Posts

Showing posts from September, 2020

গোবিন্দনগরের রাধাগোবিন্দ মন্দির বাংলার অন্যতম পুরাকীর্তির নিদর্শণ: Terracotta Temple

Image
  গোবিন্দনগরের রাধাগোবিন্দ মন্দির বাংলার অন্যতম পুরাকীর্তির নিদর্শণ © রূপেশ সামন্ত      বর্ধমানের রাজা তিলোকচাঁদের (রাজত্বকাল ১৭৪৪-১৭৭১) মৃত্যুর পর রাজা হন তাঁর ছেলে তেজচাঁদ (রাজত্বকাল ১৭৭১-১৮১৬)। তখন তেজচাঁদের বয়স ছিল মাত্র ৬ বছর। ফলে অভিভাবিকা রূপে রাজ্য পরিচালনা করতেন তাঁর মাতা বিষনকুমারী। রাজা তেজচাঁদের আমলেই সর্বাধিক মন্দির ও বিগ্রহ প্রতিষ্ঠিত হয়। উড়িষ্যা নিবাসী জনৈক নন্দনন্দন গোস্বামী ছিলেন রাজার গুরুদেব। নন্দনন্দন গোস্বামীর পিতা ছিলে প্রাণগোবিন্দ গোস্বামী। এনারা ছিলেন রাজ অনুগ্রহ প্রাপ্ত ব্রাহ্মণ। রাজ আনুকুল্যে ১৭৮১ খ্রিষ্টাব্দে দাসপুর-১ ব্লকের গোবিন্দনগর গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় টেরাকোটা শোভিত পঞ্চরত্ন মন্দির। এই মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত হল রাধারানি, রাধারমন ও রাধাগোবিন্দ জীউর বিগ্রহ। দেবতার নিত্যপূজা পরিচালনার জন্য রাজা ৩৬৫ বিঘা জমি সহ নন্দনন্দন গোস্বামীকে মন্দিরের সেবাইত নিযুক্ত করেন। টেরাকোটা ফলকে শোভিত পঞ্চরত্ন মন্দিরটি প্রাচীন পুরাকীর্তির অন্যতম নিদর্শন।      মন্দিরের সামনের দেওয়ালে রক্ষিত ফলকে লিখিত রয়েছে, ‘শ্রী শ্রী রাধাগোবিন্দ জীউ...
Image
  রান্নাপূজা-   হাওড়া জেলার অনন্য লোক উৎসব © রূপেশ সামন্ত      রান্নাপূজা কি?      রান্নাপূজা কেবল একটি সাধারণ পূজা নয়, এটি হাওড়া জেলার আঞ্চলিক উৎসবও বটে। এটিকে অরন্ধন উৎসবও বলে। আবার এই পূজাকে কেন্দ্র করে চলে রন্ধনও। মনসা দেবীকে উদ্দেশ্য করে পূজার অর্ঘ্য উৎসর্গীকৃত হয়। অর্থ্যাৎ রন্ধনও অরন্ধনের মিশেলে মনসাদেবীর উদ্দেশ্যে পূজার এক অনবদ্য আয়োজন।   ভাদ্রমাসে মাঠ-ঘাট-পুকুর-রাস্তা সব বর্ষার জলে ডুবে যায়। এইসময় বিষধর সাপেরা লোকালয়ে এসে আশ্রয় নেয়। অসাবধানতায় মানুষকে ছোবলও মারে। যার অবশ্যম্ভাবী ফল মৃত্যু। তাই এইসময় মানুষ সাপের উপদ্রব থেকে বাঁচার জন্য দেবী মনসাকে তুষ্ট করতে এই পূজার আয়োজন করে। এই পূজোকে কেন্দ্র করে গ্রামের মানুষরা অরন্ধন উৎসবে মেতে ওঠে। অর্থ্যাৎ রান্না না করে দেবীর উদ্দেশ্যে নিবেদিত নৈবেদ্য, যা প্রসাদ স্বরূপ পান্তাভাত ও বাসি তরকারি খাওয়া হয়। আবার দেবীকে উৎসর্গীকৃত নৈবেদ্যগুলো সবই আগের দিন রান্না করা। অর্থ্যাৎ রন্ধনও হয়। তাই এই সময়ের মনসা পূজাকে ‘রান্নাপূজা’ বলা হয়।   নানা নামে রান্নাপূজা   ...

