Popular Posts

Sunday, 13 September 2020

তাল

 

আহা! তাল

©রূপেশ সামন্ত




 

দেবের দুর্লভ ধন জীবনের ঘড়া

এক বিন্দু রস খেলে বেঁচে ওঠে মড়া।

     লিখেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত। রস পাগল মানুষদের দেখলে কবিতার সারমর্ম উপলব্ধি হয়। তালরস থেকে খেজুররস বাঙালী হৃদয়ে চিরকালই দোলা দেয়। খেজুর কুল থেকে খেজুরের রসে যেমন শীতকাল ‘ম’ ‘ম’ হয়ে ওঠে, তেমনি তালরস থেকে তালপাঁকিতে গ্রীষ্ম থেকে বর্ষা জীভ জলময় হয়ে ওঠে। তালরস থেকে তালগুড়, তালমিছরি, তাড়ি নানারকম দ্রব্য তৈরি হয়। এগুলির মধ্যে তাড়ি এক বিষম বস্তু! আবার অতি চাহিদারও বস্তু! গ্রীষ্মকালে গ্রামে-গঞ্জে জাঁকিয়ে বসে তাড়ি তৈরির কারখানাও! তাই কবিতা প্রেমিক বলদেব সাঁতরা কবিতায় লেখেন-

রসের ও লাগিয়া, হাঁড়ি গাছে পাতিয়া --

ধরিব শীতল জল বিন্দু।

তোমার কাছে আছে কি খোঁজ বন্ধু,

কেমনে জুটিবে এমন সুধা সিন্ধু?”

     রসবন্ধু বেরা নামে এক রেল কর্মচারী ছিল। তিনি সখের তালবাগান করেছিলেন। রসভক্ত রসবন্ধু তালরস পান না করে দাঁত মাজতেন না! প্রতিদিন সকালে অফিস যাওয়ার সময় দু’চার বোতল রস সঙ্গেও নিয়ে নিতেন। তালরসে অফিসের বসও বশীভূত! আবার অফিস ফেরৎ হয়ে তালরস পান না ডিনার করতেন না! রসেবসে রসবন্ধু ভালোই ছিলেন! ধীরে ধীরে খরিদ্দারও হতে লাগলো! রসবন্ধুর নাম হয়ে গেল তাড়িবন্ধু! সেই তাড়ি একসময় রসবন্ধুকে তাড়া করে বেড়ালো তাড়ির সঙ্গে আর আড়ি করতে পারলেন না! একদিন শুনলাম, চাকুরি জীবন শেষ করার পূর্বেই অতিরিক্ত তাড়ি পানের তাড়নায় মারা গেছেন তাড়িবন্ধু! কবিতা প্রেমিক বলদেব বাবু উপসংহার টানলেন-

এরকম লোকের আজকে খুবই অভাব। রসের প্রকৃত রসবোধ এমন জীবন রসিকরাই জীবন দিয়ে উপলব্ধি করতে পারে বাকিরা চুমুকেই ডিগবাজিস্বাদ কি বুঝিবে, গন্ধেই মরিয়া গেল। ©রূপেশ সামন্ত


     এ তো গেল রসকথা। রসে যেমন বাঙালি মাতাল, পাকা তালে তাল ঠিক রাখাটাও বাঙালির কাছে মুস্কিল! পাকা তালের গন্ধে মনটা উসখুস করে উঠবেই। তালের রুটি, তালের পরোটা, তালের নানান পিঠা, তালের পায়েস সবই বাঙালির নিজস্ব সৃষ্টি। ভাদ্রমাস মানেই ঘরে ঘরে তালের বড়া, তালের পুরপিঠা, তালের পোড়াপিঠা হবেই। ফলে তালের চাহিদা ক্রম বর্ধমান। যে তাল আগে রাস্তঘাটে পড়ে থাকতো, তাই এখন বাজারে ৩০টাকা দরে বিক্রী হয়। আসলে সবের পেছনেই সেই রসনাপ্রেম। তালরস থেকে তালপাঁকি- রসাস্বাদন থেকে পিঠাস্বাদন- রসনাপ্রেমিদের জীবনকে অন্য আঙ্গিকে দেখার অভিপ্রায়েই কিনা!

©রূপেশ সামন্ত

[দয়া করে কপি-পেস্ট করবেন না। শেয়ার করুন।]


 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 


No comments:

Post a Comment