Sunday, 25 October 2020

পাঁশকুড়ার চাঁপাডালির চক্রবর্তী পরিবারের দুর্গাপূজায় আবশ্যিক মাছের ঝোলের ভোগরান্না- Old Durga Puja at Panskura

 পাঁশকুড়ার চাঁপাডালির চক্রবর্তী পরিবারের দুর্গাপূজায় আবশ্যিক মাছের ঝোলের ভোগরান্না

©রূপেশ সামন্ত


     বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী ও পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন ভূমি ও ভূমি রাজস্ব মন্ত্রী শ্যামাদাস ভট্টাচর্যের আদি বাসভূমি হল পাঁশকুড়ার চাঁপাডালি গ্রাম। পুরো ভট্টাচার্য পরিবারই একসময় পাঁশকুড়ার স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দান করেছিল। শ্যামাদাস বাবুর পিতা সুরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, মাতা ইন্দুমতি ভট্টাচার্য ও ভাই কালিদাস ভট্টাচার্য ছিলেন বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী। এছাড়াও এই চাঁপাডালি গ্রাম ঐতিহাসিক ভাবেও অত্যন্ত গূরুত্বপূর্ণ। এখানেই ১৫৭৩ খ্রিষ্টাব্দে কাশিজোড়া পরগনার প্রথম রাজা গঙ্গানারায়ণ সিং (রায়) তাঁর প্রথম কাছারিবাড়ি স্থাপন করেন। শোনা যায়, এখানকার ভট্টাচার্য ব্রাহ্মণদের কাশিজোড়ার রাজা গঙ্গানারায়ণ সিং হুগলী থেকে আনয়ণ করেছিলেন। কাশিজোড়া পরগনার রাজা এই গ্রামের জমিদারিত্ব সেই ব্রাহ্মণদের দিয়েছিলেন। সেই প্রাচীন জমিদার বাড়ির দুর্গাপূজা আজও চলে আসছে। তবে দুর্গাপূজা কবে শুরু হয়েছিল তা জানা যায়নি। কাশিজোড়া রাজ পরিবারের দুর্গাপূজা প্রায় ২৭৫ বছরের প্রাচীন। রাজপরিবারের দুর্গাপূজাকে এই এলাকায় সবচেয়ে প্রাচীন ধরা হয়। ভট্টাচার্য পরিবারের দুর্গাপূজা সমসাময়িক কালে শুরু হয়েছিল ধরা হলে এই দুর্গাপূজা মোটামুটি ২৫০ বছরের প্রাচীন বলে ধরা যেতে পারে। ©রূপেশ সামন্ত


     যাইহোক, পুরো ভট্টাচার্য পরিবার পূজার সময় সমবেত হয়। অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পূজার রীতিনীতি পালন করা হয়। নিখুঁত সময় ধরে পূজার প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন হয়। এক মেড়ে মৃন্ময়ী প্রতিমা নির্মিত হয়। প্রতিমার মূখাবয়ব প্রতিবছর একই রাখা হয়। পূজায় দুইবেলা ভোগরান্না হয়। এই পূজার বিশেষত্ত্ব হল, রাত্রিবেলার ভোগরান্নায় মাছের ঝোল করতেই হয়। এই প্রাচীন রীতিটি আজও নিষ্ঠার সঙ্গে মেনে চলা হয়। পরিবারের সকলে একযোগে দেবীর চরণে পুস্পঞ্জলি নিবেদন করেন।

©রূপেশ সামন্ত

‘পঞ্চমুণ্ডি’ আসনে পূজিতা হন পাঁশকুড়ার ‘যশোড়া রাজবাড়ি’র দুর্গা- Old Durga Puja at Panskura

 

‘পঞ্চমুণ্ডি’ আসনে পূজিতা হন পাঁশকুড়ার ‘যশোড়া রাজবাড়ি’র দুর্গা

©রূপেশ সামন্ত
















     সপ্তমীতে জ্বালানো হয় হোমযজ্ঞের আগুন। সেই আগুন নেভে দশমীর বিসর্জনে। সপ্তমীতে শুরু হয় ছাগবলি। চলে নবমী পর্যন্ত। হোমযজ্ঞের আগুন ও বলির হাড়িকাঠের সামনে ‘পঞ্চমুণ্ডি’ আসনে পূজিতা হন জমিদার বাড়ির দেবী দুর্গা। এই দুর্গাপূজা স্থানীয় ভাবে অত্যন্ত জনপ্রিয় ও প্রভাব-প্রতিপত্তিময়। ১৭৯৩ খ্রিষ্টাব্দে লর্ড কর্ণওয়ালিশের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা চালু হয়। সেই আইনে ১৭৯৪ খ্রিষ্টাব্দে কাশিজোড়া পরগনার জমিদারী ক্রোক হয় এবং নিলাম হয়। জমিদার তারাপদ ভূঞ্যা কাশিজোড়াগনার সেই নিলামকৃত সম্পত্তির দু’আনা মালিক ছিলেন বলে জানা যায় ফলে সেই সময়কাল ধরলে জমিদার তারাপদ ভূঞ্যার চালু করা দুর্গা পূজার বয়স ২০০ বছরের অধিক। যশোড়ায় জমিদারে নির্মিত বিরাট ইঁটের বাড়ি এখন ধ্বংসপ্রায়। জঙ্গলাকীর্ণ কিছুটা বাড়ি এখনও দাঁড়িয়ে আছে। স্থানীয় মানুষ এটিকে ‘রাজবাড়ি’ নামেই চেনে। ‘জমিদারী সম্পত্তির’ বর্তমান উত্তরাধিকারীরা নিজদেরকে তৎকালীন জমিদারের বংশধর বলেই দাবী করেন।

