‘ফুলের উপত্যকা’ পাঁশকুড়াঃ প্রায় দেড় হাজার বছরের
ইতিহাসের অংশ
©রূপেশ সামন্ত
পাঁশকুড়াকে ‘ফুলের উপত্যকা’ বলা হয়। পাঁশকুড়ার ক্ষীরাই-কংসাবতী অববাহিকা বরাবর মাঠের পর মাঠ জুড়ে ফুলের সাম্রাজ্য। গাঁধা, চন্দ্রমল্লিকা, দোপাটি, রজনী, করণ, আক্সটার, চেরি, ঝুপসি, বেল, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, মুরগাই প্রভৃতি ফুলে ভরে যায় মাঠ। কেশাপাট, মাইশোরা, পাঁশকুড়া, গোবিন্দনগর, ঘোষপুর অঞ্চল গুলি ফুলের সাম্রাজ্যের অংশীদার। ফুলের মাঠ চিরে ছুটে চলে ট্রেন, বয়ে যায় ক্ষীরাই-কাঁসাই। হাজার হাজার পরিযায়ী মানুষের ভীড়ে শীতকালে ভেসে যায় ফুলের উপত্যকা। ভ্রমন-পীপাসুরা হৃদয় দিয়ে শুষে নেয় ‘ফুলের উপত্যকা’র রূপ-রস-গন্ধ।
আজকের সময়ে এই উপত্যকার কথা মানুষ জেনেছে সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে। হয়ে উঠেছে অন্যতম ভ্রমন ক্ষেত্র। এই উপত্যকা স্থান করে নিয়েছে রেলের ভ্রমন মানচিত্রে। কিন্তু পাঁশকুড়ার ফুলচাষের ইতিহাস অনেক পুরানো। পাঁশকুড়ার ফুলচাষের ইতিহাস বৃহত্তর তাম্রলিপ্তের প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরানো ফুলচাষের ইতিহাসের অংশ। অতীতে পাঁশকুড়া বৃহত্তর তাম্রলিপ্তের অংশ ছিল। অতীতে বঙ্গোপসাগর তাম্রলিপ্তের নিকটে ছিল। বর্তমানে দক্ষিণ দিকে সরে গেছে। তাম্রলিপ্ত তখন একটি বন্দর নগর ছিল, যা সমূদ্রের একটি খাঁড়ির উপর অবস্থিত। আজ থেকে দু-তিন শতক আগেও কংসাবতী নদী প্রতাপপুর-রঘুনাথবাড়ির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গিয়ে তমলুকের কাছে সমূদ্রে পতিত হত। তাম্রলিপ্ত বন্দরে যাতায়াতের জন্য যেমনি পাঁশকুড়ার উপর দিয়ে প্রবাহিত কংসাবতী নদীর জলপথ ব্যবহৃত হত, তেমনি পাঁশকুড়ার উপর দিয়ে প্রসারিত স্থলপথও ব্যবহৃত হত। পাঁশকুড়ায় এরূপ প্রাচীন স্থলপথের উল্লেখ পাই, ১৭৭৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত জেমস রেনেলের মানচিত্রে (Map of the Provinces of Bengal, 1779)। এক কথায়, তৎকালীন সময়ে পাঁশকুড়া বৃহত্তর তাম্রলিপ্তের যেমন অংশ ছিল, তেমন যোগাযোগের অন্যতম প্রবেশদ্বারও ছিল। [©রূপেশ সামন্ত]
হিউয়েন সাঙ ছিলেন বিখ্যাত চীনা বৌদ্ধ ভিক্ষু, পণ্ডিত, পর্যটক এবং অনুবাদক। তিনি ৬২৯ খ্রীষ্টাব্দে ভারতবর্ষে আগমন করেন। ভারত ভ্রমনের সাথে বাংলাতে আগমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। নালন্দা থেকে কজংগল (উত্তর-রাঢ়, বাঁকুড়া-বীরভূমের উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ), পুন্ড্রনগর (উত্তরবঙ্গ-বগুড়া-রাজশাহী-রংপুর-দিনাজপুর), কামরূপ, সমতট (ত্রিপুরা, ঢাকা, ফরিদপুর, খুলনা, বরিশাল, ২৪ পরগনার নিম্ন ভূমি) যান। তার পর স্থলপথেই পশ্চিমে সমুদ্র তীরবর্তী তাম্রলিপ্তিতে যান। তাঁর বর্ণনা অনুসারে, এখানকার ভূমি ছিল সমতল এবং জলীয়। এখানে ফুল ও ফল প্রচুর উৎপাদন হত। অর্থ্যাৎ আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে যে এতদাঞ্চলে প্রচুর ফুল-ফল উৎপাদন হত, তা ঐতিহাসিক রূপেই জানা যাচ্ছে। সেই ইতিহাসের ধারা আজও প্রবহমান। এতদাঞ্চলের চাষীদের রক্তেই প্রবাহিত ফুল চাষের গৌরব-গাথা।
তথ্যসূত্র- বাঙ্গালীর ইতিহাস-আদি পর্ব, নীহাররঞ্জন রায়।/ তাম্রলিপ্ত-তমলুক ইতিহাস ও ঐতিহ্য, রাজর্ষি মহাপাত্র।/ প্রাচীন জরিপের ইতিহাস, অরুন কুমার মজুমদার।
©রূপেশ সামন্ত
[দয়া করে কেউ কপি-পেস্ট করবেন না। ভালো লাগলে শেয়ার
করুন।]
No comments:
Post a Comment