটের বাতাসা' সব শেষ!
      স্বর্ণের পরকিয়া প্রেম জমেছে। তবে স্বর্ণের দ্বারা মানসিক নির্যাতনে বিতশ্রদ্ধ হয়ে ও ভালবাসা না পেয়ে তার স্ত্রীও পরকিয়া সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছে। বিষয়টি জানতে পেরে স্বর্ণ স্ত্রীকে হারানোর ভয়ে আবার উন্মাদের মতো স্ত্রীকে ভালবাসতে শুরু করেছে।
 

      ‘আমাদের সব পাপ মুক্ত করো মা! আমরা আমাদের ভূল বুঝতে পেরেছি। লক্ষ্মণরেখা কখনোই পেরোন উচিৎ নয়।’ একযোগে সকলে বলল।

      এবার নড়েচড়ে উঠলেন মহিষাসুর। খুব ম্রিয়মান গলায় বললেন, ‘মা দুগ্গা, একটাই বর দ্যাও দেকিনি! এরা আমাকে দেকেও শিকেনি! বেশি বাড়াবাড়ি না করলে কি আমাকে এইভাবে ত্রিশুল বিদ্ধ হয়ে পড়ে থাকতে হোত!’
      ‘কি বর দেব?’ মা দুর্গা বললেন।
মহিষাসুর বললেন, ‘শুধু একটা আয়না দাও। তাতে শুধু নিজের বাইরেটা নয়, ভিতরটাও যেন দে্ষা যায়!’

লেখক- রূপেশ সামন্ত/ 06.10.18.


Saturday, 5 October 2019

Oldest Durgapuja of Panskura - পাঁশকুড়ার সবচেয়ে প্রাচীন কাশিজোড়া রাজার দুর্গাপূজা


পাঁশকুড়ার সবচেয়ে প্রাচীন কাশিজোড়া রাজার দুর্গাপূজা হয় মাছপোড়া দিয়ে
লেখক- রূপেশ সামন্ত


     পাঁশকুড়ার অতীতে কাশিজোড়া রাজার দুর্গাপূজা হল এই এলাকার সবচেয়ে প্রাচীন দুর্গাপূজা। অনেক ঐতিহাসিকই এই তথ্য মানতে চান না। কিন্তু এর চেয়ে প্রাচীন দুর্গাপূজার উদাহরণ প্রমানিত রূপে আজ পর্যন্ত আমাদের সামনে নেই। তাছাড়া অতীতে কাশিজোড়া পরগনা ছিল জঙ্গলাকীর্ণ জলাভূমি। এইসব এলাকা ছিল মূলত দরিদ্র সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। তাদের পক্ষে রাজকীয় ব্যয়বহুল দুর্গাপূজা ছিল অলীক কল্পনা। এযাবৎ যা তথ্যসূত্র পাওয়া যায়, তা থেকে নিশ্চিত রূপে বলা যায় পাঁশকুড়ার সবচেয়ে প্রাচীন দুর্গাপূজা হল কাশিজোড়া রাজার ২৭৫ বছরের পুরানো দুর্গাপূজা।
ইতিহাসঃ
     ১৭৪৪ সাল। কাশিজোড়া পরগনার রাজ-সিংহাসনে আরোহন করলেন রাজা নরনারায় রায়। পরগনা বিস্তারের উদ্দেশ্যে পাশের পরগনা ময়না আক্রমন করলেন। ১৭৪৪ সালের সেই যুদ্ধে ময়নার রাজাকে পরাজিত করে ময়নার ১৭টি মৌজা দখল করে নেন। যুদ্ধ জয়ের গৌরবে সেই বছর থেকে দুর্গাপূজার প্রচলন করলেন। তখন রাজধানী ছিল হরশংকর গড়ে। ১৭৪৪ সালে হরশংকর গড়েই রাজা নরনারায়ণ রায় প্রথম দুর্গাপূজার প্রচলন করেছিলেন। প্রজারা সেই দুর্গাপূজায় অংশগ্রহন করতেন। রাজা নরনারায়ণ রায় রাজত্ব করেন ১৭৫৬ সাল পর্যন্ত। এরপর কাশিজোড়া পরগনার রাজা হয়েছিলেন রাজা রাজনারায়ণ রায় (১৭৫৬-১৭৭০)। রাজা সুন্দরনারায়ণ রায়ের আমলে (১৭৭০-১৮০৬) রাজধানী হরশংকর গড় থেকে বর্তমান সুন্দরনগরে স্থানান্তরিত হয়। রাজপরিবারের দুর্গাপূজাও স্থানান্তরিত হয়। সেই থেকে সুন্দরনগরে রাজপরিবারে দুর্গাপূজা হয়ে আসছে। রাজপরিবারের দুর্গাপূজা এইবছর ২৭৬তম বর্ষে পদার্পণ করল।