     যাইহোক, দেবী দুর্গার প্রাচীন দালান মন্দির রয়েছে। মন্দিরটি বর্তমানে সংস্কার হয়েছে। মন্দিরের কারুকার্য ও কাঠের দরজা গুলি প্রাচীন। দরজায় রয়েছে অপরূপ খোদিত চিত্রশিল্প। মন্দিরের মধ্যে মানুষ সহ পাঁচটি জীবের মাথা দিয়ে তৈরি ‘মহাশক্তিশালী’ ‘পঞ্চমুণ্ডি’ আসনে দেবী দুর্গার মৃন্ময়ী প্রতিমা বসানো হয়। এছাড়াও পূজার সময় মন্দিরে পিতলের রাজ-রাজেশ্বরী ও চণ্ডীমূর্তি বসানো হয়। সপ্তমীতে যে হোমযজ্ঞ শুরু হয়, তা বিসর্জণ পর্যন্ত জ্বলতে থাকে। মন্দিরের সম্মুখেই সপ্তমীতে রাজবাড়ির পক্ষ থেকে একটি ছাগবলি দেওয়া হয়।  এরপর রাজবাড়ির পক্ষ থেকে অষ্টমীতে একটি ও নবমীতে চারটি ছাগবলি দেওয়া হয়। ভক্তদের মানত করা ছাগবলিও এখানে হয়। পূজার সামগ্রী হিসাবে ব্যবহৃত পিতলের থালা, কশাকুশি ইত্যাদি সবই প্রাচীন।

 

     যাতায়াতঃ দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ের পাঁশকুড়া স্টেশন থেকে ঘাটাল-পাঁশকুড়া সড়কে যশোড়া বাসস্ট্যাণ্ড যেতে হবে। এরপর পশ্চিমে কিছুটা এগোলে মন্দিরে পৌঁছানো যাবে। পাঁশকুড়া থেকে মোট দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার।

©রূপেশ সামন্ত

[কপিপেস্ট করবেন না। নকল বা চুরি করবে না। কপিরাইট সংরক্ষিত। শেয়ার করুন। আরও পড়তে ভিজিট করুন- ]

Saturday, 24 October 2020

কুমারী মেয়েদের রক্ষা করাই কুমারী পূজার উদ্দেশ্য- Kumari Puja

কুমারী মেয়েদের রক্ষা করাই কুমারী পূজার মূল উদ্দেশ্য

রূপেশ সামন্ত


কুমারী পূজা দুর্গোৎসবের এক বর্ণাট্য অনুষ্ঠান পর্ব। বিশেষত কুমারীকে দেবী দুর্গার পার্থিব প্রতিনিধি হিসেবে পূজা করা হয়ে থাকে।

কুমারী পূজা কি?----
কোন কুমারী মেয়েকে দেবী দুর্গার সামনে মাতৃভাবে পূজা করাকে কুমারী পূজা বলে। দুর্গাপূজার মহাষ্টমী পূজার শেষে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। আবার কোথাও কোথাও নবমীতেও কুমারী পূজা হয়।

পৌরাণিক আঙ্গিক----
একদা কোলাসুর স্বর্গ-মর্ত্য অধিকার করে নিয়েছিল। দেবগন বিপন্ন হয়ে পড়েন। তাঁরা মহাকালীর শরণাপন্ন হন। তখন দেবী পুনর্জন্মে কুমারীরূপে আসেন এবং কোলাসুরকে বধ করেন। তখন থেকেই মর্ত্যে কুমারী পূজার প্রচলন শুরু হয়। লেখক- রূপেশ সামন্ত

পূজার ‘কুমারী’ হওয়ার যোগ্যতা----
কুমারী পূজার জন্য মেয়েকে ষোল বছরের কম বয়সী হতে হবে। অবশ্যই মেয়েকে অরজঃস্বলা হতে হবে। জাতি, ধর্ম বা বর্ণ নির্বিশেষে যে কোন কুমারী মেয়েই কুমারী পূজার যোগ্য হতে পারে। বেশ্যাকুল জাতির কন্যাও কুমারী পূজার ‘কুমারী’ হতে পারে। তবে আগের দিনে মূলত ব্রাহ্মণ কন্যাই পূজিত হত।

