ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ- জাত চেনাল তুরস্ক
ভারত-তুরস্ক সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে মানবিকতা, বাণিজ্য এবং ঐতিহাসিক বন্ধুত্বের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছিল। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভারত তুরস্কের পাশে দাঁড়িয়েছে, দুঃসময়ে বন্ধুর মতো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। অথচ সেই সম্পর্ক শত্রুভাবাপন্ন রূপ নিতে বেশি সময় লাগেনি। সাম্প্রতিক পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলা এবং পাকিস্তানে চালানো 'অপারেশন সিন্দুর' এই সম্পর্কের বাস্তবতা নতুন করে উন্মোচন করেছে।
পহেলগাম হত্যাকাণ্ড- তুরস্কের অবস্থান:
২০২৫ সালের পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলায় নিরীহ ভারতীয় নাগরিকদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই হামলার পেছনে ছিল পাকিস্তানের সরাসরি মদতপুষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠী। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ও সেনাবাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, জঙ্গিরা পাকিস্তানের মদতে সীমান্ত পেরিয়ে এসে হামলা চালায়। ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে “অপারেশন সিন্দুর” চালিয়ে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে থাকা জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয়।
এই সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের সময়, যখন বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশ ভারতের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন জানাচ্ছে, তখন তুরস্ক পাকিস্তানকে সরাসরি অস্ত্র সহায়তা দিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে মদত দিচ্ছে। এটাই প্রমাণ করে, তুরস্ক এখন শুধু নিরপেক্ষ নন, বরং ভারতের মানুষের হত্যাকাণ্ডে পরোক্ষভাবে সহযোগী।
মানবিকতার মুখে ধর্মীয় পক্ষপাত- তুরস্কের দ্বিমুখী নীতি:
১৯৯৯ সালের ইজমিত ভূমিকম্পে যখন হাজার হাজার তুর্কি নাগরিক ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে, তখন ভারতের উদ্ধারকারী দল, চিকিৎসা সামগ্রী ও ত্রাণ নিয়ে ছুটে গিয়েছিল—“অপারেশন দোস্ত” ছিল ভারতের ঐতিহাসিক মানবিক সহায়তার প্রতীক। অথচ সেই তুরস্ক, শুধুমাত্র ধর্মীয় সংহতির নামে পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়ে আজ ভারতের নিরীহ মানুষের রক্তে হাত রঞ্জিত করছে।
এখানে প্রশ্ন উঠে—একটি রাষ্ট্র কি কেবল ধর্মীয় পক্ষপাতের জন্য মানবিকতার আদর্শ বিসর্জন দিতে পারে? ভারতের সঙ্গে যে সম্পর্কটি গড়ে উঠেছিল সহানুভূতি ও সহযোগিতার ভিত্তিতে, তা আজ বিপরীতমুখী ধর্মীয় কূটনীতির বলি হয়েছে।
শিক্ষনীয় বাস্তবতা- শত্রু-মিত্র স্পষ্ট অবস্থান:
এই যুদ্ধ কেবল অস্ত্রের লড়াই নয়, এটি এক আত্মিক শিক্ষা—কে ভারতের প্রকৃত বন্ধু, আর কে ছদ্মবেশী শত্রু, তা আজ আর গোপন নেই। পাকিস্তান বরাবরই শত্রু ছিল, কিন্তু তুরস্কের মতো রাষ্ট্র যখন ভারতের ক্ষতি সাধনে সরাসরি ভূমিকা নেয়, তখন এটি কেবল কূটনৈতিক ধাক্কা নয়, এক নৈতিক বিশ্বাসঘাতকতাও।
এই বাস্তবতা ভারতের পররাষ্ট্রনীতিকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করবে। কেবল ঐতিহাসিক বন্ধুত্বের স্মৃতি নয়, রাষ্ট্রগুলোর বর্তমান ভূমিকা ও মনোভাব বিচার করেই আগামীদিনে কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
শক্তিশালী, বুদ্ধিদীপ্ত পররাষ্ট্রনীতি গ্রহন:
বিশ্বব্যাপী জোটরাজনীতি ও কৌশলগত অবস্থান দিন দিন জটিল হয়ে উঠছে। ভারতকে এখন আর আবেগ নয়, জাতীয় স্বার্থকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পররাষ্ট্রনীতি গড়ে তুলতে হবে। শত্রু-মিত্র চিহ্নিত করার এ এক মহাসময়। তুরস্কের মতো দ্বিচারী রাষ্ট্রকে যথাযথ কূটনৈতিক বার্তা দিতে না পারলে ভবিষ্যতে আরও বিপজ্জনক পরিণতি আসতে পারে।
সুতরাং, ইতিহাসের ঋণ দেওয়া হয়েছিল মানবতার খাতিরে, তার বদলে পাওয়া গেল রক্তস্নাত প্রতিহিংসা। ভারত যদি এ থেকে শিক্ষা না নেয়, তবে ভবিষ্যতের কূটনীতি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে।
© রূপেশ কুমার সামন্ত
ছবি ঋন- অপারেশন দোস্তে ভারতের সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণের ছবিটি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
No comments:
Post a Comment