বর্ধমান রাজার ভেটঃ
     কাশিজোড়া রাজপরিবারের সঙ্গে বর্ধমান রাজপরিরের সুসম্পর্ক ছিল। প্রতিবছর দুর্গাপূজায় বর্ধমান রাজপরিবার থেকে ভেট বা উপহার সামগ্রী আসতো। হাঁটা পথে সেইসব উপহার সামগ্রী আসত চার/পাঁচদিন ধরে। আজ থেকে সত্তর বছর আগে পর্যন্ত এই প্রথা বহাল ছিল।

আস্ত্রপূজাঃ
     দুর্গাপূজার দালানেই একই সঙ্গে পূজা করা হয় রাজাদের ব্যবহৃত বড় বড় তলোয়ার। বর্তমানে তিনটি বড় তলোয়ার রয়েছে।

লোককথাঃ
     ক্ষেত্রসমীক্ষা কালে রাজপরিবার সূত্রে জানা গেল পারিবারিক ভাবে প্রবহমান অনেক লোককথা। রাজা নরনারায়ণ রায় যুদ্ধযাত্রা কালের প্রাক্কালে নাকি স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে ছিলেন। দেবী দুর্গা রাজাকে যুদ্ধ জয়ের বর প্রদান করেছিলেন এবং যুদ্ধ জয়ের পর দেবী পূজা করতে বলেছিলেন। রাজা সেই রাজকীয় ব্যয়বহুল পূজার অপারগতার কথা জানালে, দেবী দুর্গা কেবল মাছপোড়া ও লালশাকের টক দিয়ে পূজা করতে বলেছিলেন। সেই থেকে আজও পূজার বহু-ব্যঞ্জনে  আবশ্যিক ভাবে মাছপোড়া ও লালশাকের টক থাকে।
     রাজ পরিবারের পূজার প্রথা অনুযায়ী, বহু-ব্যঞ্জন রান্নায় পুরুষ বা বিবাহিত নারীর অংশগ্রহন করার অধীকার নেই। কেবল মাত্র রাজপরিবারের অবিবাহিত নারীরাই বহু-ব্যঞ্জন রান্নার কাজ করেন।

[ছবির বামদিকে রাজপরিবারের বর্তমান সদস্য আদিত্যনারায়ণ রায় ও ডানদিকে লেখক]
শেষকথাঃ
     ঘুরে আসতে পারেন পাঁশকুড়ার সবচেয়ে পুরানো দুর্গাপূজা। সেই দুর্গাপূজা আজও বয়ে চলেছে অনেক ইতিহাস বুকে নিয়ে। পাঁশকুড়া ষ্টেশনের দক্ষিণে তমলুক-পাঁশকুড়া বাসরুটে ৬কিলোমিটার দূরে জোড়াপুকুর বাসস্ট্যাণ্ড। ঐ বাসস্ট্যাণ্ড থেকে উত্তরে ১কিমি এগোলেই পড়বে রাজপরিবারের বাড়ি ও দুর্গাপূজা। ঘুরে আসুন সন্ধিপূজায়।
লেখক- রূপেশ সামন্ত

জীবনের ভুল — সত্যিই ভুল?

  জীবনের ভুল — সত্যিই ভুল? জীবন এক অমোঘ প্রবাহ—সময়ের স্রোতে আমাদের চিন্তা, অনুভব ও সিদ্ধান্ত সবই পরিবর্তিত হয়। আজ যা ভুল মনে হয়, কাল তা সঠি...