অন্য কোথায় কুমারী পূজা?----
দূর্গা পূজার সময় ছাড়াও কালীপূজা, জগদ্ধাত্রীপূজা এবং অন্নপূর্ণা পূজা উপলক্ষে কুমারী পূজা হয়। এছাড়াও কামাখ্যা শক্তিক্ষেত্রেও কুমারী পূজার প্রচলন রয়েছে। লেখক- রূপেশ সামন্ত

দার্শনিক তত্বের আলোকে পর্যালোচনা----
কুমারী কন্যা ভবিষ্যতের নারীর বীজাবস্থা মাত্র। বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড তিনটি শক্তির সমাহার- সৃষ্টি, স্থিতি ও লয়। এই তিনটি শক্তিই সুপ্ত অবস্থায় কুমারী কন্যার মধ্যে নিহিত রয়েছে। তাই কুমারী কন্যা ছাড়া তিনটি শক্তিই আধারহীন হয়ে পড়বে এবং বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডও অস্তিত্বহীন হবে। বর্তমানের কুমারী কন্যা, যে ভবিষ্যতের নারী, তাকে চোখের মনির মতো রক্ষা করতে হবে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই। সেই কারনেই দেবীভাব আরোপ করে কুমারী কন্যার সাধনা করা হয়। এক্ষেত্রে কুমারী কন্যা ভোগ্যা নয়, পূজ্যা। বৃহত্তর অর্থে নারীও ভোগ্যা নয়, এই বিষয়টিও প্রতিষ্ঠা করাও উদ্দেশ্য। এ ভাবনায় ভাবিত হওয়ার মাধ্যমে আমরা রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবকে নিজের স্ত্রীকে ষোড়শীজ্ঞানে পূজা করতে দেখেছি। একজন নারীর শৈশবে রক্ষাকর্তা বাবা-মা, যৌবনে রক্ষাকর্তা স্বামী ও বৃদ্ধাবস্থায় রক্ষকর্তা সন্তান। কিন্তু কন্যাবস্থায় সে অত্যন্ত দুর্বল ও বোধহীন হয়। সংসারে ব্যস্ত মা বা অর্থ উপার্জনে ব্যস্ত বাবার পক্ষে কন্যাসন্তানকে রক্ষা করা সম্ভব নয়। তাই সে সবচেয়ে অরক্ষিতও হয়। সেই কারনে কুমারী পূজার মাধ্যমে কন্যাকে দেবীভাবে ও শ্রদ্ধাসনে বসানো হয়েছে। ভবিষ্যতের নারীকে রক্ষা করাই উদ্দেশ্য। আবার জাতি, ধর্ম বা বর্ণ নির্বিশেষে যে কোন কুমারী মেয়েকেই কুমারী পূজার যোগ্যতা দানের মধ্য দিয়ে সম্প্রীতির দিকটিও তুলে ধরা হয়েছে। সর্বোপরি কুমারী পূজা মানবাতাবাদী ধর্মাচরন বলেই আমার মনে হয়েছে। লেখক- রূপেশ সামন্ত। ছবি- গেটি ইমেজেস
তথ্য সূত্র- কুমারী পূজা প্রয়োগ, দেবী পুরান, উইকিপিডিয়া।

মাছপোড়া ও লালশাকের টক দিয়ে পাঁশকুড়ার রাজপরিবারের প্রাচীন দুর্গাপূজা- Oldest Durga Puja at Panskura

মাছপোড়া ও লালশাকের টক দিয়ে পাঁশকুড়ার রাজপরিবারের প্রাচীন দুর্গাপূজা

রূপেশ সামন্ত


বর্তমান পাঁশকুড়া অতীতের কাশিজোড়া পরগনার অন্তর্গত ছিল। কাশিজোড়া রাজপরিবারের বর্তমান উত্তরাধিকারীরা এখন রঘুনাথবাড়ি অঞ্চলের সুন্দরনগরে বাস করেন। যতদূর জানা যায়, কাশিজোড়া রাজ পরিবারের দুর্গাপূজাই হল এই এলাকার সবচেয়ে প্রাচীন দুর্গাপূজা। অনেক ঐতিহাসিকই এই তথ্য মানতে চান না। কিন্তু এর চেয়ে প্রাচীন দুর্গাপূজার উদাহরণ প্রমানিত রূপে আজ পর্যন্ত আমাদের সামনে নেই। অতীতে কাশিজোড়া পরগনার বেশির ভাগটাই ছিল জঙ্গলাকীর্ণ জলাভূমি। এইসব এলাকা ছিল মূলত দরিদ্র সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। তাদের পক্ষে রাজকীয় ব্যয়বহুল দুর্গাপূজা ছিল অলীক কল্পনা। এলাকার অন্যান্য প্রাচীন দুর্গাপূজার এযাবৎ যা ঐতিহাসিক তথ্যসূত্র পাওয়া যায়, তা থেকে নিশ্চিত রূপে বলা যায় পাঁশকুড়ার সবচেয়ে প্রাচীন দুর্গাপূজা হল কাশিজোড়া রাজার প্রায় ২৭৫ বছরের পুরানো দুর্গাপূজা।