মহালয়া Mahalaya

Image
  মহালয়া শুভ, নাকি অশুভ? হিন্দু শাস্ত্র কি বলে? © রূপেশ সামন্ত প্রতি চান্দ্রমাসে দুটি পক্ষ রয়েছে- শুক্লপক্ষ এবং কৃষ্ণপক্ষ। প্রতিটি পক্ষ ১৫ দিনের হয়। এইভাবে বছরের ১২মাসে ২৪টি পক্ষ হয় । এর মধ্যে ২টি পক্ষ তাৎপর্য্যপূর্ণ। এক টি হ ল পিতৃপক্ষ ও অন্যটি হল দেবীপক্ষ বা মাতৃপক্ষ । এই পিতৃপক্ষের শেষ এবং মাতৃপক্ষের শুরুর দিনটিকে বলা হয় মহালয়া। মহালয়া শব্দটির অর্থ মহান আলয়। পিতৃপক্ষে স্বর্গত পিতৃপুরুষের শ্রাদ্ধ ও তর্পন করা হয়। এই সময় পিতৃলোক বা যমালোক থেকে মর্ত্যলোকে প্রয়াত পিতৃ পুরুষেরা আসেন। ফলে প্রয়াত আ ত্মা র মহা যে সমাবেশ ঘটে, তাকে ‘ মহালয় ’ বলা হয়। আর এই ‘ মহালয় ’ থেকে স্ত্রী লিঙ্গে ‘ মহালয়া ’ শব্দটি এসেছে । পিতৃপুরুষদের তৃপ্ত করার জন্য তিল , জল সহযোগে ‘পিণ্ড’ দান করা হয় । অন্য মতে, পিতৃপক্ষের অবসানে দেবীপক্ষের আগমন হয়। তখন দেবী দুর্গাই হলেন আমাদের মহান আশ্রয়। তাই এই লগ্নটির নাম মহালয়া। আশ্বিন মাসে কৃষ্ণপক্ষের অবসান ও দেবীপক্ষের সূচনায় যে অমাবস্যা পড়ে, তাকে আমরা মহালয়া হিসাবে চিহ্নিত করি। -----রামায়ন যোগসূত্র-----   পিতৃপক্ষের শেষ দিনটি অমাবস্যা হয়। এই ...

শরৎচন্দ্রের সামতাবেড়ের বাড়ি Sharatchandra

Image
  আজ শরৎচন্দ্রের জন্মদিনে ঘুরে আসুন দেউলটির বাড়ি © রূপেশ সামন্ত      মনে পড়ে ছোটবেলার কথা। মামার বাড়ি গেলেই শরৎচন্দ্রের দেউলটির সামতাবেড়ের বাড়িতে গিয়ে বসে থাকতাম। আমার মামাবাড়ি সামতাবেড়ের পাশের গ্রাম মেল্লকে। শরৎচন্দ্রের বাড়ি রূপনারায়ণের তীরে শান্ত-নিরিবিলি ছবির মতো সাজানো পরিবেশে। অমর কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্রের বাড়িতে দু’দণ্ড বসলে রূপনারায়ণের শীতল হাওয়া জুড়িয়ে দেবে মন-প্রাণ।      ১৮৭৬ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জন্মগ্রহন হুগলী জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে। মধ্যবয়সে শরৎচন্দ্র এই সামতাবেড় গ্রামের মাটির বাড়িতে বাস করতেন। এখানে কাটিয়ে ছিলেন জীবনের বারোটি বছর। দেউলটি স্টেশন থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পথ। বাড়ির সামনে পাশাপাশি দুটো পুকুর রয়েছে। পুকুরে রয়েছে বাঁধানো সানের ঘাট। পুকুরের পাশে বাগানে রয়েছে ডালিম, পেয়ারা গাছে প্রভৃতি ফলের গাছ। ১৯৭৮ সালের প্রবল বন্যায় পাশাপাশি সব বাড়ি ভেঙে গিয়েছিল। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে ভাঙেনি শরৎচন্দ্রের মাটির বাড়ি। একুস্ময় শরৎচন্দ্র বার্মা রেলের হিসাব পরীক্ষক হিসেবে পঁচা...

