Popular Posts

Wednesday, 7 October 2020

গাড়া মন্দিরের গর্বের টেরাকোটা

 গাড়া মন্দিরের গর্বের টেরাকোটা ধ্বংসের প্রহর গোনে

©রূপেশ সামন্ত

      ‘গাড়ামন্দির’ নামটি শুনে অবাকই হয়েছিলাম। দাসপুর থানার গোবিন্দনগর গ্রামের পার্বতীনাথ শিবমন্দিরটি ‘গাড়ামন্দির’ নামে পরিচিত। মন্দিরের পাশ দিয়েই প্রবহমান পলাশপাই নদী। এই গ্রামের চেঁচুয়াহাটে ১৯৩০ সালের ৬ই জুন লবন আইন আন্দোলনে বর্বর ব্রিটিশ পুলিশের গুলিতে ১৪ জন শহীদ হয়েছিলেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে নদী-খাল সংস্কারের সময়ে বহু মন্দিরের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়েছে। পলাশপাইয়ের সংস্কারের সময় পরিকল্পনাহীনতায় মন্দিরটির অনেকটাই মাটির তলায় চাপা পড়ে গেছে বা ‘গেড়ে’ আছে। এই কারনেই মন্দিরটি ‘গাড়ামন্দির




























’ নামে পরিচিত। জনশ্রুতি অনুসারে, উনবিংশ শতকের মধ্যভাগে বর্ধমানের রাজা প্রজাদের আধ্যাত্মিক অনুগামী করার জন্য মন্দিরটি নির্মান করেছিল। 

     মন্দিরের প্রতিষ্ঠা লিপি অনুসারে মন্দিরটি ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ফলকটিতে লেখা রয়েছে, ‘শ্রীশ্রী ভুবনেস্বর / দেবাদিদেব মহাদেব / সকাব্দা ১৭৭২ সন ১২৫৭ সাল/ তাং ২১ ভাদ্র মিস্ত্রি/ শ্রী আনন্দরাম দাস / সাকিম দাসপুর’। মন্দিরটি প্রায় পৌনে দু'শ বছর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

     পার্বতীনাথ শিবের মন্দিরটি আট-চালা রীতির পশ্চিমমুখী মন্দির। মন্দিরটির দৈর্ঘ ও প্রস্থ প্রায় ১৭ ফুট করে এবং উচ্চতা প্রায় ৩৫ ফুট। মন্দিরের সম্মুখে রয়েছে ত্রিখিলান প্রবেশদ্বার যুক্ত অলিন্দ। গর্ভগৃহে প্রবেশের জন্য একটি প্রবেশদ্বার রয়েছে। 

     মন্দিরে রয়েছে অসংখ্য টেরাকোটা ফলক। ত্রিখিলান প্রবেশ দ্বারের মাথায় তিনটি ব্লকে টেরাকোটা ফলক গুলি সাজানো রয়েছে। কার্নিশের নিচে সারিবদ্ধ ভাবে সাজানো রয়েছে কিছু ফলক। এছাড়াও মন্দিরের সম্মুখ ভাগের দুই পাশে উল্লম্ব সারিতে টেরাকোটা ফলক গুলি সাজানো রপ্যেছে। গন্ধমাদন, সীতাহরণ, লক্ষ্মণের শক্তিশেল, আহত লক্ষ্মণ, হর-পার্বতী, শিঙ্গাধারী মহাদেব, কৃষ্ণ-লীলা, রাধা-কৃষ্ণ, শ্রীকৃষ্ণের দ্বারা গোপিনীগণের বস্ত্রহরণ, ধনপতি এবং শ্রীপতির সিংহল যাত্রা, কমলে-কামিনী প্রভৃতি ফলক গুলি টেরাকোটা শিল্পের অনিন্দ্য নিদর্শণ। গর্ভগৃহের প্রবেশ পথের দু'পাশে দুটি দারোয়ান মূর্তি রয়েছে। 

     কিন্তু খুবই দুর্ভাগ্যের বিষয় সংরক্ষনের অভাবে টেরাকোটা ফলক গুলির মতো অমূল্য সম্পদ দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ‘গাড়ামন্দিরে’র সাথে টেরাকোটা শিল্প গুলিও ‘গাড়া’ হয়ে যাচ্ছে। কারো কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।

©রূপেশ সামন্ত

No comments:

Post a Comment