ইতিহাসঃ
     ১৭৪৪ সাল। কাশিজোড়া পরগনার রাজ-সিংহাসনে আরোহন করলেন রাজা নরনারায় রায়। পরগনা বিস্তারের উদ্দেশ্যে পাশের পরগনা ময়না আক্রমন করলেন। তিনি যুদ্ধ করেছিলেন ময়নার রাজা কৃপানন্দের বিরুদ্ধে। ১৭৪৪ সালের সেই যুদ্ধে ময়নার রাজাকে পরাজিত করে ময়নার ১৭টি মৌজা দখল করে নেন। জনশ্রুতি অনুসারে, শরৎকালীন যুদ্ধ জয়ের গৌরবে সেই বছর থেকেই দুর্গাপূজার প্রচলন করলেন। তখন রাজধানী ছিল হরশংকর গড়ে। ১৭৪৪ সালে হরশংকর গড়েই রাজা নরনারায়ণ রায় প্রথম দুর্গাপূজার প্রচলন করেছিলেন। প্রজারা সেই দুর্গাপূজায় অংশগ্রহন করতেন। রাজা নরনারায়ণ রায় রাজত্ব করেন ১৭৫৬ সাল পর্যন্ত। এরপর কাশিজোড়া পরগনার রাজা হয়েছিলেন রাজা রাজনারায়ণ রায় (১৭৫৬-১৭৭০)। রাজা সুন্দরনারায়ণ রায়ের আমলে (১৭৭০-১৮০৬) রাজধানী হরশংকর গড় থেকে বর্তমান সুন্দরনগরে স্থানান্তরিত হয়। রাজপরিবারের দুর্গাপূজাও স্থানান্তরিত হয়। সেই থেকে সুন্দরনগরে রাজপরিবারে দুর্গাপূজা হয়ে আসছে। রাজপরিবারের দুর্গাপূজা এইবছর ২৭৬তম বর্ষে পদার্পণ করল।


বর্ধমান রাজার ভেটঃ
     কাশিজোড়া রাজপরিবারের সঙ্গে বর্ধমান রাজপরিরের সুসম্পর্ক ছিল। প্রতিবছর দুর্গাপূজায় বর্ধমান রাজপরিবার থেকে ভেট বা উপহার সামগ্রী আসতো। হাঁটা পথে সেইসব উপহার সামগ্রী আসত চার/পাঁচদিন ধরে। আজ থেকে সত্তর বছর আগে পর্যন্ত এই প্রথা বহাল ছিল।

অস্ত্রপূজা ও কৃষ্ণরায়ের পূজাঃ
     দুর্গাপূজার দালানেই একই সঙ্গে পূজা করা হয় রাজাদের ব্যবহৃত বড় বড় তলোয়ার। বর্তমানে তিনটি বড় তলোয়ার রয়েছে। এছাড়াও রাজপরিবারে প্রতিবছর দুর্গাপূজা শুরুর আগে পারিবারিক দেবতা কৃষ্ণরায়ের পূজার প্রথাও চলে আসছে।

লোককথাঃ
    রাজপরিবার সূত্রে জানা যায় পারিবারিক ভাবে প্রবহমান অনেক লোককথা। রাজা নরনারায়ণ রায় যুদ্ধযাত্রা কালের প্রাক্কালে নাকি স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে ছিলেন। দেবী দুর্গা রাজাকে যুদ্ধ জয়ের বর প্রদান করেছিলেন এবং যুদ্ধ জয়ের পর দেবী পূজা করতে বলেছিলেন। রাজা সেই রাজকীয় ব্যয়বহুল পূজার অপারগতার কথা জানালে, দেবী দুর্গা কেবল মাছপোড়া ও লালশাকের টক দিয়ে পূজা করতে স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন। সেই থেকে আজও পূজার বহু-ব্যঞ্জনে  আবশ্যিক ভাবে মাছপোড়া ও লালশাকের টক থাকে।
     রাজ পরিবারের পূজার প্রথা অনুযায়ী, বহু-ব্যঞ্জন রান্নায় পুরুষ বা বিবাহিত নারীর অংশগ্রহন করার অধীকার নেই। কেবল মাত্র রাজপরিবারের অবিবাহিত নারীরাই বহু-ব্যঞ্জন রান্নার কাজ করেন।



শেষকথাঃ
     ঘুরে আসতে পারেন পাঁশকুড়ার সবচেয়ে পুরানো দুর্গাপূজা। সেই দুর্গাপূজা আজও বয়ে চলেছে অনেক ইতিহাস বুকে নিয়ে। পাঁশকুড়া ষ্টেশনের দক্ষিণে তমলুক-পাঁশকুড়া বাসরুটে ৬কিলোমিটার দূরে জোড়াপুকুর বাসস্ট্যাণ্ড। ঐ বাসস্ট্যাণ্ড থেকে উত্তরে ১কিমি এগোলেই পড়বে রাজপরিবারের বাড়ি ও দুর্গাপূজা।
লেখক- রূপেশ সামন্ত

