Popular Posts

Tuesday 27 April 2021

পাতাধরা অনুষ্ঠান বৈষ্ণবীয় রীতি

‘পাতাধরা’ অনুষ্ঠান পূর্বপুরুষদের স্মরণ করার বৈষ্ণবীয় রীতি রূপেশ সামন্ত, শিক্ষক
নিরামিষ ‘পঞ্চভাজি’ ও ‘পঞ্চব্যঞ্জন’ রান্না করে কলাপাতায় সুন্দর করে সাজানো হয়। ‘পঞ্চভাজি’ বা পাঁচরকম ভাজার মধ্যে আলুভাজা, উচ্ছেভাজা, পটলভাজা, শাকভাজা, বেগুনভাজা ইত্যাদি থাকে। ‘পঞ্চব্যঞ্জন’ বা পাঁচরকম তরকারির মধ্যে পটলের তরকারি, শুক্তো, কুমড়োর ঘন্ট, ডাল, বিচাকলার ছেঁচকি ইত্যাদি থাকে। এবার একটি আসনে পান-সুপারি-তুলসি দিয়ে মৃত পূর্বপুরুষকে ভক্তিভরে আহ্বান জানানো হয়। নানান শাস্ত্রীয় মন্ত্র উচ্চারণ করা হয়। আসনের সামনে পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে কলাপাতায় ভোগ নিবেদন করা হয়। একই সাথে বৈষ্ণব পূর্বপুরুষদের সমাধিক্ষেত্রে ভোগের প্রসাদ নিবেদন করা হয়। উল্লেখ্য, বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী মানুষদের মৃত্যুর পর সমাধিস্থ করার রীতি প্রচলিত আছে। যাইহোক, এই সমস্ত ক্রিয়াটি সম্পন্ন করেন কোন বৈষ্ণব গুরু। ভোগ রান্নাও তাঁরা করেন। সমগ্র এই অনুষ্ঠানটিকে বলা হয় ‘পাতাধরা’। অর্থ্যাৎ ‘পাতা’য় করে মৃত পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে ভোগ নিবেদন করে তাঁদের জন্মতিথি পালন করা বা ‘ধরা’ হয়। ‘পাতাধরা’ উপলক্ষে বাড়িতে গোপাল ঠাকুর আনা হয়। দেবতার উদ্দেশ্যে পূজা ও ভোগ নিবেদন করা হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে হরিনাম-সংকীর্তণেরও আয়োজন করা হয়। এই প্রথা আজও পূর্ব মেদিনীপুরের গ্রামাঞ্চলে সচরাচর দেখা যায়। রীতি অনুসারে, বৈষ্ণব সমাধিতে জল-তুলসি দিয়ে নিত্যপূজা করতে হয়। এছাড়া সাধারণভাবে পূর্ণিমা বা অন্য কোন শুভ তিথি ধরে বৈষ্ণব পূর্বপুরুষদের আবির্ভাব তিথি পালন করা হয়। ঐ দিনটিতেই ‘পাতাধরা’ অনুষ্ঠান করা হয়। এইভাবে পূর্বপুরুষদের স্মরণ করার মধ্য দিয়ে পূর্বপুরুষদের আশীর্বাদ বর্তমান প্রজন্মের উপর বর্ষিত হয় বলে বিশ্বাস করা হয়। সর্বোপরি, এই ধরনের রীতির মধ্য দিয়ে গুরুজন বা পূর্বপুরুষদের ভক্তি-শ্রদ্ধা করার প্রাচীন সংস্কৃতি আমাদের কাছে পরিস্ফুট হয়।

No comments:

Post a Comment