তপ্ত দুপুরের পলাশপাই Palashpai River

Image
  তপ্ত দুপুরের পলাশপাই © রূপেশ সামন্ত      এই তপ্ত দুপুরে কুলকুল বয়ে চলে পলাশপাই। ভরা ভাদ্রেও ক্ষীণকায়া। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর ব্লকের একটি নদী। তবে সেচ দপ্তরের নথিতে এটি একটি খাল। বসন্তপুর থেকে মহিষঘাটা পর্যন্ত দৈর্ঘ প্রায় ২০ কিলোমিটার। এটি পুরাতন কাঁসাইয়ের শাখানদী। পলাশপাই গ্রামের নাম অনুসারে নদীটির নাম পলাশপাই।      এই পলাশপাই নদী বহু ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী। পলাশপাইয়ের তীরে রয়েছে জ্যোতঘনশ্যাম গ্রাম। ব্রিটিশ আমলে এই গ্রাম ছিল লবন আইন অমান্য আন্দোলনকারীদের অবাধভূমি। ব্রিটিশ পুলিশের অত্যাচারে আন্দোলনকারীরা রক্তাক্ত হয়েছিল। দাসপুর থানার অত্যাচারী ভোলা দারোগার নেতৃত্বে মুগুর দিয়ে থেঁতলে দেওয়া হয়েছিল আন্দোলনকারীদের হাত-পায়ের আঙ্গুল। হাত-পা বেঁধে গরম বালিতে শুইয়ে রাখা হয়েছিল আন্দোলনকারীদের। একবিন্দুও জলপান করতে দেওয়া হয়নি। সেদিন নারীরা ব্রজবালা কুইলা ও মেনকা মাইতির নেতৃত্বে তৃষ্ণার্ত আন্দোলনকারীদের বুকের দুধ পান করিয়ে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের দেওয়াল তুলেছিলেন। © রূপেশ সামন্ত      পলাশপাইয়ের তীরের চেঁচুয়...

তাল

Image
  আহা! তাল © রূপেশ সামন্ত   “ দেবের দুর্লভ ধন জীবনের ঘড়া এক বিন্দু রস খেলে বেঁচে ওঠে মড়া। ”      লিখেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত। রস পাগল মানুষদের দেখলে কবিতার সারমর্ম উপলব্ধি হয়। তালরস থেকে খেজুররস বাঙালী হৃদয়ে চিরকালই দোলা দেয়। খেজুর কুল থেকে খেজুরের রসে যেমন শীতকাল ‘ম’ ‘ম’ হয়ে ওঠে, তেমনি তালরস থেকে তালপাঁকিতে গ্রীষ্ম থেকে বর্ষা জীভ জলময় হয়ে ওঠে। তালরস থেকে তালগুড় , তালমিছরি , তাড়ি নানারকম দ্রব্য তৈরি হয়। এগুলির মধ্যে তাড়ি এক বিষম বস্তু! আবার অতি চাহিদারও বস্তু! গ্রীষ্মকালে গ্রামে-গঞ্জে জাঁকিয়ে বসে তাড়ি তৈরির কারখানাও! তাই কবিতা প্রেমিক বলদেব সাঁতরা কবিতায় লেখেন- “ রসের ও লাগিয়া , হাঁড়ি গাছে পাতিয়া -- ধরিব শীতল জল বিন্দু। তোমার কাছে আছে কি খোঁজ বন্ধু , কেমনে জুটিবে এমন সুধা সিন্ধু ?”      রসবন্ধু বেরা নামে এক রেল কর্মচারী ছিল। তিনি সখের তালবাগান করেছিলেন। রসভক্ত রসবন্ধু তালরস পান না করে দাঁত মাজতেন না! প্রতিদিন সকালে অফিস যাওয়ার সময় দু’চার বোতল রস সঙ্গেও নিয়ে নিতেন। তালরসে অফিসের বসও বশীভূত! আবার অফিস ফেরৎ হয়ে তাল...