Friday, 23 October 2020

পাঁশকুড়া সম্পূর্ণ পূজা পরিক্রমা- ২০২০ Panskura Durgapuja Guide- 2020

 পাঁশকুড়া দুর্গাপূজা গাইড ও পূজা পরিক্রমা- ২০২০

সম্পাদনা- রূপেশ সামন্ত


প্রথম পর্বঃ

পাঁশকুড়া রেল ষ্টেশন থেকে দক্ষিণ দিকে তমলুক-পাঁশকুড়া বাসরুট বরাবর পরপর চারটি প্যাণ্ডেল ও প্রতিমা দর্শণ করুন-

১. অগ্রদূত, পাঁশকুড়া পুরাতন বাস স্ট্যান্ড [ষ্টেশন সংলগ্ন ডানদিকে]


২. ব্যবসায়ী সমিতি, নুতন পাঁশকুড়া বাজার [দক্ষিণ দিকে কিছুটা এগোলেই বাজারের মধ্যে]

৩. যুগযাগৃতি, সুরারপুল [দক্ষিণ দিকে আরও কিছুটা এগোলে সুরার পুল সংলগ্ন]



৪. প্রতাপপুর সার্বজনীন, প্রতাপপুর [দক্ষিণ দিকে আরও কিছুটা এগোলে বাংলামোড়ের কাছে]


খাওয়ার ষ্টল- এই পর্বে পাঁশকুড়া পুরাতন বাস স্ট্যাণ্ডে ও সুরার পুলে স্থায়ী ও অস্থায়ী খাওয়ার ষ্টল পাবেন। উল্লেখযোগ্য রেস্টুরেন্টগুলি হল- বাস স্ট্যাণ্ডের ‘সত্যনারায়ণ মিষ্টান্ন ভান্ডার (নটু)’, সুরার পুলের ‘গৌর নিতাই মিষ্টান্ন ভান্ডার’ ও ‘ভোলা ক্যাটারার’।


দ্বিতীয় পর্বঃ

পাঁশকুড়া রেল ষ্টেশন থেকে পূর্বদিকে রেল আবাসন বরাবর পরপর দুটি প্যাণ্ডেল ও প্রতিমা দর্শণ করুন-

৫. রেল কলোনি, পাঁশকুড়া রেল আবাসন [ষ্টেশন সংলগ্ন পূর্বদিকে]


৬. আমরা ক’জন, ত্রিকোন পার্ক [ষ্টেশন থেকে পূর্বদিকে কিছুটা এগোলেই ত্রিকোন পার্ক পড়বে]


খাওয়ার ষ্টল- এই পর্বে বাসস্ট্যাণ্ড ও ত্রিকোন পার্কে অস্থায়ী খাওয়ার ষ্টল পাবেন।


তৃতীয় পর্বঃ

পাঁশকুড়া রেল ষ্টেশন থেকে পশ্চিম দিকে চারুলতা সিনেমা হলের দিক বরাবর দুটি প্যাণ্ডেল ও প্রতিমা দর্শণ করুন-

৭. প্রফেসর কলোনির পূজা [চারুলতা সিনেমাহলের পেছনে]


৮. সংগ্রামী সাথী, রেলওয়ে লেভেল ক্রসিং [পাঁশকুড়া রেলওয়ে লেভেল ক্রসিংয়ের নিকট]


খাওয়ার ষ্টল- এই পর্বে নতুন বাস স্ট্যান্ডে বহু অস্থায়ী খাওয়ার ষ্টল পাবেন। উল্লেখযোগ্য রেস্টুরেন্টগুলি হল- ‘মিও এমোরে’, ‘মারহাব্বা’ ও ‘ঘরে বাইরে’।


চতুর্থ পর্বঃ

পাঁশকুড়া রেল ষ্টেশন থেকে পশ্চিম দিকে বি.ডি.ও অফিসের পর পুরাতন পাঁশকুড়ায় ছয়টি ও মেচোগ্রামে একটি প্যাণ্ডেল ও প্রতিমা দর্শণ করুন-

৯. ত্রিবেনি সংঘ, বালিডাংরি [বালিডাংরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিকট]


১০. আপনজন, পি.ডব্লিউ.ডি. মাঠ [কিছুটা এগোলেই পাঁশকুড়া গার্লস হাইস্কুলের পাশে]

১১. ক্যানেল বাজার, পুরাতন পাঁশকুড়া [পাঁশকুড়া থানার নিকট]


১২. অগ্রভূমি, পাঁশকুড়া বি.বি. হাইস্কুল মাঠ [পুরাতন পাঁশকুড়া ও মেচোগ্রামের মধ্যে ৬নং জাতীয় সড়ক বরাবর রাস্তার ডানদিকে]



১৩. ইউথ সোসাইটি, নারান্দা [পুরাতন পাঁশকুড়া ও মেচোগ্রামের মধ্যে ৬নং জাতীয় সড়ক বরাবর রাস্তার বামদিকে]



