গনগনি- বাংলার গ্র‍্যান্ড ক্যানিয়ন

 গনগনি- বাংলার গ্র‍্যান্ড ক্যানিয়ন

©রূপেশ সামন্ত


নদীর পাড়ে ছিল এক বিরাট রাক্ষস। নাম তার বকরাক্ষস। সে প্রতিদিন একজন করে মানুষকে খেত।

তার আহার হিসাবে গ্রামের একজন করে মানুষ তার কাছে পালা করে যেত। একদিন এক গরীব ব্রাহ্মনের পালা পড়ল।

সে নদীর পাড়ে বসে দুঃখে কষ্টে কাঁদতে শুরু করল। অজ্ঞাতবাসে ঘুরতে ঘুরতে মহাভারতের যুধিষ্ঠিরের নজরে পড়ল এই দৃশ্য। যুধিষ্ঠির সমস্ত ঘটনা শোনার পর ভীমকে বকরাক্ষস বধ করার জন্য নির্দেশ দিলেন। প্রবল যুদ্ধের পর ভীম বকরাক্ষসকে বধ করেন। ভীম ও রাক্ষসের প্রবল দাপাদাপিতেই এই গিরিখাতের সৃষ্টি হয়। অনেকে সাদা অস্থির ন্যায় দেখতে প্রস্তরখণ্ডগুলিকে বকরাক্ষসের অস্থি-পিঞ্জর বলে অভিহিত করেন। শুধু মহাভারতীয় এই কিংবদন্তী নয়, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গনগনির শিলাবতী নদীর পাড়ের উঁচুনিচু পাথরের উপত্যকার সৌন্দর্য স্থানটিকে জনপ্রিয় করে তুলেছে।

মহাভারতের সঙ্গে স্থানটির কোন প্রত্যক্ষ ঐতিহাসিক সম্পর্ক আছে কিনা জানা নেই, তবে জল-আবহাওয়ার প্রত্যক্ষ প্রভাবে যে এই অপরূপ সুন্দর দৃশ্যপটের সৃষ্টি হয়েছে তা অস্বীকার করার জায়গা নেই। 

জলের স্রোত ও বাতাসের ক্রমাগত ঘর্ষণের ফলে এইরূপ গিরিখাত বা ক্যানিয়নের সৃষ্টি হয়েছে। একে আরিজোনার গ্র‍্যান্ড ক্যানিয়নের সঙ্গে তুলনা করা হয়। গনগনিকে 'বাংলার গ্র‍্যান্ড ক্যানিয়ন' বলা হয়। লাল-হলুদের ঢেউ খেলানো পাথুরে প্রান্তর, কাজুবাদাম গাছের সারি, শাল পিয়ালের দোলা, তালের সারি, শিলাবতীর কুলকুল প্রবহমানতা সৌন্দর্য প্রিয় মানুষকে টেনে আনে এখানে। 

শুধু গনগনির গিরিখাত নয়, পাশাপাশি রয়েছে বেশকিছু প্রাচীন ও প্রসিদ্ধ মন্দির। রয়েছে প্রসিদ্ধ বারোশিব ও লক্ষ্মীজনার্দন মন্দির।

গড়বেতার সত্যনারায়ণ মোড়ে এই মন্দির গুলির অবস্থান। এখানে সারিবদ্ধভাবে রয়েছে বারোটি শিব মন্দির।

সেগুলি হল বৈদ্যনাথ, অমরেশ্বর, মহাকাল, মল্লিকার্জুন, সোমনাথ, ভীমশংকর, রামেশ্বর, নাগেশ্বর, বিশ্বেশ্বর,  এম্যকেশ্বর, কেদারনাথ ও ঘুশ্নেশ্বর। পাশেই রয়েছে একরত্ন লক্ষ্মীজনার্দন মন্দির। মন্দিরগুলি পঞ্চরথের শিখর দেউল রীতিতে নির্মিত। আনুমানিক ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ মন্দির গুলি নির্মিত। অপরূপ সুন্দর ও প্রসিদ্ধ এই মন্দিরগুলি মনকে প্রসন্ন করবেই। 

পাশাপাশি প্রসিদ্ধ মহাশক্তি সর্ব্বমঙ্গলা মন্দিরটি একটি প্রাচীন কীর্তি। প্রতিষ্ঠাকাল জানা যায় না। কেউ কেউ বলেন, বগড়ীর প্রথম রাজা গজপতি সিংহ প্রতিষ্ঠা করেন মন্দিরটি।

আবার কেউ কেউ বলেন, মহাভারতীয় কালে উজ্জয়নীপতি রাজা বিক্রমাদিত্যের রাজত্বকালে জনৈক সিদ্ধ পুরুষ দেবীমূর্তির প্রতিষ্ঠা করেন। কিংবদন্তি রয়েছে, উজ্জয়নিপতি রাজা বিক্রমাদিত্য এখানে এসে শব সাধনা করেগিয়েছেন।

পাশাপাশি রয়েছে 'ঘটি' শিবের মন্দির। মন্দিরে রয়েছে বিরাট শিবলিঙ্গ।

কিংবদন্তী রয়েছে, এই শিবলিঙ্গ নাকি প্রতিদিন বড় হত। ব্রাহ্মণের পূজা করতে অসুবিধা হচ্ছিল। তাই তিনি একদিন শিবলিঙ্গের মাথায় ঘটি দিয়ে আঘাত করেন। ফলে সেই অবস্থায় শিবলিঙ্গটি মাথায় বিকৃতি  নিয়ে রয়েছে। 

পাশাপাশি চিংড়িবাঁধের কাছে রয়েছে শৈলেশ্বর জিউ শিব মন্দির, ভদ্রকালী ও ভদ্রকেশ্বর শিব মন্দির। শিলাবতীর তীরে এই মন্দিরগুলি অপরূপ সুন্দর।


পথনির্দেশ 

দক্ষিন-পূর্ব রেলের হাওড়া থেকে ট্রেনে গড়বেতা স্টেশন যেতে হবে। পথ প্রায় ১৭৪ কিমি। সড়ক পথেও যাওয়া যাবে। পুরো পথ চারচাকা চলাচলের যোগ্য। গড়বেতা স্টেশন থেকে টোটো বা অটো করে দর্শনীয় স্থানগুলিতে যাওয়া যাবে।

রাত্রিবাসের জন্য গড়বেতা স্টেশন সংলগ্ন বেশকিছু ছোট বড় হোটেল রয়েছে। স্টেশন থেকে গনগনির ক্যানিয়ন যেতে টোটো ভাড়া জন প্রতি ১৫/- টাকা। গনগনির ক্যানিয়ন সহ অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলি দেখার জন্য স্টেশন থেকে টোটো বা অটো বুক করে নেওয়াই ভালো। সেক্ষেত্রে ভাড়া লাগবে ৩০০/- থেকে ৪০০/- টাকা।

©রূপেশ সামন্ত

Comments

Popular posts from this blog

Essay [রচনা]- মাহে রমযান

250 YEARS OLD BEGUNBARI KALI PUJA, PANSKURA, WB, INDIA

----- HISTORY OF PANSKURA [WB, INDIA] [PART-1] -----