১৪. পুরাতন পাঁশকুড়ার চৌরঙ্গি মোড়

১৫. মেচোগ্রাম, ফ্লাইওভার নিকট [মেচোগ্রাম ফ্লাইওভার] 










খাওয়ার ষ্টল- এই পর্বে পুরাতন পাঁশকুড়া ও মেচোগ্রামে স্থায়ী ও অস্থায়ী খাওয়ার ষ্টল পাবেন।

Thursday, 22 October 2020

বাঙালীর দুর্গাপূজা- কৃতিত্ব কৃত্তিবাসের History of Durga Festival of Bengal

 

বাঙালীর দুর্গাপূজা- কৃতিত্ব কৃত্তিবাসের

©রূপেশ সামন্ত

     দুর্গা পূজা বাঙালীর সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্বজনীন উৎসব। প্রকৃতপক্ষে দুর্গাপূজা দু’বার হয়- আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষে একবার ও চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষে আরেকবার হয়। আশ্বিন মাসের দুর্গা পূজা শারদীয়া দুর্গা পূজা ও চৈত্র মাসের দুর্গা পূজা বাসন্তী দুর্গা পূজা নামে পরিচিত।

 

শরৎ কালের দুর্গা পূজাই ‘অকালবোধন’----

     রামায়নে রাম ও রাবণের যুদ্ধের সময় শরৎকালে দুর্গাকে পূজা করা হয়েছিল। হিন্দু মতে, শরৎকালে দেবতারা নিদ্রা দেন। তাই শরৎকালে পূজা করার বিধি নেই। কিন্তু অকালে রামচন্দ্র এই দুর্গাকে নিদ্রা থেকে ‘বোধন’ করে পূজা করেছিলেন বলেই এই সময়ের শারদীয়া দুর্গা পূজাকে অকালবোধন বলে। রাম ও রাবনের প্রসঙ্গ মানেই ‘রামায়ণ’ মহাকাব্যের কথা আমরা জানি। কিন্তু বাল্মিকীর মূল রাময়ণে দুর্গাপূজার অস্তিত্বই নেই। অকালবোধন বা দুর্গাপূজাকে বাংলায় রামায়ণ রচনাকালে অত্যন্ত সুনিপুন ভাবে যুক্ত করে গেছেন কৃত্তিবাস ওঝা। ফলে যে দুর্গাপূজাকে নিয়ে বাংলা তথা বাঙালীর এতো মাতামাতি, তার কৃতিত্ব কিন্তু কৃত্তিবাসের। সংস্কৃত ভাষায় রচিত মূল রামায়ণে দুর্গাপূজাই নেই। তাই ভারতবর্ষের অন্যত্র দুর্গাপূজাকে নিয়ে তেমন মাতামাতিও নেই।

 

মূল রামায়ণ দুর্গাপূজা-----

     রামায়নের রচয়িতা ছিলেন বাল্মিকী। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় সেই মূল রামায়নে অকালবোধন বা শারদীয়া দুর্গা পূজার কোন উল্লেখই নেই। কিন্তু কালিকা পুরাণ ও বৃহদ্ধর্ম পুরাণ থেকে আমরা জানতে পারি, রাম ও রাবণের যুদ্ধের সময় শরৎকালে দুর্গাকে পূজা করা হয়েছিল। ব্রহ্মাই দুর্গার পূজা করেছিলেনতার উদ্দেশ্য ছিল অশুভ শক্তির বিনাশ করার জন্য রামকে সাহায্য করা। কৃত্তিবাস ওঝা তাঁর লেখা রামায়ণে কালিকা পুরাণ ও বৃহদ্ধর্ম পুরাণ এর ঘটনাকে কিছুটা পরিবর্তন করেছিলেন। তার লেখা রামায়ণ থেকে জানতে পারি, রাম নিজেই শরৎকালে দুর্গার বোধন ও পূজা করেছিলেন। সেখানেও উদ্দেশ্য ছিল অশুভ শক্তি বা আসুরিক শক্তি রাবনের বিনাশ।


 

কালিকা পুরাণ ও দুর্গা পূজা-----

     কালিকা পুরাণ অনুযায়ী মহিষাসুর দেবতাদের স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করেছিলেন এবং স্বর্গ রাজ্য দখল করেছিলেন। মহিষাসুর ব্রহ্মার বরে বলিয়ান ছিলেনএরপর অসুরকে বিনাশ করতে বিষ্ণু, শিব, ব্রহ্মা ও অন্যান্য দেবতারা সমবেত হয়ে তাদের তেজ থেকে দুর্গার সৃষ্টি করলেন। সেই দুর্গাই বিনাশ করে অসুরকে। শ্রী দুর্গাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় অনুবাদিত ‘কালিকা পুরাণ’ অনুসারে, “যে কালে অমরগন কর্তৃক মহামায়া আদ্যাশক্তি সংস্তুতা ও প্রবোধিতা হইয়া আশ্বিণ মসের কৃষ্ণপক্ষীয় চতুর্দশী তিথিতে ঐ দেবতাদিগের তেজো দ্বারা, স্বয়ং প্রাদুর্ভূতা হইয়াছিলেন। সাধক তন্মাসীয় শুক্লপক্ষের সপ্তমীতে দেবী মহামায়ার যথাবিধিমতে পূজা করিয়া অষ্টমীতে বিপুল রত্নরাজী দ্বারা পরিভূষিতা করিয়াছিলেন। সাধক নবমী তিথিতে বিবিধ উপহারে, দেবীর বিশেষ রূপে পূজানুষ্ঠান করিলে, তৎপূজায় দশভূজা মহামায়া পরিতুষ্টা হইয়া দেবারি মহিষাসুরের নিধন সাধন করত দশমীতে তৎ স্থান হইতে অন্তর্হ্নিতা হইয়াছিলেন।”

 

বৃহদ্ধর্ম পুরাণ দুর্গা পূজা-----

     এই পুরাণের মতে, রাম-রাবনের যুদ্ধে রামকে সাহায্যের জন্য কুম্ভকর্নের নিদ্রাভঙ্গ করা হল। এরপর রাবন বধে রামচন্দ্রের মঙ্গল কামনায় সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা দুর্গার পূজা করতে চাইলেন। কিন্তু তখন শরৎকাল, দক্ষিনায়ন। দেবতারা ঘুমিয়ে থাকেন। অসময়ে ব্রহ্মা দুর্গা পূজা শুরু করলেন। দুর্গা উগ্রচণ্ডী হলেন। ব্রহ্মা তাকে সন্তুষ্ট করে ততদিনই দুর্গা পূজা করতে থাকলেন, যতদিন না রাবন বধ হয়। এরপর দেবী দুর্গার কৃপায় নবমীতে রাবন বধ হয়। দশমীতে রামের বিজয়োৎসবরামের অকাল বোধনের পরই দুর্গা পূজা ব্যাপক প্রচার লাভ করে।

 

কৃত্তিবাসি রামায়ণ ও দুর্গা পূজা-----

     কৃত্তিবাস ওঝা তার লেখা রামায়ণে কালিকাপুরাণ ও বৃহদ্ধর্মপুরাণ-এর এই কাহিনি গুলিকে অত্যন্ত সুনিপুন ভাবে অন্তর্ভূক্ত করেছেন। বাল্মীকির রামায়ণে দুর্গা পূজার কোন উল্লেখ নেই। কৃত্তিবাস ওঝার রামায়ণ অনুসারে, রামচন্দ্রই রাবনকে বধের উদ্দেশ্যে দুর্গাপূজা করেন। অপহৃতা পত্নী সীতাকে উদ্ধারের জন্য বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে রামচন্দ্র লঙ্কা আক্রমণ করেছিলেন। লঙ্কার বড় বড় বীরদের নিধন করেছিলেনঅসহায় রাবণ তখন মাতা অম্বিকার স্তব শুরু করে দিল। রাবণের প্রার্থণায় দেবী হৈমবতী কালীরূপে আবির্ভূত হয়ে রাবণকে নিজ কোলে তুলে নিয়ে অভয়বার্ত্তা দিলেন-

“ভয় নাই ভয় নাই রাজা দশানন।

আসিয়াছি আমি কারে কর ডর?

আপনি যুঝিব যদি আসেন শঙ্কর।

আসিতবরণা কালী কোলে দশানন”।

রাবণকে দেওয়া দেবী কালীর অভয়বাণী সকল দেবদেবীদের মনে উৎকন্ঠার সৃষ্টি করল। এরপর ইন্দ্র ব্রহ্মার কাছে গিয়ে রাবণকে দমন করার জন্য প্রার্থণা করলেন। সকলের প্রার্থণায় সন্তুষ্ট হয়ে দেবাদিদেব ব্রহ্মা শ্রীরামচন্দ্রকে দুর্গাপূজা করার উপদেশ দিলেন-

“রাবন-বধের জন্য বিধাতা তখন।

আর শ্রীরামেরে অনুগ্রহের কারণ।।

এই দুই কর্ম্ম ব্রহ্মা করিতে সাধন।

অকালে শরতে কৈল চণ্ডীর বোধন”।।


শ্রীরামচন্দ্র বললেন, দুর্গাপূজার প্রশস্ত সময় হল বসন্তকাল, আর এখন হল শরৎকালশরৎকাল হল অকাল। বিধি মতে, ‘অকালবোধনে নিদ্রাভঙ্গের পবিত্র সময় হলো কৃষ্ণানবমী। তা ছাড়া রাজা সুরথ পূজা শুরু করেছিলেন প্রতিপদে। তাহলে এখন তো পূজা সম্ভব নয়-

“শ্রীরাম আপনি কয়,   বসন্ত শুদ্ধি-সময়,

শরত অকাল এ পূজার।।

বিধি আর নিরূপণ,   নিদ্র ভাঙ্গিতে বোধন,

কৃষ্ণা নবমীর দিনে তাঁর।

সে দিন হয়েছে গত,   প্রতিপদে আছে মত,

কল্পারম্ভে সুরথ রাজার।।

সেদিন নাহিক আর,   পূজা হবে কি প্রকার,

শুক্লা ষষ্ঠী মিলিবে প্রভাতে”।

কিন্তু ব্রহ্মা শুক্লাষষ্ঠীতে বোধন করার জন্য বিধান দিলেন-

“বিধাতা কহেন সার,   শুন বিধি দিই তার,

কর ষষ্ঠী কল্পেতে বোধন।

ব্যাঘাত না হবে তায়,   বিধি খণ্ডি পুনরায়,

কল্প খণ্ডে সুরথ রাজন”।।

ব্রহ্মার বিধানে শ্রীরামচন্দ্র দেবী দুর্গার অকালবোধনের প্রস্তুতি শুরু করলেন। শ্রীরামচন্দ্র দেবী দুর্গার মৃন্ময়ী প্রতিমা তৈরী করে ষষ্ঠীর সন্ধায় বেল গাছের তলায় দেবীর বোধন করলেন। অধিবাসে শ্রীরামচন্দ্র স্বহস্তে বাঁধলেন নবপত্রিকা। চণ্ডীপাঠ করে পূজা করলেন । সপ্তমী ও অষ্টমীতে শ্রীরামচন্দ্র বেদবিধিমতেপূজা করলেন। অষ্টমী-নবমীর সন্ধিক্ষণে সন্ধিপূজা করলেন। নানাবিধ বনফুল ও বনফলে ‘তন্ত্রমন্ত্রমতে’ পূজা হল-

“তন্ত্র মন্ত্রমতে পূজা করে রঘুনাথ।

একাসনে সভক্তিতে লক্ষ্মণের সাথ”।।

কিন্তু শ্রীরামচন্দ্র দেবী দুর্গার দর্শন পেলেন না। তখন বিভীষণ উপদেশ দিলেন ১০৮টি নীলপদ্মে পূজা করার জন্য। তখন হনুমান দেবীদহ হ্রদ থেকে এনে দিলেন একশত আটটি নীল পদ্ম। কিন্তু পূজার মুহূর্তে শ্রীরামচন্দ্র দেখতে পেলেন একটি নীলপদ্ম কম পড়েছে তাই তিনি তাঁর নিজের একটি চক্ষুকেই উপড়ে দেবীকে নিবেদন করতে উদ্যত হলেন তখন দেবী কাত্যায়নী শ্রীরামচন্দ্রকে বাধা দিলেন। রাবণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখতেই দেবী দুর্গা ছলনা করে একটি নীলপদ্ম লুকিয়ে রেখেছিলেনকিন্তু শ্রীরামচন্দ্রের অসীম ভক্তির কাছে দেবী দুর্গা বাধ্য হলেন রাবণ বধের বর প্রদান করতে-

“রাবনে ছাড়িনু আমি,   বিনাশ করহ তুমি,

এত বলি হৈল অন্তর্দ্ধান”।

দেবী দুর্গার বর লাভ করে শ্রীরামচন্দ্র মহাসপ্তমীতে যুদ্ধে লিপ্ত হন এবং মহাষ্টমী ও মহানবমীর সন্ধিক্ষণে রাবণকে বধ করেন-

“বিশ্বামিত্র স্মরি বান ছাড়ি রঘুবীর।

রাবনের বুকে বিন্ধি কৈল দুই চির”।।

এরপর মহাদশমীর দিন রাবণকে দাহ করা হয়েছিল। শ্রীরামচন্দ্র মহাদশমীতেই সেই ‘অকালবোধন’ পূজা সমাপ্ত করে দুর্গা প্রতিমার বিসর্জন দিয়ে অকাল বোধন শেষ করেন। প্রকৃতপক্ষে কৃত্তিবাস ওঝা কালিকাপুরাণ ও বৃহদ্ধর্মপুরাণের কাহিনীর কিছুটা পরিবর্তন করে তাঁর রচিত রামায়নে অকালবোধন পর্বটি সুনিপুন ভাবে অন্তর্ভূক্ত করেন, যা বাল্মিকী রচিত মূল রামায়ণে নেই সেই অকালবোধন বা শরৎকালের দুর্গাপূজাই আজ বাঙালীর ঘরে ঘরে, বাংলার কোনে কোনে মহা উৎসবে উদ্ভাসিত। কৃতিত্ব কিন্তু কৃত্তিবাসেরই।

তথ্যসূত্র- কৃত্তিবাসী সপ্তকাণ্ড রামায়ণ

©রূপেশ সামন্ত (২২.১০.২০)

[কপি-পেস্ট করবেন না। শেয়ার করুন।]

জীবনের ভুল — সত্যিই ভুল?

  জীবনের ভুল — সত্যিই ভুল? জীবন এক অমোঘ প্রবাহ—সময়ের স্রোতে আমাদের চিন্তা, অনুভব ও সিদ্ধান্ত সবই পরিবর্তিত হয়। আজ যা ভুল মনে হয়, কাল তা সঠি...